ময়মনসিংহ শহরে অবস্থিত ইনস্টিটিউট অব হেলথ টেকনোলজির (আইএইচটি) বর্তমান পরিস্থিতি চরম হতাশাজনক। নবনির্মিত ভবন, তিনটি ব্যাচে দেড় শতাধিক শিক্ষার্থী—সবকিছুই আছে, কিন্তু নেই কোনো শিক্ষক ও জনবল। শিক্ষক ছাড়া একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কীভাবে চলে? 

প্রথম আলোর প্রতিবেদন জানাচ্ছে, প্রতিষ্ঠানটি ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষ থেকে শিক্ষার্থী ভর্তি শুরু করলেও শুরু থেকেই কোনো স্থায়ী শিক্ষক বা প্রশাসনিক জনবল নিয়োগ দেওয়া হয়নি। মাত্র দুজন ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজের শিক্ষক অতিরিক্ত দায়িত্ব হিসেবে সপ্তাহে দুই দিন করে ক্লাস নিচ্ছেন, যা ১৫০ জন শিক্ষার্থীর পাঠদানের জন্য একেবারেই অপর্যাপ্ত। দীর্ঘ ছয় মাস ধরে প্রথম ব্যাচের শিক্ষার্থীদের ক্লাস প্রায় বন্ধ। ব্যবহারিক সুবিধার অভাবে ল্যাব থাকা সত্ত্বেও সেগুলো অব্যবহৃত পড়ে আছে। নেই পর্যাপ্ত চেয়ার, টেবিল, এমনকি হোস্টেলে শিক্ষার্থীদের জন্য বিছানাও। এর ওপর ৯ লাখ ১১ হাজার টাকা বিদ্যুৎ বিল বকেয়া থাকায় সম্প্রতি বিদ্যুৎ-সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার ঘটনায় এই অব্যবস্থাপনার চূড়ান্ত চিত্রই প্রকাশ ঘটেছে। সংকট নিরসনে শিক্ষার্থীদেরই দৌড়ঝাঁপ করতে হচ্ছে, এটি আরও বেশি হতাশাজনক।

উদ্বেগের বিষয় হলো, প্রতিষ্ঠানটিতে নারী শিক্ষার্থীরা নিরাপত্তাঝুঁকিতে রয়েছেন। একজন মাত্র নৈশপ্রহরী দিয়ে এত বড় একটি ক্যাম্পাসের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা অসম্ভব। বাইরের উচ্ছৃঙ্খল যুবকদের অবাধ প্রবেশ শিক্ষার্থীদের জন্য ভীতিকর পরিবেশ তৈরি করেছে। যখন একটি সরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীরা নিজেদের ‘অনাথ বা এতিমের মতো’ অনুভব করেন এবং কোনো সমস্যা হলে কার কাছে যাবেন তা জানেন না, তখন বুঝতে হবে পরিস্থিতির গভীরতা কতটা ভয়াবহ।

সাবেক ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মোহাম্মদ ছাইফুল ইসলাম খান জানিয়েছেন, ৪৩৫ জন জনবলের চাহিদা পাঠানো হলেও মাত্র ৩৫ জনের অনুমোদন চেয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ে ফাইল আটকে আছে। স্বাস্থ্যশিক্ষা অধিদপ্তরের পরিচালক (প্রশাসন) মিছবাহ উদ্দীন আহমেদ কেবল ‘প্রক্রিয়া চলমান’ বলেই দায় সারছেন। প্রশ্ন হলো, এই প্রক্রিয়া আর কত দিন চলবে?

বাংলাদেশে মোট ২৩টি সরকারি আইএইচটি রয়েছে। যদি ময়মনসিংহের আইএইচটির মতো অন্যান্য প্রতিষ্ঠানেও এমন জনবলসংকট থাকে, তাহলে স্বাস্থ্য খাতে দক্ষ জনবল তৈরির লক্ষ্য কীভাবে পূরণ হবে? এটি কেবল একটি প্রতিষ্ঠানের সংকট নয়, এটি দেশের স্বাস্থ্যশিক্ষা ব্যবস্থার দুর্বলতার প্রতিচ্ছবি। সরকারকে অবিলম্বে এ বিষয়ে পদক্ষেপ নিতে হবে। শুধু ভবন নির্মাণ করলেই হবে না, শিক্ষার্থীদের জন্য উপযুক্ত পরিবেশ, পর্যাপ্ত শিক্ষক, জনবল ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করা অত্যাবশ্যক। অর্থ মন্ত্রণালয়ে আটকে থাকা জনবলকাঠামোর অনুমোদন দ্রুত করা এবং প্রয়োজনীয় শিক্ষক ও কর্মচারী নিয়োগের ব্যবস্থা গ্রহণ করা জরুরি। অন্যথায় এই আইএইচটিগুলো কেবল কংক্রিটের কাঠামো হয়েই থাকবে।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: র জন য

এছাড়াও পড়ুন:

৩৩টি অত্যাবশ্যকীয় ওষুধের দাম কমিয়েছে সরকার

অত্যাবশ্যকীয় ৩৩টি ওষুধের দাম কমানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন এসেনশিয়াল ড্রাগস কোম্পানি লিমিটেডের (ইডিসিএল) ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মো. আ. সামাদ মৃধা। এ ছাড়া ইডিসিএল তৃতীয় প্রজন্মের জন্মনিরোধক পিল উৎপাদন ও আইভি ফ্লুইড প্ল্যান্ট চালু করেছে বলেও জানিয়েছেন তিনি।

আজ বুধবার বিকেলে ইডিসিএল কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে প্রতিষ্ঠানটির এমডি মো. আ. সামাদ মৃধা এ তথ্য জানিয়েছেন।

ইডিসিএল দেশের একমাত্র ওষুধ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান, যারা সাধারণত সরকারি হাসপাতালগুলোতে প্রয়োজনীয় ওষুধ সরবরাহ করে। সংবাদ সম্মেলনে ইডিসিএলের এমডি মো. আ. সামাদ মৃধা বলেন, আগে এপিআই (ওষুধের মূল উপাদান) প্রকিউরমেন্ট নীতি অস্বচ্ছ ছিল। বর্তমানে সেগুলোকে স্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় ন্যায়সংগত মূল্যে কেনা হচ্ছে। পাশাপাশি কোম্পানির অদক্ষ ও অপ্রয়োজনীয় জনবল কমিয়ে উৎপাদনক্ষমতা বৃদ্ধি করা হয়েছে। এতে উৎপাদন খরচ কমে এসেছে এবং ৩৩টি ওষুধের দাম আগের তুলনায় শতকরা ৫০ ভাগ পর্যন্ত কমানো হয়েছে। দিকনির্দেশনাগুলো অটুট থাকলে আগামী ছয় মাসের মধ্যে অধিকাংশ ওষুধের দাম কমিয়ে ফেলা সম্ভব হবে বলেও জানান তিনি।

ইডিসিএলের এমডি বলেন, তাঁরা তৃতীয় প্রজন্মের জন্মনিরোধক পিল উৎপাদন শুরু করেছেন। প্রশাসনিক আনুষ্ঠানিকতা পূরণ করা হলে, তা সরকারকে সরবরাহ করা শুরু হবে। আইভি ফ্লুইড প্ল্যান্ট চালু করা হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ট্রায়াল রান করা হয়েছে। ১০ থেকে ১৫ দিনের মধ্যে সাধারণ স্যালাইন, কলেরা স্যালাইন উৎপাদন করে সরকারের চাহিদা পূরণ করা সম্ভব হবে।

এমডি বলেন, বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার নির্দেশিকা ও সরকারি চাহিদা অনুযায়ী পণ্যের ধরন (প্রোডাক্ট লাইন) সাজানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। এতে সত্যিকারের অতিপ্রয়োজনীয় ওষুধগুলো দ্রুত উৎপাদন করে পর্যায়ক্রমে সরকারের সম্পূর্ণ চাহিদা পূরণ করা সম্ভব হবে। ইডিসিএলের নতুন দুটি প্ল্যান্ট হচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, প্ল্যান্ট দুটি শুধু ওষুধ নয়, টিকা সরবরাহ এবং জীব-প্রযুক্তিনির্ভর পণ্য উৎপাদন করতেও সক্ষম হবে। ইডিসিএল শুধু সনাতনি ওষুধ নয়, ভবিষ্যতে সব ধরনের ওষুধ তৈরির জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে।

আরও পড়ুনঅত্যাবশ্যকীয় ওষুধের তালিকা হালনাগাদ করবে সরকার ১৩ জানুয়ারি ২০২৫ছয় মাসে অর্জন

গত ছয় মাসে ইডিসিএলের উল্লেখযোগ্য অর্জন নিয়ে প্রতিষ্ঠানটির এমডি বলেন, ৩৩টি ওষুধের দাম কমানো হয়েছে। বাকি ওষুধের দাম কমানোর কাজ চলছে। টোল ম্যানুফ্যাকচারিং (চুক্তিভিত্তিক উৎপাদন) অনেকাংশে কমিয়ে আনা হয়েছে এবং শিগগির কিছু মেশিন সংযোজনের মাধ্যমে সম্পূর্ণরূপে টোল বন্ধ করা হবে।

মো. আ. সামাদ মৃধা আরও বলেন, আইভি ফ্লুইডের প্ল্যান্ট চালু করা হয়েছে। সিন্ডিকেট ভেঙে দিয়ে নির্ভরযোগ্য উৎস থেকে তুলনামূলকভাবে কম দামে ওষুধের মূল উপাদান নেওয়া হচ্ছে। অতিরিক্ত অযোগ্য ও অদক্ষ জনবল কমানো হয়েছে। ল্যাগ টাইম কমিয়ে কর্মঘণ্টা বাড়ানো হয়েছে। এতে উৎপাদনশীলতা বেড়েছে। ওভারটাইম কমিয়ে আনা হয়েছে, এতে কোম্পানির সাশ্রয় হচ্ছে। জনবলকে মোটিভেশনের মাধ্যমে কর্মমুখী করা হয়েছে। শ্রমিক কর্মচারী ও ইউনিয়নের সঙ্গে সুসম্পর্ক করে কাজের পরিবেশ সৃষ্টি করা হয়েছে। ওষুধের গুণগত মান বৃদ্ধির জন্য নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। সরকারি সাপ্লাই চেইনে উন্নতি হয়েছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ৩৩ প্রকার প্রয়োজনীয় ওষুধের দাম কমলো
  • ৩৩টি অত্যাবশ্যকীয় ওষুধের দাম কমিয়েছে সরকার