মাঠের ক্রিকেট এখন কোর্ট-কাছারির বারান্দায়! ক্রিকেট বোর্ডের প্রশাসন নির্বাচন নিয়ে মুখোমুখি দুই প্রতিপক্ষ শিবির শরণাপন্ন হয়েছে আদালতের। তাতে বিসিবি নির্বাচনি প্রক্রিয়ার প্রথম ধাপেই হয়েছে ‘গড়বড়’।

তফসিল অনুযায়ী মঙ্গলবার সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত খসড়া ভোটার তালিকার ওপর আপত্তি গ্রহণ করার কথা ছিল। কিন্তু দুই দফা সময় বাড়ানোর পরও নির্ধারিত সময়ে প্রকাশ করা হয়নি ভোটার তালিকার খসড়া। দুপুর ৩টা পর্যন্ত অপেক্ষা করার কথা মৌখিকভাবে বলা হয়েছিল। কিন্তু সেই সময়ও অতিক্রম হয়েছে ২ ঘণ্টা হল।

আরো পড়ুন:

দুই দিন পেছাল বিসিবি নির্বাচন

টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের পর বাংলাদেশ সফরে আসছে পাকিস্তান

নির্বাচন কমিশন এই তালিকা প্রকাশ করার কথা। কিন্তু রাইজিংবিডি নিশ্চিত হয়েছে বিসিবি এখনও খসড়া ভোটার তালিকা তাদের কাছে পৌঁছে দেয়নি। অভিযোগের তির বিসিবি সভাপতি আমিনুল ইসলাম বুলবুলের দিকে। শোনা যাচ্ছে পছন্দের কাউন্সিলরদের নাম না পেয়ে অপেক্ষা করছেন বিসিবি সভাপতি আমিনুল। এর আগেও তিনি নির্বাচনের কাউন্সিলর বা ভোটারদের নাম জমা দেওয়ার সময় দুইবার বাড়ান। দ্বিতীয় দফা সময় বাড়ানোর ক্ষেত্রে অন্য বোর্ড পরিচালকদের কোনো মতামতও নেননি বিসিবি সভাপতি।

এ নিয়ে পরিচালক ইফতেখার আহমেদ সরাসরি বলেছেন, “উনি সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী হিসেবে এটা অনুমোদন করে বাড়িয়ে দিয়েছেন। একটা তো জানেন যে আছে (ক্ষমতা)… এই ক্ষমতাবলে করেছেন (সময় বাড়ানো)…একটা তো জানেন যে আছে (ক্ষমতা)… এই ক্ষমতাবলে করেছেন (সময় বাড়ানো)…।’’

খসড়া ভোটার তালিকা নির্ধারিত সময়ে প্রকাশ না হওয়ায় নির্বাচনের সূচিতে আর কোনো পরিবর্তন আসবে কিনা, সে সিদ্ধান্ত নেবে নির্বাচন কমিশন। পরিচালনা পরিষদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে আগামী ৬ অক্টোবর।

নির্বাচন প্রক্রিয়ার স্বচ্ছতা নিয়েও প্রশ্ন উঠছে। ‘সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী হিসেবে’ আমিনুল ইসলাম সব সিদ্ধান্ত একা নিচ্ছেন। যিনি নিজেও বোর্ড পরিচালক প্রার্থী।  এছাড়া সরকারি হস্তক্ষেপ ও সভাপতির নির্বাহী ক্ষমতার অপপ্রয়োগের প্রতিবাদে গত শনিবার সংবাদ সম্মেলন করে বাংলাদেশ জেলা ও বিভাগীয় এবং ক্লাবের সকল পর্যায়ের ক্রিকেট খেলোয়াড় ও সংগঠকরা।

ঢাকা/ইয়াসিন

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর সময় ব ড় ন ক ষমত

এছাড়াও পড়ুন:

বাংলাদেশের অভ্যুদয়ে ঢাবি গুরুত্বপূর্ণ কাজ করেছে

বঙ্গভঙ্গ রদ হওয়ার ক্ষতিপূরণ হিসেবে ব্রিটিশরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেছিল। উদ্দেশ্য ছিল তাঁবেদার ও অনুগত নাগরিক তৈরি করা। কিন্তু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রথাগত জ্ঞান আহরণের কেন্দ্র না থেকে জাতিরাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠায় গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র হিসেবে কাজ করেছে। তবে সে গৌরব এখন ম্লান হয়ে গেছে।

গতকাল শনিবার রাজধানীর শাহবাগে বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘরে আয়োজিত সিরাজুল ইসলাম চৌধুরীর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ইতিহাসে, স্মৃতিতে শীর্ষক বইয়ের মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে এ কথা বলেন বক্তারা।

আলোচনায় অংশ নিয়ে কথাসাহিত্যিক আহমাদ মোস্তফা কামাল বলেন, একটি জাতিরাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় বিশ্ববিদ্যালয়ের এ রকম ভূমিকা পালনের দৃষ্টান্ত বিশ্বে বিরল। ১৯৭১ সালের ২ মার্চ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে স্বাধীন বাংলাদেশের যে পতাকা ওড়ানো হয়েছে, সেটা আর কখনো নামেনি।

বইটির মুখবন্ধের উদ্ধৃতি দিয়ে বেসরকারি ইনডিপেনডেন্ট ইউনিভার্সিটির এই অধ্যাপক বলেন, সাধারণত বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজ জ্ঞান আহরণ, সৃষ্টি ও বিতরণ। কিন্তু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জ্ঞান আহরণের প্রথাগত কেন্দ্র হিসেবে না থেকে ইতিহাসের ভাঙা–গড়ার প্রক্রিয়ার মধ্যে তার রাজনৈতিক ভূমিকাও পালন করেছে। জাতিরাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠায় গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র হিসেবে কাজ করেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।

সেটার মধ্য দিয়ে ব্রিটিশদের উদ্দেশ্যকে অতিক্রম করতে সক্ষম হয়েছিল এ বিশ্ববিদ্যালয়।

বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক র‍্যাঙ্কিং নিয়ে ভিন্নমত জানিয়ে তিনি বলেন, পৃথিবীর বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তুলনা সেটা ভিন্নভাবে করতে হবে। এখন র‍্যাঙ্কিং নিয়ে আওয়াজ ওঠে। গণপরিসরে যখন আলাপ ওঠে তখন বলা হয়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পিছিয়ে থাকার কারণ হিসেবে গবেষণা ও প্রকাশনা না হওয়াকে দায়ী করা হয়। তিনি প্রশ্ন রাখেন, পৃথিবীর কটা বিশ্ববিদ্যালয় জাতিরাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় ভূমিকা পালন করেছে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ইতিহাসে, স্মৃতিতে বইটির প্রথম প্রবন্ধ ‘অন্ধকারে আলো, আলোতে অন্ধকার’ শিরোনামের একটা পুরো জীবনদর্শনের সন্ধান মেলে জানিয়ে দ্য ডেইলি স্টার সম্পাদক মাহফুজ আনাম বলেন, ‘সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী স্যার সবকিছু ব্যক্ত করেন সাংঘাতিক যুক্তির মধ্য দিয়ে। ওনার লেখা যখন শেষ করি, তখন মনে হয়, আমি একটি বুদ্ধিবৃত্তিক ভ্রমণ শেষ করেছি।’

উপাচার্যদের সমালোচনা করে তিনি বলেন, ‘আমি কাউকে ব্যক্তিগতভাবে দোষারোপ করছি না। কিন্তু উপাচার্যদের বিশ্ববিদ্যালয়কে সৃজনশীলতার প্রাণকেন্দ্র হিসেবে প্রতিষ্ঠা করার যে মূল দায়িত্ব, সেটা পালনে তাঁরা ব্যর্থ হয়েছেন।’

লেখক ও অনুবাদক খালিকুজ্জামান ইলিয়াস বলেন, ‘প্রথম প্রবন্ধটা বইটার সুর তৈরি করে দিয়েছে। স্যার সবকিছুকে ক্রিটিক্যালি দেখেন। যেমন সিপাহি বিদ্রোহ নিয়ে স্যারের পর্যবেক্ষণ। ১৮৫৭ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়। এর দু–তিন মাস পরে সিপাহি বিদ্রোহ হয়। স্যার তাঁর বইয়ে বলছেন, কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় উচ্চমার্গীয় ব্যাপার। সিপাহিরা হচ্ছেন কৃষকের সন্তান।’

খ্যাতিমান নাট্যকার খায়রুল আলম সবুজ বলেন, ‘স্যারের লেখা যখন পড়ি, সেটা অন্তর ছুঁয়ে যায়।’

বিভিন্ন সময়ের লেখাগুলোকে একত্র করে বইটা লেখা জানিয়ে শিক্ষক ও লেখক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আগের যে চেহারা ছিল, আগের যে গৌরব ছিল, সেগুলো ম্লান হয়ে গেছে, এটা খুবই সত্য কথা এবং সে জন্য যে কেবল বিশ্ববিদ্যালয় দায়ী, সেটা নয়। মূল পরিবেশ, গোটা সমাজের যে পরিবেশ, তাকে বিবেচনা করতে হবে। গোটা ব্যবস্থাটাই এমন পুঁজিবাদী একটা ব্যবস্থা, যেখানে মানুষ আত্মস্বার্থ ও আত্মকেন্দ্রিক হয়ে পড়েছে।

বেঙ্গলবুকসের জ্যেষ্ঠ কনটেন্ট ডেভেলপার তৌহিদ ইমামের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি ও হিউম্যানিটিজ বিভাগের চেয়ারম্যান ফেরদৌস আজিম। আরও বক্তব্য দেন লেখক ও গবেষক কাজী সামিও শীশ।

বিকেল সাড়ে চারটার দিকে মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠান শুরু হয়। শুরুতে স্বাগত বক্তব্য দেন বেঙ্গলবুকসের প্রকল্প প্রধান আজহার ফরহাদ। এরপর মঞ্চে অতিথিদের ফুল দিয়ে বরণ করে নেওয়া হয়। বেঙ্গলবুকসের প্রকাশক মাহমুদুল হাসানের বক্তব্যের পর বইয়ের মোড়ক উন্মোচন করেন অতিথিরা।

সম্পর্কিত নিবন্ধ