কানাডার এক শান্ত ও নির্মল লেকের মধ্যে হঠাৎ থমকে গেল দুই বন্ধুর জীবন। একজন বাংলাদেশের তৈরি পোশাক শিল্পের উজ্জ্বল নক্ষত্র আবদুল্লাহ হিল রাকিব। অন্যজন তাঁর ঘনিষ্ঠ বন্ধু বাংলাদেশ বিমানের পাইলট ক্যাপ্টেন সাইফুজ্জামান গুড্ডু। 

টিম গ্রুপের এমডি এবং বিজিএমইএর সাবেক সিনিয়র সহসভাপতি আবদুল্লাহ হিল রাকিব ছিলেন অনেক তরুণ উদ্যোক্তার কাছে আলোর দিশারি। ৯ জুন কানাডার স্থানীয় সময় বিকেলে দেশটির অন্টারিও প্রদেশের স্টারজিয়ন লেকে ছেলে মাহির দেওয়ান ও বন্ধুর সঙ্গে ভ্রমণে গিয়ে ক্যানু (সরু লম্বা ছোট্ট নৌকা) উল্টে শেষ হয়ে যায় সেই অভিযাত্রা। ছেলে সাঁতরে তীরে উঠতে পারলেও গুড্ডুসহ তলিয়ে যান রাকিব। 

ঈদের মাত্র তিন দিন আগে সামাজিক মাধ্যমে রাকিব লিখেছিলেন, ‘ত্যাগেই জয় হোক মনের অন্ধকার। প্রতিটি হৃদয় ভরে উঠুক খুশি আর ভালোবাসায়।’ এই এক লাইনে যেন আটকে আছে তাঁর সমগ্র জীবনদর্শন। আগামী শুক্রবার রাতে দেশে ফিরবে তাঁর নিথর দেহ। পরদিন বনানীর মাটিতে চিরশয্যায় শায়িত হবেন তিনি। কানাডার টরন্টোতে সুন্নাতে জামাত মসজিদে হবে প্রথম জানাজা। 

জানা যায়, ক্যাপ্টেন সাইফুজ্জামান ঈদের আগে ৩০৫ ড্রিমলাইনার ফ্লাইটে কানাডায় যান। সঙ্গে ছিলেন স্ত্রী ও ছোট মেয়ে। বন্ধু রাকিবও একই ফ্লাইটে ছিলেন। আজ বুধবার তাদের ফেরার কথা ছিল। তারা ঈদ উদযাপনের জন্য একটি কটেজে উঠেছিলেন। দুর্ঘটনার আগে  সাইফুজ্জামানের স্ত্রী এবং মেয়ে তাদের নৌকা ভ্রমণের দৃশ্য ভিডিও করছিলেন। রাকিবের ছেলে ছিলেন নৌকাভ্রমণে। হঠাৎ নৌকা উল্টে যায়। 

সাইফুজ্জামানের বন্ধু ক্যাপ্টেন মুহাম্মদ ওয়াহিদ উন নবী ফেসবুকে লিখেছেন, ‘মেয়েকে দেখতে সপরিবার কানাডা গিয়েছিল সাইফুজ্জামান। লেকে ঘুরতে গিয়ে ক্যানু বোট উল্টে পাড়ের ১০ থেকে ১৫ ফুট দূরে পরিবারের সামনেই মারা যান। ক্যানু বোটে কোমর পর্যন্ত পা ভেতরে ঢোকানো থাকে। আর উল্টে গেলে তাৎক্ষণিক বের হওয়ার টেকনিক আলাদা, তাই হয়তো দু’জন বুঝে উঠতে পারেনি। দু’জনেই ভালো সাঁতার জানত, তবুও চলে গেল না ফেরার দেশে। সাইফুজ্জামান আমাদের কোর্সের বেস্ট পাইলট (সেরা বৈমানিক) ছিল। খুবই অমায়িক ও ভালো মনের মানুষ ছিল।’ 

সাইফুজ্জামানের স্ত্রীর বরাত দিয়ে বিমানের টরন্টো অফিসের স্টেশন ম্যানেজার মশিকুর রহমান এক ফেসবুক পোস্টে লেখেন, ‘তার (সাইফুজ্জামান) অসহায় স্ত্রী-কন্যারা লেকের তীরেই দাঁড়িয়ে ছিল! চোখের পলকে ডুবে গেল! সে সাঁতার জানত! এর আগে বহুবার জলের সাথে সে আনন্দ করেছে! উদ্ধারকারী দল মুহূর্তেই ঘটনাস্থলে ছুটে এলো! কিন্তু বাঁচাতে পারল না!’ 

প্রয়াত রাকিবের ভাই এবং টিম গ্রুপের উপব্যবস্থাপনা পরিচালক আব্দুল্লাহ হিল নাকিব জানান, ১৪ জুন সকাল ১০টায় উত্তরায় বিজিএমইএ ভবনে জানাজা অনুষ্ঠিত হবে। দ্বিতীয় জানাজা অনুষ্ঠিত হবে একই দিন বাদ জোহর আনুমানিক বেলা ২টায় মরহুমের আবাসস্থল বনানী ডিওএইচএস মাঠে। এরপর তাঁকে বিমানবাহিনীর শাহীন কবরস্থানে সমাহিত করা হবে। তবে এখন পর্যন্ত কানাডায় মৃত্যু সনদ না পাওয়ার কারণে উল্লিখিত সময়ের পরিবর্তন হতে পারে। 

এদিকে ক্যাপ্টেন সাইফুজ্জামানের মৃত্যুতে শোক জানিয়েছে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস। এ ছাড়া রাকিবের মৃত্যুতে বিজিএমইএর নবনির্বাচিত সভাপতি মাহমুদ হাসান খান বাবু, সাবেক সাবেক পরিচালক মহিউদ্দিন রুবেল আন্তরিক সমবেদনা জানিয়েছেন। 

টিম গ্রুপের সাসটেনবিলিটি বিভাগের প্রধান মোহাম্মদ মনোয়ার হোসেন সমকালকে বলেন, ‘স্যার (রাকিব) ছিলেন আপাদমস্তক একজন মানবিক মানুষ। টিম গ্রুপে যোগদানের আগে বিজিএমইএতে যুগ্ম সচিব হিসেবে কাজ করতে গিয়ে দেখেছি, তিনি কখনও নিজের স্বার্থে কাজ করতেন না। পুরো পোশাক খাতের ব্যবসায়ীদের স্বার্থ নিয়ে কাজ করতেন। ব্যবসায় ভীষণ সাহস দরকার, যা তাঁর ছিল। ব্যক্তিকেন্দ্রিক নয়, প্রতিষ্ঠান চালিয়েছেন একটি সিস্টেমের মাধ্যমে।’
 

.

উৎস: Samakal

এছাড়াও পড়ুন:

নিউ ইয়র্কে নিহত বাংলাদেশি পুলিশ কর্মকর্তা সম্পর্কে যা জানা গেলো

যুক্তরাষ্ট্রের নিউ ইয়র্কের সেন্ট্রাল ম্যানহাটনে একটি বহুতল অফিসে বন্দুক হামলায় নিহত হয়েছেন নিউ ইয়র্ক পুলিশের কর্মকর্তা দিদারুল ইসলাম (৩৬)। জানা গেছে, তিনি বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত অভিবাসী ছিলেন। খবর রয়টার্সের।

নিহত কর্মকর্তা দিদরুল ইসলামকে একজন ‘বীর বাংলাদেশি অভিবাসী’ হিসেবে উল্লেখ বর্ণনা করেছেন নিউ ইয়র্কের মেয়র এবং নিউ ইয়র্কের পুলিশ কমিশনার। তারা বলেছেন, ওই কর্মকর্তা নিজের জীবন ঝুঁকিতে ফেলে অন্যদের জীবন রক্ষা করেছিলেন।

সোমবার ম্যানহাটনের মিডটাউন অফিস টাওয়ারের ভেতরে এক বন্দুকধারী হামলা চালিয়ে পুলিশ কর্মকর্তা দিদারুল ইসলাম (৩৬) সহ চারজনকে হত্যা করে। হামলাকারী পরবর্তীতে আত্মহত্যা করেছে বলে পুলিশ কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।

আরো পড়ুন:

পুতিনকে এবার ১২ দিনের আল্টিমেটাম দিলেন ট্রাম্প

নিউ ইয়র্কে বন্দুকধারীর গুলিতে নিহত ৪

নিউ ইয়র্কের মেয়র এরিক অ্যাডামস এক প্রেস ব্রিফিংয়ে সাংবাদিকদের বলেন, “ভয়াবহ একটি বন্দুক সহিংসতার ঘটনায় আমরা চারটি প্রাণ হারিয়েছি, যার মধ্যে নিউ ইয়র্ক সিটি পুলিশ বিভাগের একজন সদস্য ‘অফিসার ইসলাম’ রয়েছেন। 

অ্যাডামস জানান, নিহত অফিসার তিন বছরেরও বেশি সময় ধরে নিউ ইয়র্ক পুলিশে কর্মরত ছিলেন এবং তিনি বাংলাদেশ থেকে আসা একজন অভিবাসী।

মেয়র বলেন, “হামলার সময় অফিসার ইসলাম অন্যদের জীবন রক্ষা করছিলেন, তিনি নিউ ইয়র্কবাসীদের রক্ষা করছিলেন। তিনি এই শহরকে ভালোবাসতেন এবং আমরা যাদের সাথে কথা বলেছি তারা সবাই বলেছেন যে, তিনি একজন সৎ মানুষ ও ঈশ্বরে বিশ্বাসী ব্যক্তি ছিলেন।”

মেয়র আরো জানিয়েছেন, সোমবার রাতে তিনি অফিসর ইসলামের পরিবারের সঙ্গে দেখা করেছেন। 

মেয়র আরো বলেন, “আমি তাদেরকে বলেছি, অফিসার ইসলাম একজন একজন বীর এবং আমরা তার ত্যাগের প্রশংসা করি।”

নিউ ইয়র্কের পুলিশ কমিশনার জেসিকা টিশ সংবাদ সম্মেলনে জানান, অফিসার ইসলাম বিবাহিত ছিলেন এবং তার দুটি সন্তান ছিল। তার স্ত্রী তৃতীয় সন্তানের মা হতে চলেছেন।

পুলিশ কমিশনার বলেন, “অফিসার ইসলাম নিজেকে ঝুঁকির মুখে ফেলেছিলেন। তিনি চূড়ান্ত ত্যাগ স্বীকার করেছিলেন, তাকে ঠান্ডা মাথায় গুলি করে হত্যা করা হয়েছিল।”

ঢাকা/ফিরোজ

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • সব্যসাচী কাজী মোতাহার হোসেন বিজ্ঞান ও শিল্পের মেলবন্ধন ঘটিয়েছেন
  • স্কিন ব্যাংকে পর্যাপ্ত ত্বক থাকলে ৪০ শতাংশের বেশি দগ্ধ রোগীকেও বাঁচানো যায়
  • রাগ নিয়ন্ত্রণে হাদিসের ৭ উপদেশ
  • চুলে গুঁজে দিলেন ৭১১ গলফ ‘টি’
  • বাবা হারালেন চিত্রনায়িকা মিষ্টি জান্নাত
  • ‘নতুন একটি দলের কয়েকজন মহারথী’ বলার পর বক্তব্য বদলালেন উপদেষ্টা মাহফুজ আলম
  • ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ট্রেনে কাটা পড়ে একজনের মৃত্যু
  • ভাসানীরা না থাকলে শেখ মুজিব কখনো তৈরি হতেন না: নাহিদ
  • কাভার্ড ভ্যানের পেছনে ধাক্কা দিয়ে দুমড়েমুচড়ে গেল যাত্রীবাহী বাস
  • নিউ ইয়র্কে নিহত বাংলাদেশি পুলিশ কর্মকর্তা সম্পর্কে যা জানা গেলো