সেনা কর্মকর্তাদের ট্রাইব্যুনালে আনতে সেনাবাহিনী পূর্ণ সহযোগিতা করেছে: চিফ প্রসিকিউটর
Published: 22nd, October 2025 GMT
মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ১৫ সেনা কর্মকর্তাকে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে হাজির করতে সেনাবাহিনীর পূর্ণ সহযোগিতা পাওয়ার কথা জানিয়েছেন এই আদালতের চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম।
আজ বুধবার সকালে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল প্রাঙ্গণে এক ব্রিফিংয়ে মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম এ কথা জানান। সেনাবাহিনীসহ এই বিচারপ্রক্রিয়াকে ‘স্মুদলি (সুচারুভাবে)’ পরিচালনার বিষয়ে যাঁরা সহায়তা করেছেন, তাঁদের সবার প্রতি কৃতজ্ঞতাও জানান তিনি।
বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলের গুম-নির্যাতনের ঘটনায় মানবতাবিরোধী অপরাধের দুটি মামলায় এবং জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের সময় হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় করা একটি মামলায় মোট ২৫ জন সাবেক-বর্তমান সেনা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ৮ অক্টোবর গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছিলেন ট্রাইব্যুনাল। এরপর ১১ অক্টোবর বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে কর্মরত ১৪ জন এবং অবসর প্রস্তুতিমূলক ছুটিতে থাকা ১ জন কর্মকর্তাকে সেনা হেফাজতে নেওয়া হয়েছে। সেদিন সেনাবাহিনীর অ্যাডজুট্যান্ট জেনারেল মেজর জেনারেল মো.
১০ দিন পর আজ বুধবার ওই ২৫ কর্মকর্তাকে ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হয়। আদালত তাঁদের কারাগারে পাঠানোর আদেশ দিলে তাঁদের নিয়ে যাওয়া হয় ঢাকার সেনানিবাসের সাবজেলে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ইতিমধ্যে সেনানিবাসের বাশার রোডসংলগ্ন উত্তর দিকে অবস্থিত ‘এম ই এস বিল্ডিং নম্বর-৫৪’–কে সাময়িকভাবে কারাগার হিসেবে ঘোষণা করেছে।
চিফ প্রসিকিউটর তাজুল ইসলাম বলেন, আজ যাঁদের উপস্থিত করা হয়েছিল, তাঁদের গ্রেপ্তারের ব্যাপারে, সোপর্দ করার ব্যাপারে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী যেমন কাজ করেছে, তেমনি বাংলাদেশের সার্বভৌমত্বের রক্ষক হিসেবে যাদের মনে করা হয়, সেই বাংলাদেশ সেনাবাহিনী এই আদালতের প্রক্রিয়াকে সাহায্য করেছে। তারা ঘোষণা দিয়েছিল, বিচারপ্রক্রিয়ার প্রতি তাদের সব সমর্থন থাকবে। তারা সেই সমর্থন তাঁদের (প্রসিকিউশন) দিয়েছে, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে দিয়েছে। এই আসামিদের গ্রেপ্তার করে আদালতে হাজির করার ব্যাপারে তারা (সেনাবাহিনী) সম্পূর্ণ সহযোগিতা করেছে।
এটা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর মাধ্যমে জানতে পেরেছেন বলে তাজুল ইসলাম জানান।
সেনাবাহিনীকে নিয়ে অপপ্রচার না করার আহ্বান রেখে মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম বলেন, বিচারপ্রক্রিয়াই একটি রাষ্ট্রের সভ্যতার মাপকাঠি নির্ধারণ করে। একটি রাষ্ট্র কতটা ‘ফাংশনাল’ আছে, সেটা নির্ধারিত হয় সে রাষ্ট্রের বিচার বিভাগ কতটা ‘স্মুদলি ফাংশন’ করে। তাই এই বিচারপ্রক্রিয়া পরিচালনায় যাঁরা সহযোগিতা করেছেন, প্রসিকিউশনের পক্ষ থেকে তাঁদের সবাইকে ধন্যবাদ জানান তিনি।
সেনাবাহিনীকে নিয়ে তাজুল ইসলাম বলেন, তারা (সেনাবাহিনী) যেমন জুলাই-আগস্টে নিরস্ত্র ছাত্র-জনতার ওপর পরিচালিত হত্যাযজ্ঞের সময় যেমন রুখে দাঁড়িয়েছিল বা মাঝখানে ভূমিকা পালন করেছিল, যেটা জাতি স্মরণ করে; একইভাবে গুমের বিচারপ্রক্রিয়ার ক্ষেত্রেও তারা সহযোগিতা করছে, আইনের প্রতি তাদের শ্রদ্ধা দেখিয়েছে।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ত জ ল ইসল ম কর মকর ত সহয গ ত প রস ক অপর ধ
এছাড়াও পড়ুন:
কক্সবাজারে নদীবন্দরের সীমানা নিয়ে উত্তেজনা, বিক্ষোভে পিছু হটল বিআইডব্লিউটিএ
কক্সবাজার শহরে নদীবন্দরের সীমানা নির্ধারণ নিয়ে স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের উত্তেজনা দেখা দিয়েছে। আজ রোববার দুপুরে শহরের বাঁকখালী নদীর কস্তরাঘাট এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। শেষ পর্যন্ত স্থানীয় বাসিন্দাদের বিক্ষোভ ও সড়ক অবরোধে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে নিয়ে পিছু হটেন বিআইডব্লিউটিএর (বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ) কর্মকর্তারা।
স্থানীয় সূত্র জানায়, আজ কস্তুরাঘাট এলাকায় নদীবন্দরের সীমানা নির্ধারণে বিআইডব্লিউটিএর কর্মকর্তারা আসবেন—এমন খবরেই সকাল থেকেই স্থানীয় বাসিন্দারা জড়ো হতে থাকেন। সকাল ৯টা থেকে বদরমোকাম, কস্তুরাঘাট ও পেশকারপাড়ার লোকজন গাছের গুঁড়ি ফেলে ও টায়ার জ্বালিয়ে সড়ক অবরোধ শুরু করেন। এতে ওই এলাকার যানচলাচল বন্ধ হয়ে যায়। বেলা ১১টার দিকে একই জায়গায় কয়েক শ নারী-পুরুষ এক হয়ে মানববন্ধন করেন। পরে দুপুর ১২টার দিকে পুলিশ, র্যাব, আনসারসহ বিভিন্ন বাহিনীর সদস্যদের নিয়ে বিআইডব্লিউটিএর কর্মকর্তারা কস্তুরাঘাট এলাকায় পৌঁছান। এরপর উত্তেজনা আরও বাড়ে। শেষ পর্যন্ত সীমানা নির্ধারণের কাজ বন্ধ করেই ফিরে যায় বিআইডব্লিউটিএ।
বিআইডব্লিউটিএ ও জেলা প্রশাসন সূত্র জানায়, গত ১ থেকে ৫ সেপ্টেম্বর বাঁকখালী নদীর ওই অংশে উচ্ছেদ অভিযানে ৪৯৬টি অবৈধ স্থাপনা সরিয়ে প্রায় ৬৩ একর জমি উদ্ধার করা হয়। উদ্ধার জমি আবার দখলের ঝুঁকি থাকায় কাঁটাতারের বেড়া ও সীমানা পিলার দেওয়ার উদ্যোগ নেয় বিআইডব্লিউটিএ।
যা বলছেন বিক্ষোভকারীরা
অবরোধকারীদের দাবি, উচ্ছেদ হওয়া স্থানের মধ্যে ব্যক্তিমালিকানাধীন খতিয়ানভুক্ত জমিও রয়েছে। পারুল আক্তার নামের এক নারী বলেন, ‘আমাদের খতিয়ান আছে, খাজনাও দিচ্ছি। ক্ষতিপূরণ না দিয়ে বা আলোচনা না করে ঘরবাড়ি ভাঙা ও কাঁটাতার দেওয়া চলবে না।’
সাবিনা ইয়াছমিন নামের আরেক নারী বলেন, অনেক পাকা ভবন যখন তৈরি হলো, তখন কেউ থামাননি। এখন হঠাৎ উচ্ছেদ করা হয়েছে। এতে অনেকেই আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়েছেন। ক্ষতিপূরণ না হওয়া পর্যন্ত তাঁরা এ জায়গায় স্থায়ী কোনো অবকাঠামো হতে দেবেন না।
স্থানীয় বাসিন্দাদের এ মানববন্ধনে বিএনপি ও এর অঙ্গসহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীরাও অংশ নেন। তাঁদের একজন কক্সবাজার পৌরসভার সাবেক কাউন্সিলর ও জেলা মহিলা দলের সভাপতি নাসিমা আকতার। তিনি বলেন, বাঁকখালী নদীর দখল নিয়ে পরিবেশ অধিদপ্তরের পৃথক তিনটি মামলা রয়েছে। বিআইডব্লিউটিএর উচ্ছেদ অভিযান বন্ধ নিয়েও হাইকোর্টে তিনটি মামলা হয়েছে। মামলা নিষ্পত্তি না করে ঘরবাড়ি উচ্ছেদ করে জায়গাজমিতে কাঁটাতার দিয়ে ঘিরে ফেলা অন্যায়। আলোচনার মাধ্যমে সংকটের নিরসন না করলে পরিস্থিতি জটিল আকার ধারণ করতে পারে।
কর্মসূচিতে থাকা জেলা যুবদলের প্রচার সম্পাদক ও আইনজীবী মো. ইসমাইল বলেন, বিআইডব্লিউটিএর উচ্ছেদ করা জমিতে অসংখ্য মানুষের খতিয়ানভুক্ত জমি রয়েছে। উচ্ছেদ অভিযানের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে তিনিসহ ৭৭ জন মামলা করেছেন।