ছবি: লেখকের সৌজন্যে
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
বেপরোয়া বখাটে ও অসহায় বাবা
গতকাল ছিল বাবা দিবস। নিউজ ফিড থেকে শুরু করে সোশ্যাল মিডিয়ায় কেবলই বাবাকে নিয়ে আবেগ জড়ানো কথামালা। মায়ের পরে বাবাই একমাত্র শব্দ, যার প্রতি মানুষের আজন্ম দুর্বলতা কিংবা দায়বদ্ধতা! বলা যায়, গর্বের সঙ্গেই আমরা বাবাকে লালন করি হৃদয়ের একান্ত গহিনে। আমাদের মনে সেই এইটুকুন বয়সে স্বপ্নের বীজ বপন করে দেন বাবা। যে বীজ চারাগাছ হয়ে আকাশমুখী হতে থাকে। আমরাও বাবার দেখানো স্বপ্ন ধরতে শুঁয়াপোকা থেকে প্রতিনিয়ত বর্ণিল প্রজাপতিতে রূপান্তরিত হই! তবে কতটা রূপান্তর ঘটে আমাদের, সে হিসেব মেলাতে যান না বাবা। তারা কেবল জানেন নিজের সর্বস্ব সন্তানের ভবিষ্যতের জন্য বিলিয়ে দিতে।
এমনটাই চোখে পড়েছে রোববার সমকালে প্রকাশিত খবরে। বাবা দিবসেই প্রকাশিত খবরে আমরা দেখেছি, বগুড়ায় অষ্টম শ্রেণিপড়ুয়া মেয়েকে বিয়ের হাত থেকে বাঁচাতে প্রতিবাদ করেছেন বাবা। এই প্রতিবাদই কাল হয়ে দাঁড়িয়েছে রিকশাচালক বাবা শাকিল হোসেনের। মেয়েকে বিয়ে না দেওয়ায় বাবাকে তুলে নিয়ে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে। শনিবার বিকেলে বগুড়া শহরের ফুলবাড়ী এলাকায় এ হত্যাকাণ্ড ঘটে। শাকিলের বোন রেশমি আক্তার আশা বলেন, ‘আমার ভাতিজি অষ্টম শ্রেণির ছাত্রী। জিতু কিছুদিন পরপর তাকে বিয়ে করতে চায় এবং উত্ত্যক্ত করে। আমার ভাই ১৪ বছরের মেয়েকে বিয়ে দিতে নারাজ। এ নিয়ে আমার ভাই ও জিতুর মধ্যে কয়েক দিন আগে হাতাহাতির ঘটনাও ঘটেছে। ক্ষুব্ধ হয়ে জিতু ও তার লোকজন শনিবার বিকেলে ভাইকে তুলে নিয়ে গিয়ে হত্যা করেছে। আমরা এ হত্যাকাণ্ডের বিচার চাই।’
এমন ভয়ানক হত্যাকাণ্ডের পরও ভুক্তভোগী মামলা করতে ভয় পাচ্ছিলেন। এক দিন পর নিহত রিকশাচালক শাকিল হোসেনের স্ত্রী মালেকা বেগম বাদী হয়ে বগুড়া সদর থানায় মামলা করেন। মামলায় জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জিতু ইসলামকে প্রধান করে ১৭ জনকে আসামি করা হয়েছে। আরও ৮-১০ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়েছে। পরে পুলিশ জিতু ইসলাম, তার দুই সহযোগী শফিকুল হাসান ও মতিউর রহমানকে গ্রেপ্তার করেছে। এ ঘটনায় পুলিশ ইতিবাচক ও প্রশংসনীয় ভূমিকা রেখেছে– এ কথা বলতেই হবে। যদিও মামলা করার পর আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর এড়িয়ে যাওয়ার সুযোগ নেই। তার পরও পুলিশের আন্তরিকতা উল্লেখযোগ্য। মামলার পর পুলিশ তৎপর হয়ে অভিযান চালিয়ে তিনজনকে গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হয়েছে।
অবাক করার বিষয়, এ ঘটনার প্রায় দুই মাস আগে, গত ১৮ এপ্রিল রাজশাহী মহানগরীর তালাইমারী শহীদ মিনার এলাকায় মেয়েকে উত্ত্যক্তের প্রতিবাদ করায় বাবা আকরাম আলীকে মাথা থেঁতলে হত্যা করা হয়েছিল। সে হত্যার ঘটনায়ও মূল আসামি নান্টুসহ দু’জনকে গ্রেপ্তার করেছিল র্যাব-৫। তার কিছুদিন আগে, ১১ মার্চ ঝালকাঠির কাঁঠালিয়ায় এসএসসি পরীক্ষার্থীকে উত্ত্যক্তের প্রতিবাদ করায় বাবা ও চাচাকে বেধড়ক পিটিয়ে জখম করার ঘটনা ঘটেছে।
আমরা বেপরোয়া ও নিষ্ঠুর হয়ে উঠছি দিন দিন– এ ঘটনাগুলো তারই প্রমাণ। একসময় বখাটেরা ভয়ে থাকত। ভয়ভীতি দেখিয়েই ক্ষান্ত হতো। তার পর মারধর; এখন পথের বাধা সরিয়ে দিতে অভিভাবকের প্রাণ নিয়েই তারা রণে ভঙ্গ দিচ্ছে!
এসব ঘটনা কল্পনাকেও যেন হার মানায়। এমন সামাজিক অপরাধ এবং বেপরোয়া মনোভাব কোনোক্রমে বাড়তে দেওয়া যায় না। এসব ঘটনার সঙ্গে জড়িতরা যতই ক্ষমতাবান হোক; সবাইকে ধরে আইনের আওতায় আনা জরুরি। অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি না হলে এমন অঘটন ঠেকানো কঠিন হবে। দিন দিন তা মহামারি আকার ধারণ করার আশঙ্কাও রয়েছে!
আশিক মুস্তাফা: শিশুসাহিত্যিক ও জ্যেষ্ঠ সহ-সম্পাদক, সমকাল
muashique@gmail.com