অন্তর্বর্তী সরকারের মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফরিদা আখতার বলেছেন, জুলাই অভ্যুত্থানকারী ছাত্র-জনতা এই সরকারকে নির্বাচিত করেছে, গঠন করছে। কাজেই এই সরকারের দায়িত্ব হলো ছাত্র-জনতার চাহিদা মেটানো।

উপদেষ্টা বলেন, ‘আমরা অনির্বাচিত এই কথা কে বলল। আমাদেরকে তো এ ছাত্ররা, জনতা—যারা নাকি এই পরিবর্তনটা এনে দিয়েছে, তারাই রাষ্ট্র গঠন করেছে, তারাই সরকার গঠন করেছে, তাদের দ্বারা নির্বাচিত আমরা। কাজেই আমাদের দায়িত্ব হলো তাদের যে চাহিদা, সেটা মেটানো।’

আজ শনিবার রাজধানীর মিরপুরে অবস্থিত শাহ আলী মাজারে ‘গণমানুষের জাগ্রত জুলাই’ শীর্ষক অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। জুলাই কমিউনিটি অ্যালায়েন্স মিরপুর এ আয়োজন করে।

উপদেষ্টা ফরিদা আখতার বলেন, গণ–অভ্যুত্থানে আহত ব্যক্তিরা বা যাঁরা শহীদ হয়েছেন, তাঁদের পরিবার কেউ বলেনি এই অভ্যুত্থানে যোগ দিয়ে তাঁরা ভুল করেছেন। তাঁরা একটাই কথা বলেছেন, তাঁরা শেখ হাসিনার বিচার এই মাটিতে এই সরকারের আমলেই দেখতে চান। উপদেষ্টা বলেন, ‘অন্তর্বর্তী সরকারের একমাত্র কাজ যদি কিছু থাকে, সেটা হবে শেখ হাসিনা এবং যারা এই হত্যাকারী, তাদের বিচার করা। এটাতে কোনো রকম ভুলত্রুটি হতে পারবে না। বিচার আমাদের করতেই হবে।’

বিচারের বিষয়ে ফরিদা আখতার আরও বলেন, ‘যতবারই আমি ওদের কথা (আহতদের) শুনি, ততবারই আমার কাছে মনে হয় যে এটা আমাদের বারবার প্রতিজ্ঞার মতো নিতে হবে,.

..বিচার যদি হয়, ওরা অন্তত শান্তি পাবে।’

অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের প্রশাসক মোহাম্মদ এজাজ বলেন, জুলাইকে অবশ্যই ধারণ করতে হবে। আমরা মুক্তিযুদ্ধকে যেভাবে ধারণ করি, ঠিক একইভাবে ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনের মধ্য দিয়ে পাওয়া স্বাধীনতার প্রতি আমাদের অবশ্যই কৃতজ্ঞ থাকতে হবে। অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন কবি ও চিন্তক ফরহাদ মজহার।

অনুষ্ঠানে শহীদ পরিবারের সদস্যদের পক্ষ থেকে উপস্থিত ছিলেন মিরপুরে শহীদ শাহরিয়ার হাসান আলভীর বাবা আবুল হাসান, শহীদ মো. আকরাম খান রাব্বির বাবা মো. ফারুক খান, শহীদ গোলাম নাফিসের বাবা গোলাম রহমান, শহীদ ইমাম হোসেন তাইয়েমের ভাই রবিউল আউয়াল ও শহীদ আহনাফের মা জারতাস পারভীন।

শহীদ পরিবারের সদস্যরা বলেন, এখনো বিচারের কোনো পদক্ষেপ দেখা যাচ্ছে না। বিচারের নামে প্রহসন চলছে। এখন অনেক জায়গায় মামলা নেওয়া হয় না। উল্টো বিচার চাইতে গেলে শহীদ পরিবারের সদস্যরা হেনস্তার শিকার হন। দ্রুত গণহত্যাকারীদের বিচার দাবি করেন তাঁরা।

অনুষ্ঠানে গরিব-অসহায় ব্যক্তিদের জন্য মেডিকেল ক্যাম্প, জুলাইয়ের গ্রাফিতি, আন্দোলনের ছবি ও খবরের কাগজ প্রদর্শনী, কবিতাপাঠ, জুলাই আন্দোলনে আহত, সম্মুখসারির যোদ্ধাদের স্মৃতিচারণা, শিশুদের চিত্রাঙ্কন, ভাবগানের আসর ও বইমেলা অনুষ্ঠিত হয়েছে।

জুলাই কমিউনিটি অ্যালায়েন্স মিরপুরের প্রধান সমন্বয়ক মোহাম্মদ রোমেলের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন আকিজ ইনসাফ গ্রুপের সিএমও শফিকুল ইসলাম, জুলাই কমিউনিটি অ্যালায়েন্স মিরপুরের সদস্য তৌফিক হাসান, উদয় হাসান, সিলমী সাদিয়া প্রমুখ।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: র র সদস য অন ষ ঠ ন উপদ ষ ট ই সরক র সরক র র আম দ র পর ব র আখত র

এছাড়াও পড়ুন:

লবণশ্রমিকদের নিরাপত্তা ও কর্মপরিবেশের উন্নয়ন করতে হবে

দেশে প্রায় ৪০ হাজার কৃষক পরিবার এবং ৫৫ হাজার দক্ষ শ্রমিক সরাসরি লবণ উৎপাদনে যুক্ত। আরও ৫ লাখের বেশি শ্রমিক এই খাতের সঙ্গে সম্পৃক্ত। ফলে লবণ খাত দেশের গ্রামীণ অর্থনীতি ও কর্মসংস্থানে একটি গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে। পেশাগত নিরাপত্তা ও স্বাস্থ্যব্যবস্থা গ্রহণের মাধ্যমে এই খাতের কর্মপরিবেশের উন্নয়ন করতে হবে। উৎপাদনশীলতা বাড়াতে হবে। বুধবার রাজধানীর গুলশানের একটি হোটেলে আয়োজিত এক পরামর্শ সভায় এসব কথা বলেন বক্তারা।

‘দেশে লবণ খাতে কর্মপরিবেশ উন্নয়ন ও উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে জাতীয় পরামর্শ সভা’ শিরোনামে সভাটির আয়োজন করে আইজেক প্রকল্প। আইজেক প্রকল্পের পূর্ণ নাম হচ্ছে ইমপ্রুভিং স্কিলস অ্যান্ড ইকোনমিক অপরচুনিটিজ ফর উইমেন অ্যান্ড ইয়ুথ ইন কক্সবাজার। কানাডার গ্লোবাল অ্যাফেয়ার্সের অর্থায়নে আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) নেতৃত্বে ইনোভিশন কনসালটিং প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে।

সভায় জানানো হয়, প্রকল্পের আওতায় ইতিমধ্যে ১৮৫ জন শ্রমিক ও কৃষককে পেশাগত স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে এবং ৪৪৪ জনকে চিকিৎসাসহায়তা দেওয়া হয়েছে। কক্সবাজারে ২টি হাসপাতাল ও ৬টি লবণ কারখানার সঙ্গে আইজেক প্রকল্পের সমঝোতা স্মারক সই হয়েছে।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে শিল্প মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. ওবায়দুর রহমান লবণকে ‘সাদা সোনা’ বলে উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, ‘আমরা স্বাস্থ্য, অন্তর্ভুক্তিকরণ, ক্ষুদ্রঋণ ও আধুনিক প্রযুক্তিকে অগ্রাধিকার দিয়ে লবণ খাতকে শক্তিশালী করব।’ তিনি লবণশ্রমিকদের শ্রম অধিকার আইনের অন্তর্ভুক্ত করার প্রতিশ্রুতি দেন।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মো. মুনির হোসেন খান বলেন, বাংলাদেশ শ্রমিক কল্যাণ ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে শ্রমিকদের স্বাস্থ্য ও শিক্ষায় সহায়তা দেওয়া হয়। তবে এ বিষয়ে আরও সচেতনতা এবং সরকারি-বেসরকারি সহযোগিতা প্রয়োজন।

সভায় লবণচাষি দেলোয়ার হোসেন বলেন, ‘আমরা পানিশূন্যতা, অপর্যাপ্ত স্যানিটেশন ও অনিশ্চিত আয়ে ভুগি। আমাদের নিয়মিত চিকিৎসা ও নিরাপত্তা প্রয়োজন।’

সভায় স্বাগত বক্তব্য দেন ইনোভিশন কনসালটিংয়ের কান্ট্রি ডিরেক্টর কাজী শহীদ হাসান ফেরদৌস। আইএলও কক্সবাজার সাব অফিসের প্রধান রুচিকা বেহল লবণ চাষ ও আইজেক প্রকল্প নিয়ে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন। এ ছাড়া সভায় আরও বক্তব্য দেন বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক মোহাম্মদ গুলজারুল আজিজ, বিসিকের লবণ বিভাগের প্রধান সরওয়ার হোসেন, ইনোভিশনের পোর্টফোলিও পরিচালক তাসমিয়া তাবাসসুম রহমান, অ্যাপেক্স ফুটওয়্যারের ব‍্যবসায় কৌশল ও ইএসজি প্রধান ফিরোজ আলম তালুকদার, এসিআই লিমিটেডের ব‍্যবসায় ব‍্যবস্থাপক জিসান রহমান, প্রিটি কম্পোজিট টেক্সটাইলসের নির্বাহী পরিচালক দেওয়ান মাহবুব কামরান, কক্সবাজার চেম্বার অব কমার্সের পরিচালক আবেদ আহসান সাগর, আইএলওর কারিগরি বিশেষজ্ঞ জনসন, আইএলওর ইআইএস প্রকল্পের ব্যবস্থাপক সাদ গিলানি।  

বক্তারা বলেন, লবণের বিশুদ্ধতা বাড়ানো এবং লবণভিত্তিক শিল্পের আধুনিকায়ন অত্যন্ত জরুরি। কাঁচা লবণের বিশুদ্ধতা ও আর্দ্রতা সমস্যা দূর করতে কাঠামোগত অদক্ষতার সমাধান প্রয়োজন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ