আমার বাংলা‌দেশ (এবি) পার্টির চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান মঞ্জু বলেছেন, “৩২টি রাজনৈতিক দল নিয়ে ব‍্যাপক আলাপ-আলোচনা হচ্ছে। এর আগে দলগুলো নিজেদের কয়েক মাস ধরে বক্তব‍্য উপস্থাপন করার জন্য আলাদা আলাদা বৈঠক করার সুযোগ পেয়েছিল। তারপরও গত তিন দিন ধরে ব‍্যাপক আলোচনা, বিশ্লেষণ চলছে কিন্তু কোন বিষয়েই ঐকমত‍্য হচ্ছে না।”

বৃহস্প‌তিবার (১৯ জুন) ঐকমত‍্য কমিশনের বৈঠক শেষে তি‌নি এ কথা ব‌লেন।

মঞ্জু বলেন, “আমরা যে যত কথাই বলি না কেন জনগণ চায় আমরা একটা ঐকমত‍্যে পৌঁছাই। নাগরিকরা এতদিন যাদেরকে প্রচলিত রাষ্ট্র ব‍্যবস্থার কাছে ভয়ঙ্করভাবে নির্যাতিত হতে দেখেছেন তারা যখন কার্যত: ক্ষেত্রে সংস্কারে অনাগ্রহী হয় তখন জনগণ কিছুটা হলেও আশাহত হয়।”

“ইতোমধ্যে এনসিসি গঠন, রাষ্ট্রপতি নির্বাচন ও প্রধানমন্ত্রীর মেয়াদসহ কোনো বিষয়েই চূড়ান্ত ঐকমত্যে পৌঁছানো যায়নি,,” যা খুব দুঃখজনক ব‌লেও মন্তব‌্য ক‌রেন তি‌নি।

রাষ্ট্রপতির ক্ষমতার চাইতেও মর্যাদার বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ উল্লেখ ক‌রে মঞ্জু ব‌লেন, “তিনি রাষ্ট্রের ঐক্যের প্রতীক। প্রচলিত পদ্ধতিতে একজনকে পায়ে হাত দিয়ে সালাম করলেই রাষ্ট্রপতি হওয়া যায়। সেজন্য আমরা চাই প্রচলিত পদ্ধতির পরিবর্তন। রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে সংসদ সদস্যের বাইরে একটা ইলেকট্রোরাল কলেজ গঠনের প্রস্তাবকে এবি পার্টি সমর্থন করে।”

এর আগে ঐকমত্য কমিশনের সভায় প্রদত্ত বক্তব‍্যে মঞ্জু রাষ্ট্রপতি নির্বাচন পদ্ধতি নিয়ে দলের অভিমত তুলে ধরেন।

প্রধানমন্ত্রী মেয়াদ সম্পর্কিত আলোচনায় দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ব‍্যারিস্টার সানী আব্দুল হক বলেন, “কর্তৃত্ববাদী শাসন কাঠামো আর যাতে ফিরে আসতে না পারে সেই জন্য বাংলাদেশে একজন ব্যক্তি যাতে দুইবারের বেশি বিরামহীনভাবে বা অন্য যেকোনো ভাবে প্রধানমন্ত্রী হতে না পারেন সে ব‍্যবস্থা প্রবর্তন করা প্রয়োজন।”

দ্বিকক্ষবিশিষ্ট আইনসভা প্রবর্তনের বিষয়ে তিনি বলেন,“দ্বিকক্ষবিশিষ্ট আইনসভা বাংলাদেশে প্রবর্তনের রাজনৈতিক সংস্কৃতি অনুপস্থিত বলে মনে করলেও জাতীয় ঐকমত্যের স্বার্থে এবি পার্টি তার অবস্থান পরিবর্তন করে দ্বিকক্ষবিশিষ্ট আইনসভা প্রবর্তনের পক্ষে মত দিয়েছে।”

ঢাকা/নঈমুদ্দীন/সাইফ

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর র ষ ট রপত

এছাড়াও পড়ুন:

‘জুলাই ঘোষণাপত্র’ ও ‘জুলাই জাতীয় সনদ’ কী

জাতির সামনে আগামীকাল মঙ্গলবার বিকেলে ‘জুলাই ঘোষণাপত্র’ উপস্থাপন করবে অন্তর্বর্তী সরকার। অন্যদিকে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন ব্যস্ত ‘জুলাই জাতীয় সনদ’ চূড়ান্ত করার কাজে। সাম্প্রতিক সময়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে বহুল আলোচিত দুটি বিষয় ‘জুলাই ঘোষণাপত্র’ ও ‘জুলাই জাতীয় সনদ’। এ দুটি বিষয় একই বা কাছাকাছি মনে হলেও আসলে তা নয়। ঘোষণাপত্র ও সনদ দুটি পুরোপুরি আলাদা বিষয়।

সহজভাবে বলা যায়, ‘জুলাই ঘোষণাপত্র’ হলো ২০২৪ সালের জুলাইয়ের গণ-অভ্যুত্থানের একটি দলিল। যার মাধ্যমে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানকে রাষ্ট্রীয় ও সাংবিধানিকভাবে স্বীকৃতি দেওয়া হবে। অন্যদিকে জুলাই জাতীয় সনদ হলো—রাষ্ট্রের বিভিন্ন ক্ষেত্রে সংস্কার প্রস্তাব বাস্তবায়নে ঐকমত্যের একটি রাজনৈতিক দলিল।

গত বছরের জুলাই মাসে সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে শুরু হওয়া আন্দোলন এক পর্যায়ে রূপ নেয় ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে। ৫ আগস্ট গণ-অভ্যুত্থানের মুখে ক্ষমতা ও দেশ ছেড়ে ভারতে পালিয়ে যান তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সরকার পতনের পর থেকেই অভ্যুত্থানের নেতৃত্বে থাকা ছাত্র, তরুণেরা অভ্যুত্থানের ঘোষণাপত্র দেওয়ার কথা বলে আসছেন। তাঁরা একাধিকবার নিজেরা এ ঘোষণাপত্র দেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছিলেন। একপর্যায়ে সরকার বিষয়টি নিয়ে সব দলের সঙ্গে বৈঠক করে এবং সরকারের পক্ষ থেকে জুলাই ঘোষণাপত্র প্রকাশ করার সিদ্ধান্ত হয়।

জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) শুরু থেকেই এই ঘোষণাপত্রের বিষয়ে সোচ্চার। দলটির নেতারা বিভিন্ন সময় বলেছেন, এই ঘোষণাপত্র না হলে ভবিষ্যতে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানকে ‘অসাংবিধানিক উপায়ে ক্ষমতা দখল’ হিসেবে দেখিয়ে এতে অংশ নেওয়া ছাত্র-জনতা বা এর মধ্য দিয়ে গঠিত অন্তর্বর্তী সরকারের সদস্যদের ‘রাষ্ট্রদ্রোহী’ সাব্যস্ত করে শাস্তি দেওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। সেই জায়গা থেকে এ অভ্যুত্থানের একটি স্বীকৃতি দরকার। এ কাজটিই জুলাই ঘোষণাপত্রের মাধ্যমে সম্পন্ন করতে হবে।

জুলাই ঘোষণাপত্রে কী থাকছে

জুলাই ঘোষণাপত্রে কী কী থাকছে তার একটি খসড়া সংশ্লিষ্ট সূত্রে পাওয়া গেছে। খসড়ায় মোট ২৬টি দফার উল্লেখ আছে। এর মধ্যে প্রথম ২১টিতে সংক্ষেপে মহান মুক্তিযুদ্ধসহ বাংলাদেশের মানুষের অতীতের বিভিন্ন ঐতিহাসিক ও গণতান্ত্রিক সংগ্রাম থেকে শুরু করে জুলাই অভ্যুত্থানের প্রেক্ষাপট বর্ণনা করা হয়েছে। এখানে শেখ মুজিবুর রহমানের আমলে সংবিধান সংশোধন করে একদলীয় শাসন ব্যবস্থা বাকশাল কায়েমের সমালোচনা করা হয়েছে। ‘পিলখানা ট্র্যাজেডি’ ‘শাপলা চত্বরে গণহত্যা’র বিষয়েও এখানে উল্লেখ আছে।

খসড়া ঘোষণাপত্রের একটি দফায় বলা হয়েছে, জনগণের সার্বভৌম অভিপ্রায়ের ভিত্তিতে অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে ২০২৪ সালের ৮ আগস্ট একটি অন্তর্বর্তী সরকার গঠন করা হয়।

বাকি দফাগুলোতে রাষ্ট্রের গণতান্ত্রিক সংস্কারের আকাঙ্ক্ষা, আওয়ামী লীগ শাসনামলে গুম-খুন, গণহত্যা, মানবতাবিরোধী অপরাধ ও সব ধরনের নির্যাতন-নিপীড়ন এবং রাষ্ট্রীয় সম্পত্তি লুণ্ঠনের অপরাধের দ্রুত উপযুক্ত বিচার, আইনের শাসন ও মানবাধিকার, দুর্নীতি ও শোষণমুক্ত বৈষম্যহীন সমাজ এবং গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার প্রত্যয় ঘোষণা করা হয়েছে।

খসড়ার একটি দফায় বলা হয়েছে,‘ছাত্র-গণ-অভ্যুত্থান ২০২৪—এর উপযুক্ত রাষ্ট্রীয় ও সাংবিধানিক স্বীকৃতি প্রদান করা হবে। বিশেষত, সংবিধানের প্রস্তাবনায় এর উল্লেখ থাকবে এবং তফসিলে এ ঘোষণাপত্র সংযুক্ত থাকবে।’

খসড়ায় যেভাবে বলা আছে সেভাবে এটি গৃহীত হলে জুলাই ঘোষণাপত্র ভবিষ্যতে সংবিধানের অংশ হবে। অবশ্য এ ক্ষেত্রে বিএনপির কিছুটা ভিন্নমত আছে। তারা জুলাই ঘোষণাপত্রকে সংবিধানের প্রস্তাবনায় না রেখে চতুর্থ তফসিলে রাখার পক্ষে।

খসড়ায় বলা হয়েছে, এই ঘোষণাপত্র ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট থেকে কার্যকর বলে ধরে নেওয়া হবে।

জুলাই সনদ কী

গণ-অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে ক্ষমতায় আসা অন্তর্বর্তী সরকার রাষ্ট্রের বিভিন্ন ক্ষেত্রে সংস্কার আনার উদ্যোগ নেয়। ইতিমধ্যে প্রথম ধাপে গঠন করা ছয়টি সংস্কার কমিশনের সংস্কার প্রস্তাব নিয়ে রাজনৈতিক ঐকমত্য হয়েছে। যেসব সংস্কার প্রস্তাব বাস্তবায়নে রাজনৈতিক দলগুলো একমত হয়েছে, সেগুলো নিয়ে তৈরি করা হবে একটি সনদ। এটিই ‘জুলাই জাতীয় সনদ’। এই সনদেরও একটি খসড়া তৈরি করেছে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। এটি এখনো চূড়ান্ত হয়নি।

মোটাদাগে, জুলাই জাতীয় সনদের খসড়ায় তিনটি ভাগ আছে। প্রথম অংশে আছে এই সনদের পটভূমি। দ্বিতীয় অংশে কোন কোন সংস্কার প্রস্তাবে ঐকমত্য ও সিদ্ধান্ত হয়েছে, তার উল্লেখ। আর তৃতীয় অংশে থাকছে, সনদ তথা সংস্কার প্রস্তাবগুলো বাস্তবায়নের বিষয়ে কিছু সুনির্দিষ্ট অঙ্গীকার। সেখানে বলা আছে, আগামী নির্বাচনের মাধ্যমে সরকার গঠনের পরবর্তী দুই বছরের মধ্যে সংস্কার প্রস্তাবগুলো বাস্তবায়নের অঙ্গীকার করবে দলগুলো।

তবে এই অঙ্গীকারের বিষয়ে কোনো কোনো দলের আপত্তি আছে। শুধু এ ধরনের অঙ্গীকার করা হলে শেষ পর্যন্ত সংস্কার প্রস্তাবগুলো বাস্তবায়ন কতটা হবে, তা নিয়ে জামায়াতে ইসলামী, এনসিপিসহ অনেকের শঙ্কা আছে। তারা চায় জুলাই জাতীয় সনদকে একটি আইনি ভিত্তি দেওয়া হোক।

সংস্কার বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া কী হবে, সে বিষয়ে এখন আবার রাজনৈতিক দল ও বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে আলোচনা করবে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। এরপর চূড়ান্ত করা হবে জুলাই জাতীয় সনদ। জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে সংস্কার প্রস্তাব নিয়ে আলোচনায় ৩০টি রাজনৈতিক দল ও জোট অংশ নেয়। সনদে এই দলগুলোর সই করার কথা রয়েছে। আগামী দিনের সংবিধান কেমন হবে, তার রূপরেখা থাকবে এই জাতীয় সনদে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • দ্বিকক্ষবিশিষ্ট সংসদ: প্রস্তাব, বিতর্ক ও সুশাসনের সম্ভাবনা
  • বিচার, সংস্কার ও নির্বাচনের পথে সরকার কতটা এগুলো?
  • ‘জুলাই ঘোষণাপত্র’ ও ‘জুলাই জাতীয় সনদ’ কী
  • জুলাই সনদের বাস্তবায়ন নিয়ে আবার আলোচনা
  • সংস্কার প্রস্তাব নিয়ে বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে কথা বলবে ঐকমত্য কমিশন
  • ‘জুলাই সনদ’ বাস্তবায়নে গতি আনতে চায় কমিশন
  • রাজনীতিতে পরিবারতন্ত্র আর বেশিদিন টিকবে না
  • ঐকমত্য হয়েছে বেশ কিছু মৌলিক সংস্কারে
  • নারী আসন নিয়ে ঐকমত্য কমিশনের সিদ্ধান্তে ক্ষোভ
  • নানা বাধার কারণে রাষ্ট্রের কাঙ্ক্ষিত পরিবর্তন সম্ভব হয়নি: আসিফ মাহমুদ