Prothomalo:
2025-05-01@00:19:46 GMT

তারা সব দল বেঁধে চলে গেছে

Published: 5th, April 2025 GMT

আমার শৈশব ও কৈশোর কেটেছে বাংলাদেশের উত্তর–পূর্বের পাহাড়ি শহর খাগড়াছড়িতে। পঞ্চম থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত হারিকেন জ্বালিয়ে পড়েছি। আমাদের সবারই ভাষাগত সমস্যা ছিল। চাকমা, মারমা, ত্রিপুরা ভাষা থেকে বাংলা ভাষায় খাপ খাইয়ে নেওয়ার সমস্যা। আমাদের ছিল কো-এডুকেশন বা সহশিক্ষা। মেয়েরা ক্লাসরুমের এক পাশে আর আমরা ছেলেরা আরেক পাশে বসতাম।

অনেকের নাম ও চেহারা এখন আর মনে নেই। দশম শ্রেণি পর্যন্ত কারা কারা ছিল? দেবতোষ, জলদেশ্বর, ইন্দুপ্রিয়, প্রফুল্ল, প্রদীপ, শুভরঞ্জন, মনোরঞ্জন, রামেন্দু, সুহাস জীবন, অজয়, সামাদ, পাইলা প্রু চৌধুরী, মংয়্যু, ছত্র নারায়ণ, উচিৎময়, পূর্ণিমা, অমরাবতী, শাহেদা, সুষমা, তাপসী, রাখী, স্মৃতিরানী, মেরিনা—এদের নাম মনে করতে পারছি। সংখ্যায় বাঙালি ছাত্রছাত্রী খুব কম ছিল। তার মধ্যে সামাদের পরিবার মূলত ব্যবসায়ী। বাড়িঘর সব চট্টগ্রামের সাতকানিয়ায়। প্রায় সময় সে স্কুল কামাই করত। বসত একদম পেছনের সারিতে। কিন্তু কেন জানি তারপরও তার সঙ্গে আমার একধরনের বন্ধুত্ব হয়ে গেল। মনে হয় সামাদ বাঙালি মুসলিম বলে আমার একটু অন্য রকম আগ্রহ ছিল। নবম কিংবা দশম শ্রেণিতে এসে দুজন বাঙালি মুসলিম ছাত্রী যোগ দিল—একজন শাহেদা, আরেকজনের নাম এখন মনে পড়ছে না।

আমি যখন বুয়েটে প্রথম বর্ষে, তখন খাগড়াছড়িতে থমথমে অবস্থা। শান্তি বাহিনীর সঙ্গে সরকারের সংঘাত চলছে। খাগড়াছড়িতে তখন একধরনের অঘোষিত কারফিউ।

এক ঈদের বন্ধে বাড়ি গিয়ে শাহেদার সঙ্গে হঠাৎ রাস্তায় দেখা। আমি রীতিমতো চমকে উঠলাম। ওর বাবা আবার বদলি হয়ে এসেছে। এখানে ডিগ্রিতে ভর্তি হয়েছে। এখন বেশ সপ্রতিভ, তেমন জড়তা নেই। ঈদের দাওয়াত দিল। অবাক হলাম যখন ওর আম্মাও ভেতর থেকে বেরিয়ে এসে আমার পাশে বসে খুব আপন হয়ে গেলেন। শাহেদার চোখে–মুখে খুশির ঝিলিক। বিদায় নেওয়ার সময় বাইরে বেরিয়ে দেখি, কনে দেখা আলোয় আকাশটা ভরে আছে, চারপাশটা এত সুন্দর লাগছে।

এর এক বছর পর গিয়ে শুনলাম, ওরা বদলি হয়ে গেছে। সম্ভবত সহপাঠিনীদের মধ্যে শাহেদার সঙ্গেই আমার শেষ দেখা হয়েছিল।

মং রাজার মৃত্যুর পর আদালতের রায়ে সহপাঠী ও বন্ধু পাইলা প্রু চৌধুরী মং রাজা হলো। এর বছর সাতেক পরে, তখন আমি কুমিল্লায়। ঢাকা থেকে নাইট কোচে খাগড়াছড়ি ফেরার সময় সড়ক দুর্ঘটনায় পাইলা প্রুর মৃত্যু হয়। মুঠোফোনে সংবাদটি শুনে আমি অনেকক্ষণ হতবাক হয়ে বসে ছিলাম।

অমরাবতীর দাম্পত্যজীবন সুখের হয়নি। একদিন জানলাম সে নেই। সুহাস জীবন ছিল বান্দরবানের অগ্রণী ব্যাংকের সিনিয়র প্রিন্সিপাল অফিসার। ২০১১ সালে কর্মস্থলে যাওয়ার পথে চট্টগ্রামে মলম পার্টির খপ্পরে পড়ে নৃশংসভাবে খুন হয়। এই অপমৃত্যু মেনে নেওয়া কঠিন। প্রফুল্লও সময় দিল না, ক্যানসার ধরা পড়ার মাস তিনেকের মাথায় চলে গেল অন্য ভুবনে।

বছর দুয়েক আগে বাড়ি গেলাম। ভাবলাম অনেক দিন দেখা হয়নি, সামাদের খবর নিই। তার দোকানে খবর নিতে গেলাম। তার ভাই জানাল, ভাই তো নেই, চলে গেছে মাস ছয়েক হলো। আমি বজ্রাহতের মতো বসে রইলাম অনেকক্ষণ, বলার মতো কোনো কথা মুখে আসছিল না। বছর তিনেক আগে বাড়ি গিয়ে শুনলাম, দীর্ঘদিন অসুস্থতায় ভুগে ইন্দুপ্রিয় চলে গেছে।

আমি আমার সহপাঠী–সহপাঠিনীদের নাম দিয়ে অন্তর্জালে অনেক খুঁজি। কিন্তু না, কেউ নেই। হঠাৎ যেন সবাই দল বেঁধে কোথায় চলে গেছে আমায় কিছু না বলে।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: সহপ ঠ

এছাড়াও পড়ুন:

মিরাজে দুর্দান্ত জয় বাংলাদেশের

এমন পারফরম্যান্সই তো চাওয়ার থাকে ভালো দলের কাছে। মেহেদী হাসান মিরাজের অলরাউন্ড নৈপুণ্য, সাদমান ইসলামের সেঞ্চুরি, তাইজুল ইসলামের ৯ উইকেট শিকারে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ইনিংস ও ১০৬ রানের বিশাল জয় এনে দেয় বাংলাদেশকে। প্রথম টেস্ট হারের পর যে সমালোচনা হয়েছিল, তার জবাবটা বোধ হয় দ্বিতীয় টেস্ট তিন দিনে জিতে দিয়ে দিলেন নাজমুল হোসেন শান্তরা। ‘বাউন্স ব্যাক’ করে সিরিজ ড্র ১-১-এ।

চট্টগ্রামের বীরশ্রেষ্ঠ মতিউর রহমান স্টেডিয়ামে বীরোচিত পারফরম্যান্স ছিল টাইগারদের। এটি সম্ভব হয়েছে পছন্দের উইকেটে খেলা হওয়ায়। স্পিন ভুবনে উইকেট উৎসব করেছেন তাইজুল, মিরাজ গাঁটছড়া বেঁধে। সিরিজ নির্ধারণী টেস্টে দুটি সেঞ্চুরি দারুণ অর্জন অধারাবাহিক ব্যাটিং লাইনআপের। এই টেস্টে ওপেনিং জুটি ভালো করেছে। লম্বা সময় পর টেস্ট খেলার সুযোগ পাওয়া এনামুল হক বিজয় ভালোই সঙ্গ দেন সাদমানকে। লোয়ার মিডলঅর্ডারে মিরাজের লড়াই ছিল দেখার মতো।

টেলএন্ডারদের নিয়ে রীতিমতো বাজিমাত করেছেন তিনি। শেষ ৩ উইকেটে তৃতীয় দিন ১৫৩ রান যোগ করেন। বাংলাদেশকে পৌঁছে দেন ৪৪৪ রানে। ২১৭ রানের লিড থাকায় ইনিংস ব্যবধানে জয়ের স্বপ্ন দেখায়। মিরাজের অলরাউন্ড পারফরম্যান্সে সে স্বপ্ন পূরণ হয়। সাকিব আল হাসান ও সোহাগ গাজীর পর তৃতীয় বাংলাদেশি ক্রিকেটার হিসেবে সেঞ্চুরি ও পাঁচ উইকেট শিকার তাঁর। 

গত বছর দেশের মাটিতে টেস্টে ভালো করতে পারেনি বাংলাদেশ। শ্রীলঙ্কার পর দক্ষিণ আফ্রিকার কাছে হোয়াইটওয়াশ হয়েছে। ২০২৫ সালের শুরুটাও ভালো ছিল না। সিলেটে জিম্বাবুয়ের কাছে হেরেছে। সিরিজ বাঁচাতে চট্টগ্রামে জিততেই হতো। লক্ষ্যে পৌঁছাতে কন্ডিশনেও পরিবর্তন আনা হয়। চট্টগ্রামের উইকেটে খেলা হয় দ্বিতীয় টেস্ট। যেখানে শাসন ছিল স্পিনারদের। পছন্দের উইকেট পাওয়ায় তিন স্পিনার নিয়ে খেলে বাংলাদেশ। তিনজনই দারুণ বোলিং করেন প্রথম থেকে।

দীর্ঘ বিরতির পর টেস্ট খেলার সুযোগ পাওয়া অফস্পিনার নাঈম হাসান চ্যালেঞ্জ নিয়ে বোলিং করে গেছেন। বেশি উইকেট না পেলেও এক প্রান্তে ব্যাটারদের চাপে ফেলেছেন। যার সুফল তাইজুল ও মিরাজ পেয়েছেন অন্য প্রান্তে। প্রথম দিন শেষ সেশনে ব্রেক থ্রু দেন তিনি। বাঁহাতি স্পিনার পরে পিক করে ৬ উইকেট শিকার করেন। জিম্বাবুয়ে ৯ উইকেটে ২২৭ রানে প্রথম দিন শেষ করে। পরের দিন এক বল খেলে ওই রানেই অলআউট হয়। বাংলাদেশ ব্যাটিং শুরু করে বড় লক্ষ্য নিয়ে। সাদমান ইসলাম ও এনামুল হক বিজয় ১১৮ রানের ওপেনিং জুটি করায় প্রতিপক্ষকে ছাড়িয়ে যাওয়া সহজ হয়। সাদমানের সেঞ্চুরি ও মুমিনুল হক, মুশফিকুর রহিম কিছু রান করায় ৭ উইকেটে ২৯১ রানে দ্বিতীয় দিন শেষ করে বাংলাদেশ।

সেদিন সংবাদ সম্মেলনে সাদমান আশা প্রকাশ করেন, মিরাজ ও তাইজুল জুটি করবেন। অষ্টম উইকেটে ৬৪ রানের জুটি দু’জনের। বেশি ভালো করেছেন পেসার তানজিম হাসান সাকিব। মিরাজের সঙ্গে ১৫৬ বলে ৯৬ রানের জুটি। অভিষেক টেস্টে সাকিবের ব্যাটিং দারুণ লেগেছে অধিনায়ক শান্তর কাছে। ৮০ বলে ৪১ রান করেন তিনি। সবচেয়ে বড় কথা, মাথায় বল লাগার পরও বিচলিত হননি তিনি। মিরাজ ছাড়া চট্টগ্রাম টেস্টের প্রাপ্তি হিসেবে ওপেনিং জুটির ভালো খেলা, সাদমানের সেঞ্চুরি, তাইজুলের ৫ উইকেট শিকার ও সাকিবের রান করাকে মনে করেন শান্ত। 

শেষের তিন উইকেটে তৃতীয় দিন প্রায় দুই সেশন ব্যাট করে বাংলাদেশ। তাইজুল, সাকিব ও হাসানকে নিয়ে ১৫৩ রান যোগ করে। মিরাজ ১০৪ রান করে ওয়েলিংটন মাসাকাদজাকে উইকেট দেন। নার্ভাস নাইটির ঘরে প্রবেশ করে কিছুটা ঝুঁকির মুখে ছিলেন মিরাজ। ৯৮ রানে পৌঁছানোর পর সেঞ্চুরি ছুঁতে দুই রান নিতে চেয়েছিলেন। কিন্তু ফিল্ডারের কাছে বল চলে যাওয়ায় এক রানে থামতে হয়। তখন স্ট্রাইকে হাসান থাকায় দুশ্চিন্তায় পড়ে গিয়েছিল সবাই। ড্রেসিংরুমে খেলোয়াড় ও কোচিং স্টাফের সবাই দাঁড়িয়ে গিয়েছিলেন। কখন হাসান আউট হয়ে যায়, সে ভয় কাজ করছিল হয়তো। কিন্তু হাসান ছিলেন দৃঢ়চেতা। মাসাকাদজাকে ডিফেন্স করে স্বস্তি দেন।

মিরাজ স্ট্রাইকে এসে মেদেভেরের প্রথম দুই বলে ঝুঁকি নেননি। তৃতীয় বলে এক রান নিয়ে ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় টেস্ট সেঞ্চুরির স্বাদ নেন। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে সিরিজ ও দ্বিতীয় টেস্টের সেরা খেলোয়াড় মিরাজ। প্রথম ম্যাচের উভয় ইনিংসে ৫ উইকেট করে ছিল তাঁর। চট্টগ্রামে অতীতের সব পারফরম্যান্স ছাড়িয়ে গেছেন। সেঞ্চুরির সঙ্গে ৫ উইকেটপ্রাপ্তি, দুই হাজার রানের মাইলফলক পেয়েছেন। ২০২১ সালে এই চট্টগ্রামেই ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে সেঞ্চুরি করেছিলেন তিনি। ২১৭ রানে পিছিয়ে থাকা জিম্বাবুয়ে দ্বিতীয় ইনিংসে অলআউট হয় ১১১ রানে। ফ্লাডলাইটের আলো জ্বেলে নির্ধারিত সময়ের বেশি খেলান আম্পায়াররা। প্রায় সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত খেলা হয়। জিম্বাবুয়ে ক্রিকেটাররা তাতে আপত্তি করেননি। তাইজুল ৩, নাঈম ১ ও মিরাজ ৫ উইকেট নিলে ম্যাচ শেষ হয়।  

সিলেটে প্রথম টেস্ট হারের পর চট্টগ্রামে প্রভাব বিস্তার করে খেলে ম্যাচ জেতার পরও খুশি নন অধিনায়ক শান্ত, ‘আমি টেস্ট সিরিজ ড্র করে খুশি না। কারণ, প্রথম টেস্টে আমরা একেবারেই ভালো খেলিনি। এই টেস্টে একপেশে খেলে জিতলেও সিরিজে আরও ভালো খেলা উচিত ছিল। সিরিজটি জিততে হতো।’ টাইগার দলপতি জানান, এই পারফরম্যান্স শ্রীলঙ্কা সফরে কাজে দেবে। দেশের মাটিতে স্পোর্টিং উইকেট বানিয়ে বিদেশে খেলার পরিবেশ তৈরি করছিল বিসিবি। ২০২৩ সালে নিউজিল্যান্ড সিরিজ থেকে স্পোর্টিং উইকেটে খেলা হচ্ছে। কিউইদের বিপক্ষে সিলেটে ঐতিহাসিক জয় পেলেও মিরপুর থেকে হারতে শুরু করে। দেশের মাটিতে টানা ছয় হারের পর জয়ের দেখা পেল বাংলাদেশ।

সম্পর্কিত নিবন্ধ