আড়াইহাজারে বিএনপির নাম ভাঙিয়ে স্থানীয় এক নেতার লাগামহীন চাঁদাবাজিতে অতিষ্ঠ এলাকাবাসী থানা ঘেরাও করে শাস্তির দাবি করেছে।
গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে উপজেলার ছোট ফাউসা এলাকাবাসী শাহীন মিয়া নামে ওই চাঁদাবাজের গ্রেপ্তার ও শাস্তির দাবি জানিয়ে আড়াইহাজার থানা ঘেরাও করে। এ সময় বিপুলসংখ্যক নারী-পুরুষ থানায় সমবেত হয়।
স্থানীয়রা জানায়, ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনার দেশত্যাগের পর ব্রাহ্মন্দী ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি প্রার্থী শাহীন মিয়া ছোট ফাউসা এলাকায় মামলা হামলার ভয় দেখিয়ে ব্যাপক চাঁদাবাজি শুরু করেন। তাঁকে চাঁদা দিতে গিয়ে স্থানীয় ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসায়ীদের পথে বসার উপক্রম হয়েছে।
স্থানীয় বাসিন্দা মনির হোসেন জানান, শাহীন ও তাঁর লোকজন তাঁর কাছ থেকে এক লাখ টাকা দাবি করে। চাঁদা না দিলে তাঁকে আওয়ামী লীগার বানিয়ে মামলায় কারাগারে পাঠানোর হুমকি দেয় তারা।
ওই এলাকার টেক্সটাইল মিলের শ্রমিক আমান উল্লাহ জানান, তাঁর কাছ থেকে পাঁচ হাজার টাকা দাবি করে শাহীন ও তাঁর লোকজন। চাঁদা না দিলে তাঁকে আওয়ামী লীগের দোসর বানিয়ে মামলায় তাঁর নাম ঢুকিয়ে দেওয়া হবে বলে হুমকি দিয়েছে তারা।
শাহীন মিয়া ছোট ফাউসা গ্রামের আনছার আলীর ছেলে। এক সময় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীর সঙ্গে সখ্য রেখে এলাকায় বেশ প্রভাব বিস্তার করে চলতেন তিনি। ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার দেশত্যাগের পর রাতারাতি ভোল পাল্টে বিএনপি বনে যান। শুরু হয় তাঁর নতুন অধ্যায়। বিভিন্ন স্থানে ৭ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি প্রার্থী প্রচার করে ব্যানার টানান। শাহীন তাঁর এলাকায় ছাত্রলীগের বেশ কিছু কর্মী নিয়ে একটি ক্লাব গঠন করেন। সেই কর্মীদের নিয়ে একটি চক্র তৈরি করেন। এ চক্রটি ওরশ, খেলা, বিচার-সালিশসহ বিভিন্ন অজুহাতে স্থানীয়দের কাছ থেকে চাঁদা আদায় করতে থাকে। এলাকার মাদক কারবারিদের কাছ থেকে টাকা নিয়ে অবাধে ব্যবসা করার সুযোগ করে দেয়। বৃহস্পতিবারও একটি ওরশ উদযাপনকে কেন্দ্র করে স্থানীয়দের কাছ থেকে চাঁদা দাবি করে তারা। 
ব্রাহ্মন্দী ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি নুরুল আমিন জানান, শাহীনের চাঁদাবাজির কারণে ছোট ফাউসা এলাকার মানুষ অতিষ্ঠ হয়ে গেছে। নানা অজুহাতে তিনি বিএনপির নাম ভাঙিয়ে এসব অপকর্ম করে যাচ্ছেন। 
উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক জুয়েল আহমেদ বলেন, শাহীন সাবেক সংসদ সদস্য নজরুল ইসলাম বাবু ও তাঁর ভাগনিজামাই রবিনের কর্মী হিসেবে এলাকায় পরিচিত ছিলেন। এখন ভোল পাল্টে বিএনপির নাম ভাঙিয়ে চাঁদাবাজি করছেন। শাহীন বিএনপির কেউ নয়। তাঁর বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে থানার ওসিকে বলা হয়েছে। 
চাঁদাবাজির বিষয়টি অস্বীকার করেছেন শাহীন মিয়া। নিজেকে ব্রাহ্মন্দী ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবক দলের সদস্য দাবি করে তিনি বলেন, তাঁর দলের প্রতিপক্ষরা আওয়ামী লীগের লোকজনকে ফুসলিয়ে তাঁর বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালিয়ে যাচ্ছে। ছাত্রলীগের সঙ্গে তাঁর কোনো সম্পর্ক নেই। বৃহস্পতিবার সকালে তাঁর বাড়িঘরে হামলা করা হয়েছে। 
আড়াইহাজার থানার ওসি এনায়েত হোসেন জানান, এ ব্যাপারে স্থানীয়রা থানায় এসে পুলিশকে জানিয়েছে। শাহীনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। 

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ব এনপ র ন ম ব এনপ র স এল ক য় আওয় ম ব যবস

এছাড়াও পড়ুন:

সরকারি কার্যালয়ে মাইক্রোসফট টিমসের ব্যবহার নিষিদ্ধ করছে জার্মানির একটি স্টেট, কেন

সরকারি কার্যালয়ে মাইক্রোসফটের টিমসসহ বেশ কয়েকটি সফটওয়্যারের ব্যবহার বন্ধের সিদ্ধান্ত নিয়েছে জার্মানির উত্তরাঞ্চলীয় শেলসভিগ-হোলস্টেইন স্টেট। এই সিদ্ধান্ত কার্যকর হলে আগামী তিন মাস পর পুলিশ, বিচার বিভাগ ও প্রশাসনের অধিকাংশ কর্মকর্তা মাইক্রোসফট টিমস ব্যবহার করতে পারবেন না। তথ্য সংরক্ষণে বিদেশি প্রযুক্তিপ্রতিষ্ঠানের ওপর নির্ভরতা কমিয়ে নিজস্ব ডিজিটাল অবকাঠামো গড়ে তুলতে এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।

স্টেট গভর্নমেন্টের ডিজিটাল রূপান্তরবিষয়ক মন্ত্রী ডির্ক শ্রোয়েডটার বার্তা সংস্থা এএফপিকে বলেন, ‘আমরা তথ্যের ওপর পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ চাই। এ জন্যই মাইক্রোসফট টিমসের ব্যবহার বন্ধ করে দিচ্ছি।’ নতুন সিদ্ধান্তের আওতায় প্রাথমিকভাবে শেলসভিগ-হোলস্টেইন স্টেটের ৬০ হাজার সরকারি কর্মচারীর মধ্যে প্রায় ৩০ হাজার কর্মী এই পরিবর্তনের আওতায় আসবেন। পরবর্তী ধাপে আরও প্রায় ৩০ হাজার শিক্ষককে একই ব্যবস্থায় অন্তর্ভুক্ত করার পরিকল্পনা রয়েছে।

স্টেট গভর্নমেন্ট ২০২৪ সাল থেকেই ধাপে ধাপে মাইক্রোসফটের সফটওয়্যার ব্যবহারের বিকল্প খুঁজে নেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু করেছে। এই পরিবর্তনের অংশ হিসেবে অফিস ব্যবস্থাপনায় মাইক্রোসফট ওয়ার্ড ও এক্সেলের পরিবর্তে ‘লিব্রে অফিস’ এবং ই–মেইল ও ক্যালেন্ডার ব্যবস্থাপনায় ‘মাইক্রোসফট আউটলুক’–এর জায়গায় ‘ওপেন-এক্সচেঞ্জ’ ব্যবহার শুরু হয়েছে।

পরবর্তী ধাপে অপারেটিং সিস্টেম হিসেবে মাইক্রোসফট উইন্ডোজ বাদ দিয়ে একটি লিনাক্সভিত্তিক বিকল্প চালুর পরিকল্পনা রয়েছে। ডির্ক শ্রোয়েডটার জানান, ইউক্রেন যুদ্ধের পর ইউরোপজুড়ে জ্বালানিনির্ভরতা নিয়ে যেমন সচেতনতা তৈরি হয়েছে, তেমনি ডিজিটাল নিরাপত্তা ও তথ্য নিয়ন্ত্রণ নিয়েও নতুন করে ভাবতে হচ্ছে। তার ভাষায়, ‘এই যুদ্ধ আমাদের চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়েছে, আমরা শুধু জ্বালানিতেই নয়, তথ্যপ্রযুক্তিতেও কতটা নির্ভরশীল। এখন সময় এসেছে এসব নির্ভরতা কাটিয়ে ওঠার।’ স্টেট গভর্নমেন্ট জানিয়েছে, মাইক্রোসফটের নিয়ন্ত্রণে থাকা কোনো ক্লাউড সেবার বদলে জার্মানির রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন ক্লাউড প্ল্যাটফর্মেই তারা সরকারি তথ্য সংরক্ষণ করবে।

যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক বড় প্রযুক্তি কোম্পানিগুলোর ওপর ইউরোপের নির্ভরতা নিয়ে কয়েক বছর ধরেই বিতর্ক চলছে। বিশেষত মাইক্রোসফটের বাজার নিয়ন্ত্রণ নিয়ে সমালোচনার পরিপ্রেক্ষিতে ২০২৩ সালে ইউরোপীয় ইউনিয়ন একটি প্রতিযোগিতাবিষয়ক তদন্ত শুরু করে। অভিযোগ ছিল, মাইক্রোসফট তাদের ব্যবসায়িক অ্যাপ্লিকেশনের সঙ্গে টিমস সফটওয়্যার বান্ডিল করে বিক্রি করে, যা বাজারে প্রতিযোগিতার সুযোগ কমিয়ে দেয়। ডির্ক শ্রোয়েডটার বলেন, ‘শেলসভিগ-হোলস্টেইনের নেওয়া এই পদক্ষেপ আন্তর্জাতিক অঙ্গনে দৃষ্টি আকর্ষণ করছে। বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আমাদের কাছে পরামর্শ চাওয়া হচ্ছে।’

সূত্র: টাইমস অব ইন্ডিয়া

সম্পর্কিত নিবন্ধ