লালনের চিরপরিচিত মাজার ফিরে চাই
Published: 19th, October 2025 GMT
এক জাপানি গবেষক, লালন–ভক্ত মাসাহিকো তোগাওয়া। বারবার বাংলাদেশে এসেছেন লালন ফকিরের টানে। ছুটে গেছেন বারবার কুষ্টিয়ার আখড়ায়। লালন শাহের মাজার ঘেঁষে কমপ্লেক্স নির্মাণের পরিকল্পনা ও বাস্তব কাজ তাঁকে আহত করেছে। বিস্তর বাদ-প্রতিবাদের পর সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী সেই নির্মাণকাজ বন্ধের ঘোষণা দিলেন। কিন্তু মাসাহিকো গত ২৬ নভেম্বর আখড়া ঘুরে এসে প্রথম আলোকে জানালেন, প্রতিমন্ত্রীর নির্দেশ বাস্তবায়িত হয়নি। এরপর নিজেই আমাদের জন্য লিখে দিয়েছেন নিচের নিবন্ধটি। ওপরে প্রকাশিত ছবিটিও ২৬ নভেম্বর তাঁরই তোলা।
জাপানের সাংস্কৃতিক নৃতত্ত্ববিদ হিসেবে বাউল সংগীতের ওপর গবেষণামূলক কাজের প্রয়োজনে বেশ কয়েকবারই আমি বাংলাদেশ সফর করেছি। এখানে এসেই ফকির লালন শাহের গান শুনে, তাঁর মাজারের কাছে গিয়ে আমি অভিভূত হয়ে পড়ি। তাঁর প্রতি জন্মেছে আমার প্রগাঢ় শ্রদ্ধা আর ভালোবাসা। লালন শাহের শিক্ষা থেকে আমি অনেক কিছু জেনেছি, শিখেছি। আমি তাঁর সৃষ্টিকর্ম সম্পর্কে আরও গভীরভাবে জানতে কুষ্টিয়ার এক গুরুর কাছে দীক্ষা নিয়েছি। লালন শাহের সংগীতের মায়াজালে আবদ্ধ হয়েই জাপানে বসে আমি রচনা করেছি বেশ কয়েকটি নিবন্ধ।
যে কেউই লালন শাহের কর্মকাণ্ডের সান্নিধ্যে এলেই তাঁর কবিতা, গান এবং ধর্মীয় চিন্তাচেতনায় বিস্মিত হবেন। বেশির ভাগ জাপানি মনে করেন, বাংলাদেশ হচ্ছে একটি দরিদ্র দেশ। যেখানে সব সময়ই লেগে থাকে বন্যা আর দুর্ভিক্ষ। সেতু এবং সড়ক নির্মাণে বিদেশি সাহায্য ছাড়া বুঝি গত্যন্তর নেই। কিন্তু আমার বন্ধুরাই লালনের কবিতা পড়ে বিস্মিত হয়েছেন। বাংলাদেশের লোকসংস্কৃতির প্রতি তাঁদের জন্মেছে অকৃত্রিম শ্রদ্ধাবোধ।
আমি গত ২১ আগস্ট পরিদর্শন করেছি সেই খ্যাতিমান ব্যক্তিত্বের মাজার। কুষ্টিয়ার সেই মাজারের পারিপার্শ্বিক অবস্থা দেখে আমি ব্যথিত না হয়ে পারিনি। বাউল সংগীতের পথিকৃতের মাজার কত অবহেলিত! মাজারের পার্শ্ববর্তী দেয়াল ধ্বংসের পথে। আর অসংখ্য ট্রাক বিকট আওয়াজে মাজারের পাশ দিয়ে যাওয়া-আসা করছে। মাজারের আশপাশেই চলছে কমপ্লেক্স ভবন নির্মাণের কাজ। সেখানকার বাউল ও ফকিরদের পক্ষে এ বেদনাদায়ক নির্মাণ দেখে যাওয়া ছাড়া কিছুই যেন আর করার নেই! কুষ্টিয়া থেকে ঢাকায় ফিরে যথাসম্ভব অনেককেই নিজের যন্ত্রণার কথা জানিয়েছি।
লালন কমপেক্সের পরিকল্পনাকারীরা আমাকে জানিয়েছেন, বিশেষজ্ঞ এবং বিদেশি পর্যটকদের সুবিধার জন্যই এখানে ভবন নির্মিত হচ্ছে। কিন্তু আমি লালন শাহের ভালোবাসায় সিক্ত একজন ভক্ত। বেশ অনেকবার মাজার ঘুরে আসা সত্ত্বেও কংক্রিটের সুদৃশ্য ভবনে থাকার একবারও প্রয়োজন পড়েনি আমার।মাসাহিকো তোগাওয়াচলতি মাসে আবারও আমাকে বাংলাদেশে আসতে হলো। গত ২৬ নভেম্বর লালনের মাজারেও আমি গেলাম। কিন্তু সেখানে বিস্মিত হয়ে দেখলাম, সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রীর নির্দেশ সত্ত্বেও মাজারের গা ঘেঁষে কমপেক্সের নির্মাণকাজ বন্ধ হয়নি।
লালন কমপেক্সের পরিকল্পনাকারীরা আমাকে জানিয়েছেন, বিশেষজ্ঞ এবং বিদেশি পর্যটকদের সুবিধার জন্যই এখানে ভবন নির্মিত হচ্ছে। কিন্তু আমি লালন শাহের ভালোবাসায় সিক্ত একজন ভক্ত। বেশ অনেকবার মাজার ঘুরে আসা সত্ত্বেও কংক্রিটের সুদৃশ্য ভবনে থাকার একবারও প্রয়োজন পড়েনি আমার। মাজারের পাশে আমার দীক্ষাগুরু বাউলের বাড়িতেই আমি থাকি। মাটির ঘরের বারান্দায় বসে সাধারণ খাবার খাই। আমার গুরুর ছোট্ট কন্যা আমিনার কণ্ঠে লালন শাহের গান শুনি। একতারা বাজিয়ে আমি তাকে সঙ্গ দিই। মাটির ঘরের পরিবেশে যে সংগীত আমি উপভোগ করি, বিশাল মিলনায়তনে তা কখনোই উপভোগ্য হতো না।
লালনের মাজারের সেই পুরোনো চিরপরিচিত স্নিগ্ধ পরিবেশ আমি ফিরে চাই। সেখানেই আমি বারবার শুনতে চাই—
কেমন ন্যায় বিচারক খোদা
বল গো আমায়।
তাহা হলে ধনী-গরিব
কেন এ ভুবনে রয় \
ভালো-মন্দ সমান হলে
আমরা কেন পড়ি তলে
কেউ দালান কোঠার কোলে
শুয়ে আরাম পায় \
সেই আমরা মরণের পরে
যাব নাকি স্বর্গপুরে
কে মানিবে এসব হেরে
এই দুনিয়ার \
ভোগ করে ত্যাগ ভালো কথা
এ সংসারে কে করে তা
লালন বলে নাড়ি মাথা
আন্দাজে সবায় \
উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
জিএস পদে হারলেও সিনেটে নির্বাচিত ফাহিম
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (রাবি) কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (রাকসু) নির্বাচনে জিএস ও সিনেট ছাত্র প্রতিনিধি পদে লড়ছিলেন শিবির সমর্থিত ‘সম্মিলিত শিক্ষার্থী জোট’ প্যানেলের ফাহিম রেজা। নির্বাচনে জিএস পদে হারলেও সিনেটে নির্বাচিত হয়েছেন তিনি।
শুক্রবার (১৭ অক্টোবর) সকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজী নজরুল অডিটোরিয়ামে ফলাফল ঘোষণা করেন রাকসু নির্বাচন কমিশন।
আরো পড়ুন:
রাকসুতে ছাত্রদলের প্যানেলে খেলোয়াড় নার্গিস নির্বাচিত
রাকসুতে শিবিরের প্যানেলে সনাতন ধর্মালম্বী সুজন জয়ী
কমিশনের তথ্যনুসারে, সিনেটে ছাত্র প্রতিনিধি নির্বাচনে ৫টি পদের বিপরীতে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন ৫৮ জন প্রার্থী। এতে ছাত্র শিবিরের সম্মিলিত শিক্ষার্থী জোট থেকে তিনজন, একজন স্বতন্ত্র এবং একজন সাবেক সমন্বয়ক নির্বাচিত হয়েছেন। এতে রাকসুর ভিপি পদের পাশাপাশি ৯ হাজার ৪৬৭ ভোট পেয়ে সিনেটে ছাত্র প্রতিনিধি নির্বাচিত হয়েছেন মোস্তাকুর রহমান জাহিদ, এজিএস পদে পাশাপাশি ৪ হাজার ৬৯০ ভোট পেয়ে সিনেট সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন এসএম সালমান সাব্বির। এছাড়াও রাকসুর জিএস পদের পাশাপাশি ১২ হাজার ৮৩৩ ভোট পেয়ে সিনেট সদস্য পদে নির্বাচিত হলেন সাবেক সমন্বয়ক সালাউদ্দিন আম্মার।
এদিকে, ফাহিম রেজা ৮ হাজার ২০৫ ভোট পেয়ে এবং আকিল বিন তালেব ৫ হাজার ৭০৭ ভোট পেয়ে সিনেট সদস্য হয়েছেন।
ফলাফল ঘোষণা শেষে প্রধান নির্বাচন কমিশনার অধ্যাপক ড. এফ নজরুল বলেন, ‘‘আমরা চেষ্টা করেছি সুষ্ঠুভাবে নির্বাচন করার। শিক্ষার্থীরা আমাদের নির্বাচন ব্যবস্থা নিয়ে অনেক খুশি। যারা নির্বাচিত হয়েছেন, তারা শিক্ষার্থীদের কল্যাণে কাজ করবেন বলে আমি বিশ্বাস করি।’’
ঢাকা/ফাহিম/বকুল