যুক্তরাষ্ট্রের কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মাহমুদ খলিল। গত বছর দেশটির বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ফিলিস্তিনপন্থী বিক্ষোভ সংগঠিত করার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিলেন তিনি। গত শনিবার নিউইয়র্ক থেকে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

খলিলের গ্রেপ্তার যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে ক্ষোভ উসকে দিয়েছে এবং দেশটিতে বাক্‌স্বাধীনতার সুরক্ষা নিয়ে উদ্বেগ বেড়েছে।

২৯ বছর বয়সী খলিল একজন ফিলিস্তিনি শিক্ষার্থী। ইমিগ্রেশন অ্যান্ড কাস্টমস এনফোর্সমেন্ট (আইসিই) এজেন্টরা গত শনিবার নিউইয়র্কের ম্যানহাটানে বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসন থেকে খলিলকে গ্রেপ্তার করে। তাঁরা বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে তাঁরা খলিলের স্থায়ীভাবে যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসের অনুমতি (গ্রিনকার্ড নামে অধিক পরিচিত) প্রত্যাহার করে নেবেন।

যদিও খলিলের বিরুদ্ধে কোনো ফেডারেল অভিযোগ দায়ের করা হয়নি।

খলিলের গ্রেপ্তারের পর নিজের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে এক পোস্টে ট্রাম্প লিখেছেন, ‘এটা প্রথম গ্রেপ্তার, আরও অনেক আসতে চলেছে।’ তিনি খলিলকে ‘একজন কট্টর হামাসপন্থী বিদেশি শিক্ষার্থী’ বলে বর্ণনা করেছেন।

গত ২০ জানুয়ারি দ্বিতীয় মেয়াদে প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নেওয়ার পর প্রথম সপ্তাহেই ট্রাম্প বলেছিলেন, গত বছর যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসগুলোতে যেসব শিক্ষার্থী গাজায় ইসরায়েলের যুদ্ধের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ করেছেন, তাঁদের অবশ্যই বিতাড়ন করা হবে।

বিক্ষোভে শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে ইসরায়েল সংশ্লিষ্ট সব কোম্পানির সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করার এবং যুদ্ধ অবসানে একটি যুদ্ধবিরতি চুক্তির দাবি জানিয়েছিল।
ট্রাম্প দেশের স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে হুঁশিয়ার করে দিয়েছেন, ক্যাম্পাসে কোনো ‘অবৈধ বিক্ষোভের’ অনুমতি দিলে তাদের জন্য বরাদ্দ ফেডারেল তহবিল বন্ধ করে দেওয়া হবে।

খলিল গ্রেপ্তার হওয়ার কয়েক দিন আগে ট্রাম্প কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪০ কোটি মার্কিন ডলারের ফেডারেল তহবিল বাতিল করেন।

গ্রেপ্তার হওয়ার কয়েক দিন আগে খলিল বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে বলেছিলেন, ‘স্পষ্টতই, ট্রাম্প উচ্চশিক্ষা এবং আইভি লিগ শিক্ষাব্যবস্থার বিরুদ্ধে তাঁর লড়াই ও আক্রমণের সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনার অংশ হিসেবে ওই বিক্ষোভকে বলির পাঁঠা হিসেবে ব্যবহার করছেন।’

খলিলের আইনজীবী টাইম সাময়িকীকে বলেছেন, তাঁর মক্কেল রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড এবং অবস্থানের কারণে লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হয়েছেন। খলিল কোনো অপরাধ করেননি বা স্থায়ীভাবে বসবাসের অনুমতির কোনো শর্ত লঙ্ঘন করেননি।

২০২৪ সালের ডিসেম্বরে কলাম্বিয়ার স্কুল অব ইন্টারন্যাশনাল অ্যান্ড পাবলিক অ্যাফেয়ার্স থেকে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন খলিল। গত বছরই তিনি গ্রিনকার্ড পান। খলিলের স্ত্রী যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক ও আট মাসের অন্তঃসত্ত্বা।

খলিলের জন্ম সিরিয়ায়। তাঁর দাদা টাইবেরিয়াস থেকে পরিবার নিয়ে পালিয়ে সিরিয়ায় চলে যান। টাইবেরিয়াসে একসময় সাড়ে সাত লাখের বেশি ফিলিস্তিনি বসবাস করতেন। ইহুদি সন্ত্রাসীরা সেখানে জাতিগত নিধন চালায়, জন্ম হয় একটি নতুন রাষ্ট্র ইসরায়েলের। টাইবেরিয়াস এখন ইসরায়েলের অংশ।

যুক্তরাষ্ট্রের ফিলিস্তিনি শিক্ষার্থী মাহমুদ খলিলের মুক্তির দাবিতে মিছিল.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ইসর য় ল

এছাড়াও পড়ুন:

সিদ্দিককে মারধর ও শিল্পীদের বিরুদ্ধে মামলা, যা বললেন অভিনয়শিল্পী সংঘের সভাপতি

শোবিজের একঝাঁক একঝাঁক অভিনয়শিল্পীকে হত্যাচেষ্টা মামলার আসামি করা হয়েছে। প্রথমে ইরেশ যাকের, তারপর সুবর্ণা মুস্তাফা, অপু বিশ্বাস, নুসরাত ফারিয়া, নিপুণসহ ১৭ অভিনয়শিল্পীর নাম প্রকাশ্যে এসেছে। এরই মধ্যে গতকাল অভিনেতা সিদ্দিককে মারধর ও লাঞ্ছিত করে রাজধানীর রমনা থানায় সোপর্দ করা হয়। এসব বিষয় নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে চর্চা চলছে। এ নিয়ে অভিনয়শিল্পী সংঘের সভাপতি আজাদ আবুল কালাম নিজের অবস্থান পরিষ্কার করেছেন।

সিদ্দিকের ওপর হামলা ও লাঞ্ছনা ঘটনা নিয়ে আজাদ আবুল কালাম গণমাধ্যমে বলেন, “সিদ্দিকের সঙ্গে যা ঘটেছে, এটা তো মব। এই মব ভায়োলেন্সকে তো ঠেকাচ্ছে না। কেন যেন মনে হচ্ছে, মব ভায়োলেন্সকে নীরবে বলা হচ্ছে, করে যাও। আমাদের কিছুই করার নেই। একজনের রাজনৈতিক চিন্তাচেতনা থাকতে পারে। অভিনেতা হিসেবে সিদ্দিক সবার কাছে পরিচিত। কিছু লোক তাকে এভাবে রাস্তায় ধরে মেরে দেবে!”

প্রশ্ন ছুড়ে দিয়ে আজাদ আবুল কালাম বলেন, “দলবদ্ধভাবে সিদ্দিককে শারীরিকভাবে আঘাত করেছে, আক্রমণ করেছে, গায়ে থেকে জামাকাপড় খুলে ফেলেছে, এরপর থানায় সোপর্দ করেছে। থানায় যদি সোপর্দ করতেই হয়, তাহলে প্রথমে কেন আইন হাতে তুলে নিল? তাকে হেনস্তা করে আইনের হাতে তুলে দেবে— এই মব জাস্টিস, মব ভায়োলেন্স সমাজে বিশৃঙ্খলা তৈরি করছে। এটা তো একটা সময় নানা স্তরে হবে। এসব কর্মকাণ্ড সরকারকেও প্রশ্নবিদ্ধ করছে। সরকারকে পদক্ষেপ নিতে হবে, যেখানে মব ভায়োলেন্স, সেখানে কঠোর হস্তে দমন করবে।”

ঢালাওভাবে অভিনয়শিল্পীদের বিরুদ্ধে মামলা দায়েরের বিষয়ে বিস্মিত আবুল কালাম আজাদ। তিনি বলেন, “ঢালাওভাবে হত্যা মামলা হচ্ছে! দেখে মনে হচ্ছে, সবাইকে মামলার মধ্যে ফেলতে হবে। ৩০০-৪০০ জন মামলার আসামি, এটা অবাস্তব একটা অবস্থা। একজন সুবর্ণা মুস্তাফার মতো শিল্পী রাস্তায় গিয়ে মানুষকে গুলি করবে? যে মানুষটি মামলা করেছেন, তিনি আন্দোলনের সময় আহত হয়েছেন, গুলিবিদ্ধ হয়েছিলেন; তিনি মামলা করেছিলেন অনেক লোকের নামে। মামলার নথিতে শিল্পীদের অনেকের নাম দেখলাম, তারা রাস্তায় নেমে মানুষকে গুলি করবে!”

সরকারিভাবে এ ধরনের মামলাকে প্রতিরোধ করা উচিত বলে মনে করেন আজাদ আবুল কালাম। তিনি বলেন, “সরকারিভাবে, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারেরও উচিত হবে এ ধরনের মামলাকে প্রতিরোধ করা। নিরুৎসাহিত করা। যে ব্যক্তি মামলা করছেন, যদি প্রমাণিত হয়, শিল্পীরা কেউই গুলি করেনি, তখন তো এটা মিথ্যা মামলা হবে। এ রকম মিথ্যা মামলার ক্ষেত্রে, যে ব্যক্তি শিল্পীদের নামে মামলা করেছেন, তার কী শাস্তি হবে, তারও বিধান থাকতে হবে।”

“কারো বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ থাকলে, তা জানানোর একটা প্রক্রিয়া আছে। শুধু শিল্পী না, একজন খেটে খাওয়া সাধারণ মানুষের বিরুদ্ধেও যদি কোনো অভিযোগ থাকে, তাহলে আপনি তার অপরাধ প্রমাণিত হওয়ার আগপর্যন্ত তাকে অপরাধী বলতে পারেন না। তাকে সামাজিকভাবে হেয় করতে পারেন না। মামলা করে তাকে সামাজিকভাবে হেয় করা শুরু করলেন, এই প্রক্রিয়া যদি চলতে থাকে, এটাই যদি আমাদের মনস্তত্ত্ব হয়, তাহলে বিভক্তি আরো বাড়বে।” বলেন আবুল কালাম আজাদ।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ৫০ পেরোনো নারীর খাদ্যাভ্যাস যেমন হতে হবে
  • যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে বিশ্বকে ঐক্যবদ্ধ করতে কাজ করছে চীন
  • সেলফি’র ধাক্কায় গণস্বাস্থ্যের কর্মীর মৃত্যু, ৬ বাস আটক
  • পেহেলগামে হামলার পর প্রতিশোধের আশঙ্কায় দিন কাটছে ভারতীয় মুসলিমদের
  • প্রথম আলোর সাংবাদিককে বৈষম্যবিরোধী নেতার হুমকি, থানায় জিডি
  • গাজীপুরে জমি নিয়ে বিরোধে সংঘর্ষ, হাতুড়িপেটায় একজন নিহত
  • সিদ্দিককে মারধর ও শিল্পীদের বিরুদ্ধে মামলা, যা বললেন অভিনয়শিল্পী সংঘের সভাপতি
  • জলবায়ু সংকট ন্যায়বিচার সংশ্লিষ্ট সংকটও বটে: প্রধান বিচারপতি
  • ঢাকায় অনুষ্ঠিত হলো বিশেষ ফিউশন খাবার উপস্থাপনা
  • পাকিস্তানে হামলার প্রস্তুতি নিচ্ছে ভারত: নিউইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদন