রূপপুর বিদ্যুৎ প্রকল্প ‘বন্ধের ষড়যন্ত্রের’ প্রতিবাদে মানববন্ধন
Published: 15th, May 2025 GMT
পাবনার রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পে এনপিবিসিএল-এ কর্মরত কতিপয় কর্মকর্তা ও কর্মচারী দাবি আদায়ের নামে প্রকল্প এলাকায় বিক্ষোভ-সমাবেশ করে বিশৃংখলা সৃষ্টির মাধ্যমে প্রকল্প বন্ধের ষড়যন্ত্রের প্রতিবাদে বিক্ষোভ ও মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়েছে।
বৃহস্পতিবার ( ১৫ মে) সকালে পাবনার ঈশ্বরদী পৌর শহরের ফকিরের বটতলা এলাকায় সচেতন নাগরিক সমাজ ঈশ্বরদীর ব্যানারে এ কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হয়।
বিক্ষোভ ও মানববন্ধনে ঈশ্বরদীর শিল্প ও বণিক সমিতি, রিকশা চালক সমবায় সমিতি, সাহিত্য-সংস্কৃতি পরিষদসহ বিভিন্ন পেশাজীবী, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠানের হাজার হাজার নারী ও পুরুষ অংশ নেন। মানববন্ধন পরিচালনা করেন সচেতন নাগরিক সমাজ ও সাহিত্য সংস্কৃতি পরিষদের সাংগঠনিক সম্পাদক ওহিদুজ্জামান টিপু।
আরো পড়ুন:
মল্লিকা এক্সপ্রেস আটকে ঢাকাগামী ৪ ট্রেন চালুর দাবি
রাজশাহীতে ওসির বিচারের দাবিতে আইনজীবীদের মানববন্ধন
লিখিত বক্তব্যে সচেতন নাগরিক সমাজের নেতা ও ঈশ্বরদী প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক এস এম ফজলুর রহমান বলেন, ‘‘প্রকল্প এলাকায় দাবি আদায়ের নামে বিশৃংখলা সৃষ্টির কারণে প্রকল্প চালু করেও জাতীয় গ্রিডে বিদ্যুৎ সরবরাহের বিষয়ে অনিশ্চতার সৃষ্টি হয়েছে। যেকারণে ঈশ্বরদীবাসীর দীর্ঘদিনের স্বপ্নের প্রকল্পকে বন্ধ করার ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে রখে দাঁড়াতে আজ রাস্তায় নামতে বাধ্য হয়েছি।’’
তিনি আরো বলেন, ‘‘এই মুহূর্তে ৯৪ ভাগ কাজ শেষ হয়েছে। চলতি মাসেই গ্রিডের সঞ্চালন লাইনের কাজ শেষ হওয়ার কথা। এরপর ডিসেম্বরে স্টার্টআপ করার কথা। এই অবস্থায় প্রকল্প এলাকায় বিক্ষোভ-সমাবেশ করে বিশৃংখলা সৃষ্টির ঘটনা অশুভ সংকেত।’’
তিনি বলেন, ‘‘বিগত ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে নিউক্লিয়ার পাওয়ার প্লান্ট কোম্পানি বাংলাদেশ লিমিটেডে (এনপিবিসিএল) প্রায় দুই হাজার কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়োাগ দেয়া হয়েছে। যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও এ সময় বিএনপি ও বিরোধীদলের কাউকে নিয়োগ বা যোগদান করতে দেয়া হয়নি।’’ এ বিষয়টির সুষ্ঠু তদন্ত করতে এবং ফ্যাসিস্টদের দোসর যারা রয়েছে, তাদের চিহ্নিত করার দাবি জানান এস এম ফজলুর রহমান।
লিখিত বক্তব্যে আরো বলা হয়, প্রকল্পের কর্মীদের চাকরি সংক্রান্ত দাবি-দাওয়া থাকতে পারে। কিন্তু আন্দোলনকারীদের হঠকারী আচরণে মনে হয়েছে তারা পরিকল্পিতভাবে সরকারকে বেকায়দায় ফেলতে মাঠে নেমেছে। নিয়মতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে তাদের দাবির যৌক্তিকতা তুলে ধরার সুযোগ রয়েছে। দাবির বিষয়ে ব্যবস্থা নেয়ার আশ্বাস দেয়ার পরও তারা আন্দোলনের নামে ন্যক্কারজনক এ কাজ করেছেন।
দাবি আদায়ে আন্দোলনের নামে কতিপয় কর্মকর্তা-কর্মচারী বিশ্ব দরবারে বাংলাদেশকে এবং এ প্রকল্পকে অস্থিতিশীল পরিস্থিতির মুখে ঠেলে দিচ্ছে। এই ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত করে রূপপুর প্রকল্পের নিরাপত্তা বিঘ্নিতকারী এবং বিশৃংখলা সৃষ্টিকারীদের চিহ্ণিত করে আইনের আওতায় আনার দাবি জানানো হয় মানববন্ধন থেকে।
ঈশ্বরদী শিল্প ও বনিক সমিতির সহ-সভাপতি ও সাবেক কাউন্সিলর আনোয়ার হোসেন জনি বলেন, ‘‘রূপপুর প্রকল্প ঘিরে রাশিয়ানসহ বিদেশিদের আগমনে ঈশ্বরদীর আর্থ-সামাজিক ক্ষেত্রে ব্যাপক পরিবর্তন সূচিত হয়েছে। স্থানীয়ভাবে ব্যবসা-বাণিজ্য প্রসার এবং প্রকল্পে দেশীয় প্রায় ২৫ হাজার শ্রমিক কাজ করে আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী হয়েছে। রূপপুর প্রকল্প ঘিরে অন্তর্বর্তী সরকার ঈশ্বরদীতে বিমানবন্দর অবিলম্বে চালুর বিষয়ে পদক্ষেপ নিয়েছে। এই অবস্থায় প্রকল্প বন্ধ হলে ঈশ্বরদীর অর্থনীতি হুমকির মুখে পড়বে এবং বিমানবন্দরও আর চালু হবে না।’’
প্রেস ক্লবের সভাপতি আজিজুর রহমান শাহীন বলেন, ‘‘আন্তর্জাতিক স্পর্শকাতর গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা হিসেবে রূপপুর প্রকল্প সার্বক্ষণিক আন্তর্জাতিক আণবিক শক্তি সংস্থার নজরদারিতে থাকে। পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পে আন্দোলন, সমাবেশ বিশ্বে নজিরবিহীন ঘটনা। প্রকল্প এলাকায় নিরাপত্তার শর্ত ভেঙে মিছিল-সমাবেশ করে আন্দোলনকারীরা শুধু চরম দায়িত্বজ্ঞানহীন কাজই করেননি, প্রকল্পের অগ্রগতি ও পরবর্তী ধাপের আইএইএ এর লাইসেন্স প্রাপ্তিও হুমকিতে ফেলেছেন।’’
এ সময় আরো বক্তব্য দেন, জাতীয়তাবাদী শ্রমিক দলের কেন্দ্রীয় নেতা আহসান হাবিব, ঈশ্বরদী শিল্প ও বণিক সমিতির সভাপতি আশিকুর রহমান নান্নু, সাহিত্য সংস্কৃতি পরিষদের সাধারণ সম্পাদক এস আলমগীর, উন্নয়ন সংস্থা নিউ এরা ফাউন্ডেশনের পরিচালক মোস্তাক আহমেদ কিরণ, বিএনপি নেতা রফিকুল ইসলাম নয়ন, বিশিষ্ট ব্যবসায়ী আবু সাঈদ লিটন, পাকশীর ব্যবসায়ী শামসুজ্জোহা পিপপু, আমিনুল ইসলাম স্বপন, মনিরুজ্জামান টুটুল, নারী নেত্রী সাথী খাতুন, বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা ইব্রাহিম হোসেন প্রমুখ।
ঢাকা/শাহীন/বকুল
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর র রহম ন ব যবস
এছাড়াও পড়ুন:
পদ্মা নদীর ভাঙন রোধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি
কুষ্টিয়ার ভেড়ামারায় পদ্মা নদীতে আবার ভাঙন দেখা দিয়েছে। গত এক সপ্তাহে উপজেলার বাহিরচর ইউনিয়নের মুন্সিপাড়া, ১২ মাইল টিকটিকিপাড়া ও মসলেমপুরের প্রায় পাঁচ কিলোমিটার এলাকায় ভাঙন শুরু হয়েছে। এতে হুমকির মুখে পড়েছে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, কলকারখানা, ব্যক্তিগত, বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানসহ পাউবোর বেড়িবাঁধ।
গতকাল রোববার নদী ভাঙনে সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা মুন্সিপাড়ার বাসিন্দারা মানববন্ধন করেছেন। তারা পৈতৃক ভিটা রক্ষায় উপজেলা প্রশাসন ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) দ্রুত হস্তক্ষেপ দাবি করেছেন। আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে জিও ব্যাগ ফেলে ভাঙন রোধ করার আহ্বান জানিয়েছেন।
বাহিরচর ইউনিয়নের মুন্সিপাড়ার বাসিন্দা গিয়াস মুন্সি বলেন, পদ্মা নদীতে পানি বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে শুরু হয়েছে তীব্র ভাঙন। এতে একরের পর একর কৃষিজমি বিলীন হয়েছে। তিন গ্রামের প্রায় পাঁচ কিলোমিটার এলাকায় ভাঙন চলছে। সবচেয়ে আতঙ্কের বিষয়, ভাঙন স্থান থেকে পদ্মা নদী রক্ষা বেড়িবাঁধের দূরত্ব মাত্র ৪০ মিটার। ভাঙন আতঙ্কে রয়েছে তিন গ্রামের প্রায় আট হাজার মানুষ।
মানববন্ধনে অংশ নিয়ে আনোয়ার আলী বলেন, বসতভিটা বাদে অনেকেই সব হারিয়ে ফেলেছেন। তাই প্রশাসন ও পাউবোর কাছে জোর দাবি,
বিভিন্ন নিয়মনীতির বেড়াজালে না থেকে দ্রুত ভাঙন রোধে ব্যবস্থা নিন।
ইউএনও রফিকুল ইসলাম বলেন, তারা ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শন করেছেন। ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাবাসীও তাদের কাছে একটি আবেদন দিয়েছেন। সেটি পাউবো বরাবর পাঠানো হয়েছে। দ্রুত তারা ব্যবস্থা নেবে বলে আশ্বস্ত করেছে।
কুষ্টিয়া পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী রাশিদুর রহমান বলেন, ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে তারা ইতোমধ্যে যোগাযোগ করেছেন। বরাদ্দ পেলেই কাজ শুরু করা যাবে।