ফিলিস্তিনপন্থী আন্দোলনের সংগঠক গ্রিনকার্ডধারী খলিলকে কি যুক্তরাষ্ট্র থেকে বিতাড়ন করতে পারবেন ট্রাম্প
Published: 13th, March 2025 GMT
যুক্তরাষ্ট্রের কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মাহমুদ খলিল। গত বছর দেশটির বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ফিলিস্তিনপন্থী বিক্ষোভ সংগঠিত করার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিলেন তিনি। গত শনিবার নিউইয়র্ক থেকে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
খলিলের গ্রেপ্তার যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে ক্ষোভ উসকে দিয়েছে এবং দেশটিতে বাক্স্বাধীনতার সুরক্ষা নিয়ে উদ্বেগ বেড়েছে।
২৯ বছর বয়সী খলিল একজন ফিলিস্তিনি শিক্ষার্থী। ইমিগ্রেশন অ্যান্ড কাস্টমস এনফোর্সমেন্ট (আইসিই) এজেন্টরা গত শনিবার নিউইয়র্কের ম্যানহাটানে বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসন থেকে খলিলকে গ্রেপ্তার করে। তাঁরা বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে তাঁরা খলিলের স্থায়ীভাবে যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসের অনুমতি (গ্রিনকার্ড নামে অধিক পরিচিত) প্রত্যাহার করে নেবেন।
যদিও খলিলের বিরুদ্ধে কোনো ফেডারেল অভিযোগ দায়ের করা হয়নি।
খলিলের গ্রেপ্তারের পর নিজের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে এক পোস্টে ট্রাম্প লিখেছেন, ‘এটা প্রথম গ্রেপ্তার, আরও অনেক আসতে চলেছে।’ তিনি খলিলকে ‘একজন কট্টর হামাসপন্থী বিদেশি শিক্ষার্থী’ বলে বর্ণনা করেছেন।
গত ২০ জানুয়ারি দ্বিতীয় মেয়াদে প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নেওয়ার পর প্রথম সপ্তাহেই ট্রাম্প বলেছিলেন, গত বছর যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসগুলোতে যেসব শিক্ষার্থী গাজায় ইসরায়েলের যুদ্ধের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ করেছেন, তাঁদের অবশ্যই বিতাড়ন করা হবে।
বিক্ষোভে শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে ইসরায়েল সংশ্লিষ্ট সব কোম্পানির সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করার এবং যুদ্ধ অবসানে একটি যুদ্ধবিরতি চুক্তির দাবি জানিয়েছিল।
ট্রাম্প দেশের স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে হুঁশিয়ার করে দিয়েছেন, ক্যাম্পাসে কোনো ‘অবৈধ বিক্ষোভের’ অনুমতি দিলে তাদের জন্য বরাদ্দ ফেডারেল তহবিল বন্ধ করে দেওয়া হবে।
খলিল গ্রেপ্তার হওয়ার কয়েক দিন আগে ট্রাম্প কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪০ কোটি মার্কিন ডলারের ফেডারেল তহবিল বাতিল করেন।
গ্রেপ্তার হওয়ার কয়েক দিন আগে খলিল বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে বলেছিলেন, ‘স্পষ্টতই, ট্রাম্প উচ্চশিক্ষা এবং আইভি লিগ শিক্ষাব্যবস্থার বিরুদ্ধে তাঁর লড়াই ও আক্রমণের সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনার অংশ হিসেবে ওই বিক্ষোভকে বলির পাঁঠা হিসেবে ব্যবহার করছেন।’
খলিলের আইনজীবী টাইম সাময়িকীকে বলেছেন, তাঁর মক্কেল রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড এবং অবস্থানের কারণে লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হয়েছেন। খলিল কোনো অপরাধ করেননি বা স্থায়ীভাবে বসবাসের অনুমতির কোনো শর্ত লঙ্ঘন করেননি।
২০২৪ সালের ডিসেম্বরে কলাম্বিয়ার স্কুল অব ইন্টারন্যাশনাল অ্যান্ড পাবলিক অ্যাফেয়ার্স থেকে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন খলিল। গত বছরই তিনি গ্রিনকার্ড পান। খলিলের স্ত্রী যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক ও আট মাসের অন্তঃসত্ত্বা।
খলিলের জন্ম সিরিয়ায়। তাঁর দাদা টাইবেরিয়াস থেকে পরিবার নিয়ে পালিয়ে সিরিয়ায় চলে যান। টাইবেরিয়াসে একসময় সাড়ে সাত লাখের বেশি ফিলিস্তিনি বসবাস করতেন। ইহুদি সন্ত্রাসীরা সেখানে জাতিগত নিধন চালায়, জন্ম হয় একটি নতুন রাষ্ট্র ইসরায়েলের। টাইবেরিয়াস এখন ইসরায়েলের অংশ।
যুক্তরাষ্ট্রের ফিলিস্তিনি শিক্ষার্থী মাহমুদ খলিলের মুক্তির দাবিতে মিছিল.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ইসর য় ল
এছাড়াও পড়ুন:
রাতারাতি তারকা হলে দীর্ঘ সময় দর্শকের মনে থাকা কঠিন: রিচি
রিচি সোলায়মান। ছোটপর্দার জনপ্রিয় এই অভিনেত্রী এখন অনেকটাই আড়ালে। আজ বিশ্ব বাবা দিবস উপলক্ষে প্রকাশ হয়েছে বিশেষ গানচিত্র ‘বাবা শুনতে কী পাও’। এতে অভিনয় করেছেন রিচি সোলায়মান। এই গানচিত্র এবং সাম্প্রতিক নানা বিষয়ে তাঁর সঙ্গে কথা বলেছেন মীর সামী
আপনার অভিনীত গানচিত্র ‘বাবা শুনতে কী পাও’ নিয়ে কিছু বলুন?
‘বাবা শুনতে কি পাও’ শিরোনামের এই বিশেষ গানটি তৈরি করেছেন প্রান্তিক সুর। তাতে কণ্ঠ দিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রপ্রবাসী গজল ঘরানার শিল্পী শিরিন চৌধুরী। গানটির কথাও লিখেছেন শিল্পী নিজে। গানচিত্রে একটি সুন্দর সামাজিক বার্তা পৌঁছে দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। বিয়ের পর একটা মেয়ের স্বপ্ন যেন মরে না যায় এবং শুধু মানুষটাকে নয়, তার স্বপ্নকেও ভালোবাসার সংবেদনশীল এবং হৃদয়স্পর্শী বাবার অনুরোধের বার্তা থাকছে এতে। গানের কথার সূত্র ধরে গল্পনির্ভর ভিডিওটিতে বাবার ভূমিকায় অভিনয় করেছেন আবুল হায়াত আর মেয়ের ভূমিকায় আমি। অনেকদিন পর হায়াত চাচার সঙ্গে কাজ করলাম।
এই কাজটির সঙ্গে যুক্ত হলেন কীভাবে?
কিছুদিন আগে নির্মাতা চয়নিকা চৌধুরী আমায় গানচিত্রটিতে অভিনয়ের জন্য বললেন। যখন শুনলাম এই গানে বাবার ভূমিকায় অভিনয় কবেন আবুল হায়াত চাচা; ঠিক তখনই রাজি হয়েছি। কারণ, আমি হায়াত চাচার পরিচালনায় অনেক নাটকে তাঁর মেয়ের ভূমিকায় অভিনয় করেছি। তাই ভাবলাম বাবা দিবসের এই কাজটি আমাদের আরও একটি ডকুমেন্টেশন হয়ে থাক। আমাদের এই কাজে একজন মেয়ের দৃষ্টিভঙ্গিতে বাবাকে ঘিরে তার স্মৃতি, ভালোবাসা আর না বলা কথাগুলো উঠে এসেছে। কাজটি করার সময় আমার বাবার কথা খুব মনে পড়ছিল। একজন বাবার অবদান যে কত বিশাল, সেটি অনেক সময় আমরা বুঝতে পারি না–এই গানচিত্রে সেটিই তুলে ধরা হয়েছে।
আপনাকে এখন টিভি নাটকে খুব কম দেখা যায়। ইচ্ছা করেই দূরে সরে আছেন?
আমি এখন পরিবার আর নিজের সময়কে প্রাধান্য দিচ্ছি। পাশাপাশি কাজের মানের প্রতিও সবসময় সংবেদনশীল ছিলাম। নাটকের সংখ্যা বাড়ানোর বিষয়ে কখনও বিশ্বাসী ছিলাম না। এখন তো অনেক সময় দেখা যায় গল্প বা চরিত্রের গভীরতা কম, কাজগুলো অনেকটাই ‘কনটেন্ট ভিউ’ নির্ভর হয়ে যাচ্ছে। আমি চাই, যখন কাজ করি, সেটি যেন দর্শকের মনে থাকে। তাই শুরু থেকে এখনও বেছে বেছেই কাজ করছি।
এখন নাটকে ‘ভিউ’ ও ‘ট্রেন্ড’ অনুসারে শিল্পী নির্বাচন হয় বলে অভিযোগ আছে...
এটি ঠিক যে এখন ‘ভিউ’ একটি বড় বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রশ্ন হলো– দীর্ঘ মেয়াদে এই দর্শক আসলে কাদের মনে রাখে? আমার মনে হয়, একটি শিল্পমাধ্যমে যখন কেবল সংখ্যা দিয়ে শিল্পী বা কাজের মান বিচার হয়, তখন সেখানে অন্তর্নিহিত শিল্পবোধ অনেকটা হারিয়ে যায়। আমি বিশ্বাস করি অভিনেতা বা অভিনেত্রী হিসেবে আমাদের প্রথম দায় নিজের চরিত্রের প্রতি। ‘ভিউ’ দিয়ে নয়, শিল্পের গভীরতা দিয়ে একজন শিল্পীকে বিচার করা উচিত।
বর্তমান সময়ে ওটিটি মাধ্যমের প্রসারে নাটকের গুণগত মানে কী প্রভাব পড়েছে বলে মনে করেন?
ওটিটি একটা বড় প্ল্যাটফর্ম। নতুন গল্প আর নতুন নির্মাতাদের সুযোগ এনে দিয়েছে। এখানেও একটি সিন্ডিকেট তৈরি হচ্ছে। যারা আগে টিভিতে প্রভাবশালী ছিলেন, এখন তারা ওটিটিতেও আধিপত্য রাখছেন। এটি শিল্পের জন্য মোটেই ভালো নয়। প্রতিভা থাকা সত্ত্বেও অনেক শিল্পী সুযোগ পাচ্ছেন না। আমি বলব, ওটিটি হোক কিংবা টিভি–প্রতিভা ও গল্পকেই প্রাধান্য দেওয়া উচিত, ‘চেনা মুখ’ বা ‘সেলিব্রেটি প্যাকেজ’কে নয়।
যে সিন্ডিকেটের কথা বললেন, তা কী ভাঙা যায় না?
অবশ্যই যায়। যারা বিষয়টি নিয়ে কাজ করবেন, তারাই এখন সেই দলের হয়ে যাচ্ছে। ফলে বিড়ালের গলায় ঘণ্টা বাঁধবে কে? আমি যখন নিয়মিত কাজ করেছি, সেই সময় কিন্তু সবাই যার যার যোগ্যতা দিয়ে কাজ করেছেন। এখন পরিচয়ের ভিত্তিতে হচ্ছে। ফলে ধীরে ধীরে আমাদের নাট্যাঙ্গনের শিল্পটা নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।
ওটিটির কাজে আগ্রহ অনুভব করেন?
অবশ্যই। যদি ভালো গল্প আর শক্তিশালী চরিত্র পাই, আমি ওটিটিতেও কাজ করতে চাই। অশ্লীলতা বা অহেতুক সাহসী দৃশ্যের নামে যদি গল্পের গুরুত্ব হারিয়ে যায়, তাহলে সেটি আমাকে টানে না। শিল্পমান থাকলেই আমি আগ্রহী।
বর্তমান প্রজন্মের নতুন অভিনেত্রীদের সম্পর্কে আপনার মূল্যায়ন কী?
নতুনদের মধ্যে অনেকেই খুব ভালো করছেন। আমি তাদের একটা কথাই বলি, নিজেকে সময় দিন, নিজেকে গড়ুন। রাতারাতি তারকা হওয়া যায়। দীর্ঘ সময় দর্শকের মনে থাকা কঠিন। টিকে থাকার জন্য শুধু সৌন্দর্য নয়, কাজের প্রতি নিষ্ঠা, অধ্যবসায় ও আত্মসমালোচনাও জরুরি।