বন্দর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে তীব্র জনবল সংকট, স্বাস্থ্য সেবা
Published: 24th, September 2025 GMT
জনবল–সংকটে ধুঁকছে ৫০ শয্যা বিশিষ্ট বন্দর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি। চিকিৎসক সংকট, টেকনিশিয়ানসহ গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন পদ দীর্ঘদিন ধরে খালি থাকায় ব্যাহত হচ্ছে চিকিৎসা সেবা। মঞ্জুরীকৃত ৪১টি পদের বিপরীতে বর্তমানে আছে ১২ জন। ২৯টি পদই শুন্য রয়েছে।
এর মধ্যে চিকিৎসকের ১৪ পদের ৭টি শুন্য রয়েছে। এ অবস্থায় একদিকে রোগীরা যেমন ভোগান্তি পোহাচ্ছেন অপরদিকে চিকিৎসা সেবা দিতে হিমশিম খাচ্ছেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্রে জানা গেছে, ৫০ শয্যা বিশিষ্ট বন্দর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসকসহ লোকবল থাকার কথা ৪১ জন। কিন্তু রয়েছে মাত্র ১২ জন । ২৯টি পদই শুন্য রয়েছে। এর মধ্যে ১৪ জন চিকিৎসকের মধ্যে বর্তমানে ৭ জন কর্মরত আছেন। চিকিৎসকের সাতটি পদই শূন্য।
মেডিসিন বিশেষজ্ঞ , ইএনটি, অফথালমোলজি, ডার্মাটোলজি, ক্লিনিক্যাল প্যাথলজি , রেডিওলজি এন্ড ইমেজিং , ফিজিক্যাল মেডিসিন এন্ড রিহ্যাবিলিটেশন বিভাগের পদগুলো দীর্ঘ ধরে শুন্য। ইমার্জেন্সি মেডিকেল অফিসারের ৪ টি পদই শুন্য রয়েছে।
এ ছাড়া সহকারি মেডিকেল অফিসার ১৯ জন থাকার কথা থাকলেও রয়েছে মাত্র ২ জন। খালি রয়েছে সহকারি ডেন্টাল সার্জনের পদও।
বুধবার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গিয়ে দেখা গেছে, বহির্বিভাগে রোগীদের উপচে পড়া ভীড়। রোগীদের অধিকাংশই জ্বর ঠান্ডা নিয়ে হাসপাতালে এসেছেন। তাদের চিকিৎসা দিতে গলদঘর্ম অবস্থা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের।
হাসপাতাল ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, প্রায় সাড়ে তিন লাখ মানুষের স্বাস্থ্যসেবার জন্য বন্দর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। দায়িত্বরত চিকিৎসকেরা প্রতিদিন বহির্বিভাগে পাঁচশ থেকে ছয়শ’ রোগী দেখছেন এবং ব্যবস্থাপত্র দিচ্ছেন।
কিন্তু এক্স-রেসহ কোনো ধরনের পরীক্ষা-নিরীক্ষার প্রয়োজন হলে টেকনিশিয়ানের অভাবে রোগীদের স্থানীয় বেসরকারি ডায়গনস্টিক সেন্টারে, নয়তো শহরের কোন ডায়গনস্টিক সেন্টারে যেতে হচ্ছে।
হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের এক্স-রে মেশিনটি অনেক দিন থেকেই অব্যবহৃত অবস্থায় পড়ে আছে। এক্স-রে পরিচালনার জন্য টেকনিশিয়ান পদ দীর্ঘদিন ধরে শূন্য। সচল না থাকায় অকেজো হয়ে পড়েছে এক্স-রে যন্ত্র। এ অবস্থায় মেশিন সচল রাখতে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের টেকনিশিয়ান দিয়ে মাঝে মাঝে এক্সরে করানো হচ্ছে।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও প.
বাইরে থেকে টেকনিশিয়ান এনে কাজ চালানো হচ্ছে। ইতিমধ্যে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের বিভিন্ন শুন্যপদে নিয়োগের জন্য চাহিদাপত্র উর্ধ্বতন কর্তপক্ষের কাছে পাঠানো হয়েছে। পদগুলো খুব শিগশিগ পূরণ হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।
তবে নারায়ণগঞ্জ জেলা সিভিল সার্জন ডা. মশিউর রহমান বুধবার নারায়ণগঞ্জ প্রেসক্লাবে টাইফয়েড টিকাদান ক্যাম্পেইন উপলক্ষে জেলা তথ্য অফিস আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বলেন, বন্দর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে কোন জনবল সংকট নেই।
সেখানে পুরো সেটআপ রয়েছে।জোরদার নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা না থাকায় ওই হাসপাতালে প্রায়ই চুরির ঘটনা ঘটছে।
উৎস: Narayanganj Times
কীওয়ার্ড: ন র য়ণগঞ জ স ব স থ য কমপ ল ক স পদই শ ন য চ ক ৎসক র র উপজ ল এক স র অবস থ
এছাড়াও পড়ুন:
বাস্তবে নেই, কাগজে-কলমেই আছে নাচোলের ৩ উপস্বাস্থ্য কেন্দ্র
চাঁপাইনবাবগঞ্জের নাচোলের চারটি ইউনিয়নের বাসিন্দাদের চিকিৎসার জন্য যেতে হয় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে। কাগজে-কলমে এই উপজেলার তিনটি ইউনিয়নে উপস্বাস্থ্য কেন্দ্র আছে, কিন্তু কোনো ভৌত অবকাঠামো নেই। এ কারণে নিজ এলাকায় স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত হয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন স্থানীয়রা।
জেলা সিভিল সার্জন জানান, নাচোল উপজেলায় তিনটি উপস্বাস্থ্য কেন্দ্র আছে, কিন্তু এসব সরকারি প্রতিষ্ঠানের কোনো অবকাঠামো নেই। এর মধ্যে দুইটিতে জনবল নেই। একটিতে থাকলেও অবকাঠামো না থাকায় তারা বর্তমানে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা সেবা দিচ্ছেন।
আরো পড়ুন:
সাবেক স্ত্রীকে ছুরিকাঘাত করে স্বামীর আত্মহত্যা
ধর্ষিত শিশুর স্বজনের সঙ্গে অশালীন আচরণ করা চিকিৎসক বরখাস্ত
স্থানীয়রা জানান, চিকিৎসার জন্য বারবার উপজেলা সদরে যাতায়াত করতে গিয়ে আর্থিক চাপ বাড়ছে, যা গরিব মানুষের জন্য বড় বোঝা। দীর্ঘদিন ধরে ইউনিয়নগুলোয় উপস্বাস্থ্য কেন্দ্র নির্মাণ না হওয়ায় সাধারণ মানুষের মধ্যে স্বাস্থ্য বিভাগের প্রতি গভীর অনাস্থার সৃষ্টি হয়েছে। তারা মনে করেন, স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা তাদের দুর্ভোগের বিষয়ে উদাসীন। খুব দ্রুত সময়ের মধ্যে ইউনিয়নগুলোয় উপস্বাস্থ্য কেন্দ্র নির্মাণের দাবি জানিয়েছেন তারা।
জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, নাচোল উপজেলার কসবা, ফতেপুর ও নেজামপুর ইউনিয়নে উপস্বাস্থ্য কেন্দ্র আছে শুধু কাগজে-কলমে। সেখানে কোনো ভৌত অবকাঠামো নেই। এসব প্রতিষ্ঠানে মেডিকেল অফিসার ও স্যাকমো দিয়ে মোট মঞ্জুরী পদের সংখ্যা ছয়টি। ফতেপুর ও নেজামপুর ইউনিয়ন উপস্বাস্থ্য কেন্দ্রে কোনো জনবলই নেই। শুধুমাত্র কসবা ইউনিয়ন উপস্বাস্থ্য কেন্দ্রে ওইসব পদে দুইজন আছেন, কিন্তু স্থাপনা না থাকায় তারা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে বসেন। তারা সেখানেই রোগীদের চিকিৎসা দিচ্ছেন।
জানা গেছে, ১৯৮৩ সালের ৭ নভেম্বর নাচোল অঞ্চলটি ‘উপজেলা’ হিসেবে মনোনীত হয়। পরের বছর এ উপজেলায় চারটি ইউনিয়ন গঠিত হয়। সেগুলো হলো- নাচোল ইউনিয়ন, কসবা ইউনিয়ন, ফতেপুর ইউনিয়ন ও নেজামপুর ইউনিয়ন। সাধারণত প্রতিটি ইউনিয়নে সরকারিভাবে একটি করে উপস্বাস্থ্য কেন্দ্র থাকার কথা, যেখানে একজন করে মেডিকলে অফিসার ও স্যাকমো থাকেন। নাচোল উপজেলার তিনটি ইউনিয়নে এমন কোনো কেন্দ্র না থাকায় হাজারো মানুষ উন্নত স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।
কসবা ইউনিয়নের বাসিন্দা হাফিজুর রহমান বলেন, “আমাদের এলাকায় কোনো উপস্বাস্থ্য কেন্দ্র নেই। আমাদের চিকিৎসা নিতে যেতে হয় উপজেলা সদরে। ফলে ওষুধ কেনার সঙ্গে যাতায়াত ভাড়ার চাপ বাড়ে। দ্রুত সময়ের মধ্যে উপস্বাস্থ্য কেন্দ্র নির্মাণ করা হবে আমার ইউনিয়নে এমনটি আশা করছি।”
নাচোল উপজেলার ভারপ্রাপ্ত স্বাস্থ্য কর্মকর্তা মো. কামাল উদ্দিন বলেন, “তিনটি ইউনিয়নে উপস্বাস্থ্য কেন্দ্র রয়েছে, কিন্তু এখন পর্যন্ত সরকারিভাবে অবকাঠামো নির্মাণ হয়নি। এই তিনটি সাবসেন্টারে মুঞ্জরী পদের সংখ্যা দুটি করে মোট ছয়টি। নেজামপুর ও ফতেপুর ইউনিয়ন উপস্বাস্থ্য কেন্দ্রে কোনো জনবল নেই। শুধুমাত্রা কসবা ইউনিয়ন উপস্বাস্থ্য কেন্দ্রে রয়েছে দুইজন। তারা এখন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে বসেন।”
চাঁপাইনবাবগঞ্জের সিভিল সার্জন এ কে এম শাহাব উদ্দিন বলেন, “কাগজে-কলমে নাচোল উপজেলায় তিনটি উপস্বাস্থ্য কেন্দ্র আছে, কিন্তু এসব সরকারি প্রতিষ্ঠানের কোনো অবকাঠামো নেই। এর মধ্যে দুইটি জনবল শূন্য। আরেকটিতে থাকলেও তারা বর্তমানে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা সেবা দিচ্ছেন।”
তিনি আরো বলেন, “এখন পর্যন্ত ওইসব জায়গায় উপস্বাস্থ্য কেন্দ্র নির্মাণের প্রস্তাব পাঠানো হয়নি বলে আমরা জানতে পেরেছি। আগামীতে ওই ইউনিয়নগুলোতে উপস্বাস্থ্য কেন্দ্র নির্মাণের প্রস্তাব পাঠানো হবে। বর্তমান সরকার স্বাস্থ্যখাত বিষয়ে বেশ উৎপর। আশা করছি, সংকট নিরসন হবে।”
ঢাকা/মেহেদী/মাসুদ