‘নিখোঁজ’ ভারতীয় কৃষক ২ কেজি স্বর্ণসহ মুজিবনগরে আটক
Published: 15th, January 2025 GMT
ভারতের পশ্চিমবঙ্গের নদীয়া জেলার দর্শনা সীমান্তে এক ভারতীয় কৃষকের ‘নিখোঁজ’ হওয়া নিয়ে তার পরিবারের উদ্বেগের মধ্যে জানা গেল চোরাকারবারের স্বর্ণসহ বাংলাদেশের মুজিবনগর সীমান্তে বিজিবির হাতে আটক হয়েছেন তিনি।
বিজিবি বলছে, মঙ্গলবার (১৪ জানুয়ারি) সকাল সাড়ে ১০টার দিকে মুজিবনগর সীমান্তের ১০৪ নম্বর পিলারের কাছ থেকে নূর হোসেনকে আটক করা হয়। তিনি ভারতের নদীয়া জেলার হৃদয়পুর গ্রামের মৃত সোনা সেখের ছেলে।
এর আগে, নূর হোসেনের পরিবার ভারতের সীমান্তরক্ষী বাহিনী-বিএসএফের কাছে তার সন্ধান চেয়েছিল। তারা বলেছিল, সকালে কাজে বেরিয়ে আর ফিরে আসেননি নূর হোসেন। খবর পেয়েছেন, সীমান্তের শূন্যরেখা থেকে বিজিবি তাকে ধরে নিয়ে গেছে।
নূর হোসেনকে বিজিবি ধরে নিয়ে আসেনি; বরং চোরাচালানের স্বর্ণের বারসহ হাতেনাতে তাকে আটক করা হয়েছে।
বুধবার (১৫) বিকেলে বিষয়টি বিজিবির কাছ থেকে পরিষ্কার হওয়া গেছে। মেহেরপুরের মুজিবনগর সীমান্তে ১৮টি স্বর্ণের বারসহ মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে নূর হোসেনকে আটক করে বিজিবি।
চুয়াডাঙ্গা বিজিবি-৬ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল সাঈদ মোহাম্মাদ জাহিদুর রহমান বলেন, ‘‘মুজিবনগর মাঠের মধ্য দিয়ে স্বর্ণ চোরাচালানের খবর পেয়ে মেইন পিলার ১০৪-এর সাব-পিলার ৫-এর কাছে ফোর্স নিয়ে অবস্থান নেয় মুজিবনগর বিওপির টহল কমান্ডার হাবিলদার রফিকুল ইসলাম।’’
‘‘পরে সন্দেহভাজন একজন সীমান্তে প্রবেশ করলে তাকে চ্যালেঞ্জ করেন বিজিবির সদস্যরা। এ সময় পালানোর চেষ্টা করে সে। বিজিবি তাকে ধাওয়া করে। পরে মাঠের মধ্য থেকে আটক করা হয় নূর হোসেনকে। তার শরীর তল্লাশি করে কোমরে প্যান্টের ভেতর স্কচটেপ দিয়ে মোড়ানো তিনটি প্যাকেট জব্দ করা হয়। পরে সেগুলো খুলে ১৮টি বার পাওয়া যায়; যার ওজন দুই কেজি ১৮ গ্রাম।’’
“এ ব্যাপারে হাবিলদার রফিকুল ইসলাম বাদী হয়ে মুজিবনগর থানায় মামলা করছেন। স্বর্ণের বারগুলো মেহেরপুর ট্রেজারি অফিসে জমার কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন রয়েছে,” বলেছেন জাহিদুর রহমান।
নূর হোসেনের পরিবার ও তার স্বজনদের দাবি অনুযায়ী, মঙ্গলবার সকালে নূর হোসেন সেখ বিএসএফ-এর কাছে তার পরিচয়পত্র জমা দিয়ে কাঁটাতার পেরিয়ে জিরো পয়েন্টের কাছে ভারতের ভূখণ্ডের মধ্যে থাকা নিজের জমিতে কাজ করতে যান। মঙ্গলবার সন্ধ্যা পেরিয়ে গেলেও তিনি বাড়িতে ফেরেননি। এরপরই সীমান্তবর্তী অন্য চাষিদের কাছ থেকে খবর আসে, বিজিবি তাকে ধরে নিয়ে গেছে।
নূর হোসেনের বিষয়ে অন্যের কাছ থেকে পাওয়া তথ্যে তার পরিবার এ বিষয়ে খোঁজ নিতে বুধবার বিজিবির সঙ্গে যোগাযোগ করলে বেরিয়ে আসে স্বর্ণ চোরালাচানের জড়িত থাকার চাঞ্চল্যকর ঘটনা। কৃষকের ছদ্মবেশে সীমান্তে স্বর্ণ চোরাকারবারির সঙ্গে যুক্ত নূর হোসেন এখন মুজিবনগর থানা হেফাজতে রয়েছেন।
ঢাকা/সুচরিতা/সোহাগ/এনএইচ
.উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
দর্শনা সীমান্তে বিএসএফের গুলিতে যুবকের মৃত্যুর খবর
চুয়াডাঙ্গার দর্শনা সীমান্তে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) গুলিতে ইব্রাহিম বাবু (৩০) নামের এক ব্যক্তি নিহত হয়েছেন বলে দাবি করেছে তাঁর পরিবার। বুধবার দুপুরে দর্শনা থানার বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তের ৭৯ নম্বর প্রধান খুঁটির কাছে ভারতের অভ্যন্তরে গুলির এ ঘটনা ঘটে।
ইব্রাহিম বাবুর বাবা মো. নূর ইসলাম বলেন, তাঁর ছেলে বুধবার দুপুর ১২টার দিকে ঘাস কাটতে সীমান্ত এলাকার মাঠে যায়। সেখানে ঘাস কাটার সময় ভুল করে ভারত অভ্যন্তরে ঢুকে পড়লে বিএসএফ তাঁকে লক্ষ্য করে পরপর দুটি গুলি ছোড়ে। এতে ঘটনাস্থলে ইব্রাহিম বাবু মারা যান।
৬ বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো . নাজমুল হাসান সীমান্তে বিএসএফের গুলিবর্ষণের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, ঝাঁঝাডাঙ্গা সীমান্তে বিএসএসফের গুলিবর্ষণের খবর পাওয়ার পরপরই ৩২ বিএসএফের কমান্ড্যান্টের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে। তিনি জানিয়েছেন, বেশ কয়েকজন স্বর্ণ চোরাকারবারি ভারতের ২০০ মিটার অভ্যন্তরে ঢুকে পড়লে বিএসএফ তাঁদের লক্ষ্য করে গুলিবর্ষণ করে। এ ঘটনায় একজন গুলিবিদ্ধ হন এবং অন্যরা পালিয়ে যান। গুলিবিদ্ধ ব্যক্তিকে উদ্ধার করে সেখানকার হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, গুলিবিদ্ধ ব্যক্তির মারা যাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
স্থানীয় একাধিক সূত্রের ভাষ্য, চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদা উপজেলার দর্শনা থানার পারকৃষ্ণপুর-মদনা ইউনিয়নের ঝাঁঝাডাঙ্গা গ্রামের মো. নূর ইসলামের ছেলে ইব্রাহিম বাবুসহ ৪-৫ জন দুপুর ১২টার দিকে গরুর ঘাস কাটার জন্য ভারতের সীমান্তের কাছাকাছি গালার মাঠে যান। এর কিছুক্ষণ পর স্থানীয় বাসিন্দারা পরপর দুটি গুলির শব্দ শুনতে পান। ইব্রাহিমের সঙ্গে ঘাস কাটতে যাওয়া লোকজন ফিরে এসে ইব্রাহিম বাবুর বাবাকে জানান, বিএসএফের গুলিতে তাঁর ছেলে মারা গেছেন এবং তাঁর লাশ বিএসএফ নিয়ে গেছে।
দর্শনা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. শহীদ তিতুমীর প্রথম আলোকে বলেন, সীমান্তে গুলিবর্ষণের খবর অনেকেই শুনেছেন। যেহেতু গুলিবর্ষণের পর ইব্রাহিম বাবু বাড়িতে ফেরেননি, এ জন্য তাঁর মা–বাবার ধারণা যে তাঁদের ছেলে মারা গেছেন। তবে গুলিবিদ্ধ লাশ দেখেছেন, এমন প্রত্যক্ষদর্শী পাওয়া যায়নি।