কর্মজীবী তানজিলা মোস্তাফিজের সন্তানের বয়স ১ বছর ১১ মাস। অনেক ছোটাছুটি করার পর রাজধানীর আগারগাঁওয়ে জাতীয় গ্রন্থাগার ভবনে থাকা সরকারি দিবাযত্ন কেন্দ্রে সন্তানের জন্য একটি আসন পান তিনি।

এ দিবাযত্ন কেন্দ্রটি মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন মহিলাবিষয়ক অধিদপ্তরের ‘২০টি শিশু দিবাযত্ন কেন্দ্র স্থাপন’ প্রকল্পের অধীনে পরিচালিত হয়। আসন পেতে মা–বাবার করা ৫৫০টি আবেদন এখন অপেক্ষমাণ তালিকায় রয়েছে।

এই প্রকল্পের মেয়াদ গত ৩০ জুন শেষ হয়ে গেছে। কেন্দ্রটির কর্মকর্তা–কর্মচারীরা বলেন, আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকল্প বন্ধের ঘোষণা দেওয়া হয়নি। কাজেই মা–বাবারা কেন্দ্রে সন্তান রাখতে পারছেন। তবে কর্মীরা বেতন পাচ্ছেন না।

তানজিলা বলেন, তাঁর সন্তান এ দিবাযত্ন কেন্দ্রে থাকতে পছন্দ করে। কেন্দ্রটি বাসার কাছে, নিরাপদ, খরচও কম। বেসরকারি দিবাযত্ন কেন্দ্রে খরচ অনেক বেশি। তাই কেন্দ্রটি বন্ধ হয়ে গেলে সন্তানকে কোথায় রাখবেন, এ নিয়ে তিনি বেশ দুশ্চিন্তায় ভুগছেন।

তথ্য আপারা শিশু সন্তানদের নিয়েও আন্দোলন করেছে। রোদ-বৃষ্টি ছাপিয়ে রাত-দিন ফুটপাতে এসব নারীদের অবস্থান কর্মসূচি অনেককেই নাড়া দিয়েছে।

শুধু এই কেন্দ্রের কর্মীরাই নন।  মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন কয়েকটি প্রকল্পের কর্মীরা বছরজুড়ে রয়েছে দুশ্চিন্তায়। নারী নির্যাতন প্রতিরোধে ‘মাল্টিসেক্টরাল প্রোগ্রাম’ ও ‘তথ্য আপা: তথ্য যোগাযোগপ্রযুক্তির মাধ্যমে নারীদের ক্ষমতায়ন’ প্রকল্প, জয়িতা ফাউন্ডেশন পরিচালিত রাপা প্লাজায় ‘জয়িতা বিপণনকেন্দ্র ও জয়িতা ফুডকোর্ট প্রকল্পে আড়াই হাজারের বেশি কর্মকর্তা ও কর্মচারী রয়েছেন। তাঁদের মধ্যে ১ হাজার ৭০০ জনের বেশি নারী। কাজ হারিয়ে, বেতন না পেয়ে তারা পড়েছেন বিপাকে।

মন্ত্রণালয় কী বলছে

এ বিষয়ে নাম প্রকাশ না করার শর্তে মন্ত্রণালয়ের একাধিক কর্মকর্তা বলেন, কীভাবে গ্রহণ করলে প্রকল্পগুলো টিকে থাকবে, প্রকল্পের উদ্দেশ্য পূরণ হবে, সেসব দিকে কোনো চিন্তা করা হয় না। ফলে হুটহাট প্রকল্প নেওয়া হয়। সেসব প্রকল্পে নতুন করে জনবল নেওয়া হয়। পুরোনো প্রকল্পের জনবল প্রশিক্ষণ ও কাজের মাধ্যমে দক্ষতা অর্জন করলেও তাঁদের চাকরির নিশ্চয়তা তৈরি হয় না। কোনো ক্ষেত্রে দাতাগোষ্ঠী নিজেরাই একেকটা প্রকল্প প্রস্তাব করে। নিজেরাই পরামর্শক হিসেবে নিযুক্ত হয়। ফলে প্রকল্পের সংখ্যা বাড়ে, কিন্তু নারী–শিশুর উন্নয়নে কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য পূরণ হয় না।

নতুন জয়িতা টাওয়ারে যদি আমাদের পণ্যগুলো নেয়, তাহলে হয়তো চলতে পারব। এখন চলতে খুব কষ্ট হচ্ছে।শারমিন রহমান, রাপা প্লাজার জয়িতার উদ্যোক্তা।

কর্মকর্তাদের মতে, কোনো কোনো প্রকল্পের প্রস্তাবও ত্রুটিযুক্ত। যেমন তথ্য আপা প্রকল্পের মূল উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবে (ডিপিপি) না থাকলেও প্রথম সংশোধনীতে চাকরি রাজস্ব খাতে নেওয়ার উল্লেখ ছিল। দ্বিতীয় সংশোধনীতে সেটা বাদ দেওয়া হয়। এর আগেই প্রায় দেড় হাজার নারীকে নিয়োগ দেওয়া হয়।

শিশু দিবাযত্ন কেন্দ্রে বেতন বন্ধ

‘২০টি শিশু দিবাযত্ন কেন্দ্র স্থাপন’ প্রকল্পের কাজ শুরু হয় ২০১৬ সালে। শুরুতে ১১টি কেন্দ্র স্থাপনের কথা ছিল। পরে ২০১৮ সালে তা বাড়িয়ে ২০টি করা হয়। এর মধ্যে ঢাকায় ১১টি, ঢাকার বাইরে ৯টি। এসব দিবাযত্ন কেন্দ্রে ১ হাজার ১০০টির বেশি শিশু রয়েছে। প্রকল্পের ব্যয় ৮৪ কোটি টাকা।

দুই দফায় প্রকল্পের মেয়াদ বাড়িয়ে ২০২৫ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত করা হয়। ২০১৮–১৯ অর্থবছরে এসব কেন্দ্র থেকে বছরে আয় হয়েছিল প্রায় ৭ লাখ টাকা। ২০২৪–২৫ অর্থবছরে আয় বেড়ে এক কোটি টাকা হয়েছে। জনবল রয়েছে ২৪৩ জন। তাঁদের মধ্যে নারী কমপক্ষে ১৭০ জন।

রাজধানীর রাপা প্লাজায় ১৪ বছর ধরে চলা জয়িতার কার্যক্রম গত ১৩ মে বন্ধ হয়ে যায়। কার্যক্রম চালিয়ে যেতে আবেদন উচ্চ আদালতে খারিজ হয়ে গেলে ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে রাপা প্লাজায় জয়িতা বিপণনকেন্দ্র ও ফুড কোর্ট বন্ধের নোটিশ টানিয়ে দেওয়া হয়।

মেয়াদ পেরিয়ে যাওয়া এসব কেন্দ্রের কর্মকর্তা–কর্মচারীরা এখন বেতন পাচ্ছেন না। তাঁদের একজন নাম প্রকাশ না করে বললেন, ‘আমরা বাচ্চাদের সঙ্গে সময় কাটাই। ওদের দেখভাল করি। কিন্তু চাকরি নিয়ে দুশ্চিন্তার কারণে নিজেদেরই মানসিক অবস্থা ভালো না।’ তিনি আরও বলেন, ‘নতুন করে ৬০টি শিশু দিবাযত্ন কেন্দ্রের প্রকল্প নেওয়া হচ্ছে। সেখানে নতুন করে নিয়োগ দেওয়া হবে। আমরা চাকরি পাব কিনা, এ কেন্দ্রগুলো থাকবে কি না, সে সম্পর্কে এখনো মন্ত্রণালয় কিছু জানায়নি।’

সরকারের পরবর্তী পদক্ষেপ জানতে চাইলে প্রকল্প পরিচালক অতিরিক্ত সচিব শবনম মোস্তারী বলেন, ‘আশা করা যায়, এ প্রকল্পের শিশুসেবা কার্যক্রম অব্যাহত রাখার বিষয়ে কর্তৃপক্ষ যথাযথ ব্যবস্থা নেবে। প্রকল্পটি কর্মজীবী নারীদের কাছে সমাদৃত হয়েছে। তাই একই মডেলে সব সরকারি শিশু দিবাযত্ন কেন্দ্র পরিচালনার পরামর্শ দেন তিনি।

আমরা বাচ্চাদের সঙ্গে সময় কাটাই। ওদের দেখভাল করি। কিন্তু চাকরি নিয়ে দুশ্চিন্তার কারণে নিজেদেরই মানসিক অবস্থা ভালো না।কর্মী, দিবাযত্ন কেন্দ্র‘তথ্য আপা প্রকল্পের’ কর্মীরা জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে আমরণ অনশন কর্মসূচি পালন করেন। গত ৩০ মে তোলা.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: দ ব যত ন ক ন দ র প রকল প র কর মকর ত র কর ম কর ম র পর চ ল সন ত ন সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

ইসির কর্মকর্তাদের রিটার্নিং কর্মকর্তা করার প্রস্তাব বিএনপির

আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) নিজস্ব কর্মকর্তাদের রিটার্নিং কর্মকর্তা ও সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তার দায়িত্ব দেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছে বিএনপি। আজ বুধবার নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে সংলাপে দলটির পক্ষ থেকে এই প্রস্তাব দেওয়া হয়।

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপ করছে ইসি। এর অংশ হিসেবে আজ দুপুরে নির্বাচন ভবনে বিএনপি, নাগরিক ঐক্য, গণ অধিকার পরিষদ, বাসদ (মার্কসবাদী) ও রিপাবলিকান পার্টির সঙ্গে সংলাপ করে ইসি।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আব্দুল মঈন খানের নেতৃত্বে তিন সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল সংলাপে অংশ নেয়। সেখানে ইসির নিজস্ব কর্মকর্তাদের রিটার্নিং ও সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তার দায়িত্ব দেওয়ার কথা বলেন আব্দুল মঈন খান।

সাধারণত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ৬৪ জেলার জেলা প্রশাসক (ডিসি) এবং ঢাকা ও চট্টগ্রামের বিভাগীয় কমিশনারেরা রিটার্নিং কর্মকর্তার দায়িত্ব পালন করেন। উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা (ইউএনও) এবং ক্ষেত্রবিশেষে নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তারা সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তার দায়িত্ব পালন করেন। এর আগেও বিভিন্ন নির্বাচনের আগে ইসির নিজস্ব কর্মকর্তাদের এই দায়িত্ব দেওয়ার দাবি উঠেছিল।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আব্দুল মঈন খান আজকের সংলাপে বলেন, নির্বাচনে কয়েক লাখ নির্বাচন কর্মকর্তা প্রয়োজন। ইসির এত লোকবল নেই। কিন্তু ইসির যতটুকু জনবল আছে তার সর্বোচ্চ ব্যবহার করতে হবে। ৩০০ আসনে সরকারের কাছ থেকে রিটার্নিং কর্মকর্তা ও সহাকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা ধার করে আনা হয়। ইসির এটুকু জনবল আছে।

ইসির উদ্দেশে বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘একবার সাহস করে এই সিদ্ধান্তটা নেন যে রিটার্নিং অফিসার আপনাদের নির্বাচন কমিশন থেকে থাকবে। অ্যাসিস্ট্যান্ট রিটার্নিং অফিসার আপনাদের নির্বাচন কমিশনের ডেডিক্যাটেড লোকেরা হবে। এই একটা সিদ্ধান্তের মাধ্যমে বাংলাদেশের রাজনীতিতে গুণগত পরিবর্তন আসবে।’

আব্দুল মঈন খান বলেন, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে চারটি বোতাম আছে। একটি হচ্ছে ডিসি, একটি হচ্ছে এসপি, একটি হচ্ছে ইউএনও আরেকটি হচ্ছে ওসি। এ চারটি বোতাম টিপা হয় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে, এরপর ৩০০ আসনে নির্বাচনের ফলাফল বের হয়ে আসে। এ পদ্ধতি থেকে বের হয়ে আসতে হবে। তিনি এখানে ইসিকে শক্ত ভূমিকা নেওয়ার আহ্বান জানিয়ে বলেন, তাঁরা ইসিকে সব সহায়তা করবেন। কিন্তু ইসিকে শক্ত থাকতে হবে। সরকারের কাছে ইসি নতজানু থাকলে নিরপেক্ষ নির্বাচন করা সম্ভব হবে না।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ইসির কর্মকর্তাদের রিটার্নিং কর্মকর্তা করার প্রস্তাব বিএনপির