হাকিমপুরে নিরঞ্জন সরকারের বাগানের ‘নিরাপদ’ আম দেশের সীমানা ছাড়িয়ে সুবাস ছড়াচ্ছে ইউরোপেও। এরই মধ্যে তাঁর গ্যাব পদ্ধতিতে উৎপাদিত আম ইতালিতে রপ্তানি হয়েছে। দামও পাচ্ছেন ভালো। শুরুর দিকে বাগান করে তেমন সুবিধা করতে না পারলেও এখন লাভের অঙ্কটা দ্বিগুণ। 
হাকিমপুরের গোহাড়া গ্রামের যুবক নিরঞ্জন সরকার ২০১৮ সালে সিঙ্গাপুর থেকে দেশে ফেরেন। কিছু একটা করতে হবে সেই ভাবনা থেকে পৈতৃক সূত্রে পাওয়া ১৭৫ শতক জমিতে গড়ে তোলেন আমবাগান। প্রথমে ৪৫০টি আম্রপালি, বারি-৪ ও গৌড়মতী জাতের আমের চারা রোপণ করেন। এর মধ্যে ৪০টি চারা গাছ নষ্ট হয়। পরের বছর ৪১০টি গাছে আম ধরতে শুরু করে। খরচ বাদে বছরে আয় হতো দেড় থেকে ২ লাখ টাকা। চলতি বছর কৃষি বিভাগের পরামর্শে গ্যাপ পদ্ধতিতে (উন্নত কৃষি পরিচর্যা-গুড এগ্রিকালচারাল প্র্যাক্টিসেস) আম উৎপাদন শুরু করেন। ফলন ভালো হয়েছে। ৩ লাখ টাকার আম বিক্রি করেছেন। আরও ৩ লাখ টাকার আম রয়েছে বাগানে। 
নিরঞ্জন সরকারের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এ পদ্ধতিতে আম চাষ করতে প্রথমে বাগানের মাটি, পানি ও ফল সংগ্রহ করে এমআরএল (ক্ষতিকর রাসায়নিক পদার্থের মাত্রা) পরীক্ষার জন্য গাজীপুরে পাঠান নিরঞ্জন। ফলাফল ভালো এলে শুরু করেন গ্যাপ পদ্ধতিতে আম চাষ। এতে  দ্বিগুণ ফলন হয়। আম দেখতেও নজরকাড়া। স্থানীয় পাইকাড়রা বাগান থেকেই আম কিনে নিয়ে যান। প্রতি কেজি আম্রপালি ও বারি-৪ জাতের আম বিক্রি হচ্ছে ৫০ টাকা দরে। গৌড়মতী জাতের আম ৪০ টাকা কেজি। এ বছর ইতালিতে ৪৫০ কেজি আম রপ্তানি করেছেন তিনি। চলতি মাসে আবারও সেখানে আম পাঠানো হবে। 
নওগাঁ জেলার ধামইরহাট থেকে আমবাগান দেখতে আসা বেকার যুবক সোহেল রানা বলেন, ফেসবুকে নিরঞ্জন সরকারের বাগান সম্পর্কে জেনেছি। এর পর সিদ্ধান্ত নিই, আম চাষ করব। তাই বাগান দেখতে আসা। ভালো লেগেছে। ছোট পরিসরে হলেও গ্যাপ পদ্ধতিতে আম চাষ শুরু করব, ভাবছি।
নিরঞ্জনের প্রতিবেশী বিমল চন্দ্র জানান, নিরঞ্জন দাদা পরিশ্রম করে সফলতার মুখ দেখেছেন। তাঁর বাগানের আম বিদেশে রপ্তানি হচ্ছে। এটা আমাদের গ্রামের জন্য গর্বের বিষয়।
আমচাষি নিরঞ্জন সরকার বলেন, শুরুটা খুব সহজ ছিল না। কিন্তু ধৈর্য ধরে লেগে ছিলাম। এখন ভালো ফল পাচ্ছি। মানসম্মত হওয়ায় পাইকাররা বাগান থেকেই আম কিনে নিয়ে যাচ্ছেন। সেগুলো ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে যাচ্ছে। ইতালিতে ৪৫০ কেজি আম রপ্তানি করেছি। এ মাসের মাঝের দিকে আরও রপ্তানি করব।   
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আরজেনা বেগম জানান, উপজেলায় প্রথমবারের মতো কৃষক নিরঞ্জনের হাত ধরে গ্যাপ পদ্ধতিতে আম চাষ করা হয়। তিনি সফল হয়েছেন। মানসম্মত হওয়ায় তাঁর বাগানের আম ইউরোপে রপ্তানি হচ্ছে। তাঁকে দেখে অনেক কৃষক এ পদ্ধতিতে আম চাষে আগ্রহী হয়েছেন। তাদের উৎসাহ দিতে নিয়মিত উঠান বৈঠকসহ বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। 

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ফল আম চ ষ

এছাড়াও পড়ুন:

জঙ্গিবাদের অভিযোগ তদন্তে মালয়েশিয়ার সঙ্গে কাজ করবে বাংলাদেশ: পররাষ্ট্র উপদেষ্টা

মালয়েশিয়ায় জঙ্গিবাদের সঙ্গে জড়িত অভিযোগে গ্রেপ্তার বাংলাদেশিদের বিষয়ে তদন্তে মালয়েশিয়ার সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করবে বাংলাদেশ।

শুক্রবার কুয়ালালামপুরে ৩২তম আসিয়ান আঞ্চলিক ফোরাম (এআরএফ) মন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠকের ফাঁকে মালয়েশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাজি মোহাম্মদ বিন হাজি হাসানের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে এ কথা বলেন বাংলাদেশের পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন।

সন্ত্রাসবাদের অভিযোগে বাংলাদেশিদের গ্রেপ্তারের বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা। তিনি সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে সরকারের দৃঢ় অবস্থান পুনর্ব্যক্ত করেন এবং তথ্য ও অনুসন্ধানের মাধ্যমে অভিযোগের তদন্তে মালয়েশিয়ার সহযোগিতা কামনা করেন। মালয়েশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ ও সহযোগিতা সহজতর করার আশ্বাস দেন।

এর আগে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডেভিড ল্যামির সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। বৈঠকে দুই নেতা দ্বিপাক্ষিক, আঞ্চলিক ও বহুপাক্ষিক নানা ইস্যু নিয়ে আলোচনা করেন। বিভিন্ন বিষয়ের মধ্যে বাংলাদেশে চলমান সংস্কার, রোহিঙ্গা সংকট, স্বল্পোন্নত দেশ (এলডিসি) থেকে উত্তরণের পরের সহায়তা ইত্যাদি নিয়ে আলোচনা করেন তারা। 

পররাষ্ট্র উপদেষ্টা নিউজিল্যান্ডের পররাষ্ট্রমন্ত্রী উইনস্টন পিটার্স, শ্রীলঙ্কার পররাষ্ট্রমন্ত্রী হন ভিজিথা হেরাথ এবং দক্ষিণ কোরিয়ার ভাইস মিনিস্টার ও প্রতিনিধি দলের প্রধান পার্ক ইউনজোর সঙ্গেও সাক্ষাৎ করেন। তাদের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক ও বহুপাক্ষিক নানা বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়।

বাংলাদেশ ২০০৬ সালে এআরএফের সদস্য হয়। এআরএফ নব্বইয়ের দশকের গোড়ার দিকে প্রতিষ্ঠিত একটি ফোরাম, যা বৃহত্তর এশিয়া-প্যাসিফিকের ২৭টি সদস্য দেশের মধ্যে আস্থা ও বিশ্বাস বাড়ানোর জন্য কাজ করে। বর্তমানে বাংলাদেশ এআরএফের দুটি অগ্রাধিকার ‘সন্ত্রাসবাদ দমন ও আন্তর্জাতিক অপরাধ’ এবং ‘দুর্যোগ ও ত্রাণ’ বিষয়ে সহসভাপতিত্ব করছে। 

শুক্রবার বিকেলে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা আসিয়ান আঞ্চলিক ফোরামের মন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠকে বক্তব্য রাখেন। তিনি সদস্য দেশগুলোর প্রতি রোহিঙ্গা সংকটের প্রতি আরও মনোযোগ দেওয়ার আহ্বান জানান।

পররাষ্ট্র উপদেষ্টা আসিয়ান সদস্যদের প্রতি বাংলাদেশের ‘সেক্টরাল ডায়ালগ পার্টনার’ হওয়ার আবেদনকে ইতিবাচকভাবে বিবেচনা করার জন্য অনুরোধ করেন। পররাষ্ট্র উপদেষ্টার সঙ্গে ছিলেন মালয়েশিয়ায় নিযুক্ত বাংলাদেশের হাইকমিশনার মো. শামীম আহসান, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মহাপরিচালক মো. ফরহাদুল ইসলাম এবং বাংলাদেশ সরকারের অন্যান্য ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।

এআরএফ মন্ত্রী পর্যায়ের পরবর্তী বৈঠক ২০২৬ সালে ম্যানিলায় অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। 
 

সম্পর্কিত নিবন্ধ