গোপালগঞ্জ-২ আসনে বিএনপির মনোনয়ন পুনর্মূল্যায়নের দাবি
Published: 18th, November 2025 GMT
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে বিএনপির ঘোষিত ২৩৭ আসনের সম্ভাব্য প্রার্থী তালিকায় নেই দলটির অনেক ত্যাগী নেতাদের নাম। মনোনয়নবঞ্চিত এসব নেতারা মুখ না খুললেও কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে ক্ষোভ ও অসন্তোষ বিরাজ করছে।
তেমনি গোপালগঞ্জ-২ আসনের বিএনপির কর্মী সমর্থকদের মধ্যে ক্ষোভ ও অসন্তোষ বিরাজ করছে। গোপালগঞ্জ-২ আসন গোপালগঞ্জ সদর উপজেলা, একটি পৌরসভা ও কাশিয়ানী উপজেলার সাতটি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত। এ আসনে কেন্দ্রীয় ড্যাব নেতা ও জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য ডা.
গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার দুর্গাপুর ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক সভাপতি রুবেল মোল্লা বলেন, “দীর্ঘ ১৭ বছর অনেক ত্যাগ ও জুলুম-অত্যাচার সহ্য করেছে জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি সিরাজুল ইসলাম। আমাদেরও এই অত্যাচার সহ্য করতে হয়েছে। তিনবার বিএনপির হয়ে গোপালগঞ্জ-২ আসনে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে, আওয়ামী লীগ নেতাকর্মী ও পুলিশের শত বাঁধার মধ্যেও দলের কেন্দ্র ও আঞ্চলিক নেতাদের নির্দেশনায় ঝুঁকি নিয়ে সব কর্মকাণ্ড পরিচালনা করা হয়েছে। নেতাকে মারপিট ও বাড়িতে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর করা হয়েছে। জেল-জুলুমের বিরুদ্ধে আইনি লড়াই এবং সর্বদা কর্মীদের পাশে থেকেছেন তিনি। কিন্তু যিনি ১৭ বছর ঘরের মধ্যে ছিলেন, দল ও দলের কর্মীদের জন্য কোনো ঝুঁকি নেননি, আজ তাঁকে মনোনয়ন দেওয়া হলো।”
তিনি আরো বলেন, “তারপরও আমরা দলের এ সিদ্ধান্তকে মেনে নিতে প্রস্তুত ছিলাম। কিন্তু দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের নির্দেশনা ছিল, যিনি মনোনয়ন পাবেন, তিনি মনোনয়ন বঞ্চিতদের কাছে গিয়ে তাদের সঙ্গে নিয়ে নির্বাচনের মাঠে নামবেন। কিন্তু দুঃখের বিষয়, আমাদের এখানে মনোনীত প্রার্থী সেটা করেননি। আমাদেরকে অবজ্ঞা ও হেয় করে চলছেন। দুঃসময়ে যারা দলের হাল ধরে রেখেছে এটাই কি আমাদের উপহার? আমরা ধানের শীষের বাইরের নই কিন্তু এভাবে মাঠে নামা সম্ভব নয়।”
গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার গোবরা ইউনিয়ন বিএনপি নেতা মো. সাব্বির মোল্লা বলেন, “সিরাজুল ইসলাম সিরাজ গোপালগঞ্জ বিএনপির জন্য একজন ত্যাগী নেতা। দলের হয়ে বহু নির্যাতন সয়েছেন। বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের নেতাকর্মীদের রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে গোপালগঞ্জে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করেছেন। এজন্য তাকে মার খেতে হয়েছে। আর যাকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে, তাকে তো আমিই চিনি না। সাধারণ জনগণ কীভাবে তাকে চিনবে? আমি বলছি, ডা. কে এম বাবরকে দিয়ে নির্বাচন করালে দলের ভোট কমে যাবে। তাই অবিলম্বে ডা. কে এম বাবরের মনোনয়ন বাতিল করে ত্যাগী নেতা এম সিরাজুল ইসলাম সিরাজকে মনোনয়ন দেওয়া হোক।”
শহরের বিভিন্ন এলাকার বিএনপি নেতা ও সমর্থক বলেন, ভেবেছিলাম কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ ত্যাগী নেতাদের মূল্যায়ন করবেন। যারা দল চালাতে গিয়ে আওয়ামী লীগ সরকারের রোষাণলে পড়ে ব্যবসা-বাণিজ্য বা আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন, মারপিটের শিকার হয়েছেন, তাদের বদলে একজন রাজনৈতিকভাবে অচেনা অজানা ব্যক্তিকে মনোনয়ন দেওয়া হলো। এই ঘটনায় আমরা খুবই মর্মাহত। তাই সিনিয়র নেতৃবৃন্দের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি গোপালগঞ্জ-২ আসনে বিএনপির মনোনয়ন পুনরায় মূল্যায়ন করে সিরাজুল ইসলামকে দেওয়ার অনুরোধ জানানো হয়।
ঢাকা/বাদল/এস
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর গ প লগঞ জ ২ আসন স র জ ল ইসল ম কর ম দ র আম দ র উপজ ল
এছাড়াও পড়ুন:
পরিত্যক্ত স্বাস্থ্যকেন্দ্র এখন মাতৃত্বের নিরাপদ আশ্রয়
পটুয়াখালীর গলাচিপা উপজেলার চরবেষ্টিত ইউনিয়ন বকুলবাড়িয়া। সেখানকার ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণকেন্দ্রটি দুই বছর আগেও ছিল পরিত্যক্ত। ছিল না দক্ষ স্বাস্থ্যকর্মী-ওষুধ। রোগীও আসতেন না। বাধ্য হয়ে প্রসূতি নারীদের যেতে হতো শহরে। তবে একটি প্রকল্প বাস্তবায়নের পর সেই চিত্র বদলে গেছে। বর্তমানে স্বাস্থ্যকেন্দ্রটিতে প্রসূতি নারী ও নবজাতকের চিকিৎসার পাশাপাশি স্বাভাবিক সন্তান প্রসবের সংখ্যা বেড়েছে। পাওয়া যাচ্ছে প্রয়োজনীয় ওষুধ।
পরিবর্তনের পেছনে কাজ করেছে আয়ারল্যান্ডভিত্তিক মানবিক সংস্থা ‘কনসার্ন ওয়ার্ল্ডওয়াইড’। স্থানীয় সংগঠন নজরুল স্মৃতি সংসদ ও অ্যাসোসিয়েশন অব ভলান্টারি অ্যাকশনস ফর সোসাইটির (আভাস) সহায়তায় ‘উপকূলীয় অঞ্চলে নারী, নবজাতক, শিশু, কিশোর-কিশোরী ও মাতৃস্বাস্থ্যের উন্নয়নে অংশীদারত্ব’ শীর্ষক একটি প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে সংস্থাটি। প্রকল্পের মাধ্যমে স্বাস্থ্যকর্মীদের প্রশিক্ষণের পাশাপাশি জনসচেতনতা কার্যক্রম ও অবকাঠামো উন্নয়ন করা হয়েছে। এতে স্বাস্থ্যকেন্দ্রে সেবার মান উন্নত হয়েছে।
বকুলবাড়িয়া ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণকেন্দ্রের গত দুই বছরের সেবাপ্রার্থীদের বিবরণী ঘেঁটে দেখা গেল, এক বছরের ব্যবধানে এখানে স্বাভাবিক প্রসবের সংখ্যা দ্বিগুণ হয়েছে। গত সেপ্টেম্বর পর্যন্ত এক বছরে স্বাভাবিক প্রসব হয়েছে ৩৫ জন প্রসূতির। গত বছর তা ছিল ১৮ জন। একইভাবে সেবাগ্রহীতা রোগীর সংখ্যা বেড়েছে তিন গুণের বেশি। চলতি বছরের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত স্বাস্থ্যকেন্দ্রে সেবা নিয়েছেন প্রায় তিন হাজার নারী-শিশু। গত বছর তা ছিল ১ হাজার ৮১০ জন।
সরেজমিনে দেখা গেল, প্রসূতিসহ অন্যান্য নারী-শিশুদের ভিড়। আগে যেখানে প্রসূতি নারীরা সন্তান প্রসবের জন্য উপজেলা ও জেলা সদরে সিজারিয়ান অস্ত্রোপচারের জন্য ছুটতেন, এখন তাঁরা স্বাভাবিক প্রসবের দিকে ঝুঁকছেন। এমনকি অন্য নারীরাও সেবা পেতে প্রতিদিন স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ভিড় করছেন। বর্তমানে স্বাস্থ্যকেন্দ্রটিতে গর্ভকালীন, প্রসবকালীন, প্রসবোত্তর, নবজাতক ও যৌন রোগের চিকিৎসা দেওয়া হয়। স্বাভাবিক প্রসবের জন্য প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম, স্যালাইন, ইনজেকশন, গ্লাভস, স্যানিটারি ন্যাপকিনসহ ২২ ধরনের ওষুধ ও উপকরণ আছে।
পাঁচ মাসের অন্তঃসত্ত্বা মানসুরা আক্তারের কথায় সেবার ব্যাপারে জানা গেল। তাঁর স্বামী ঢাকায় চাকরি করেন। সংসারের দায়িত্ব এখন তাঁর কাঁধে। বকুলবাড়িয়ার লামনা গ্রামের এই গৃহবধূ বলেন, ‘বাড়ির পাশে এই স্বাস্থ্যকেন্দ্র না থাকলে আমাগো কী দশা অইত জানি না।’ তিনি বলেন, স্বাস্থ্যকেন্দ্রটির পরিদর্শক খাদিজা আক্তারের কাছ থেকে তিনি নিয়মিত রক্তচাপ, খাদ্যাভ্যাস ও বিশ্রাম–সংক্রান্ত পরামর্শ পান। তাঁর সন্তান স্বাভাবিকভাবে এই কেন্দ্রে প্রসব হবে বলে তিনি আশা করেন।
চার বছর মেয়াদি প্রকল্পটি বরগুনার আমতলী, তালতলী ও পটুয়াখালীর গলাচিপা উপজেলায় বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। চলবে ২০২৬ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত। প্রয়োজনে ২০২৭ সালের জুন পর্যন্ত বাড়ানো হতে পারে।স্বাস্থ্যকেন্দ্রটির পরিদর্শক খাদিজা আক্তার প্রথম আলোকে বলেন, ‘আগে মানুষ খুব একটা আসত না। জনবল কম ছিল, ওষুধও থাকত না। এখন নিয়মিত সেবা দেওয়া যায়। তাই রোগীর সংখ্যা বেড়েছে। স্বাভাবিক প্রসবও অনেক বেশি হচ্ছে।’
পরিবর্তনের নেপথ্যে
উপকূলীয় এলাকার নারী-শিশু, কিশোর-কিশোরী ও মাতৃস্বাস্থ্যের উন্নয়নে অংশীদারত্বের ভিত্তিতে প্রকল্পটি বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেয় আয়ারল্যান্ডভিত্তিক মানবিক সংস্থা কনসার্ন ওয়ার্ল্ডওয়াইড। সংস্থাটি স্থানীয় সংগঠন নজরুল স্মৃতি সংসদ ও অ্যাসোসিয়েশন অব ভলান্টারি অ্যাকশনস ফর সোসাইটির আভাস সহায়তায় ২০২৩ সালের জানুয়ারি মাসে প্রকল্পটি শুরু করে। চার বছর মেয়াদি প্রকল্পটি বরগুনার আমতলী, তালতলী ও পটুয়াখালীর গলাচিপা উপজেলায় বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। চলবে ২০২৬ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত। প্রয়োজনে ২০২৭ সালের জুন পর্যন্ত বাড়ানো হতে পারে।
প্রকল্পের আওতায় স্থানীয় স্বাস্থ্যকেন্দ্র ও কমিউনিটি ক্লিনিকগুলোর স্বাস্থ্যকর্মীদের প্রশিক্ষণ, ওষুধ সরবরাহ ও অবকাঠামো উন্নয়নের উদ্যোগ নেওয়া হয়। স্থানীয় জনপ্রতিনিধিসহ স্থানীয় প্রশাসনের সঙ্গে অংশীদারত্বের ভিত্তিতে স্থানীয় লোকজনকে স্বাস্থ্যকেন্দ্রমুখী করতে সচেতনতামূলক কার্যক্রম নেওয়া হয়। প্রকল্পটি বাস্তবায়নের পর স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলোর সেবার মান বেড়েছে। স্থানীয় লোকজনও স্বাস্থ্যকেন্দ্রমুখী হতে শুরু করেছেন। প্রকল্পের আওতায় এখন পর্যন্ত স্বাভাবিক প্রসবসহ ১ লাখ ৬৬ হাজার ৩১ জন নারী-শিশু ও কিশোর-কিশোরী বিভিন্ন সেবা নিয়েছেন। রোগীর সংখ্যা এখন দৈনিক তিন গুণ হয়ে ২০ থেকে ৫০–এ দাঁড়িয়েছে।
বরগুনার তালতলী উপেজলার বেহালা গ্রামের মা ও শিশুদের একমাত্র ভরসা হয়ে উঠেছে স্থানীয় কমিউনিটি ক্লিনিক