নবজাতককে টিকা দেওয়ার জন্য গত বৃহস্পতিবার স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে যান তাড়াশ পৌর এলাকার দীপা রানী মাল। তাঁকে জানানো হয়, সরকারিভাবে যে চারটি টিকা দেওয়া হয়, তার একটিরও সরবরাহ নেই। নির্ধারিত সময়ে শিশুকে টিকা দিতে পারবেন কিনা, এ নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছেন দীপা।
দুশ্চিন্তায় আছেন ভাদাস মহল্লার মাহি পারভীনও। গতকাল সোমবার সন্তানকে নিয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এসে টিকা না দিয়েই বাড়ি ফিরে যাচ্ছিলেন। কথা হলে আক্ষেপ করে বলেন, সময়মতো টিকা দিতে পারলাম না। বাচ্চার কোনো ক্ষতি হয়ে যায় কিনা, দুশ্চিন্তায় আছি।
স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ইপিআইয়ের ভারপ্রাপ্ত টেকনিশিয়ান আবুল কালাম আজাদ জানান, বছরের শেষে এসে ফুরিয়ে গেছে সরকারি সরবরাহের টিকা। ডিসেম্বরের শুরু থেকেই টিকাস্বল্পতা দেখা দিয়েছে। নতুন সরবরাহ না আসা পর্যন্ত এ সমস্যা মিটবে না।
টিকা সংকটের কথা স্বীকার করেছেন জেলা ইপিআই সুপারিনটেনডেন্ট মোহাম্মদ মোতালেব হোসেন। তাঁর ভাষ্য, ঢাকার মহাখালী ইপিআই কেন্দ্র থেকে টিকা সরবরাহ হয়। গত দুই মাসে চার ধরনের টিকা সরবরাহ করা হয়নি। এক মাসের মধ্যে টিকা আসবে। তখন এ সংকট থাকবে না।
সম্প্রসারিত টিকাদান কর্মসূচির (ইপিআই) আওতায় জন্মের পর থেকে ২৩ মাস বয়সের মধ্যে ১০টি বিভিন্ন রোগের প্রতিষেধক হিসেবে শিশুদের সাত ধরনের টিকা দেওয়া হয়। টিকাগুলো হলো– বিসিজি, ওপিডি বা পোলিও, আইপিভি, পিসিভি, পেন্টা ভ্যালেন্ট, এমআর-১ ও এমআর-২। কিন্তু এক মাস ধরে তাড়াশ উপজেলায় বিসিজি, পেন্টা ভ্যালেন্ট, ওপিডি ও এমআর (হাম ও রুবেলা) টিকার সংকট দেখা দিয়েছে। প্রতিদিন সরকারি হাসপাতালসহ বিভিন্ন কেন্দ্রে গিয়ে টিকা না পেয়ে হতাশ হয়ে বাড়ি ফিরে যাচ্ছেন শিশুদের মা ও স্বজনরা। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে শিশুদের টিকা দিতে না পারায় তারা উদ্বিগ্ন। ইপিআই টিকাদানকারী স্বাস্থ্য সহকারী ও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সঙ্গে প্রায়ই বাগ্বিতণ্ডায় জড়িয়ে পড়ছেন টিকাবঞ্চিত শিশুর অভিভাবকরা।
হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার স্থায়ী টিকাদান কেন্দ্রে সপ্তাহে গড়ে ৪৫ থেকে ৫০ জন এবং ১৯২টি অস্থায়ী কেন্দ্রে সপ্তাহের চার দিন ৪২০ থেকে ৪৬০ জন শিশুকে টিকা দেওয়া হয়। ঢাকার মহাখালী থেকে জেলা সিভিল সার্জন অফিসে আসে টিকাগুলো। এরপর উপজেলা পর্যায়ে সরবরাহ করে হয়ে থাকে। চলতি মাসে টিটি ও আইপিভি টিকা চাহিদামাফিক সরবরাহ পেলেও শিশুদের জন্য প্রয়োজনীয় চারটি টিকা সরবরাহ করা হচ্ছে না। এ কারণে শিশুদের টিকা দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না বলে জানায় সূত্রটি।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কর্মকর্তা এরফান আহমেদ বলেন, দূরদূরান্ত থেকে অভিভাবকরা শিশুদের নিয়ে আসেন। এরপর যখন শোনেন টিকা নেই, তখন খেপে যান। উদ্বিগ্ন
হওয়ার কিছু নেই। চাহিদা পাঠানো হয়েছে। এক সপ্তাহের মধ্যেই টিকার সরবরাহ পাওয়া যাবে বলে জানান এ কর্মকর্তা।
সোমবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে সিরাজগঞ্জ সিভিল সার্জন কর্মকর্তা মো.
উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
বিদ্যুৎ না থাকায় ডিইপিজেডে উৎপাদন কার্যক্রম বন্ধ
ঢাকার সাভার উপজেলার আশুলিয়ায় ঢাকা রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চলে (ডিইপিজেড) আজ সোমবার দুপুর থেকে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রয়েছে। এ কারণে দুপুরের পর ডিইপিজেডের সব কারখানায় শ্রমিকদের ছুটি দেওয়া হয়েছে। ডিইপিজেডের জন্য নিরবচ্ছিন্নভাবে বিদ্যুৎ সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান ইউনাইটেড পাওয়ারের বিদ্যুৎকেন্দ্রে গ্যাস–সংযোগ বিচ্ছিন্ন করায় এ সংকট তৈরি হয়েছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।
ডিইপিজেডের নির্বাহী পরিচালক মো. শরীফুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, তিতাস গ্যাস কর্তৃপক্ষ ইউনাইটেড পাওয়ারের ডিইপিজেডে বিদ্যুৎ সরবরাহের প্রকল্পটিতে গ্যাস–সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয়। এতে তারা উৎপাদন করতে না পারায় বিদ্যুৎ সরবরাহ করতে পারছে না। ফলে ডিইপিজেডে প্রায় ৯০টি কারখানার এক লাখের মতো শ্রমিককে ছুটি দেওয়া হয়।
বিদ্যুতের সংযোগ না থাকায় বড় ধরনের বিপর্যয়ের মুখে পড়তে হয়েছে উল্লেখ করে মো. শরীফুল ইসলাম বলেন, মঙ্গলবার যদি এটি অব্যাহত থাকে, তবে সংকট আরও বাড়বে। শ্রমিকেরা কাজ না করতে পেরে বিক্ষুব্ধ হলে বিষয়টি আরও জটিল হয়ে উঠবে। কোনো ধরনের নোটিশ ছাড়া এ ধরনের ঘটনায় বিদেশি প্রতিষ্ঠানগুলো নানাভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
ডিইপিজেডের নির্বাহী পরিচালক বলেন, ‘তিতাস বলছে, ইউনাইটেড পাওয়ারের কাছে বিল বকেয়া রয়েছে। তারা বকেয়া পরিশোধ করেনি। এ ব্যাপারে আদালতে দীর্ঘদিন ধরে মামলা চলছে। কিন্তু আমাদের কথা হচ্ছে, বেপজাকে কোনো ধরনের পূর্ব নোটিশ না দিয়ে হঠাৎ করে এ ধরনের পদক্ষেপ নিয়েছেন। এ ধরনের পদক্ষেপের আগে ডিইপিজেডের গুরুত্ব বিবেচনা করে আলোচনার মধ্য দিয়ে বিষয়টির সমাধান করা উচিত ছিল।’
এ বিষয়ে ইউনাইটেড পাওয়ার প্ল্যান্টের ব্যবস্থাপক মো. মমতাজ হাসান প্রথম আলোকে বলেন, ‘গ্যাসের কোনো প্রেশার নেই। প্রেশার শূন্য। কিন্তু কেন তিতাস কর্তৃপক্ষ এমনটি করল, সে ব্যাপারে এখানকার (আশুলিয়া অঞ্চলের) তিতাসের লোকজন কিছু বলতে পারেননি। আমরা নিজেরাও বিষয়টি নিয়ে জানি না। এ ব্যাপারে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনা হচ্ছে।’ তিনি বলেন, ‘আমার জানামতে, বকেয়া নিয়ে কোনো ধরনের মামলা নেই। তিতাস কেন গ্যাস সরবরাহ বন্ধ করে দিল, সেটি জানা নেই।’
জানতে চাইলে তিতাসের আশুলিয়া আঞ্চলিক কার্যালয়ের ব্যবস্থাপক প্রকৌশলী আবু ছালেহ মুহাম্মদ খাদেমুদ্দীন প্রথম আলোকে বলেন, গ্যাসের বিল বকেয়া থাকায় গ্যাস–সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়। এটি সরকারের ঊর্ধ্বতন মহলের সিদ্ধান্ত। দুপুরের দিকে গ্যাস–সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে।