নিউইয়র্কের প্রথম মুসলিম মেয়র কে এই জোহরান মামদানি
Published: 5th, November 2025 GMT
যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কের নতুন মেয়র নির্বাচিত হয়েছেন ডেমোক্রেটিক পার্টির প্রার্থী জোহরান মামদানি। তিনি নিউইয়র্ক অঙ্গরাজ্যের সাবেক গভর্নর ও স্বতন্ত্র প্রার্থী অ্যান্ড্রু কুমোকে হারিয়ে এ জয় পেয়েছেন। মামদানির জয়ে নিউইয়র্ক প্রথমবারের মতো একজন মুসলিম মেয়র পাচ্ছে।
এ নিয়ে দ্বিতীয়বারের মতো মামদানির কাছে হেরে গেলেন অ্যান্ড্রু কুমো। এর আগে গত জুন মাসে ডেমোক্রেটিক পার্টির প্রাইমারিতে মামদানির কাছে হেরে গিয়েছিলেন অভিজ্ঞ এই রাজনীতিক।
মামদানির জয় ডেমোক্রেটিক পার্টির প্রগতিশীল শাখার জন্য একটি সফলতা হিসেবে গণ্য করা হচ্ছে। এমন এক সময়ে এই জয় এল, যখন জাতীয় পর্যায়ের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিরুদ্ধে কীভাবে মোকাবিলা করা হবে, তা নিয়ে ডেমোক্র্যাটরা বিভক্ত হয়ে পড়েছেন।
তাঁর স্ত্রী একজন সিরীয় বংশোদ্ভূত মার্কিন শিল্পী, নাম রামা দুয়াজি। তিনি টেক্সাসে জন্মগ্রহণ করেছেন। পরে লেখাপড়ার জন্য রামা নিউইয়র্ক শহরে চলে আসেন। রামার বয়স ২৮ বছর। তিনি জেন-জি প্রজন্মের প্রথম নারী, যিনি নিউইয়র্কের ফার্স্ট লেডি হতে চলেছেন।ট্রাম্প নিজেও নিউইয়র্ক থেকে এসেছেন। তিনি মামদানিকে ‘কমিউনিস্ট’ আখ্যা দিয়ে বলেছিলেন, যদি মামদানি জেতে, তবে তিনি নিউইয়র্ক নগরের নিয়ন্ত্রণ নেবেন।
গতকাল মঙ্গলবার স্থানীয় সময় সকাল ছয়টা থেকে নিউইয়র্কে মেয়র নির্বাচনের ভোট গ্রহণ শুরু হয়, শেষ হয় স্থানীয় সময় রাত ৯টায় (বাংলাদেশ সময় বুধবার সকাল ৮টা)। এর পরপরই শুরু হয় ভোট গণনা।
নিউইয়র্ক নগরের বর্তমান মেয়র এরিক অ্যাডামসও স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে দ্বিতীয় মেয়াদের জন্য লড়াইয়ে নেমেছিলেন। তবে গত সেপ্টেম্বরে নির্বাচনী দৌড় থেকে সরে দাঁড়ান তিনি, পরে তিনি স্বতন্ত্র প্রার্থী কুমোকে সমর্থন জানান। এই প্রতিযোগিতায় রিপাবলিকান পার্টির প্রার্থী ছিলেন কার্টিস স্লিওয়া।
ট্রাম্প মামদানিকে ‘কমিউনিস্ট’ আখ্যা দিয়ে বলেছিলেন, যদি মামদানি জেতে, তবে তিনি নিউইয়র্ক সিটির নিয়ন্ত্রণ নেবেন।জোহরান মামদানি কেজোহরান মামদানি নিউইয়র্ক অঙ্গরাজ্যের আইন সভার তিনবারের নির্বাচিত সদস্য। একাধিক প্রতিযোগীর সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে তিনি মেয়র নির্বাচনের দৌড়ে আসেন। শুরুতে তাঁকে তেমন একটা গুরুত্ব দেওয়া হয়নি। বরং শুরুতে ধারণা করা হচ্ছিল, ডেমোক্রেটিক পার্টির প্রার্থী নির্বাচনে অ্যান্ড্রু কুমো সহজ জয় পেতে চলেছেন।
মামদানির জন্ম উগান্ডায়। তবে শিশু মামদানি বড় হয়েছেন দক্ষিণ আফ্রিকার কেপটাউনে। সাত বছর বয়সে বাবা-মায়ের হাত ধরে তিনি নিউইয়র্কে চলে আসেন।
জোহরানের বাবার নাম মাহমুদ মামদানি। তিনি ব্রিটিশ ভারতে জন্ম নেওয়া উগান্ডার শিক্ষাবিদ। তিনি নিউইয়র্কের কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক। মামদানির মায়ের নাম মীরা নায়ার। তিনি বিখ্যাত ভারতীয় চলচ্চিত্র নির্মাতা।
অ্যাসেম্বলি সদস্য হওয়ার আগে মামদানি একজন কাউন্সেলর ছিলেন। এ ছাড়া তিনি একজন ‘র্যাপার’।
আরও পড়ুননিউইয়র্ক সিটির ইতিহাসে প্রথম মুসলিম মেয়র হলেন জোহরান মামদানি২ ঘণ্টা আগেশেষ কয়েক দিনের নির্বাচননির্বাচনী প্রচারের শেষ দিকে মামদানি নিউইয়র্কের ভোটারদের ‘অলিগার্ক বা ধনী শ্রেণি বনাম গণতন্ত্রের’ মধ্যে একটিকে বেছে নিতে বলেছিলেন।
নির্বাচনী প্রচারণার শেষ দিনগুলো, বিশেষ করে আগাম ভোটের শেষ সপ্তাহান্তে পুরো নগরে মামদানির উপস্থিতি লক্ষ করা গেছে।
সকালে জোহরান গির্জায় উপস্থিত ছিলেন, দুপুরে রেডিও শোতে। মূল শহরের বাইরের জেলাগুলোর সুপারমার্কেটগুলোয় তিনি ঘুরে বেড়িয়েছেন, ইনফ্লুয়েন্সারদের লাইভ স্ট্রিমে হাজির হয়েছেন, ইউনিয়ন স্কয়ারে ফ্রিস্টাইল র্যাপ ব্যাটলে অংশ নিয়েছেন এবং শনিবার রাতে নাইটক্লাবে গিয়ে নির্বাচনী প্রচার চালিয়েছেন।
এবার নিউইয়র্কে মেয়র নির্বাচনে রেকর্ড পরিমাণ আগাম ভোট পড়েছে। শহরের মোট ভোটার ৪৭ লাখ। তার মধ্যে প্রায় ৭ লাখ ৩৫ হাজার আগাম ভোট পড়েছে।
প্রেসিডেন্ট নির্বাচন ছাড়া অন্য কোনো নির্বাচনে নিউইয়র্ক শহরে এটিই সবচেয়ে বেশি আগাম ভোট পড়ার ঘটনা।
আরও পড়ুননিউইয়র্কে মেয়র নির্বাচন: সর্বশেষ চার জরিপেও এগিয়ে জোহরান মামদানি০৩ নভেম্বর ২০২৫ইতিহাস তৈরি করা মেয়রআগামী বছরের ১ জানুয়ারি নিউইয়র্কের মেয়র হিসেবে শপথ নেবেন জোহরান। তিনি এমন একটি শহরের দায়িত্ব নিতে চলেছেন, যেটির চরিত্র বেশ জটিল। এখানে প্রায় ৮৫ লাখ মানুষ বসবাস করেন, রয়েছে বিশাল প্রশাসন, তিন লাখ পৌরকর্মী এবং এই শহর পরিচালনার বাজেট সাড়ে ১১ হাজার কোটি ডলারের বেশি।
জোহরান শুধু নিউইয়র্কের প্রথম মুসলিম মেয়রই নন, তিনি প্রথম দক্ষিণ এশীয়, যিনি এ দায়িত্ব পালন করতে চলেছেন। তিনি নিউইয়র্কের আধুনিক ইতিহাসের সর্বকনিষ্ঠ মেয়র হতে চলেছেন।
জোহরানের স্ত্রী একজন সিরীয় বংশোদ্ভূত মার্কিন শিল্পী, নাম রামা দুয়াজি। তিনি টেক্সাসে জন্মগ্রহণ করেছেন। পরে লেখাপড়ার জন্য রামা নিউইয়র্ক শহরে চলে আসেন। রামার বয়স ২৮ বছর। তিনি জেন-জি প্রজন্মের প্রথম নারী, যিনি নিউইয়র্কের ফার্স্ট লেডি হতে চলেছেন।
আরও পড়ুনফিলিস্তিনের প্রতি সমর্থনই জোহরান ও রামাকে এক করেছে২৬ জুন ২০২৫.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ন উইয়র ক র ম মদ ন র আগ ম ভ ট র প রথম র জন য
এছাড়াও পড়ুন:
জোহরান মামদানির সাফল্যে ডেমোক্র্যাটদের উচ্ছ্বাস; কিন্তু ক্ষমতায় ফেরা কি সহজ হবে
যুক্তরাষ্ট্রে ক্ষমতা ও নেতৃত্ব—দুটিই হারানোর এক বছর পর ডেমোক্রেটিক পার্টি এখন এক সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে আছে।
মাসের পর মাস আত্মসমালোচনার পর এ সপ্তাহে তিনটি বড় নির্বাচনী লড়াই ডেমোক্র্যাটদের নতুন করে অতিপ্রয়োজনীয় গতি ও আত্মবিশ্বাস এনে দিয়েছে।
৩৪ বছর বয়সী এক ডেমোক্র্যাট সমাজতান্ত্রিক প্রার্থী যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে বড় শহর নিউইয়র্কের মেয়র নির্বাচনে অপ্রত্যাশিতভাবে জয়ী হয়েছেন। অন্যদিকে ভার্জিনিয়ায় সাবেক একজন সিআইএ কর্মকর্তা এ অঙ্গরাজ্যের প্রথম নারী গভর্নর হয়েছেন।
আবার, নিউ জার্সিতে গভর্নর পদে নৌবাহিনীর সাবেক এক হেলিকপ্টার পাইলট প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প–সমর্থিত রিপাবলিকান প্রার্থীকে পরাজিত করে নিরঙ্কুশ জয় পেয়েছেন। নির্বাচনী প্রচারে ট্রাম্পের বিরোধিতাকে মুখ্য ইস্যু করেছিলেন তিনি।
জয়ী এই তিন ডেমোক্রেটিক পার্টির প্রার্থী হলেন যথাক্রমে নিউইয়র্ক অঙ্গরাজ্য পরিষদ সদস্য জোহরান মামদানি, অ্যাবিগেইল স্প্যানবার্গার ও নিউ জার্সি থেকে নির্বাচিত কংগ্রেস সদস্য মিকি শেরিল। তিনজনই ভিন্ন ভিন্ন ধরনের প্রচার চালিয়েছেন।
প্রেসিডেন্ট নির্বাচন ও ২০২৮ সালের ভোটের আগে কোনো নির্দিষ্ট নেতৃত্ব না থাকায় ডেমোক্র্যাটরা এখন ভাবছেন কীভাবে তাঁরা একটি স্পষ্ট বার্তা দেবেন, নিজেদের ভাবমূর্তি পুনর্গঠন করবেন ও ভোটারদের ফিরিয়ে আনার নতুন কৌশল তৈরি করবেন।তিন প্রার্থীর এ জয় ডেমোক্র্যাটদের ভবিষ্যৎ পথনির্দেশ নিয়ে নতুন বিতর্ক তৈরি করেছে—২০২৬ সালের গুরুত্বপূর্ণ মধ্যবর্তী নির্বাচনে ও নির্বাচনের পরে দলের নেতৃত্ব কারা নেবেন—মধ্যপন্থী নাকি বামপন্থীরা?
তবে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন ও ২০২৮ সালের ভোটের আগে কোনো নির্দিষ্ট নেতৃত্ব না থাকায় ডেমোক্র্যাটরা এখন ভাবছেন কীভাবে তাঁরা একটি স্পষ্ট বার্তা দেবেন, নিজেদের ভাবমূর্তি পুনর্গঠন করবেন ও ভোটারদের ফিরিয়ে আনার নতুন কৌশল তৈরি করবেন।
কেউ কেউ মনে করেন, জনগণের জীবনযাত্রার ব্যয়সংকট মোকাবিলায় মনোযোগ বাড়িয়ে ডেমোক্র্যাটরা এ লক্ষ্য অর্জন করতে পারেন। অন্যরা বলেন, ট্রাম্পের বিরুদ্ধে আরও জোরালো রাজনৈতিক অবস্থান নেওয়া হবে জরুরি।
ভার্জিনিয়ার গভর্নর পদে বিজয়ী অ্যাবিগেইল স্প্যানবার্গার (ডানে)