২৫ বছর অভিনয়ে না থাকলেও আছেন কোটি বাঙালির হৃদয়ে
Published: 15th, June 2025 GMT
চার দশক ধরে এমন সব চরিত্রে অভিনয় করেছেন, যা মানুষের মনে গেঁথে গেছে। নিজেকে নিয়ে গেছেন অনন্য এক উচ্চতায়। বাংলা সিনেমাপ্রেমীরা শাবানার নাম শুনলে আবেগপ্রবণ হন, গর্ব বোধ করেন। ২৫ বছর আগে অভিনয়কে বিদায় জানানো শাবানা এখনো কোটি বাঙালির হৃদয়ে অভিনয়ের রানি হয়ে আছেন।
বাংলা চলচ্চিত্রের অভিনয়ের এই রানির আজ জন্মদিন। ১৯৫২ সালে আজকের দিনে তিনি জন্মগ্রহণ করেন। সে হিসেবে ৭৩ বছর পূর্ণ করে ৭৪–এ পদার্পণ করলেন শাবানা।
মাত্র আট বছর বয়সে সিনেমায় অভিনয়ে নাম লেখান শাবানা। এহতেশাম পরিচালিত ‘নতুন সুর’ নামের ছবিতে তিনি শিশুশিল্পী হিসেবে কাজ করেন। এরপর ‘চকোরী’ ছবিতে নায়িকা চরিত্রে অভিনয় শুরু। ২৫ বছর ধরে অভিনয় থেকে দূরে সরে আছেন চলচ্চিত্রের গুণী এই অভিনয়শিল্পী।
অভিনয়জীবনে জনপ্রিয়তার তুঙ্গে থাকা অবস্থায় হুট করেই যুক্তরাষ্ট্রে চলে যান তিনি। শুরুর দিকে নিউইয়র্কে থাকলেও এখন স্বামী, সন্তান, নাতি-নাতনি নিয়ে নিউ জার্সিতে থাকছেন।
শাবানা যখন অভিনয় ছেড়ে দেন, তখন ফেসবুক ছিল না। সামাজিক যোগাযোগের অন্য কোনো মাধ্যমও ছিল না। এখন এই বিশেষ দিনে পরিচিত, অপরিচিত সবাই ফেসবুকে নানা কিছু লিখছেন। পুরোনো দিনের অনেক স্থিরচিত্রও পোস্ট করে থাকেন।
জুটি হিসেবে আলমগীরের সঙ্গেই তিনি ১৩০টি চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন। এ ছাড়া রাজ্জাক, ওয়াসিম, উজ্জ্বলের সঙ্গেও অভিনয় করে ব্যাপক জনপ্রিয়তা পান। পাকিস্তানি নায়ক নাদিমের সঙ্গেও দর্শক তাকে পছন্দ করেছিল।
শাবানার উল্লেখযোগ্য সিনেমা গুলো হল- ‘চকোরী’, ‘মধু মিলন’, ‘অবুঝ মন’, ‘চান্দ সুরজ’, ‘একই অঙ্গে এত রূপ’, ‘ছদ্মবেশী’, ‘ছন্দ হারিয়ে গেল’, ‘চৌধুরী বাড়ি’, ‘সমাধান’, ‘স্বীকৃতি’, ‘ওরা ১১ জন’, ‘অতিথি’, ‘ঝড়ের পাখি’, ‘জননী’, ‘মাটির ঘর’, ‘সখী তুমি কার’, ‘শেষ উত্তর’, ‘ছুটির ঘণ্টা’, ‘নাজমা’, ‘ভাত দে’, ‘দুই পয়সার আলতা’, ‘রজনীগন্ধা’, ‘লালু ভুলু’, ‘মা ও ছেলে’, ‘লাল কাজল’, ‘নালিশ’, ‘ঘরের বউ’, ‘সখিনার যুদ্ধ’, ‘নতুন পৃথিবী’, ‘হিম্মতওয়ালী’, ‘বাসেরা’, ‘হালচাল’, ‘চাঁপা ডাঙ্গার বউ’, ‘অশান্তি’, ‘বিরোধ’ ও ‘স্বামী স্ত্রী’ ইত্যাদি।
ব্যক্তিগত জীবনে ১৯৭৩ সালে শাবানা বিয়ে করেছেন পরিচালক ওয়াহিদ সাদিককে। দুটি কন্যা ও একটি পুত্রসন্তান ২০০০ সালে সপরিবারে যুক্তরাষ্ট্রের নিউজার্সিতে চলে যান।
.উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
১০ দিন ছুটির পরও কর্মস্থলে অনুপস্থিত কর্মকর্তা-কর্মচারী
রোববার সকাল ১০টা ৩২ মিনিট। ঈদুল আজহার দীর্ঘ ছুটি শেষে প্রথম কর্মদিবসে এমন সময়ে সরকারি দপ্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের স্বাভাবিক কাজে ব্যস্ত থাকার কথা। কিন্তু কুড়িগ্রাম সদর উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার দপ্তরে গিয়ে দেখা গেল, তাঁর কক্ষে ঝুলছে তালা। দপ্তরের অফিস সহকারী-কাম কম্পিউটার অপারেটর বজলুর রুশিদের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আপনি যেখানে নিজে উপস্থিত আছেন, দেখতে পাচ্ছেন। আমার বক্তব্য দেওয়ার কী আছে?’
সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরে গিয়ে পাওয়া যায় একই চিত্র। নির্বাহী প্রকৌশলী বসেননি তাঁর চেয়ারে। সেখানে তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী এলেও তারা ‘স্যারদের’ বিষয়ে ক্যামেরার সামনে কথা বলতে নারাজ। নির্বাহী প্রকৌশলীর মোবাইল ফোনে কল করলেও তাঁর সঙ্গে কথা বলা সম্ভব হয়নি। কুড়িগ্রামে ঈদুল আজহার ১০ দিন ছুটি শেষে এভাবে সময়মতো উপস্থিত হননি বিভিন্ন দপ্তরের শীর্ষ কর্মকর্তারা।
কোনো কোনো দপ্তরে দুই-চারজন কর্মচারী উপস্থিত হলেও অনেক সরকারি দপ্তর ছিল ফাঁকা। পাওয়া যায়নি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের। রোববার জেলা শহরের সরকারি দপ্তর ঘুরে পাওয়া গেছে এমন চিত্র। জেলার গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্বশীল কর্মকর্তাদের অনুপস্থিতি বিষয়ে সচেতন নাগরিক কমিটির আহ্বায়ক আহসান হাবীব নীলু বলেন, এই প্রথম দীর্ঘ ছুটি পেয়েছেন সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। তার পরও প্রথম দিনে তাদের অনুপস্থিতি নতুন বাংলাদেশ নির্মাণে অযোগ্যতার শামিল।
১০টা ৩০ মিনিটে উপজেলা প্রকৌশল অধিদপ্তরে গিয়ে দেখা যায়, তালা ঝুলছে। প্রকৌশল কক্ষে ততক্ষণে উপস্থিত হননি একজনও। দুই-একজন কর্মচারীর দেখা মিললেও তারা খোশগল্পে মেতে ছিলেন। এর পর গন্তব্য মৎস্য কর্মকর্তার দপ্তর। ঘড়ির কাঁটায় তখন ১০টা ৩৮ মিনিট। সেখানেও কক্ষে তালা ঝুলতে দেখা যায়।
সিঁড়ি বেয়ে ওপরে উঠে প্রথমে সদর উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তার দপ্তরে ১০টা ৪২ মিনিটে গিয়ে দেখা যায়, কক্ষে ঝুলছে তালা। যখন বেলা ১১টা ২০ মিনিট, গণপূর্ত অধিদপ্তরে ঢুকতেই পাওয়া গেল সুনসান নীরবতা। এসও, এসডির কক্ষ ছিল তালাবদ্ধ। গণপূর্তের নির্বাহী প্রকৌশলীর দপ্তরে গিয়ে কথা বললে নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আব্দুল্লাহ আল ফারুক বলেন, ‘এসওরা সম্ভবত সাইটে থাকতে পারেন। খোঁজ নিলে সঠিক তথ্য জানা যাবে।’
জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক অফিসে গেলে ভারপ্রাপ্ত খাদ্য নিয়ন্ত্রক মোহাম্মদ হামিদুল হককে পাওয়া যায়। কিন্তু অন্য কর্মচারীরা ছিলেন অনুপস্থিত। এ বিষয়ে হামিদুল হক বলেন, ‘আমি হিসাবরক্ষক ইউসুফকে একটু বাইরে পাঠিয়েছি। অন্যরা আসছেন।’ উপজেলা সমাজসেবা দপ্তরে ১০টা ৪৪ মিনিটে গিয়ে দেখা যায় একই অবস্থা। দপ্তরে সাংবাদিক পরিচয় দিলে কয়েক কর্মচারী তড়িঘড়ি করে নিজের আসনে বসেন। কেউ বলেন, ‘স্যার ছুটিতে আছেন’। আবার কেউ বলেন, ‘স্যার সরকারি শিশু পরিবারে গেছেন, একটু পরে আসবেন।’ পরে সমাজসেবা কর্মকর্তা হাবিবুর রহমানের মোবাইল ফোনে কল করলে তিনি বলেন, ‘জেলা অফিসে আছি’।
কুড়িগ্রাম উন্নয়ন ফোরামের আহ্বায়ক খ ম আতাউর রহমান বিপ্লব বলেন, দেশ পরিবর্তনের আওয়াজ উঠেছে। কিন্তু বিগত সময়ে যারা আয়েশ-আমেজ করে লুটপাট করেছেন, তারা এখনও বহাল। এসব অনিয়মের বিরুদ্ধে নতুন রাষ্ট্রের দাবিদার সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।
সততা ও নিষ্ঠার জন্যই জুলাই গণঅভ্যুত্থান হয়েছে উল্লেখ করে গণঅধিকার পরিষদ সদস্য এস এম নুরে এরশাদ সিদ্দিকী বলেন, এসব অনিয়ম নতুন যুগে দেশপ্রেমিক ছাত্র-জনতা মেনে নেবে না। আমলাদের অনিয়মের বিরুদ্ধে গণঅধিকার পরিষদ সব সময় সোচ্চার।’
এনসিপির কেন্দ্রীয় যুগ্ম আহ্বায়ক ড. আতিক মুজাহিদ বলেন, ‘আওয়ামী লীগকে আমরা তাড়িয়েছি। আমলাদের অনিয়ম ও দুর্নীতির কারণে আমরা ফুঁসে উঠেছি, সফলতা পেয়েছি। তারপরও এসব অনিয়ম আমরা মানতে পারি না। যথাযথ প্রমাণ সাপেক্ষে এনসিপি রাজপথে দাঁড়াবে। নতুন বাংলাদেশে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অনিয়ম পেলে আমরা দুর্বার আন্দোলন গড়ে তুলব।’
এ বিষয়ে বক্তব্য জানতে কুড়িগ্রাম জেলা প্রশাসক নুসরাত সুলতানার মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল দিলেও রিসিভ করেননি। খুদে বার্তা দিয়েও সাড়া মেলেনি।