রোগী সেজে সাভার স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে অভিযান দুদকের
Published: 6th, November 2025 GMT
ঢাকার সাভার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নানা অনিয়মের অভিযোগে অভিযান চালিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। রোগীদের টিকিট কাটা ও বিনামূল্যে ওষুধ বিতরণের ক্ষেত্রে টাকা লেনদেন, চিকিৎসক ও কর্মকর্তাদের অনুপস্থিতিসহ বিভিন্ন অভিযোগের ভিত্তিতে বৃহস্পতিবার (৬ নভেম্বর) সকালে অভিযান পরিচালনা করা হয়।
দুদকের সমন্বিত জেলা কার্যালয়, ঢাকা-২–এর সহকারী পরিচালক আরিফ আহমেদের নেতৃত্বে তিন সদস্যের প্রতিনিধি দল অভিযান পরিচালনা করে। সাদা পোশাকে রোগী সেজে হাসপাতালের বিভিন্ন সেবা কার্যক্রম পরিদর্শন করেন তারা।
আরো পড়ুন:
ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় প্রতিপক্ষের হামলা: গুলিবিদ্ধ যুবকের মৃত্যু
হাসপাতালের নতুন ভবন চালুতে ১০ লাখ টাকা অনুদান দিল জামায়াত
অভিযানকালে দুদক দল উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা.
অভিযান শেষে দুদকের সহকারী পরিচালক আরিফ আহমেদ বলেন, “অভিযোগ ছিল এখানে টিকিট কাটার সময় টাকা নেওয়া হয়। ওষুধ বিতরণে টাকা নেওয়া হয়। পাশাপাশি এখানে কনসালটেন্টসহ যারা কর্মরত আছেন, উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তাসহ তারা অনুপস্থিত থাকেন, ওয়াশরুমগুলো নোংরা— এমন অভিযোগও ছিল।”
তিনি আরো বলেন, “এ সব অভিযোগের প্রেক্ষিতে আমরা আজ এখানে অভিযান পরিচালনা করি। এ সময় উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তাকে অনুপস্থিত পেয়েছি। তবে তিনি জানিয়েছেন, তিনি ডিজি অফিসে মিটিংয়ে আছেন। আরো কয়েকজনকে অনুপস্থিত পেয়েছি। তাদের বায়োমেট্রিক হাজিরার তালিকা আমরা নিয়েছি। টিকিট কাটা ও ওষুধ বিতরণে টাকা নেওয়ার বিষয়টি আমি নিজে রোগী সেজে দেখেছি, সেক্ষেত্রে তেমন ব্যত্যয় পাইনি। তবে হাসপাতালের পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার বিষয়ে আমি খুবই অসন্তুষ্ট। বিষয়টি এখানকার আবাসিক মেডিকেল অফিসারকে জানিয়েছি। স্বাস্থ্য কর্মকর্তাকেও টেলিফোনে বলেছি। এখানে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার ভয়াবহ অবস্থা।”
চলমান ডেঙ্গু প্রাদুর্ভাবের মধ্যে হাসপাতালের পরিবেশ উপযুক্ত নয় বলেও মন্তব্য করেন এই দুদক কর্মকর্তা।
হাসপাতালে ওষুধ কোম্পানির প্রতিনিধিদের (রিপ্রেজেনটেটিভ) দৌরাত্ম প্রসঙ্গে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “আমরা জেনেছি, সরকারিভাবে গেজেটে দুই দিন নির্ধারিত আছে, তবে এখানে একদিন করা হয়েছে। এ বিষয়ে আরো তৎপর হওয়ার জন্য বলা হয়েছে।”
তিনি আরো জানান, হাসপাতালে রোগীদের খাদ্যের মান সম্পর্কেও খোঁজখবর নেওয়া হয়েছে।
দুদক কর্মকর্তার মন্তব্যের বিষয়ে জানতে চাইলে হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. সাইদুল ইসলাম বলেন, “মূলত আমাদের লোকবলের সংকট রয়েছে। আউটডোরে প্রচুর রোগীর চাপ হয়। তবে ব্যবহারকারী যারা আছেন, তারা টয়লেট ব্যবহারের পর পর্যাপ্ত পানি ব্যবহার করেন না। তবু আমাদের ক্লিনারদের আমরা সম্প্রতি শোকজ করেছি। ইনডোর নিয়ে দুদক কর্মকর্তারা মোটামুটি সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন। কিন্তু এখানেও জনবল ঘাটতি আছে। আমাদের দুইজন আয়া আছেন, দুজনই অবসরের দারপ্রান্তে। তারপরও আমরা চেষ্টা করব আমাদের বর্তমান জনবল দিয়ে কীভাবে এটি সমাধান করা যায়।’’
বিষয়টি নিয়ে আগামী শনিবার (৮ নভেম্বর) মিটিং ডাকা হয়েছে বলে জানান তিনি।
ঢাকা/সাব্বির/বকুল
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর অভ য ন কর মকর ত আম দ র উপজ ল
এছাড়াও পড়ুন:
সরকার যেভাবে পুলিশ কমিশন করতে চাইছে, তাতে সরকারের নিয়ন্ত্রণের ঝুঁকি থাকবে
প্রস্তাবিত ‘পুলিশ কমিশন অধ্যাদেশ’–এর খসড়াটি ঢেলে সাজানোর আহ্বান জানিয়েছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)। নইলে পুলিশ কমিশনের ওপর সরকারের নিয়ন্ত্রণের ঝুঁকি থাকবে বলে আশঙ্কা করেছে সংস্থাটি।
আজ বুধবার এক বিবৃতিতে এ আহ্বান জানিয়েছে টিআইবি। সরকারের পক্ষ থেকে এখনো প্রকাশিত না হলেও ‘নির্ভরযোগ্য সূত্রে’ প্রাপ্ত পুলিশ কমিশন অধ্যাদেশের খসড়াটি সম্পর্কে জেনে এ বিবৃতি দেওয়া হয়।
অন্তর্বর্তী সরকার স্বাধীন পুলিশ কমিশন গঠন করতে যাচ্ছে। গতকাল মঙ্গলবার স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী সাংবাদিকদের প্রশ্নে বলেছিলেন, পুলিশ কমিশন হয়ে যাবে।
এর আগে দুর্নীতি দমন কমিশন আইন সংশোধন অধ্যাদেশের খসড়া নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছিল টিআইবি। এবার পুলিশ কমিশন অধ্যাদেশ নিয়েও তাদের একই ধরনের প্রতিক্রিয়া এল।
প্রস্তাবিত পুলিশ কমিশনের বাছাই কমিটি ও কমিশন গঠন, জনবল নিয়োগ, আর্থিক স্বাধীনতা ইত্যাদি বিভিন্ন ঝুঁকির কথা উল্লেখ করে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান বিবৃতিতে বলেন, ‘সাতজন সদস্যের মধ্যে অবসরপ্রাপ্ত একজন আমলা ও দুজন পুলিশ সদস্যের সমন্বয়ে যেভাবে কমিশন গঠনের প্রস্তাব করা হয়েছে, এতে কমিশন সাবেকদের আনুগত্যের প্রতিদানকেন্দ্রে পরিণত হওয়াসহ সরকারের নির্বাহী বিভাগের অধীন একটি সংস্থায় রূপান্তরিত হওয়ার ঝুঁকির সৃষ্টি হয়েছে।’
টিআইবি সাবেক ও বর্তমান আমলা এবং পুলিশ কর্মকর্তাদের সদস্য হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হওয়ার সুযোগ বাতিল করে বিচার, আইন, আইনপ্রয়োগ, মানবাধিকার ও সুশাসন–সংশ্লিষ্ট বিষয়ে নিরপেক্ষ বিশেষজ্ঞ, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, গবেষকের সমন্বয়ে কমিশন গঠনের বিধান অন্তর্ভুক্ত করার সুপারিশ করেছে।
টিআইবির নির্বাহী পরিচালক বলেন, ‘স্বাধীনতা ও কার্যকারিতার স্বার্থে কমিশনের কার্যক্রম পরিচালনার জন্য প্রয়োজনীয় জনবল নিয়োগে সরকারের অনুমোদনের বিধান বাতিল করে এ ক্ষমতা সম্পূর্ণভাবে কমিশনের হাতে ন্যস্ত করতে হবে। এ ছাড়া প্রেষণে নিয়োগের ব্যাপারে সরকার নয়, বরং কমিশনের সুপারিশ ও অনুমোদনের বিধান, যা ১০ শতাংশের বেশি হবে না এবং সরকার কর্তৃক প্রস্তাবিত কোনো সরকারি কর্মচারীর কমিশনে প্রেষণে নিয়োগের ক্ষেত্রে কমিশনের দ্বিমত থাকলে সে ক্ষেত্রে কমিশনের অভিমত প্রাধান্য পাবে—এমন বিধান অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।’
কমিশনার নিয়োগের ক্ষেত্রে পেশাগত জীবনে দলনিরপেক্ষতা, মানবাধিকার রক্ষা, সততা ও শুদ্ধাচার চর্চার দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন, এমন ব্যক্তিকে মনোনীত করার সুপারিশ করেছে টিআইবি। ইফতেখারুজ্জামান বলেন, অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ কর্মকর্তাকে কমিশনের সদস্যসচিব নিয়োগের বিধান বাতিল করে উন্মুক্ত প্রতিযোগিতার মাধ্যমে সচিবসহ সব জনবল নিয়োগের ক্ষমতা কমিশনের হাতে থাকবে এবং পদমর্যাদা ও বেতন-ভাতা সরকারের সচিবের সমান হবে, এই বিধান করতে হবে।
টিআইবি পরামর্শ দিয়েছে, সচিব কমিশনের শীর্ষ কর্মকর্তার দায়িত্বের পাশাপাশি পদাধিকার বলে কমিশনের নন-ভোটিং সদস্যের দায়িত্ব পালন করবেন, এই মর্মে বিধান রাখা যৌক্তিক হবে। এ ছাড়া বাছাই কমিটির সদস্যদের বিশেষ করে মানবাধিকার সংরক্ষণ ও সুশাসন প্রতিষ্ঠার বিষয়ে অভিজ্ঞতাসম্পন্ন একজন নাগরিক কীভাবে অন্তর্ভুক্ত হবে, তা সুস্পষ্ট করতে হবে।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, পুলিশি কার্যক্রমের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট নিরাপত্তা, গোয়েন্দা ও নজরদারি সংস্থার পেশাগত উৎকর্ষ ও কার্যপরিধি স্পষ্টকরণ, মানবাধিকার ও সংবেদনশীলতা নিশ্চিতে এ–সংক্রান্ত আইন, বিধি ও নীতি প্রণয়ন বা সংস্কারে সরকারকে প্রয়োজনীয় সুপারিশ ও নির্দেশনা প্রদানের ক্ষমতা কমিশনের হাতে অর্পণের একটি দফা সংযুক্ত করা জরুরি। কমিশন প্রতিষ্ঠার সর্বোচ্চ ছয় মাসের মধ্যে ঔপনিবেশিক আমলের পুলিশ আইনের স্থলে ‘খসড়া পুলিশ আইন, ২০০৭’–এর ইতিবাচক বিষয় বিবেচনায় রেখে নতুন পুলিশ আইনের খসড়া প্রণয়ন ও পাস করানোর জন্য সরকারের কাছে সুপারিশ করার জন্য দফা অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।
এ ছাড়া কমিশনের আর্থিক স্বাধীনতা ও স্বচ্ছতার স্বার্থে সরকার কমিশন কর্তৃক চাহিত বাজেট বরাদ্দ নিশ্চিত এবং এর বার্ষিক নিরীক্ষিত ব্যয়বিবরণী প্রতিবেদন প্রাপ্তির সাত কার্যদিবসের মধ্যে কমিশনের ওয়েবসাইটের মাধ্যমে প্রকাশ করবে, এমন ধারা সংযোজনের সুপারিশও করেছে টিআইবি।