বগুড়ার সেউজগাড়ি কন্দাল ফসল গবেষণা উপকেন্দ্রের গবেষণা খাতের অর্থ লুটেপুটে খাওয়ার অভিযোগ উঠেছে ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ড. তৌহিদুর রহমানের বিরুদ্ধে। ভুয়া বিল ভাউচার করে টাকা আত্মসাৎ করতে অধস্তনদের নিয়ে একটি চক্র গড়ে তুলেছেন তিনি। তাদের মধ্যে রয়েছেন এসএ তারিকুল হাসান, নিরাপত্তা প্রহরী হামিদুল হাসান ও স্টোর কিপার আফরিন জাহান। এ চক্রের সঙ্গে যোগসাজশ করে বছরে প্রায় ৩০ লাখ টাকা আত্মসাৎ করেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
অভিযোগ পেয়ে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) বগুড়ার উপসহকারী পরিচালক সাজ্জাদ হোসেন গতকাল বৃহস্পতিবার তদন্ত করতে যান। তিনি বলেন, সবে তদন্ত শুরু করেছি। প্রতিবেদনে সত্যতা পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
অভিযোগ থেকে জানা যায়, এই উপকেন্দ্রে বছরে গবেষণা খাতে বীজ, সারসহ বিভিন্ন উপকরণ কিনতে বরাদ্দ দেওয়া হয় অর্ধকোটি টাকা; যার অর্ধেকই আত্মসাৎ করেন ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ড.
শত শত মণ আলু অফিসের শেডে রেখে বীজ হিসেবে বিক্রি করেছেন তৌহিদুর রহমান ও তাঁর অনুসারীরা। সম্প্রতি উৎপাদিত ২০০ মণ ধান দরপত্র ছাড়াই বাজারদরের অর্ধেক দামে বিক্রি দেখিয়ে প্রায় ২ লাখ টাকা আত্মসাৎ করেছেন। ধান বিক্রি ও বিতরণ কমিটির চেয়ারম্যান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা আরজুমান আখতার দরপত্র ছাড়া ধান বিক্রির কথা স্বীকার করেছেন। অনুমোদন ছাড়াই ২৫টি ইউক্যালিপটাসের গাছ কেটে বিক্রি করে কয়েক লাখ টাকা আত্মসাৎ করেছেন এই কর্মকর্তা।
গবেষণা বা ফসল বিক্রির সঙ্গে অফিসের মালপত্র কেনাকাটাসহ নানা খাতে অনিয়ম করেছেন তৌহিদুর রহমান। পুরোনো খামার অফিস পরিত্যক্ত ঘোষণা না করে অনুমোদন ছাড়াই ভেঙে ফেলেছেন। এই ভবনের মালপত্রও গোপনে বিক্রি করার পাঁয়তারা করছেন। গত অর্থবছরে অফিস চত্বরে নিরাপত্তার জন্য সিসিটিভি ক্যামেরা কিনতে ২ লাখ টাকা বিল ভাউচার করেন। অফিসের যাবতীয় মেরামত কাজ সরকারি শ্রমিক দিয়ে করালেও আলাদা শ্রমিক দেখিয়ে বিল ভাউচার করে টাকা আত্মসাৎ করেন। অফিস ও শেড সংস্কারের নামে ৩ লাখ টাকা আত্মসাৎ করেছেন। কেনাকাটা করেছেন তারিকুল হাসান ও হামিদুল হাসানকে দিয়ে। তারা উৎপাদিত পণ্য নিয়ে গেলেও বা বাজারে বিক্রি করলেও তার অনুকূলে কোনো রসিদ দেন না বা দাম পরিশোধ করেন না।
প্রটোকল অনুযায়ী সিনিয়র কর্মকর্তা বিল ভাউচার করার নিয়ম থাকলেও ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা তাঁর পছন্দের তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির কর্মকর্তাদের দিয়ে তা করিয়ে থাকেন। এ ছাড়া মশিউর রহমান নামে এক বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তাও তাঁকে এ কাজে সহায়তা করেন। তিনি আগের ক্রয় কমিটির চেয়ারম্যান ছিলেন। তাঁর সময়কার তারিখ বসিয়ে বিগত দিনের কেনাকাটার একাধিক বিল ভাউচার স্বাক্ষর করিয়ে নেন।
স্টোর কিপারের সঙ্গে যোগসাজশ করে ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা অফিসের মালপত্র চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী হামিদুল হাসানকে দিয়ে সরিয়ে বাইরে বিক্রি করেন। অনৈতিক কাজে জড়িত থাকার অভিযোগে হামিদুলকে বদলি করা হলেও সাবেক আওয়ামী লীগ দলীয় এমপি আব্দুল মান্নানকে দিয়ে তা ঠেকানো হয়। উল্টো অভিযোগকারী নারী শ্রমিককে চাকরিচ্যুত করা হয়।
এ বিষয়ে হামিদুল হাসানের ভাষ্য, তিনি চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী। যা করেন ভারপ্রাপ্ত কর্মকতার হুকুমেই করেন। তাঁর বিরুদ্ধে নারী কেলেঙ্কারির অভিযোগটিও মিথ্যা। একইভাবে অভিযোগ অস্বীকার করেছেন স্টোর কিপার আফরিন জাহান।
ড. তৌহিদুর রহমান বলেন, মৌখিক অনুমতি নিয়ে পুরোনো খামার অফিস ভাঙা হচ্ছে। সিসিটিভি ক্যামেরা পর্যায়ক্রমে লাগানো হচ্ছে। ধান নীতিমালা অনুযায়ী বিক্রি করা হয়েছে। সার-বীজসহ অন্য উপকরণ কেনা হয় ক্রয় কমিটির মাধ্যমে। এ খাতে টাকা আত্মসাতের কোনো সুযোগ নেই।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ত হ দ র রহম ন অফ স র
এছাড়াও পড়ুন:
৫ আগস্ট জুলাই ঘোষণাপত্র হতে পারে, আশা আসিফ মাহমুদের
জুলাই ঘোষণাপত্র নিয়ে কাজ চলছে উল্লেখ করে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়া বলেছেন, ‘সরকারের পক্ষ থেকে চেষ্টা রয়েছে, যাতে আগামী ৫ আগস্ট ঘোষণাপত্র দেওয়া যায়। সেই ক্ষেত্রে অবশ্যই রাজনৈতিক ঐকমত্যে আসা প্রয়োজন। সবার মতামতের ভিত্তিতে সরকার জুলাই ঘোষণাপত্র দিতে চায়। আমরা আশা করছি, আগামী ৫ আগস্ট জুলাই ঘোষণাপত্র পাঠ করা হবে।’
শুক্রবার সন্ধ্যায় কুমিল্লা জেলা আইনজীবী সমিতির নবনির্মিত ভবনের উদ্বোধন শেষে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে আসিফ মাহমুদ এ কথা বলেন।
নির্বাচন প্রসঙ্গে আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়া বলেন, ‘নির্বাচন আয়োজনের জন্য যেসব স্টেকহোল্ডার রয়েছে, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী থেকে শুরু করে নির্বাচন কমিশন পর্যন্ত, সবাই যথাযথ প্রস্তুতি নিয়ে নিচ্ছে। এখনো তো সরকারের চূড়ান্ত তারিখ পাইনি আমরা, সবেমাত্র সম্ভাব্য ডেট পেয়েছি, চূড়ান্ত ডেট পেলে সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
সংস্কার প্রসঙ্গে এই উপদেষ্টা বলেন, ‘সরকারের পক্ষ থেকে সংস্কারের রূপরেখা দেওয়া হয়েছে। আপনারা জানেন সংস্কার কমিশনগুলো কাজ করছে। সবাই ঐকমত্যে পৌঁছাচ্ছেন। সেই ভিত্তিতে একটা জুলাই চার্টার হবে, কী কী সংস্কার হবে। এর মধ্যে যেগুলো বাস্তবায়নযোগ্য, সেগুলো বাস্তবায়ন হবে। ইতিমধ্যে আমরা কাজ করছি। স্থানীয় সরকার বিভাগকে যেসব সংস্কার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে, সেগুলো আমরা বাস্তবায়নে কার্যক্রম শুরু করে দিয়েছি। আশা কিছুদিনের মধ্যে হয়তো আপনারা ফলাফল দেখতে পাবেন।’
এ সময় কুমিল্লা জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি মো. সহিদ উল্লাহ, সাধারণ সম্পাদক মো. মিজানুর রহমানসহ অন্য আইনজীবীরা উপস্থিত ছিলেন।