বাংলাদেশ এলডিসি (স্বল্পোন্নত দেশ) থেকে উত্তরণের চূড়ান্ত প্রক্রিয়ার দিকে এগিয়ে চলেছে। জাতিসংঘের নির্ধারিত তিনটি সূচক-মাথাপিছু আয়, মানবসম্পদ সূচক এবং অর্থনৈতিক ও পরিবেশগত ভঙ্গুরতা সূচকে দীর্ঘদিন ধরে মান পূরণ করে আসছে বাংলাদেশ। তবে মানবসম্পদ সূচকে কিছুটা অবনতি হয়েছে।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) হালনাগাদ প্রতিবেদনে এমন তথ্য পাওয়া গেছে।

বিবিএসের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৫ সালের হিসাবে মানবসম্পদ সূচকে দেশের অর্জন ৭৭ দশমিক ১ পয়েন্ট, যা আগের বছরের ৭৭ দশমিক ৫ পয়েন্ট থেকে কমেছে। স্বাস্থ্য খাতের উন্নয়ন থেমে যাওয়ায় এই সূচকে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। তবে এলডিসি উত্তরণের জন্য ন্যূনতম প্রয়োজনীয় ৬৬ পয়েন্টের চেয়ে এখনও অনেক এগিয়ে বাংলাদেশ।

মাথাপিছু আয় সূচকে বাংলাদেশ যথেষ্ট এগিয়ে আছে। ২০২৫ সালের হিসাবে তিন বছরের গড় মাথাপিছু আয় দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ৭৩৪ মার্কিন ডলার, যেখানে মানদণ্ড ১ হাজার ৩০৬ ডলার মাত্র। অর্থনৈতিক ও পরিবেশগত ভঙ্গুরতা সূচকেও সামান্য উন্নতি হয়েছে-২০২৪ সালে যেখানে পয়েন্ট ছিল ২১ দশমিক ৯, সেখানে ২০২৫ সালে তা দাঁড়িয়েছে ২১ দশমিক ৮। এই সূচকে ৩২ বা তার নিচে থাকাই উত্তরণের শর্ত।

জাতিসংঘের উন্নয়ন নীতি-নির্ধারণী কমিটি প্রতি তিন বছর পরপর এলডিসি তালিকার দেশগুলোকে মূল্যায়ন করে এবং যোগ্য দেশগুলোর জন্য উত্তরণের সুপারিশ করে। বাংলাদেশ ২০১৮ ও ২০২১ সালের দুটি মূল্যায়নেই তিনটি সূচকে উত্তীর্ণ হয়েছিল। এরপর ২০২১ সালে উত্তরণের চূড়ান্ত সুপারিশ পায় এবং ২০২৪ সালে উত্তরণের কথা থাকলেও, কোভিড-১৯ পরিস্থিতির কারণে সময় পিছিয়ে ২০২৬ সালের ২৪ নভেম্বর নির্ধারণ করা হয়।

এলডিসি থেকে উত্তরণ হলে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে দেশের মর্যাদা বৃদ্ধি পাবে এবং বিদেশি বিনিয়োগে আস্থা তৈরি হবে। তবে এর সঙ্গে কিছু বিশেষ সুবিধা হারানোর সম্ভাবনাও রয়েছে, যেগুলো এলডিসি দেশগুলোকে উন্নত দেশগুলো দিয়ে থাকে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বর্তমানে বিশ্বে ৪৪টি স্বল্পোন্নত দেশ রয়েছে। বাংলাদেশ যদি নির্ধারিত সময়মতো উত্তরণে সফল হয়, তবে এটি হবে বিশ্বের প্রথম দেশ, যারা তিনটি সূচকেই পূর্ণ মান অর্জনের মাধ্যমে এলডিসি তালিকা থেকে উন্নয়নশীল দেশের কাতারে পৌঁছাবে।

ঢাকা/হাসান/সাইফ

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর দশম ক এলড স

এছাড়াও পড়ুন:

ধ্বংসস্তূপেই ঋত্বিকের জন্মশতবর্ষ উদ্‌যাপন, পৈতৃক ভিটায় চলচ্চিত্র কেন্দ্র নির্মাণের দাবি

যেখানে থাকার কথা ছিল উৎসবের আবহ, সেখানে কেবলই ইটের স্তূপ আর আগাছার জঙ্গল। আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন চলচ্চিত্রকার ঋত্বিক কুমার ঘটকের জন্মশতবার্ষিকীতে সেই ধ্বংসস্তূপের ওপরই জ্বলে উঠল মোমবাতির আলো।

রাজশাহীতে তাঁর গুঁড়িয়ে দেওয়া পৈতৃক ভিটায় দাঁড়িয়েই সাংস্কৃতিক কর্মীরা কিংবদন্তি এই নির্মাতার স্মৃতি রক্ষা এবং সেখানে একটি আন্তর্জাতিক মানের চলচ্চিত্র কেন্দ্র নির্মাণের জোর দাবি জানিয়েছেন।

গতকাল মঙ্গলবার বিকেল থেকে রাত পর্যন্ত ঋত্বিক ঘটক ফিল্ম সোসাইটির আয়োজনে রাজশাহী নগরের মিঞাপাড়ায় ঋত্বিকের পৈতৃক বাড়ির ধ্বংসস্তূপে এই কর্মসূচি পালিত হয়।

‘ঋত্বিক শতবর্ষ উদ্‌যাপন কমিটি’ আয়োজিত অনুষ্ঠানে জাতীয় সংগীত ও গণসংগীতের মধ্য দিয়ে শুরু হয় কার্যক্রম। এরপর গুঁড়িয়ে দেওয়া বাড়ির ইটের স্তূপে মোমবাতি প্রজ্বালন করে ঋত্বিকের প্রতি শ্রদ্ধা জানানো হয়। অনুষ্ঠানের শেষ দিকে রাতে ঋত্বিকের নির্মিত চলচ্চিত্র ‘যুক্তি তক্কো আর গপ্পো’ প্রদর্শন করা হয়। ঋত্বিকের বাড়ির গুঁড়িয়ে দেওয়া ইটের স্তূপের ওপর টানানো হয় উৎসবের ব্যানার। টানানো হয় ঋত্বিকের সিনেমাকর্মের পোস্টার ও ঋত্বিকের পোর্ট্রেট ছবি। সন্ধ্যায় ইটের স্তূপই মোমবাতিতে আলোকিত হয়ে ওঠে।

ঋত্বিক ঘটক জীবনের শুরুর সময়টা কাটিয়েছেন রাজশাহীর এই পৈতৃক বাড়িতে। এ বাড়িতে থাকার সময় তিনি রাজশাহী কলেজিয়েট স্কুল ও রাজশাহী কলেজে পড়েছেন। রাজশাহী কলেজ ও মিঞাপাড়ার সাধারণ গ্রন্থাগার মাঠে কালজয়ী কথাসাহিত্যিক শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়কে নিয়ে নাট্যচর্চা করেছেন। ওই সময় ‘অভিধারা’ নামে সাহিত্যের কাগজ সম্পাদনা করেন ঋত্বিক। তাঁকে ঘিরেই তখন রাজশাহীতে সাহিত্য ও নাট্য আন্দোলন বেগবান হয়। এ বাড়িতে থেকেছেন ঋত্বিক ঘটকের ভাইঝি বরেণ্য কথাসাহিত্যিক মহাশ্বেতা দেবী।

২০২৪ সালের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর নগরের মিঞাপাড়ার এই বাড়ি ভেঙে ফেলা হয়। অভিযোগ ওঠে পাশের রাজশাহী হোমিওপ্যাথিক মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের বিরুদ্ধে। তবে কলেজ কর্তৃপক্ষ তখন দাবি করে, তাদের সাবেক কিছু শিক্ষার্থী এ কাজ করেছেন। এ ঘটনায় একটি তদন্ত কমিটি গঠিত হলেও তার সুপারিশ বাস্তবায়নে আর কোনো অগ্রগতি হয়নি।

বাড়িটির ইতিহাস ঘাঁটলে দেখা যায়, ১৯৮৯ সালে বাড়ির ৩৪ শতাংশ জমি কলেজকে ইজারা দেয় সরকার। ২০১৯ সালে এর একাংশ ভেঙে সাইকেল গ্যারেজ তৈরির চেষ্টা হলে দেশজুড়ে প্রতিবাদের ঝড় ওঠে। পরে ২০২০ সালে জেলা প্রশাসন বাড়িটি সংরক্ষণের উদ্যোগ নিয়ে ভূমি মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠায়। বিগত সরকারের একজন সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী স্থানটি পরিদর্শন করে প্রতিশ্রুতি দিলেও তা কেবল আশ্বাসেই সীমাবদ্ধ থেকেছে।

২০২৪ সালের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর নগরের মিঞাপাড়ার এই বাড়ি ভেঙে ফেলা হয়। অভিযোগ ওঠে পাশের রাজশাহী হোমিওপ্যাথিক মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের বিরুদ্ধে। তবে কলেজ কর্তৃপক্ষ তখন দাবি করে, তাদের সাবেক কিছু শিক্ষার্থী এ কাজ করেছেন।

অনুষ্ঠানে বক্তারা ঋত্বিকের স্মৃতি রক্ষায় পাঁচ দফা দাবি তুলে ধরেন। দাবিগুলোর মধ্যে আছে, ‘ঋত্বিক কুমার ঘটক’–এর পৈতৃক বসতভিটা ভাঙার সুষ্ঠু তদন্ত সাপেক্ষে দোষী ব্যক্তিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। বসতবাড়ির টিকে থাকা অংশের (০.১৬০৩ একর) জমি সংরক্ষণ করে তাতে পরবর্তী সময় ঋত্বিকের নামে চলচ্চিত্র কেন্দ্র প্রতিষ্ঠার জন্য ওই জমি অবমুক্ত ঘোষণা করতে হবে।

রাজশাহী হোমিওপ্যাথিক মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ সাবেক সামরিক শাসক হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের সময়ে ১৯৮৭-৮৮ সালের দিকে এই জমি ইজারা পায়। এই ইজারা পুনর্বিবেচনা করতে হবে এবং ইজারা বাতিল করে ঋত্বিক ঘটক ফিল্ম সোসাইটি, রাজশাহীর নামে স্থায়ী ব্যবস্থা অথবা/এবং জেলা প্রশাসন কর্তৃক সংরক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে।

প্রথমেই ঋত্বিক কুমার ঘটকের পৈতৃক নিবাসের অবশিষ্ট অংশটুকুর (০.১৬০৩ একর) চারদিকে উচ্চ সীমানাপ্রাচীর দিয়ে সংরক্ষিত করতে হবে। একই সঙ্গে ‘ঋত্বিক কমপ্লেক্স নির্মাণের জন্য নির্ধারিত স্থান’ লেখাসংবলিত সাইনবোর্ড স্থাপন করতে হবে। এই অংশে প্রবেশের জন্য বড় রাস্তার পাশে একটি গেট তৈরি করতে হবে।

২০২৪ সালের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর রাজশাহী নগরের মিঞাপাড়ায় ঋত্বিক কুমার ঘটকের পৈতৃক বাড়ি ভেঙে ফেলা হয়। গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • মিয়ানমারের নির্বাচনে পর্যবেক্ষক পাঠাতে অনুরোধ নেপিডোর, নীরব ঢাকা
  • কানাডায় পোস্টগ্র্যাজুয়েশন ওয়ার্ক পারমিট, যে ১০ ভুলে বাতিল হয় আবেদন
  • অক্টোবরে মূল্যস্ফীতি কিছুটা কমে ৮.১৭%
  • সংখ্যার বেড়াজালে রূপা
  • ধ্বংসস্তূপেই ঋত্বিকের জন্মশতবর্ষ উদ্‌যাপন, পৈতৃক ভিটায় চলচ্চিত্র কেন্দ্র নির্মাণের দাবি
  • আর্চারিতে একুশের স্মৃতি ফেরানোর আশা
  • বহুরূপী শিক্ষাবৈষম্যের বহুমাত্রিক আঘাত
  • শেয়ারহোল্ডারদের নগদ লভ্যাংশ দিলো পপুলার লাইফ ইন্স্যুরেন্স
  • বিশ্বের সবচেয়ে বয়স্ক অলিম্পিক চ্যাম্পিয়নের মৃত্যু
  • বিদেশি বিনিয়োগ বেড়েছে