পাকিস্তানে হামলার পর যুক্তরাষ্ট্রকে অবহিত করেছে দিল্লি
Published: 7th, May 2025 GMT
পাকিস্তানে ক্ষেপণাস্ত্র হামলার পর সার্বিক পরিস্থিতি যুক্তরাষ্ট্রকে অবহিত করেছে দিল্লি।
ওয়াশিংটন ডিসিতে অবস্থিত ভারতীয় দূতাবাস জানিয়েছে, হামলার পর ভারতের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত দোভাল যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এবং বর্তমানে হোয়াইট হাউসের অস্থায়ী জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা মার্কো রুবিওর সঙ্গে কথা বলেছেন।
দূতাবাসের এক্স (সাবেক টুইটার) হ্যান্ডলের পোস্টে বলা হয়েছে, পাকিস্তানের ভারতের গৃহীত পদক্ষেপ সম্পর্কে মার্কো রুবিওকে অবহিত করেছেন অজিত দোভাল।
আরো পড়ুন:
বিবিসির বিশ্লেষণ: ভারত-পাকিস্তানের নেতাদের ‘বড় জুয়া’
ভারত-পাকিস্তানকে ‘সর্বোচ্চ সংযম’ দেখানোর তাগিদ জাতিসংঘ মহাসচিবের
৭ মে গভীর রাতে পাকিস্তানের ৯টি স্থানে ক্ষেপণাস্ত্র হামলার দাবি করেছে ভারত। অবশ্য পাকিস্তান বলছে, হামলার স্থানের সংখ্যা পাঁচটি, যার মধ্যে একটি মসজিদও আক্রান্ত হয়েছে।
ভারতের হামলায় দুই শিশুসহ সাতজন পাকিস্তানি নিহত হয়েছেন বলে দেশটির আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর-আইএসপিআর জানিয়েছে।
ওয়াশিংটন ডিসিতে ভারতীয় দূতাবাসের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, “২২ এপ্রিল জম্মু ও কাশ্মীরে এক নির্মম ও ঘৃণ্য হামলায় সন্ত্রাসীরা ২৬ জন নিরীহ বেসামরিক নাগরিককে হত্যা করেছে। ভারতের হাতে বিশ্বাসযোগ্য সূত্র, প্রযুক্তিগত তথ্য, বেঁচে যাওয়া প্রত্যক্ষদর্শীদের বয়ান এবং অন্যান্য প্রমাণ রয়েছে, যা এই হামলায় পাকিস্তানভিত্তিক সন্ত্রাসীদের স্পষ্ট জড়িত থাকার দিকে নির্দেশ করে।”
এতে আরো বলা হয়েছে, “প্রত্যাশা ছিল, পাকিস্তান সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে এবং তাদের সহায়ক অবকাঠামোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে। কিন্তু গত দুই সপ্তাহে পাকিস্তান বরং এই ঘটনা অস্বীকার করেছে এবং ভারতের বিরুদ্ধে ‘ফলস ফ্ল্যাগ অপারেশন’-এর মিথ্যা অভিযোগ এনেছে।”
‘অপারেশন সিঁদুর’ নামে রাতের অভিযান সম্পর্কে দূতাবাসের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, “ভারতের পদক্ষেপ লক্ষ্যভিত্তিক ও সুনির্দিষ্ট। এগুলো পরিমিত, দায়িত্বশীল এবং উত্তেজনা না বাড়ানোর উদ্দেশ্যে পরিচালিত। কোনো পাকিস্তানি বেসামরিক, অর্থনৈতিক বা সামরিক লক্ষ্যবস্তুতে হামলা চালানো হয়নি; শুধু পরিচিত সন্ত্রাসী ঘাঁটিগুলোই লক্ষ্যবস্তু করা হয়েছে।”
দিকে গভীর রাতে পাকিস্তানে ভারতের হামলাকে ‘কাপুরুষোচিত হামলা’ হিসেবে বর্ণনা করে এর কড়া জবাব দেওয়ার প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেছন দেশটির প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ।
তাৎক্ষণিক এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, “বিশ্বাসঘাতক শত্রু পাকিস্তানের ভেতরে পাঁচটি স্থানে কাপুরুষোচিত হামলা চালিয়েছে। এই নিন্দনীয় আগ্রাসনের জবাব দেওয়া হবে।”
“অপ্ররোচিত ভারতীয় হামলার বিরুদ্ধে পাল্টা জবাব দেওয়ার পূর্ণ অধিকার পাকিস্তানের রয়েছে— একটি কঠিন জবাব দেওয়ার বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে,” যোগ করেন শাহবাজ শরিফ।
তিনি আরো বলেন, “সমগ্র জাতি তার সশস্ত্র বাহিনীর পাশে ঐক্যবদ্ধভাবে দাঁড়িয়েছে এবং আমাদের মনোবল ও সংকল্প অটুট রয়েছে। আমাদের প্রার্থনা ও সমর্থন পাকিস্তানের সাহসী সেনা ও অফিসারদের সঙ্গে আছে।”
“পাকিস্তানের জনগণ ও তার বাহিনী আমাদের শক্তি ও দৃঢ়তা নিয়ে যেকোনো হুমকির মোকাবিলায় সম্পূর্ণ প্রস্তুত,” বলেন শাহবাজ শরিফ।
তিনি বলেন, “শত্রুকে তার অসৎ উদ্দেশ্য কখনোই বাস্তবায়ন করতে দেওয়া হবে না।”
শাহবাজ শরিফ তার বিবৃতিতে পাঁচটি স্থানে ভারতের হামলার কথা বললেও নরেন্দ্র মোদি সরকার এক বিবৃতিতে দাবি করেছে, হামলা হয়েছে ৯টি স্থানে।
আইএসপিআর কর্মকর্তা আহমেদ শরিফ বলেছেন, ভারতের ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাত হানা স্থাপনাগুলোর মধ্যে একটি মসজিদ রয়েছে। নিহত হয়েছে অন্তত সাতজন, যার মধ্যে দুজন শিশু রয়েছে।
পাকিস্তানের ভেতরে ও পাকিস্তান নিয়ন্ত্রিত আজাদ কাশ্মীরে হামলার বিষয়ে ভারতের সামরিক বাহিনী এক্স হ্যান্ডলের পোস্টে লিখেছে, ন্যায় প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। পহেলাগাম হামলার সমুচিত জবাব দেওয়া হয়েছে। সন্ত্রাসী স্থাপনায় হামলা চালানো হয়েছে। কোনো বেসামরিক স্থাপনায় হামলা চালানো হয়নি।
বিবিসি লিখেছে, ভারত সরকার বিবৃতিতে জানিয়েছে, তারা ‘অপারেশন সিঁদুর’ নামে একটি সামরিক অভিযান চালিয়েছে, যার লক্ষ্য পাকিস্তান ও পাকিস্তান-নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে অবস্থিত ‘সন্ত্রাসবাদী অবকাঠামো’, যেখান থেকে ভারতের বিরুদ্ধে হামলার পরিকল্পনা ও হামলা পরিচালিত হচ্ছে।
ভারতনিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের পহেলগামে ২২ এপ্রিল সন্ত্রাসী হামলায় নিহত হন ২৬ জন, যাদের বেশিরভাগই পর্যটক। এই হামলায় পাকিস্তানের দায় দেখছে ভারত। নয়াদিল্লির অভিযোগ, সন্ত্রাসীদের মদদ দেয় ইসলামাবাদ। এর প্রতিশোধ নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। তবে পাকিস্তান বরাবরই বলে আসছে, পহেলগাম হামলার সঙ্গে তাদের কোনো যোগসূত্র নেই। উপরন্তু, ভারতের কাছে কোনো প্রমাণ থাকলে তা দেখানোর চ্যালেঞ্জ দিয়েছে তারা।
সেই থেকে ভারতের সঙ্গে পাকিস্তানের যুদ্ধ বেঁধে যাওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছিল। সেই উত্তেজনার মধ্যেই ৭ মে গভীর রাতে পাকিস্তানের ৯টি স্থানে হামলা করল ভারত। এখন পাকিস্তান কী ধরনের প্রতিক্রিয়া দেখায় বা জবাব দেয়, তারপর ওপর নির্ভর করছে বাকিটা।
ঢাকা/রাসেল
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর লক ষ য ত হয় ছ ত কর ছ
এছাড়াও পড়ুন:
সরকারের প্রস্তাবিত নীতিতে ইন্টারনেটের দাম ২০% বাড়বে: আইএসপিএবি
সরকারের প্রস্তাবিত নীতিমালায় বিভিন্ন ফি ও চার্জ আরোপের কারণে গ্রাহক পর্যায়ে ইন্টারনেট সেবার খরচ আরও অন্তত ২০ শতাংশ পর্যন্ত বাড়বে বলছেন দেশের ইন্টারনেট সেবাদাতারা।
ইন্টারনেটের দাম বাড়ার বিষয়টি দায়িত্বশীল নেতৃত্বের হাতে ছেড়ে দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর হস্তক্ষেপ চেয়েছেন সেবাদাতারা।
আজ সোমবার রাজধানীর একটি হোটেলে ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডারস অ্যাসোসিয়েশন (আইএসপিএবি) এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা জানায়।
সম্প্রতি বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি) ফিক্সড টেলিকম সার্ভিস প্রোভাইডারদের (এফটিএসপি) জন্য একটি গাইড লাইনের খসড়া করেছে। এ নিয়ে আপত্তি তুলেছে আইএসপিএবি।
নতুন গাইডলাইনে ৫ দশমিক ৫ শতাংশ রেভিনিউ শেয়ার এবং সামাজিক দায়বদ্ধতা তহবিলের জন্য ১ শতাংশ দিতে হবে। এ ছাড়া এফটিএসপি অপারেটরদের ক্রয়মূল্য ১৪ শতাংশ বাড়বে।
আইএসপিএবির সভাপতি আমিনুল হাকিম বলেন, টেলিযোগাযোগ খাত নিয়ে সরকার তার উদ্দেশ্য থেকে বেরিয়ে এসেছে এবং জনগণের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ না। সরকার ভুল পথে এগিয়ে যাচ্ছে।
আমিনুল হাকিম বিদ্যমান নীতির সঙ্গে প্রস্তাবিত নীতির তুলনামূলক উপস্থাপনা তুলে ধরে বলেন, বিদ্যমান নীতিতে সরকার এই খাত রেভিনিউ শেয়ারিং, সামাজিক দায়বদ্ধতা তহবিল এবং ভ্যাটসহ ২১ দশমিক ৪৫ শতাংশ পায় কিন্তু নতুন নীততে তা ৪০ দশমিক ২৫ শতাংশ হবে। সরকারি নীতিতে শহর ও গ্রামে বৈষম্য বাড়বে।
আমিনুল হাকিম বলেন, বৈষম্যের বিরুদ্ধে আন্দোলন করে আসা সরকার বৈষম্য উপহার দিচ্ছে। সরকার একদিকে ইন্টারনেটের দাম কমানোর কথা বলছে, অন্যদিকে নিজেরা দাম বাড়াচ্ছে। তিনি আরও বলেন, স্টারলিংকের জন্য সরকার লাইসেন্স ফি ধরেছে ১০ হাজার ডলার অর্থাৎ ১২ লাখ টাকা। কিন্তু দেশের আইএসপিদের জন্য তা ২৫ লাখ টাকা ধরা হয়েছে। তাঁর প্রশ্ন, স্টারলিংককে এত সুবিধা দেওয়ার কারণ কি?
সংবাদ সম্মেলনে আইএসপিএবি বলেছে, প্রস্তাবিত খসড়া গাইডলাইনে মোবাইল অপারেটরদের ফিক্সড ওয়্যারলেস একসেস এবং লাস্ট মাইল ফাইবার সংযোগের মাধ্যমে ফিক্সড কানেক্টিভিটি দেওয়ার স্পষ্ট অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। যা দেশীয় এবং নিজস্ব বিনিয়োগে গড়ে ওঠা আইএসপিগুলোর জন্য চরম অসম প্রতিযোগিতা সৃষ্টি করবে। এ ছাড়া বড় প্রভাব পড়বে সাধারণ গ্রাহকের ওপর।