মাদারীপুরের শিবচর উপজেলায় ঢাকা-ভাঙ্গা এক্সপ্রেসওয়ের কোল ঘেষেঁ সন্যাসীরচরে নির্মাণ করা হয়েছে অত্যাধুনিক ট্রমা সেন্টার। ১২ কোটি টাকা ব্যয়ে প্রায় আড়াই বছর আগে নির্মিত সেন্টারটিতে একাধিক ভবন থাকলেও এখনো চিকিৎসাসেবা চালু হয়নি। স্থানীয়দের অভিযোগ, এটি এখন মাদকের আস্তানায় পরিণত হয়েছে, প্রতিদিন চুরি হচ্ছে মূল্যবান জিনিসপত্র। 

বাংলাদেশে সড়ক দুর্ঘটনায় হতাহতের বিষয়টি রীতিমতো মহামারি রূপ নিয়েছে। দুর্ঘটনায় আহত ব্যক্তিদের দ্রুত উদ্ধার করা গেলে প্রাণহানি অনেকাংশে রোধ করা সম্ভব, এই বিষয়টি বিবেচনায় নিয়েই নির্মিত হয়েছিল শিবচরে ট্রমা সেন্টারটি।

আরো পড়ুন:

দগ্ধ ফায়ার কর্মীদের সর্বোচ্চ চিকিৎসা নিশ্চিত করা হবে: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

খুমেক হাসপাতালের সিঁড়ি থেকে পড়ে ব্যক্তির মৃত্যু 

হাইওয়ে পুলিশের ফরিদপুর অঞ্চলের দেওয়া তথ্যমতে, ২০২৩ সালের মার্চ থেকে ২০২৫ সালের জুলাই পর্যন্ত এক্সপ্রেসওয়েতে ২২৩টি সড়ক দুর্ঘটনায় ২০৯ জন নিহত হয়েছেন।

এলাকাবাসী জানান, সন্যাসীরচর ইউনিয়নের ঢাকা-ভাঙ্গা মহাসড়কের কোল ঘেঁষেই নির্মাণ করা ট্রমা সেন্টারের নামকরণ করা হয় জাতীয় সংসদের সাবেক চিফ হুইপ নূর-ই-আলম চৌধুরীর বাবা ইলিয়াস আহমেদ চৌধুরীর নামে। ২০২২ সালের নভেম্বরে সেন্টারটি উদ্বোধন করা হয়। এখন মাদকসেবীদের আড্ডা বসে এখানে। রাতে পুরো ট্রমা সেন্টার অরক্ষিত থাকে। কোটি টাকা খরচ করে তৈরি করা এই হাসপাতাল আলোর মুখ দেখবে কি না তা নিয়ে সন্দেহে রয়েছেন তারা।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, প্রতিটি ট্রমা সেন্টারে সাতজন পরামর্শক চিকিৎসক (কনসালট্যান্ট), তিনজন অর্থোপেডিকস সার্জন, দুইজন অ্যানেসথেটিস্ট, দুইজন আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তাসহ মোট ১৪ জন চিকিৎসক, ১০ জন নার্স এবং ফার্মাসিস্ট, রেডিওগ্রাফার, টেকনিশিয়ানসহ ৩৪টি পদ সৃজনের প্রস্তাব করা হয়েছিল। তবে তা আর আলোর মুখ দেখেনি।

সরেজমিনে দেখা গেছে, ট্রমা সেন্টারের মূল ফটক খোলা। ভবনের ভেতরেও প্রবেশ করা যাচ্ছে অনায়াসে। সম্প্রতি সেখান থেকে এসি, ফ্রিজ, টেলিভিশন, সেনেটারির মালামাল, পানির মোটরসহ বিভিন্ন জিনিস চুরি হয়েছে। সন্ধ্যার পর এখানে মাদকসেবনকারীদের আড্ডা বসে।

আব্দুল আল ইসলাম নামে স্থানীয় এক বাসিন্দা বলেন, “হাসপাতালটি উদ্বোধন হয়েছে আড়াই বছর হলো। এখনো ট্রমা সেন্টারটি চালু হয়নি। আগে হঠাৎ হঠাৎ কর্মকর্তারা আসতেন। এরপর থেকে জনশূন্য এই সেন্টার। ট্রমা সেন্টারটিতে এখন রক্ষণাবেক্ষণের লোকজন নেই। মূল্যবান জিনিসপত্র চুরি হচ্ছে প্রতিদিন। আমরা দ্রুত হাসপাতাল চালুর দাবি জানাই।”

গাড়ি চালক আবুল খায়ের বলেন, “ঢাকা-ভাঙ্গা মহাসড়কে ট্রমা সেন্টার থাকা অত্যাবশ্যক বলে মনে করি। কারণ রাস্তায় যখন-তখন দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। সেক্ষেত্রে ট্রমা সেন্টার থাকলে অনেক প্রাণ বাঁচানো সম্ভব হবে।”

মাদারীপুরের সিভিল সার্জন ডা.

শরীফুল আবেদীন কমল বলেন, “শিবচরের ট্রমা সেন্টারটি এখনো চালু করা সম্ভব হয়নি। আমি শুনেছি, ওখানকার কিছু জিনিসপত্র চুরি হয়েছে। ট্রমা সেন্টারটি চালু না হবার পেছনে রয়েছে জনবল সংকট।” 

তিনি বলেন, “আমরা হাসপাতালটি হস্তান্তর পেয়েছি। এটি পরিচালনা করতে যে জনবল প্রয়োজন তা পাইনি। আমরা কর্তৃপক্ষকে চাহিদা দিয়ে রেখেছি। আশা করছি, শিগগিরি জনবল পাওয়ার মাধ্যমে আমরা সংকট কাটিয়ে উঠতে পারব।”

ঢাকা/মাসুদ

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর সড়ক দ র ঘটন দ র ঘটন

এছাড়াও পড়ুন:

বাস্তবে নেই, কাগজে-কলমেই আছে নাচোলের ৩ উপস্বাস্থ্য কেন্দ্র

চাঁপাইনবাবগঞ্জের নাচোলের চারটি ইউনিয়নের বাসিন্দাদের চিকিৎসার জন্য যেতে হয় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে। কাগজে-কলমে এই উপজেলার তিনটি ইউনিয়নে উপস্বাস্থ্য কেন্দ্র আছে, কিন্তু কোনো ভৌত অবকাঠামো নেই। এ কারণে নিজ এলাকায় স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত হয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন স্থানীয়রা।

জেলা সিভিল সার্জন জানান, নাচোল উপজেলায় তিনটি উপস্বাস্থ্য কেন্দ্র আছে, কিন্তু এসব সরকারি প্রতিষ্ঠানের কোনো অবকাঠামো নেই। এর মধ্যে দুইটিতে জনবল নেই। একটিতে থাকলেও অবকাঠামো না থাকায় তারা বর্তমানে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা সেবা দিচ্ছেন।

আরো পড়ুন:

সাবেক স্ত্রীকে ছুরিকাঘাত করে স্বামীর আত্মহত্যা

ধর্ষিত শিশুর স্বজনের সঙ্গে অশালীন আচরণ করা চিকিৎসক বরখাস্ত

স্থানীয়রা জানান, চিকিৎসার জন্য বারবার উপজেলা সদরে যাতায়াত করতে গিয়ে আর্থিক চাপ বাড়ছে, যা গরিব মানুষের জন্য বড় বোঝা। দীর্ঘদিন ধরে ইউনিয়নগুলোয় উপস্বাস্থ্য কেন্দ্র নির্মাণ না হওয়ায় সাধারণ মানুষের মধ্যে স্বাস্থ্য বিভাগের প্রতি গভীর অনাস্থার সৃষ্টি হয়েছে। তারা মনে করেন, স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা তাদের দুর্ভোগের বিষয়ে উদাসীন। খুব দ্রুত সময়ের মধ্যে ইউনিয়নগুলোয় উপস্বাস্থ্য কেন্দ্র নির্মাণের দাবি জানিয়েছেন তারা। 

জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, নাচোল উপজেলার কসবা, ফতেপুর ও নেজামপুর ইউনিয়নে উপস্বাস্থ্য কেন্দ্র আছে শুধু কাগজে-কলমে। সেখানে কোনো ভৌত অবকাঠামো নেই। এসব প্রতিষ্ঠানে মেডিকেল অফিসার ও স্যাকমো দিয়ে মোট মঞ্জুরী পদের সংখ্যা ছয়টি। ফতেপুর ও নেজামপুর ইউনিয়ন উপস্বাস্থ্য কেন্দ্রে কোনো জনবলই নেই। শুধুমাত্র কসবা ইউনিয়ন উপস্বাস্থ্য কেন্দ্রে ওইসব পদে দুইজন আছেন, কিন্তু স্থাপনা না থাকায় তারা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে বসেন। তারা সেখানেই রোগীদের চিকিৎসা দিচ্ছেন।

জানা গেছে, ১৯৮৩ সালের ৭ নভেম্বর নাচোল অঞ্চলটি ‘উপজেলা’ হিসেবে মনোনীত হয়। পরের বছর এ উপজেলায় চারটি ইউনিয়ন গঠিত হয়। সেগুলো হলো- নাচোল ইউনিয়ন, কসবা ইউনিয়ন, ফতেপুর ইউনিয়ন ও নেজামপুর ইউনিয়ন। সাধারণত প্রতিটি ইউনিয়নে সরকারিভাবে একটি করে উপস্বাস্থ্য কেন্দ্র থাকার কথা, যেখানে একজন করে মেডিকলে অফিসার ও স্যাকমো থাকেন। নাচোল উপজেলার তিনটি ইউনিয়নে এমন কোনো কেন্দ্র না থাকায় হাজারো মানুষ উন্নত স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।

কসবা ইউনিয়নের বাসিন্দা হাফিজুর রহমান বলেন, ‍“আমাদের এলাকায় কোনো উপস্বাস্থ্য কেন্দ্র নেই। আমাদের চিকিৎসা নিতে যেতে হয় উপজেলা সদরে। ফলে ওষুধ কেনার সঙ্গে যাতায়াত ভাড়ার চাপ বাড়ে। দ্রুত সময়ের মধ্যে উপস্বাস্থ্য কেন্দ্র নির্মাণ করা হবে আমার ইউনিয়নে এমনটি আশা করছি।”

নাচোল উপজেলার ভারপ্রাপ্ত স্বাস্থ্য কর্মকর্তা মো. কামাল উদ্দিন বলেন, “তিনটি ইউনিয়নে উপস্বাস্থ্য কেন্দ্র রয়েছে, কিন্তু এখন পর্যন্ত সরকারিভাবে অবকাঠামো নির্মাণ হয়নি। এই তিনটি সাবসেন্টারে মুঞ্জরী পদের সংখ্যা দুটি করে মোট ছয়টি। নেজামপুর ও ফতেপুর ইউনিয়ন উপস্বাস্থ্য কেন্দ্রে কোনো জনবল নেই। শুধুমাত্রা কসবা ইউনিয়ন উপস্বাস্থ্য কেন্দ্রে রয়েছে দুইজন। তারা এখন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে বসেন।”

চাঁপাইনবাবগঞ্জের সিভিল সার্জন এ কে এম শাহাব উদ্দিন বলেন, “কাগজে-কলমে নাচোল উপজেলায় তিনটি উপস্বাস্থ্য কেন্দ্র আছে, কিন্তু এসব সরকারি প্রতিষ্ঠানের কোনো অবকাঠামো নেই। এর মধ্যে দুইটি জনবল শূন্য। আরেকটিতে থাকলেও তারা বর্তমানে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা সেবা দিচ্ছেন।”

তিনি আরো বলেন, “এখন পর্যন্ত ওইসব জায়গায় উপস্বাস্থ্য কেন্দ্র নির্মাণের প্রস্তাব পাঠানো হয়নি বলে আমরা জানতে পেরেছি। আগামীতে ওই ইউনিয়নগুলোতে উপস্বাস্থ্য কেন্দ্র নির্মাণের প্রস্তাব পাঠানো হবে। বর্তমান সরকার স্বাস্থ্যখাত বিষয়ে বেশ উৎপর। আশা করছি, সংকট নিরসন হবে।”

ঢাকা/মেহেদী/মাসুদ

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • বাস্তবে নেই, কাগজে-কলমেই আছে নাচোলের ৩ উপস্বাস্থ্য কেন্দ্র