এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) বাংলাদেশকে ১ দশমিক ৩ বিলিয়ন বা ১৩০ কোটি ৪০ লাখ মার্কিন ডলারের ঋণ দেবে, যা বর্তমান বাজারদরে দেশীয় মুদ্রায় ১৫ হাজার ৯০৯ কোটি টাকার সমান (প্রতি ডলার ১২২ টাকা করে)। এর মধ্যে ৯০ কোটি ডলারের বাজেট সহায়তা রয়েছে। এই অর্থ ব্যাংক খাত সংস্কার ও জলবায়ু সহনশীলতা কার্যক্রমে খরচ করা হবে। আর অবকাঠামো উন্নয়নে থাকছে ৪০ কোটি ডলার। এ নিয়ে উভয় পক্ষের মধ্যে চারটি চুক্তি হয়েছে।  

৯০ কোটি ডলারের বাজেট সহায়তা গতকাল বৃহস্পতিবার ফিলিপাইনের রাজধানী ম্যানিলায় অবস্থিত এডিবির সদর দপ্তরে অনুষ্ঠিত বোর্ড বা পর্ষদ সভায় অনুমোদন করা হয়। এই অর্থ চলতি জুন মাসেই পাবে বাংলাদেশ। তারই ধারাবাহিকতায় আজ শুক্রবার ঢাকায় অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) সঙ্গে এডিবির দুটি ঋণচুক্তি হয়েছে। পাশাপাশি ২০ কোটি ডলার করে আরও দুটি ঋণচুক্তি হয়।

ইআরডি সচিব মো.

শাহরিয়ার কাদের ছিদ্দিকী এবং বাংলাদেশে এডিবির প্রধান হোয়ে ইউন জিয়ং চারটি চুক্তিতে সই করেন। এডিবির বাংলাদেশ কার্যালয়ের পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।

এডিবির সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ১৩০ কোটি ডলারের ঋণ সহায়তার মধ্যে বড় অংশ অর্থাৎ, ৫০ কোটি ডলার দেওয়ার উদ্দেশ্যে হচ্ছে বাংলাদেশের ব্যাংক খাতের স্থিতিশীলতা ও সংস্কার নিশ্চিত করা। এই চুক্তির আওতায় নিয়ন্ত্রক তদারকি, করপোরেট সুশাসন, সম্পদের গুণগত মান এবং স্থিতিশীলতা জোরদার করা হবে।

চুক্তি অনুযায়ী ব্যাংকিং খাতের স্থিতিশীলতা ও সংস্কার কর্মসূচি, উপ-প্রোগ্রাম–১ এর আওতায় নীতিগত সংস্কারের ওপর গুরুত্ব দেওয়া হবে, যার লক্ষ্য হচ্ছে আর্থিক খাতকে স্থিতিশীল ও টেকসই করা। এটি ব্যাংকিং খাতে সুশাসন উন্নয়ন, বাংলাদেশ ব্যাংকের তারল্য ব্যবস্থাপনা কাঠামোর কার্যকারিতা বৃদ্ধি এবং ব্যাংকিং খাতের বিপুল পরিমাণ খেলাপি ঋণ দ্রুত সমাধানে পদক্ষেপ গ্রহণের মাধ্যমে অর্জন করা হবে।

চুক্তি সই অনুষ্ঠানে এডিবির কান্ট্রি ডিরেক্টর হোয়ে ইউন জিয়ং বলেন, বাংলাদেশ এখন ব্যাংকিং খাতে বড় পরিসরে সংস্কার বাস্তবায়ন শুরু করেছে। এই কর্মসূচি বাংলাদেশ ব্যাংকের সক্ষমতা বাড়াবে, ব্যাংকগুলোর সুশাসন জোরদার করবে, সম্পদের মান বাড়াবে এবং আর্থিক খাতকে প্রবৃদ্ধি অর্জনের জন্য প্রস্তুত করবে।

এডিবি জলবায়ু সহনশীলতা ও অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়ন কর্মসূচিতে ৪০ কোটি ডলার দেবে। এই কর্মসূচির উদ্দেশ্য হলো জলবায়ু অর্থায়ন সহজতর করা, বাংলাদেশ জলবায়ু উন্নয়ন অংশীদারত্ব গঠন, দুর্যোগ ঝুঁকি অর্থায়নের কৌশল প্রণয়ন ইত্যাদি।

এ বিষয়ে এডিবির কান্ট্রি ডিরেক্টর হোয়ে ইউন জিয়ং বলেন, এই কর্মসূচি জলবায়ু সহনশীলতা বৃদ্ধির জন্য নীতিমালা, অর্থায়ন, প্রতিষ্ঠান ও অবকাঠামোতে সমন্বিত সংস্কার আনবে, যা ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য একটি টেকসই ভিত্তি গড়ে তোলার পাশাপাশি বাংলাদেশকে জলবায়ু-স্মার্ট প্রবৃদ্ধির পথে এগিয়ে রাখবে।

এ ছাড়া ২০ কোটি ৪০ লাখ ডলার দেওয়া হবে ঢাকা–উত্তর পশ্চিম আন্তর্জাতিক বাণিজ্য করিডর উন্নয়নে। এ প্রকল্পের আওতায় এলেঙ্গা থেকে হাটিকুমরুল হয়ে রংপুর পর্যন্ত ১৯০ কিলোমিটার সড়ক চার লেনে উন্নীত করা হবে। পাশাপাশি সড়ক নিরাপত্তা বাড়াতে নির্মিত হবে ফুট ওভারব্রিজ, ফুটপাত ও ধীরগতির যানবাহনের জন্য দুই লেনের সড়ক। বাকি ২০ কোটি ডলার বিদ্যুৎ সরবরাহের মান ও সক্ষমতা বৃদ্ধি এবং নবায়নযোগ্য জ্বালানি খাতের উন্নয়নে ব্যয় করা হবে।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: এড ব র র জন য জলব য়

এছাড়াও পড়ুন:

নতুন তিন জাতের ধান আনলো ব্রি, উপকূল চাষের উপযোগী

বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট (ব্রি) উদ্ভাবিত লবণাক্ততা সহনশীল, উচ্চ ফলনশীল বোরো ও ব্লাস্ট রোগ প্রতিরোধী- এমন তিনটি নতুন ধানের জাত অনুমোদন দিয়েছে জাতীয় বীজ বোর্ড (এনএসবি)। কৃষি মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. মোহাম্মদ এমদাদ উল্লাহ মিয়ানের সভাপতিত্বে এনএসবির ১৪৪তম সভায় এসব জাতের অনুমোদন দেওয়া হয় বলে বুধবার ব্রির সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। ব্রি জানায়, নতুন উদ্ভাবিত তিন জাতসহ সংস্থাটি এখন পর্যন্ত মোট ১২১টি ধানের জাত উদ্ভাবন করেছে, যার মধ্যে ৮টি হাইব্রিড জাত।

নতুন জাতগুলোর মধ্যে ব্রি ধান-১১২ একটি মাঝারি মেয়াদী রোপা আমনের জাত, যা লবণাক্ত জমির জন্য উপযোগী। চারা অবস্থায় এটি ১২ ডিএস/মি. পর্যন্ত লবণাক্ততা সহ্য করতে পারে। এ জাতের জীবনকাল ১২০-১২৫ দিন এবং গড় উচ্চতা ১০৩-১০৫ সেন্টিমিটার। প্রতি হেক্টরে ফলন ৪.১৪ থেকে ৬.১২ টন, যা এর মাতৃজাত ব্রি ধান-৭৩ এর তুলনায় ১-১.৫ টন বেশি। প্রতি শীষে গড়ে ২১০টি পূর্ণ দানা থাকে, যা ব্রি ধান-৭৩ এর তুলনায় ৮০-৯০টি বেশি। চাল মাঝারি চিকন, সাদা এবং রান্নার পর ভাত ঝরঝরে হয়। ফসল কাটার পর উপকূলীয় এলাকায় সূর্যমুখী ও লবণ সহনশীল সরিষা চাষের সুযোগ তৈরি হয় বলে জানান গবেষকেরা।

ব্রি ধান-১১৩ জাতটি বোরো মৌসুমের জন্য উদ্ভাবিত এবং জনপ্রিয় জাত ব্রি ধান-২৯ এর বিকল্প হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। জাতটির জীবনকাল গড়ে ১৪৩ দিন, গাছের উচ্চতা ১০২-১০৫ সেন্টিমিটার। চাল মাঝারি চিকন ও সাদা, অনেকটা নাইজারশাইল ধানের মতো দেখতে। ১০০০টি দানার গড় ওজন ১৯.৪ গ্রাম। এতে প্রোটিনের পরিমাণ ৮.৪ শতাংশ। প্রস্তাবিত ফলন পরীক্ষায় এ জাতটি ব্রি ধান-৮৮ এর তুলনায় ১১.৫ শতাংশ বেশি ফলন দিয়েছে। গড় ফলন প্রতি হেক্টরে ৮.১৫ টন হলেও উন্নত ব্যবস্থাপনায় তা ১০.১ টন পর্যন্ত হতে পারে।

তৃতীয় জাতটি ব্রি ধান-১১৪, যা ব্লাস্ট রোগ প্রতিরোধী এবং দীর্ঘ জীবনকালীন বোরো জাত। গড় জীবনকাল ১৪৯ দিন। গড় ফলন প্রতি হেক্টরে ৭.৭৬ টন হলেও উপযুক্ত পরিচর্যায় তা ১০.২৩ টন পর্যন্ত যেতে পারে। চাল মাঝারি মোটা ও সোনালি বর্ণের। ১০০০টি ধানের ওজন ১৭.৪ গ্রাম এবং রান্নার পর ভাত ঝরঝরে হয়। ব্রি জানায়, ব্লাস্ট রোগের কারণে যেসব এলাকায় ধানের ফলন কমছে, সেসব এলাকায় এই জাতটি চাষ করে কৃষকরা উপকৃত হবেন।

ব্রি'র মহাপরিচালক ড. মোহাম্মদ খালেকুজ্জামান বলেন, আমাদের লক্ষ্য পরিবেশ ও চাষোপযোগী অঞ্চলভেদে জাত উদ্ভাবন। যাতে কৃষকের আয় বাড়ে এবং খাদ্য নিরাপত্তা আরও শক্ত হয়। নতুন এ জাতগুলোর মাধ্যমে জলবায়ু পরিবর্তন, লবণাক্ততা ও রোগবালাই মোকাবিলায় কৃষকের সক্ষমতা আরও বাড়বে।
 

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • বাংলাদেশে জলবায়ু পরিবর্তন: বাস্তবতা, প্রভাব ও করণীয়
  • জলবায়ু-সহনশীল কৃষির উন্নয়নে সমন্বিত উদ্যোগ জরুরি
  • ব্যাংক খাত সংস্কারকে প্রাধান্য দিয়ে ৯০ কোটি ডলার বাজেট–সহায়তা দিল এডিবি
  • শস্যভান্ডারে যুক্ত হলো নতুন তিন জাতের ধান
  • ব্লাস্ট প্রতিরোধীসহ নতুন ৩ ধানের জাত উদ্ভাবন
  • এলো নতুন ৩ জাতের ধান
  • নতুন তিন জাতের ধান আনলো ব্রি
  • নতুন তিন জাতের ধান আনলো ব্রি, উপকূল চাষের উপযোগী