বঙ্গোপসাগরের বুকে ৮ বর্গকিলোমিটার আয়তনের প্রবালসমৃদ্ধ দ্বীপ সেন্ট মার্টিন। দীর্ঘ ১০ মাস বন্ধ থাকার পর আজ সোমবার তিনটি জাহাজে ১ হাজার ১৭৪ জন পর্যটক দ্বীপ ভ্রমণের সুযোগ পেলেন। কক্সবাজার শহরের নুনিয়াছটা বিআইডব্লিউটিএ জেটিঘাট থেকে পর্যটকদের নিয়ে সেন্ট মার্টিনের উদ্দেশে রওনা দেয় তিনটি জাহাজ এমভি কর্ণফুলী এক্সপ্রেস, এমভি বার আউলিয়া ও কেয়ারি সিন্দবাদ। ১২০ কিলোমিটারের বঙ্গোপসাগর পথ পাড়ি দিয়ে বেলা দেড়টার দিকে একে একে জাহাজ তিনটি পৌঁছে যায় সেন্ট মার্টিনের জেটিঘাটে।

সেন্ট মার্টিনের চারদিকের পানি স্বচ্ছ ও নীল। জাহাজ থেকে পর্যটকেরা নীল জলে ঘেরা দ্বীপের সৌন্দর্য দেখে মুগ্ধ। জেটিঘাটে পর্যটকদের ফুল দিয়ে বরণ করে নেন বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ড, পর্যটন করপোরেশন, পরিবেশ অধিদপ্তর ও স্থানীয় হোটেল মালিকেরা। নতুন অতিথি দেখতে জেটিঘাটে ভিড় করেন দ্বীপের বাসিন্দারাও। বেলা তিনটার দিকে পর্যটকদের দ্বীপে রেখে জাহাজগুলো রওনা দেয় কক্সবাজারের উদ্দেশে।

সেন্ট মার্টিন দ্বীপের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ও জীববৈচিত্র্য রক্ষায় পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় গত ২২ অক্টোবর ১২টি নির্দেশনা–সংবলিত প্রজ্ঞাপন জারি করে। তাতে বলা হয়, ১ ফেব্রুয়ারি থেকে টানা ৯ মাস বন্ধ থাকার পর ১ নভেম্বর থেকে তিন মাসের জন্য সেন্ট মার্টিন উন্মুক্ত থাকবে। দৈনিক দুই হাজার পর্যটক দ্বীপ ভ্রমণে যেতে পারবেন। তবে নভেম্বর মাসে দ্বীপে রাত যাপন করতে পারবেন না। ডিসেম্বর জানুয়ারি দুই মাস রাতযাপনের সুযোগ রাখা হয়। রাতযাপনের ব্যবস্থা না থাকায় গত নভেম্বর মাসে পর্যটকেরা সেন্ট মার্টিন যাননি।

সেন্ট মার্টিন দ্বীপের দোকান মালিক সমিতির সহসভাপতি মৌলভি নুর আহমদ প্রথম আলোকে বলেন, দ্বীপের মানুষেরা দীর্ঘ সময় ধরে পর্যটকের অপেক্ষায় ছিলেন। আজ একসঙ্গে তিনটি জাহাজ থেকে এক হাজারের বেশি পর্যটককে দ্বীপে নামতে দেখে স্থানীয়দের মুখে হাসি ফুটে উঠেছে। এত দিন পর্যটক না থাকায় দ্বীপের কয়েক হাজার মানুষ অভাব–অনটনে দিন কাটিয়েছেন। ২৩০টির বেশি হোটেল, রেস্তোরাঁ, দোকানপাট বন্ধ ছিল। এখন চাঞ্চল্য ফিরে এসেছে।

বেলা দুইটার দিকে দ্বীপের পূর্ব সৈকতের বালিয়াড়িতে পা রেখে মুঠোফোনে ছবি তুলতে ব্যস্ত হয়ে পড়েন ময়মনসিংহের পর্যটক ঝরনা-বাহাদুর দম্পতি। এরপর পাশের একটি রেস্তোরাঁয় গিয়ে দুপুরের খাবার সেরে দুজন নেমে পড়েন পশ্চিম সৈকতে। সেখানে প্রখ্যাত কথাসাহিত্যিক হ‌ুমায়ূন আহমেদের বাংলোবাড়ি-সমুদ্রবিলাস। বেশ কিছু পর্যটক সমুদ্রবিলাসের ছবি তুলে নেমে পড়েন পাথর স্তূপের নীল জলের সমুদ্রসৈকতে।

ঝরনা ইসলাম বলেন, ‘জীবনের প্রথম সেন্ট মার্টিন দেখে মুগ্ধ না হয়ে পারছি না। ছবি এবং ভিডিওতে যা দেখেছি, বাস্তবে তার চেয়েও সুন্দর। এক রাতের জন্য আমরা এসেছি, এখন ইচ্ছা হচ্ছে আরও দুই রাত কাটিয়ে যেতে। কিন্তু তা সম্ভব নয়।’

আজহারুল ইসলাম নামের আরেক পর্যটক বলেন, সকাল ছয়টার দিকে তাঁরা তিনজন হোটেল থেকে ইজিবাইক টমটমে চড়ে শহরের বিআইডব্লিউটিএ জেটিঘাটে পৌঁছান। এরপর টিকিট সংগ্রহ, কিউআর কোড স্ক্যান, তথ্য যাচাই, নিরাপত্তা ও ব্যবস্থাপনা দেখে ভালো লেগেছে। সেন্ট মার্টিন জেটিতেও পর্যটকদের সরকারের নির্দেশনা প্রচার করতে দেখা গেছে।

দ্বীপের পরিবেশকর্মী ওসমান গণি বলেন, সৈকত ঘুরে ঘুরে তাঁরা কয়েকজন পর্যটককে প্লাস্টিক-পলিথিন না ফেলতে পরামর্শ দিচ্ছেন। যদিও কোনো পর্যটকের হাতে এসব পাওয়া যায়নি। সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী সৈকতের কোথাও বারবিকিউ, খাবারের দোকান বসেনি। ময়লা–আবর্জনাও তেমন নেই।

সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী, রাতে সৈকতে আলো জ্বালানো, শব্দ সৃষ্টি, বারবিকিউ পার্টি, কেয়াবনে প্রবেশ, কেয়া ফল সংগ্রহ বা ক্রয়-বিক্রয় এবং সামুদ্রিক কাছিম, পাখি, প্রবাল, রাজ কাঁকড়া, শামুক-ঝিনুকসহ যেকোনো জীববৈচিত্র্যের ক্ষতি করা কঠোরভাবে নিষিদ্ধ। সৈকতে মোটরসাইকেল, সি-বাইকসহ যেকোনো মোটরচালিত যান চলাচল নিষিদ্ধ থাকবে। তা ছাড়া ভ্রমণকালে পলিথিন বহন করা যাবে না। একবার ব্যবহার্য প্লাস্টিক যেমন চিপসের প্যাকেট, প্লাস্টিক চামচ, স্ট্র, সাবান ও শ্যাম্পুর মিনি প্যাক, ৫০০ বা ১০০০ মিলিলিটারের প্লাস্টিক বোতল রাখতেও নিষেধ করা হয়েছে। পর্যটকদের নিজেদের পানির ফ্লাক্স সঙ্গে রাখার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।

সেন্ট মার্টিনে পর্যটকদের ফুল দিয়ে স্বাগত জানানো হচ্ছে। আজ দুপুরে.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: পর যটক র পর ব শ

এছাড়াও পড়ুন:

ট্রাভেল পাস ছাড়া সেন্টমার্টিনের টিকিট বিক্রি: কেয়ারি সিন্দাবাদকে জরিমানা

সরকার অনুমোদিত ট্রাভেল পাস ছাড়া অবৈধভাবে পর্যটকদের কাছে টিকিট বিক্রির অভিযোগে সেন্টমার্টিনগামী কেয়ারি সিন্দাবাদ জাহাজকে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করেছে কক্সবাজার জেলা প্রশাসন।

সোমবার (১ ডিসেম্বর) সকাল সাড়ে ৭টার দিকে কক্সবাজার শহরের নুনিয়ারছড়া জেটিঘাট থেকে সেন্টমার্টিন রুটে জাহাজ চলাচল শুরু হয়। যাত্রার আগে জেলা প্রশাসনের ভ্রাম্যমাণ আদালত অনিয়ম শনাক্ত করলে কেয়ারি সিন্দাবাদের বিরুদ্ধে এ ব্যবস্থা নেওয়া হয়।

আরো পড়ুন:

ময়মনসিংহে ক্লিনিকে অভিযানে কারাদণ্ড-জরিমানা 

ইটভাটার বিরুদ্ধে অভিযানে বাধা, এনসিপি নেতাকে আসামি করে মামলা

কক্সবাজার সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নিলুফা ইয়াসমিন চৌধুরী বলেন, “তিনজন পর্যটকের কাছে ১৮০০ টাকা করে ট্রাভেল পাস ছাড়া (কিউআর কোডবিহীন) সরাসরি টিকিট বিক্রির সত্যতা পাওয়ায় জাহাজ কর্তৃপক্ষকে অর্থদণ্ড করা হয়েছে।” 

তিনি আরো বলেন, “নির্দেশনা অনুযায়ী এভাবে টিকিট বিক্রি করা যাবে না। প্রথমদিন হওয়ায় গ্রেপ্তার করা হয়নি, মুচলেকা নিয়ে সতর্ক করা হয়েছে। পরবর্তীতে এমন অনিয়ম হলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

ইউএনও নিলুফা ইয়াসমিন চৌধুরী জানান, কেবল কক্সবাজারের স্থানীয়রা জাতীয় পরিচয়পত্র যাচাই করে টিকিট সংগ্রহ করতে পারবেন। অন্যান্য পর্যটকদের ক্ষেত্রে বাধ্যতামূলকভাবে সরকার অনুমোদিত ট্রাভেল পাস নিতে হবে।

এদিকে, ১ নভেম্বর সেন্টমার্টিন পর্যটকদের জন্য উন্মুক্ত করা হলেও রাত্রিযাপনের অনুমতি না থাকায় পর্যটকরা তখন আগ্রহ দেখাননি। তবে, আজ ১ ডিসেম্বর থেকে আগামী ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত দুই মাস রাত্রিযাপনের সুযোগ থাকায় মৌসুমের প্রতীক্ষিত জাহাজ চলাচল শুরু হয়েছে। প্রথমদিন সেন্ট মার্টিনগামী যাত্রী ছিলেন ১ হাজার ১৭৪ জন পর্যটক।

জাহাজ মালিকদের সংগঠন ‘সি ক্রুজ অপারেটর ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ’-এর সাধারণ সম্পাদক হোসাইন ইসলাম বাহাদুর জানান, প্রশাসন মোট ৬টি জাহাজকে অনুমতি দিয়েছে। যাত্রীর সংখ্যার ওপর ভিত্তি করে প্রথমদিন ৩টি জাহাজ চলাচল করেছে। সেগুলো হলো- এমভি কর্ণফুলী এক্সপ্রেস, এমভি বারো আউলিয়া ও কেয়ারি সিন্দাবাদ। 

মৌসুমের প্রথম দিনের কার্যক্রম পরিদর্শন শেষে কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক আব্দুল মান্নান বলেন, ‘সেন্টমার্টিন ভ্রমণের ওপর সরকারের নির্দেশনা বাস্তবায়নে জেলা প্রশাসন কঠোর অবস্থানে আছে। পর্যটকদের নিরাপত্তা, হয়রানি রোধ ও পরিবেশ রক্ষায় নেওয়া ব্যবস্থা নিয়মিত তদারকি করা হবে।”

ট্যুরিস্ট পুলিশের কক্সবাজার রিজিয়নের প্রধান (অতিরিক্ত ডিআইজি) আপেল মাহমুদ জানান, পর্যটকদের নিরাপত্তা ও বিধিনিষেধ নিশ্চিত করতে প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে।

ঢাকা/তারেকুর/মাসুদ

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ট্রাভেল পাস ছাড়া টিকিট বিক্রি, সেন্ট মার্টিনগামী জাহাজকে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা
  • ট্রাভেল পাস ছাড়া সেন্টমার্টিনের টিকিট বিক্রি: কেয়ারি সিন্দাবাদকে জরিমানা
  • সেন্ট মার্টিনে জাহাজ চলাচল শুরু, প্রথম দিনে গেলেন ১২০০ পর্যটক
  • রাঙামাটির ঝুলন্ত সেতুর আকর্ষণ কেন দিন দিন কমছে
  • জাহাজ চলাচল শুরু, খুলল সেন্টমার্টিনের দুয়ার
  • সেন্ট মার্টিনে পর্যটক পরিবহন শুরু কাল, তিন জাহাজে যাচ্ছেন ১২০০ পর্যটক
  • রাত্রিযাপনসহ পর্যটকদের জন্য উন্মুক্ত হচ্ছে সেন্ট মার্টিন