আন্তর্জাতিক মানদণ্ড বজায় রেখে ঘোষিত রায়ে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা হয়েছে: বিএনপি
Published: 18th, November 2025 GMT
মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খানকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। আন্তর্জাতিক মানদণ্ড বজায় রেখে ঘোষিত রায়ে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা হয়েছে বলে জানিয়েছে বিএনপি।
সোমবার (১৭ নভেম্বর) রাতে গুলশান কার্যালয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠক শেষে আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়ায় দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এসব কথা বলেন।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, “আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের দীর্ঘ বিচারিক প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে আন্তর্জাতিক মানদণ্ড বজায় রেখে ঘোষিত রায়ে দীর্ঘ ১৬ বছরের গুম-খুন ও বিচারবহির্ভূত হত্যার শিকার এবং ২০২৪ সালের গণ–অভ্যুত্থানে রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসের শিকার সহস্রাধিক শহীদের আত্মা শান্তি পাবে এবং তাঁদের পরিবার–পরিজনদের ক্ষোভ কিছুটা হলেও প্রশমিত হবে।”
“আইনের শাসন ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় দৃঢ়প্রতিজ্ঞ বিএনপি এ ব্যাপারে জনগণকে সদাসর্বদা সচেতন থাকার আহ্বান জানাচ্ছে। একই সঙ্গে বিএনপি অন্যান্য মামলায় অভিযুক্ত ব্যক্তিদের সুবিচারের দাবি জানাচ্ছে,” যোগ করেন তিনি।
মির্জা ফখরুল ইসলাম বলেন, “সারা বিশ্বের জনমত এবং বাংলাদেশের জনগণের দাবি ও প্রত্যাশা ছিল, যেন পতিত স্বৈরাচার ও তাঁর দোসরদের মানবতাবিরোধী ও নৃশংস–জঘন্য হত্যাকাণ্ড এবং গণহত্যায় অপরাধের বিচার করা হয়।”
দীর্ঘ ১৬ বছরের ফ্যাসিবাদবিরোধী গণতান্ত্রিক আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় ২০২৪ সালের গণ–অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে দেশ ফ্যাসিবাদমুক্ত হয়েছে জানিয়ে বিএনপি মহাসচিব বলেন, “এই দীর্ঘ রক্তাক্ত সংগ্রামে শতসহস্র বিরোধীদলীয় রাজনৈতিক নেতা-কর্মীসহ সমাজের সর্বস্তরের অসংখ্য নাগরিক গুম, খুন, বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড, মামলা-হামলা, নির্যতন-নিপীড়ন ও অবর্ণনীয় দুর্ভোগের শিকার হয়েছেন। অবশেষে গণ–অভ্যুত্থানে ছাত্র-জনতা-শ্রমিক, নারী-শিশুসহ সহস্রাধিক নাগরিকের আত্মদান, অন্ধত্ব, চিরপঙ্গুত্ব বরণের মধ্য দিয়ে ইতিহাসের জঘন্যতম ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা ও আওয়ামী বাকশালি শাসনামলের পতন হয়েছে।”
বৈঠকে লন্ডন থেকে ভার্চ্যুয়াল মাধ্যমে যুক্ত হয়ে সভাপতিত্ব করেন দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।
বিএনপি মহাসচিব ছাড়াও দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন, মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, আবদুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, সালাহউদ্দিন আহমদ, সেলিমা রহমান, ইকবাল হাসান মাহমুদ, হাফিজ উদ্দিন আহমেদ এবং এ জেড এম জাহিদ হোসেন উপস্থিত ছিলেন।
ঢাকা/নঈমুদ্দীন/ইভা
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর অপর ধ ব এনপ
এছাড়াও পড়ুন:
বিচারে আন্তর্জাতিক মানদণ্ড মেনে চলা আবশ্যক: এইচআরডব্লিউ
বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল ১৭ নভেম্বর সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালকে ২০২৪ সালের শিক্ষার্থীদের নেতৃত্বাধীন বিক্ষোভ দমনে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে দোষী সাব্যস্ত করেছেন। গতকাল সোমবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ কথা উল্লেখ করে হিউম্যান রাইটস ওয়াচ (এইচআরডব্লিউ) বলেছে, দুজনেরই অনুপস্থিতিতে এ বিচার করা হয়েছে। তাঁরা নিজেদের পছন্দের আইনজীবীর মাধ্যমে প্রতিনিধিত্ব পাননি। আদালত তাঁদের মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন, যা গুরুতর মানবাধিকার উদ্বেগের জন্ম দিয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কভিত্তিক আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠনটির ওয়েবসাইটে প্রকাশিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, এ মামলার তৃতীয় আসামি সাবেক পুলিশপ্রধান চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন। তিনি বর্তমানে কারাগারে আছেন। তিনি প্রসিকিউশনের সাক্ষী (রাজসাক্ষী) হিসেবে জবানবন্দি দিয়েছেন। তাঁকে সাজা কমিয়ে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।
হিউম্যান রাইটস ওয়াচের এশিয়া বিভাগের উপপরিচালক মীনাক্ষী গাঙ্গুলি বলেন, হাসিনার দমনমূলক শাসন নিয়ে বাংলাদেশে এখনো ক্ষোভ ও বেদনা বিদ্যমান। তবে সব ফৌজদারি বিচারপ্রক্রিয়ায় আন্তর্জাতিক মানের ন্যায়বিচারের মানদণ্ড মেনে চলা আবশ্যক।
মীনাক্ষী গাঙ্গুলি আরও বলেন, হাসিনা সরকারের সময় সংঘটিত ভয়ংকর নির্যাতন-নিপীড়নের জন্য দায়ীদের অবশ্যই জবাবদিহির আওতায় আনা উচিত। আর তা হতে হবে নিরপেক্ষ তদন্ত ও গ্রহণযোগ্য বিচারের মাধ্যমে।
এইচআরডব্লিউর সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টের তিন সপ্তাহ ধরে চলা বিক্ষোভকালে বাংলাদেশি কর্তৃপক্ষ গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘন করেছে। এ বিক্ষোভেই হাসিনা সরকারের পতন ঘটে। জাতিসংঘের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিক্ষোভ ও দমন–পীড়নে প্রায় ১ হাজার ৪০০ মানুষের মৃত্যু হয়েছে। তাঁদের বেশির ভাগই নিরাপত্তা বাহিনীর গুলিতে নিহত বিক্ষোভকারী।
আরও পড়ুনশেখ হাসিনার মৃত্যুদণ্ডের রায় নিয়ে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিবৃতি১৫ ঘণ্টা আগেএইচআরডব্লিউ বলেছে, যাঁরা নির্যাতন ও দমন–পীড়নের জন্য দায়ী, তাঁদের যথাযথভাবে জবাবদিহির আওতায় আনা উচিত। তবে বিচারকাজ আন্তর্জাতিক ন্যায়বিচারের মানদণ্ড পূরণ করতে ব্যর্থ হয়েছে। বিশেষ করে আসামিদের আত্মপক্ষ সমর্থনের পূর্ণ সুযোগ, সাক্ষীদের জিজ্ঞাসাবাদের সুযোগ এবং নিজের পছন্দের আইনজীবীর প্রতিনিধিত্ব পাওয়ার অধিকারের ক্ষেত্রে। মৃত্যুদণ্ড দেওয়ায় বিচারপ্রক্রিয়ার ন্যায্যতা নিয়ে উদ্বেগ আরও বেড়েছে।
এইচআরডব্লিউ বলেছে, প্রসিকিউশন ৫৪ জন সাক্ষী হাজির করেছিল। তাঁদের প্রায় অর্ধেকই বিশেষজ্ঞ সাক্ষ্য দিয়েছেন। অন্যরা ছিলেন ভুক্তভোগী বা তাঁদের পরিবারের সদস্য। শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে প্রমাণ হিসেবে সরকারি কর্মকর্তাদের সঙ্গে তাঁর কথোপকথনের অডিও রেকর্ডিং ছিল। যেখানে তিনি প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহারের নির্দেশ দিয়েছেন বলে মনে করা হয়।
এইচআরডব্লিউ বলেছে, শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামানের জন্য রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী আসামিদের কাছ থেকে কোনো নির্দেশনা পাননি। তিনি সাক্ষীদের জিজ্ঞাসাবাদ করতে পারলেও অভিযোগের বিরুদ্ধে কোনো সাক্ষী উপস্থাপন করেননি।
আরও পড়ুনশেখ হাসিনার মৃত্যুদণ্ডের মধ্য দিয়ে ২০২৪ সালের হত্যাযজ্ঞের ভুক্তভোগীদের ন্যায়বিচার নিশ্চিত হয়নি: অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল৯ ঘণ্টা আগেএইচআরডব্লিউর মীনাক্ষী গাঙ্গুলি বলেছেন, শেখ হাসিনা সরকারের সময় সংঘটিত গুরুতর অধিকার লঙ্ঘনের শিকার ব্যক্তিরা ন্যায়বিচার ও ক্ষতিপূরণ পাওয়ার অধিকার রাখেন, যা অবশ্যই প্রকৃত স্বাধীন ও ন্যায়সংগত বিচারপ্রক্রিয়ার মাধ্যমে নিশ্চিত হতে হবে। ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা মানে আসামিদের অধিকার রক্ষা করাও। এর মধ্যে রয়েছে মৃত্যুদণ্ড বিলোপ করা, যা স্বভাবগতভাবে নির্মম ও অপরিবর্তনীয়।
আরও পড়ুনএ রায় ঘোষণা গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের ভুক্তভোগীদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত: ওএইচসিএইচআর১০ ঘণ্টা আগেআরও পড়ুনআন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে শেখ হাসিনার মৃত্যুদণ্ডের রায়ের খবর কতটা গুরুত্ব পেল১৬ ঘণ্টা আগে