তানজানিয়ার প্রধান বিরোধী দল চাদেমাকে এই বছরের নির্বাচনে অংশগ্রহণ থেকে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। দলটির নেতা টুন্ডু লিসুর বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগ আনার কয়েকদিন পর, এবার দলটিকে নির্বাচনে নিষিদ্ধ করা হলো।

রবিবার (১৩ এপ্রিল) এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি। 

তানজানিয়ার স্বাধীন জাতীয় নির্বাচন কমিশনের নির্বাচন পরিচালক রামাধনি কাইলিমা বলেছেন, চাদেমা শনিবার (১২ এপ্রিল) নির্ধারিত তারিখে নির্বাচনী আচরণবিধির নথিতে স্বাক্ষর করেনি, যার অর্থ দলটিকে অক্টোবরের নির্বাচন থেকে অযোগ্য ঘোষণা করা হয়েছে।

গত সপ্তাহে, দক্ষিণ তানজানিয়ায় একটি সমাবেশে নির্বাচনী সংস্কারের আহ্বান জানানোর পর চাদেমার নেতা টুন্ডু লিসুকে গ্রেপ্তার করা হয়। তার বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগে আনা হয়েছে।

১৯৭৭ সাল থেকে তানজানিয়ার শাসন ক্ষমতায় রয়েছে সিসিএম। সর্বশেষ এসব ঘটনার পরে দলটি ক্ষমতা ধরে রাখবে বলে মনে করা হচ্ছে।

শনিবার (১২ এপ্রিল), জাতীয় নির্বাচন কমিশনের নির্বাচন পরিচালক রামাধনি কাইলিমা বলেন, “যেকোনো দল নির্বাচনী আচরণবিধিতে স্বাক্ষর করেনি, তারা সাধারণ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে পারবে না। চাদেমাকে ২০৩০ সাল পর্যন্ত কোনো উপনির্বাচনে অংশগ্রহণ থেকেও নিষিদ্ধ করা হবে।”

শনিবারের আগে, প্রধান বিরোধী দল চাদেমা এক বিবৃতিতে জানিয়েছিল, ভোট সংস্কারের দাবিতে তাদের কর্মসূচির অংশ হিসেবে দলটি আচরণবিধি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করবে না।

দেশটিতে আগামী অক্টোবর মাসে সংসদীয় এবং প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ভোটগ্রহণ হওয়ার কথা রয়েছে। নির্বাচনে বিরোধী নেতা টুন্ডু লিসু বর্তমান প্রেসিডেন্ট সামিয়া সুলুহু হাসানকে ব্যাপক চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলবেন বলে মনে করা হচ্ছিল। 

পূর্বসূরী জন মাগুফুলির মৃত্যুর পর, ২০২১ সালে সামিয়া সুলুহু হাসান যখন প্রথম তানজানিয়ার ক্ষমতায় আসেন, তখন তিনি বিরোধী দল ও গণমাধ্যমের ওপর পূর্বসূরি জন মাগুফুলি যে বিধিনিষেধ আরোপ করেছিলেন, তা শিথিল করার জন্য প্রশংসিত হয়েছিলেন। 

তবে সাধারণ নির্বাচনের কয়েক মাস আগে পূর্ব আফ্রিকার এই দেশটি ক্রমবর্ধমানভাবে তার বিরোধীদের ওপর দমন-পীড়ন চালাচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। অক্টোবরের সাধারণ নির্বাচনের কয়েক মাস আগে প্রেসিডেন্ট সামিয়া সুলুহু হাসান তার পূর্বসূরীর দমনমূলক কৌশলে ফিরে যাচ্ছে বলে অভিযোগ করেছে লিসুর চাদেমা দল।

আফ্রিকার দীর্ঘতম শাসনকারী দলগুলোর মধ্যে একটি সিসিএম (চামা চা মাপিন্দুজি), দলটি পাঁচ দশকেরও বেশি সময় ধরে তানজানিয়া শাসন করছে।

গত সপ্তাহে বিরোধী নেতা টুন্ডু লিসু ‘কোনো সংস্কার নেই, কোনো নির্বাচন নেই’ স্লোগানের অধীনে যুক্তি দিয়ে বলেছিলেন, তানজানিয়ায় নির্বাচন পরিচালনার পদ্ধতিতে পরিবর্তন না করে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের কোনো সম্ভাবনা নেই।

লিসু দাবি করেন, নির্বাচন কমিশনের গঠন পরিবর্তন করা দরকার এবং প্রেসিডেন্ট কর্তৃক সরাসরি নিযুক্ত ব্যক্তিদের অন্তর্ভুক্ত করা উচিত নয়।

তানজানিয়ার হাসান সরকার লিসুর বিরুদ্ধে নির্বাচন ব্যাহত করার এবং বিদ্রোহ প্ররোচনার অভিযোগ এনেছে।

বিরোধী দলীয় নেতাকে বৃহস্পতিবার (১০ এপ্রিল) অর্থনৈতিক রাজধানী দার এস সালামের একটি আদালতে তোলা হয় এবং তার বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগ আনা হয়, যা মৃত্যুদণ্ডযোগ্য অপরাধ। তাকে জেল হেফাজতে পাঠানো হয়েছে এবং তার রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা ২৪ এপ্রিল পর্যন্ত স্থগিত করা হয়েছে।

লিসুর আইনজীবী রুগেমেলেজা এনশালা ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে বলেছেন, অভিযোগগুলো রাজনৈতিকভাবে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। তিনি আরো বলেন, “আপনি এই অভিযোগগুলোকে রাজনীতি থেকে আলাদা করতে পারবেন না।”

তানজানিয়ার প্রধান বিরোধীদলীয় নেতা অসংখ্যবার গ্রেপ্তারের মুখোমুখে হয়েছেন। ২০১৭ সালে একটি হত্যা প্রচেষ্টা থেকে তিনি প্রাণে বেঁচে যান, তার গাড়িতে ১৬ বার গুলি চালানো হয়েছিল।

এরপর তিনি নির্বাসনে যান, ২০২০ সালে সেই বছরের নির্বাচনে মাগুফুলির বিরুদ্ধে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার জন্য কিছুদিনের জন্য ফিরে আসেন। ভোটের ফলাফল ঘোষণার পর তিনি অনিয়মের অভিযোগ তুলে চলে যান।

এরপর তিনি ২০২৩ সালে আবার ফিরে আসেন, সেসময় ক্ষমতাসীন হাসান সরকার বিরোধীদের স্বাধীনতা প্রদানের লক্ষ্যে বেশ কিছু পদক্ষেপ নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল।

আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল এক বিবৃতিতে ‘অবিলম্বে ও নিঃশর্তভাবে’ বিরোধী নেতা টুন্ডু লিসুকে মুক্তি দেওয়ার জন্য তানজানিয়ার প্রতি আহ্বান জানিয়েছে।

ঢাকা/ফিরোজ

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর র জন য ক ষমত

এছাড়াও পড়ুন:

ট্রেন থেকে পড়ে ৮ দিন ধরে হাসপাতালে ছেলে, ফেসবুকে ছবি দেখে ছুটে এলেন মা

প্রতিদিনের মতো কাজ শেষে গতকাল সোমবার বাসায় ফিরছিলেন নাজমা বেগম। ঢাকার টঙ্গী এলাকায় থাকেন তিনি। পরিচিত এক ব্যক্তি তাঁকে হঠাৎ ফোন করে জানান, তাঁর নিখোঁজ ছেলের সন্ধান পাওয়া গেছে। দ্রুত ওই ব্যক্তির সঙ্গে দেখা করেন নাজমা। তিনি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পোস্ট করা একটি ভিডিও দেখান নাজমাকে। সে ভিডিওতে দেখতে পান, তাঁর ১০ দিন ধরে নিখোঁজ ছেলে আবদুল্লাহ চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি।

ছেলের খোঁজ পেয়ে আজ মঙ্গলবার সকালে ঢাকা থেকে চট্টগ্রামে ছুটে আসেন তিনি। রেলস্টেশন থেকে সরাসরি চলে আসেন চমেক হাসপাতালের নিউরোসার্জারি বিভাগে। এখানেই ৮ দিন ধরে ভর্তি আবদুল্লাহ।

হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, ৮ সেপ্টেম্বর আহত অবস্থায় আবদুল্লাহকে হাসপাতালে আনা হয়। সে সময় তার নাম-ঠিকানা কিছুই জানা যায়নি। অজ্ঞাতপরিচয় হিসেবেই হাসপাতালের নিউরোসার্জারি ওয়ার্ডে নেওয়া হয় তাকে। পরদিন তার অস্ত্রোপচার হয়। গত শনিবার আবদুল্লাহর জ্ঞান ফেরে। এরপর নিজের ও বাবা-মায়ের নাম আর বাসার ঠিকানা জানায় সে।

চিকিৎসকেরা সেই সূত্রে ধরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমসহ নানাভাবে খোঁজ নেওয়ার চেষ্টা করেন। ফেসবুকে আবদুল্লাহর ছবি দিয়ে খোঁজ চাওয়া হয় বাবা-মায়ের। সেই ছবি পরিচিতদের মাধ্যমে দেখেন নাজমা বেগম। এরপর ছুটে আসেন চট্টগ্রামে। হাসপাতালে এসেই নার্সদের সহায়তায় যান নিউরোসার্জারি বিভাগে। সেখানে হাই ডিপেন্ডেন্সি ইউনিটে (এইচডিইউ)চিকিৎসাধীন আবদুল্লাহকে দেখেন।

আজ বিকেলে হাসপাতালের নিউরোসার্জারি ওয়ার্ডের সামনে কথা হয় আবদুল্লাহর মা নাজমা বেগমের সঙ্গে। সকালেই চট্টগ্রাম পৌঁছেছেন তিনি। জানালেন, তিন ছেলেমেয়ের মধ্যে ১০ বছর বয়সী আবদুল্লাহ সবার বড়। ছোট মেয়ের বয়স পাঁচ ও আরেক ছেলের বয়স দুই। আবদুল্লাহ সুস্থ আছে জেনে স্বস্তি পেলেও দুশ্চিন্তায় আছেন তিনি। কারণ, এটিই প্রথমবার নয়, এর আগেও কয়েকবার ঘর থেকে কিছু না বলে বেরিয়ে যায় সে।

নাজমা বেগম বলেন, প্রায়ই আবদুল্লাহ ঘর থেকে বেরিয়ে যায়। এদিক–সেদিক চলে যায়। পরে আবার ফিরে আসে। এর আগেও ঢাকার আশপাশে এদিক-সেদিক চলে গিয়েছিল সে। ৬ সেপ্টেম্বর সে ভাত খাওয়া থেকে উঠে হঠাৎ চলে যায়। সে ফিরে আসবে এই আশায় থানায় যাননি। কিন্তু ১০ দিন হয়ে যাওয়ায় এদিক–সেদিক খোঁজাখুঁজি শুরু করেন। ঢাকায় বিভিন্ন স্টেশনে ছেলের খোঁজে গেছেন বলে জানান নাজমা।

চমেক হাসপাতালে চিকিৎসকেরা আবদুল্লাহর বরাত দিয়ে জানান, বাসা থেকে বেরিয়ে সে কক্সবাজার যাচ্ছিল। পথে চট্টগ্রামে ট্রেন থামলে সে ট্রেন থেকে পড়ে যায়। চিকিৎসার পর এখন সুস্থ হয়ে উঠছে সে।

চিকিৎসকেরা জানান, আবদুল্লাহকে যখন আনা হয় তার মাথায় গুরুতর আঘাত ছিল। তার মাথার এক পাশের হাড় ভেঙে গিয়েছিল। ট্রেন থেকে পড়ার কারণে মাথায় আঘাত লাগে। হাড়ের কিছু অংশ মস্তিষ্কের ভেতরে গেঁথে যায়। অস্ত্রোপচারও সফল হয়েছে। তবে জ্ঞান না ফেরায় তার পরিচয় জানা যায়নি। জ্ঞান ফেরার পর তার তথ্য নিয়ে ফেসবুকে পোস্ট করা হয়।

শুরু থেকে আবদুল্লাহর অস্ত্রোপচার ও চিকিৎসা করেছেন চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিউরোসার্জারি বিভাগে সহকারী অধ্যাপক মু. ইসমাইল হোসেন। তিনি বলেন, ‘তার হাড় ভেঙে মস্তিষ্কের ভেতরে চলে গিয়েছিল। অস্ত্রোপচারের পর স্বাভাবিকভাবে সেটি জোড়া দেওয়া হয়েছে। এখন সে পুরোপুরি সুস্থ। তাকে আমরা আজ-কালের মধ্যে ডিসচার্জ করে দেব। শিশুকে পরিবারের কাছে বুঝিয়ে দিতে পেরে আমরাও আনন্দিত।’

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ছাত্রশিবিরের ভরসা ওএমআর মেশিনে, ছাত্রদল চায় হাতে ভোট গণনা
  • ফের রিজার্ভ ৩১ বিলিয়ন ডলার 
  • গকসু নির্বাচন: জিএস প্রার্থীর বিরুদ্ধে আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ
  • আমার স্বামীর উপরে কু-নজর পড়েছে: অঙ্কিতা
  • সম্পদ বৃদ্ধি নিয়ে প্রশ্ন করায় সাংবাদিকের ওপর ক্ষেপলেন ট্রাম্প
  • ‘আমি থানার ওসি, আপনার মোবাইল হ্যাকড হয়েছে’
  • কালিয়াকৈরে এক মাসে ২০ ডাকাত গ্রেপ্তার 
  • ট্রেন থেকে পড়ে ৮ দিন ধরে হাসপাতালে ছেলে, ফেসবুকে ছবি দেখে ছুটে এলেন মা
  • মনোনয়নপত্র নিতে এসে স্লোগান, আচরণবিধি ভাঙলেন এক শিক্ষার্থী
  • রাকসুর নির্বাচনি প্রচার শুরু, মানতে হবে যেসব নির্দেশনা