বিশ্বরাজনীতিতে ‘ডায়াস্পোরা’ অর্থাৎ প্রবাসী জনগোষ্ঠী এখন একটি খুব গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক শক্তি। শব্দটির উৎপত্তি প্রাচীন গ্রিক ‘ডিএসপাইরেইন’ থেকে, যার অর্থ ছড়িয়ে যাওয়া বা বিচ্ছুরণ; কিন্তু এই ছড়িয়ে যাওয়া শুধু ভৌগোলিক নয়; এর সঙ্গে জড়িয়ে থাকে স্মৃতি, আবেগ, পরিচয় এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ—রাজনৈতিক প্রভাব।

সমাজবিজ্ঞানী উইলিয়াম সাফরান তাঁর বিখ্যাত প্রবন্ধ ‘ডিএসপোরাস ইন মডার্ন সোসাইটিস’–এ বলেন, ডায়াস্পোরা হলো এমন জনগোষ্ঠী, যারা দেশের বাইরে থাকলেও ‘হোমল্যান্ড’ বা মাতৃভূমিকে মন থেকে কখনো আলাদা করতে পারে না। তাদের অনুভূতি, ভয়–আশঙ্কা, রাজনৈতিক মূল্যবোধ—সবই দেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিকে প্রভাবিত করতে পারে।

এই ধারণা সবচেয়ে স্পষ্টভাবে বোঝা যায় ইহুদি ডায়াস্পোরার ইতিহাসে। হাজার বছরের যাত্রায় ইহুদিরা বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে পড়ে; কিন্তু বিংশ শতকে ইউরোপের বহু ইহুদি, যাদের বলা হয় ‘আশকেনাজি’—আধুনিক প্যালেস্টাইনে এসে বসতি স্থাপন করলে নতুন এক রাজনৈতিক বাস্তবতা তৈরি হয়।

আরও পড়ুনপ্রবাসীদের মেধা ও দক্ষতাকে সরকার কীভাবে ব্যবহার করবে৩১ আগস্ট ২০২৪

ইতিহাসবিদ শ্লোমো স্যান্ড তাঁর আলোচিত বই দি ইনভেনশন অব টি জুইশ পিপল–এ দেখান যে ইউরোপের এই ইহুদিদের একটি বড় অংশ ছিল বিভিন্ন অঞ্চলে সময়ের ধারায় ধর্মান্তরিত হওয়া বা সাংস্কৃতিকভাবে পুনর্গঠিত কমিউনিটি (সম্প্রদায়)। অন্যদিকে মধ্যপ্রাচ্যের স্থানীয় ইহুদি, যাদের বলা হয় ‘মিজরাহি’, তারা শত শত বছর মুসলিম ও খ্রিষ্টানদের সঙ্গে সহাবস্থানে বাস করত।

ফলে ইসরাইল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পর দেখা দেয় ‘পুরোনো বনাম নতুন ইহুদি’ দ্বন্দ্ব। এই বিভাজন নিয়ে গভীর বিশ্লেষণ করেছেন গবেষক এলা শোহাত তাঁর প্রবন্ধ ‘দি ইনভেনশন অব দ্য মিজরাহিম’–এ। তিনি দেখিয়েছেন, কীভাবে ইউরোপীয় ইহুদিরা রাষ্ট্রের মূল ক্ষমতাকেন্দ্র হয়ে ওঠে আর স্থানীয় ইহুদিরা সাংস্কৃতিক–রাজনৈতিকভাবে প্রান্তিক হয়ে পড়ে।

এই ভেতরের বিভাজন শুধু সামাজিক মতবিরোধ নয়; এটি রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা, সামরিক সিদ্ধান্ত, পররাষ্ট্রনীতি—সবকিছুতে প্রভাব ফেলে। রাশিদ খালিদি তাঁর দ্য হানড্রেড ইয়ার্স’ ওয়ার অন প্যালেস্টিন বইয়ে দেখান, কীভাবে ইউরোপীয় ডায়াস্পোরার রাজনৈতিক ভয়–আশঙ্কা ও যুদ্ধ–মনোভাব ইসরাইল রাষ্ট্রের নীতিনির্ধারণে প্রধান শক্তি হয়ে দাঁড়ায়।

এই উদাহরণগুলো একটি সাধারণ সত্য দেখায়, ডায়াস্পোরা কোনো রাষ্ট্রের জন্য সম্পদও হতে পারে, আবার ভুল ব্যবহারে তা রাষ্ট্রের ভেতরে গভীর বিভাজন, দ্বন্দ্ব ও অস্থিরতার উৎসও হতে পারে। কারণ, ডায়াস্পোরার রাজনৈতিক অভিজ্ঞতা ও মানসিকতা অনেক সময় দেশের ভেতরের বাস্তবতার সঙ্গে সংগতিপূর্ণ হয় না।

ডায়াস্পোরার রাজনৈতিক প্রভাবের উদাহরণ

ইহুদি ডায়াস্পোরার উদাহরণ দেখায় যে দূরবর্তী জনগোষ্ঠীর রাজনৈতিক স্মৃতি স্থানীয় বাস্তবতাকে ছাপিয়ে যেতে পারে। এই একই প্রশ্ন আরও তীব্রভাবে দেখা যায় আফ্রিকার বহু দেশে। ডায়াস্পোরাকে অনেক সময় উন্নয়নের হাতিয়ার হিসেবে দেখা হয়—রেমিট্যান্স, সামাজিক বিনিয়োগ, শিক্ষা বা মানবিক সহায়তার মাধ্যমে। কিন্তু গবেষণা দেখায়, কিছু কিছু ক্ষেত্রে এই ডায়াস্পোরা-অর্থায়ন উল্টোভাবে সংঘাতকে দীর্ঘায়িত করেছে।

পল কলিয়ার তাঁর বহুল আলোচিত বই দ্য বটম বিলিয়ন–এ দেখিয়েছেন, সিয়েরা লিওন, লাইবেরিয়া বা কঙ্গোর মতো দেশে–বিদেশে থাকা ডায়াস্পোরা বিভিন্ন চ্যারিটি, কালচারাল ইভেন্ট বা ‘হোমটাউন অ্যাসোসিয়েশন’-এর মাধ্যমে তহবিল পাঠালেও সেই অর্থের একটি অংশ সশস্ত্র গোষ্ঠীর হাতে চলে যায়। কলিয়ারের ভাষায়, ‘ডায়াস্পোরা অ্যাক্টস অ্যাজ আ সোর্স অব ফাইন্যান্স ফর রেবেলিয়ন’ অর্থাৎ বিদেশে থাকা লোকেরা আবেগ, প্রতিশোধ বা জাতিগত পরিচয়ের টানে যে অর্থ পাঠায়, তা কখনো কখনো ঘরোয়া রাজনীতিকে আরও সহিংস করে তোলে।

এই একই যুক্তি পাওয়া যায় ইভ দে ওল্ডারের সম্পাদিত বই রেমিট্যান্স অ্যান্ড কনফ্লিক্ট –এ। গবেষণা বলছে, আফ্রিকার কিছু অঞ্চলে ডায়াস্পোরার পাঠানো অর্থ স্থানীয় বাস্তবতা থেকে অনেক দূরের ‘কল্পিত রাজনীতি’ (ইমাজিনেড পলিটিকস)–এর ওপর ভিত্তি করে ব্যয় হয়, যেখানে প্রবাসীরা মনে করেন, তারা এখনো স্থানীয় ক্ষমতার লড়াইয়ের অংশ।

ফলে যুদ্ধক্ষেত্রে থাকা সশস্ত্র গোষ্ঠী প্রায়ই ডায়াস্পোরার আবেগকে ব্যবহার করে; ‘দেশকে বাঁচাতে সাহায্য করুন’, ‘জাতিকে রক্ষা করুন’—এ ধরনের প্রচারণা চালিয়ে অর্থ সংগ্রহ করে। বাস্তবে এই অর্থ যুদ্ধকে লম্বা করে, প্রতিদ্বন্দ্বী গোষ্ঠীগুলোর মধ্যে সংঘর্ষ বাড়ায় এবং সাধারণ মানুষের জীবনে ভয়াবহ অস্থিতিশীলতা তৈরি করে।

এই উদাহরণগুলো দেখায় যে ডায়াস্পোরা–অর্থায়ন সব সময় উন্নয়ন বা স্থিতিশীলতা আনে না; বরং দূরবর্তী দেশ থেকে পাঠানো অর্থ আবেগ এবং রাজনৈতিক কল্পনা স্থানীয় সমাজের বাস্তবতা থেকে যখন বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে, তখন সেগুলো সার্বভৌম রাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে সংঘাত, বিভাজন এবং নতুন ক্ষমতার কেন্দ্র গঠনে বড় ভূমিকা রাখতে পারে। ডায়াস্পোরা তখন আর শুধু প্রবাসী জনগোষ্ঠী থাকে না, তারা পরিণত হয় একটি ‘এক্সটার্নাল পলিটিক্যাল অ্যাক্টর’-এ, যারা অনেক সময় নিজের দেশের বাস্তবতা না দেখেও রাজনীতিকে প্রভাবিত করতে শুরু করে।

ডায়াস্পোরা যখন উন্নয়নের শক্তি হয়ে ওঠে 

ডায়াস্পোরা–অর্থায়ন বা রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ যদিও অনেক দেশের জন্য সমস্যা তৈরি করেছে, তবু পৃথিবীর কিছু দেশ সম্পূর্ণ বিপরীত অভিজ্ঞতা দেখিয়েছে। বিশেষ করে চীন ও ভারত—দুটি দেশই দেখিয়েছে যে ডায়াস্পোরা কমিউনিটিকে যদি রাজনীতির বদলে উন্নয়ন, প্রযুক্তি ও দক্ষতার ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয়, তাহলে সে ডায়াস্পোরা জাতির জন্য বিশাল সম্পদে পরিণত হতে পারে।

এ ক্ষেত্রে ভারতের উদাহরণ সবচেয়ে বেশি আলোচিত। ব্যাঙ্গালুরুর ‘ইন্ডিয়ান সিলিকন ভ্যালি’ গঠনের পেছনে মূল ভূমিকা ছিল বিদেশে থাকা ভারতীয় ডায়াস্পোরার। যুক্তরাষ্ট্রের এমআইটি, স্টানফোর্ড বা সিলিকন ভ্যালিতে গড়ে ওঠা ভারতীয় প্রকৌশলীরা ১৯৯০ সালের পর দেশে ফিরে ‘ব্রেন গেইন’ তৈরি করেন।

দেবেশ কাপুর তাঁর ডায়াস্পোরা, ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড ডেমোক্রেসি বইয়ে এই প্রবণতাকে ব্যাখ্যা করেছেন। তিনি দেখান যে ভারত তার ডায়াস্পোরাকে খুব কৌশলগতভাবে ব্যবহার করেছে; তাদের রাজনীতির কেন্দ্রবিন্দুতে আনা হয়নি; বরং অর্থনীতি, উদ্যোক্তা–সংস্কৃতি, আইসিটি, ফিন্যান্স এবং উচ্চশিক্ষায় সুযোগ সৃষ্টি করা হয়েছে।

ভারত সরকার ডায়াস্পোরাকে ‘ওভারসিস সিটিজেনস অব ইন্ডিয়া’ (ওসিআই) স্ট্যাটাস দিয়েছে, যা তাদের বিশেষ অর্থনৈতিক সুযোগ দেয়; কিন্তু রাজনৈতিক ক্ষমতা বা ভোটাধিকার দেয় না। অর্থাৎ ডায়াস্পোরার সঙ্গে সম্পর্ক শক্তিশালী করা হয়েছে, কিন্তু দেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে তাদের প্রবেশ সীমিত রাখা হয়েছে।

২০২৪ সালের গণ-অভ্যুত্থানের পর গঠিত অন্তর্বর্তী সরকারের একটি প্রবণতা দেখা গেছে; সেটি হলো রাষ্ট্রীয় নীতিনির্ধারণের বহু গুরুত্বপূর্ণ কাঠামোতে বিদেশে বসবাসকারী বা দ্বৈত নাগরিকত্বধারী বিশেষজ্ঞদের অন্তর্ভুক্তি। এর ফলে সরকারের প্রায় সব ক্ষেত্রেই ডায়াস্পোরার প্রভাব দৃশ্যমানভাবে বেড়েছে।

চীনের অভিজ্ঞতাও একই রকম। ১৯৮৯ সালের তিয়েনআনমেন স্কয়ার ঘটনার পর বহু চীনা ছাত্র পশ্চিমা দেশগুলোতে চলে যায়। সেখানেই তারা উচ্চশিক্ষা, প্রযুক্তি ও গবেষণার সঙ্গে যুক্ত হয়। রাজনীতি থেকে দূরে থাকলেও তারা পরবর্তী সময়ে চীনে ফিরে এসে অর্থনীতি, প্রযুক্তি ও গবেষণাকে বদলে দেয়।

লিউ হং এবং এলস ভ্যান ডংগেন তাঁদের গবেষণা চায়না’স ডায়স্পোরা পলিসিস অ্যাজ অ্যা নিউ মুড অব ট্রানজিশনাল গভর্ন্যান্স –এ দেখান যে চীনও ভারতের মতো ডায়াস্পোরাকে অর্থনৈতিক উন্নয়নের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করেছে; কিন্তু তাদের রাজনীতির বাইরে রেখেছে। ডায়াস্পোরা চীনে বিনিয়োগ, প্রযুক্তি স্থানান্তর, উদ্যোক্তা নেটওয়ার্ক এবং বিশ্ববিদ্যালয় গবেষণায় বিপুল ভূমিকা রাখলেও তারা কখনো জাতীয় রাজনীতিকে প্রভাবিত বা নিয়ন্ত্রণ করতে পারেনি। চীনা সরকারের নীতিটি স্পষ্ট ছিল—ডায়াস্পোরা হবে উন্নয়নের সঙ্গী, রাজনীতির খেলোয়াড় নয়।

বাংলাদেশে ডায়াস্পোরার নতুন ভূমিকা

২০২৪ সালের গণ-অভ্যুত্থানের পর গঠিত অন্তর্বর্তী সরকারের একটি প্রবণতা দেখা গেছে; সেটি হলো রাষ্ট্রীয় নীতিনির্ধারণের বহু গুরুত্বপূর্ণ কাঠামোতে বিদেশে বসবাসকারী বা দ্বৈত নাগরিকত্বধারী বিশেষজ্ঞদের অন্তর্ভুক্তি। এর ফলে সরকারের প্রায় সব ক্ষেত্রেই ডায়াস্পোরার প্রভাব দৃশ্যমানভাবে বেড়েছে।

ভারত ও চীনের মতো প্রবাসীরা উন্নয়ন ও প্রযুক্তির ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখলে সেটি ইতিবাচক হিসেবেই বিবেচনায় নেওয়া হয়েছে; কিন্তু বাংলাদেশের ক্ষেত্রে বিতর্ক দেখা দিয়েছে তখন, যখন ডায়াস্পোরার ভূমিকা উন্নয়ন–পরামর্শের বাইরে চলে গিয়ে রাষ্ট্রের সবচেয়ে সংবেদনশীল রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত–প্রক্রিয়ার কেন্দ্রে অবস্থান নিয়েছে।

ফলে জোরালো প্রশ্ন উঠেছে, রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত কি রাজনৈতিক দল, নাগরিক সমাজ ও আইন বিশেষজ্ঞদের পূর্ণ সম্মতি ছাড়া নেওয়া যেতে পারে? এটি কোনো ব্যক্তির বিরুদ্ধে অভিযোগ নয়; বরং গণতান্ত্রিক নীতি—অংশগ্রহণ ও স্বচ্ছতার প্রশ্ন। এর ফলে রাজনৈতিক অঙ্গনে একটি যৌক্তিক প্রশ্ন উঠেছে—রাষ্ট্রের সংস্কার–পরিকল্পনায় কি ডায়াস্পোরার চিন্তার কোনো প্রতিফলন কাজ করছে, নাকি এটি কেবল ঘটনাক্রম?

আরও পড়ুননেতিবাচক প্রচারণা মোকাবিলায় ‘অভিবাসী কূটনীতি’ কতটা কাজ করবে২১ সেপ্টেম্বর ২০২২

প্রবাসী বিশেষজ্ঞদের ভূমিকা নিয়ে বিতর্ক আরও গভীর হয়েছে যখন দেখা যায়, তাঁদের মধ্যে কেউ কেউ দ্বৈত নাগরিক এবং তাদের পরিবার বিদেশে থাকে; কিন্তু তাঁরা দায়িত্ব পালন করছেন বাংলাদেশের মূল রাষ্ট্রীয় সিদ্ধান্ত–যন্ত্রের কেন্দ্রে। নীতিনির্ধারণে দ্বৈত নাগরিকদের ভূমিকা নিয়ে টেরেন্স লিয়ন্স এবং পিটার মান্দাভিল পলিটিকস ফ্রম আফার: ট্রান্স ন্যাশনাল ডায়াস্পোরা অ্যান্ড নেটওয়ার্কস গবেষণায় দেখিয়েছেন, সিদ্ধান্ত গ্রহণে অনেক সময় তাদের মধ্যে ‘ডুয়াল লয়্যালটি ডিলেমা’ (দ্বৈত আনুগত্যের বিভ্রম) তৈরি হতে পারে; একদিকে জন্মভূমির আবেগ। অন্যদিকে নাগরিকত্বপ্রাপ্ত দেশের প্রতি দায়বদ্ধতা।

এই প্রশ্নগুলো স্বাভাবিক গণতান্ত্রিক প্রশ্ন। এসব প্রশ্ন তোলা মানে কাউকে দেশবিরোধী বলা নয়; বরং তাদের কর্মকাণ্ডের স্বচ্ছতার দাবি করা।

প্রবাসী শ্রমিকদের রাজনৈতিক ঝুঁকি

বাংলাদেশের প্রবাসীদের বড় অংশই মধ্যপ্রাচ্য ও মালয়েশিয়ায় থাকা পরিশ্রমী শ্রমিক। আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (আইএলও মাইগ্রেশন রিপোর্ট ২০২৩) বলছে, এই দেশগুলোর কোনোটি প্রবাসীদের রাজনৈতিক কার্যক্রম সহ্য করে না। রাজনীতি করলে ভিসা বাতিল, কালো তালিকাভুক্তি, শ্রমবাজার বন্ধ—এসব ঝুঁকি রয়েছে।

 তাই একটি প্রশ্ন খুবই যৌক্তিক—আমাদের কি প্রবাসীদের ভোটাধিকারের মতো রাজনৈতিক দাবি জরুরি, নাকি তাঁদের নিরাপদ চাকরি ও রেমিট্যান্সের ধারাবাহিকতা বেশি গুরুত্বপূর্ণ? যদি রাজনৈতিক অস্থিরতা ছড়িয়ে পড়ে এবং মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো মনে করে বাংলাদেশি শ্রমিকেরা রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়ছেন—তারা হয়তো ভিসা বন্ধ করে দেবে। সে ক্ষেত্রে ক্ষতি হবে আমাদেরই।

বিএনপি এনসিপি জামায়াত ও রাজনৈতিক হিসাব

বাংলাদেশের প্রধান বিরোধী দল বিএনপি শুরুতে এই বিষয়গুলো নিয়ে খুব জোরালো প্রশ্ন তোলেনি। এখন যখন জুলাই সনদ ও গণভোট নিয়ে রাজনৈতিক অচলাবস্থা তৈরি হয়েছে, বিভিন্ন দলের মধ্য বিভাজন দেখা যাচ্ছে, তখন অনেকেই মনে করছেন, শুরুতেই যদি রাজনৈতিক দলগুলো বিষয়টি গুরুত্ব দিতো, তাহলে পরিস্থিতি এত জটিল হতো না।

আরেকটি বিষয়—এই অস্থিরতার ফলে লাভবান হচ্ছে কারা? অনেক বিশ্লেষকের মতে, এই বিশৃঙ্খলায় বিএনপি দুর্বল হচ্ছে, নতুন দল এনসিপি দিশাহীন হয়ে পড়েছে এবং পুরোনো শক্তি আওয়ামী লীগ আবার মাঠে দৃশ্যমান হতে শুরু করেছে।

পরিশেষে চব্বিশের গণ–অভ্যুত্থানের অন্যতম আকাঙ্ক্ষা ছিল—স্বচ্ছতা, জবাবদিহি ও দ্রুত নির্বাচন; কিন্তু ঐকমত্য কমিশনকেন্দ্রিক জটিলতা এবং আদর্শিক টানাপোড়েনে সেই প্রত্যাশার সুফল এখনো স্পষ্ট হয়নি। পরিবর্তনের জায়গা আবার পুরোনো শক্তির দখলে যাচ্ছে—এ ধারণা মানুষের মধ্যে বাড়ছে। তাই প্রয়োজন উন্নয়নমুখী ডায়াস্পোরাকে স্বাগত জানানো; কিন্তু রাষ্ট্রের রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত প্রক্রিয়া স্থানীয় নাগরিকের হাতেই রাখতে হবে। কারণ ডায়াস্পোরা সম্পদ হলেও রাষ্ট্রের মালিকানা শেষ পর্যন্ত দেশে বসবাস করা সাধারণ নাগরিকেরই।

মোহাম্মদ জালাল উদ্দিন শিকদার লেখক, শিক্ষক ও গবেষক। রাষ্ট্র ও সমাজবিজ্ঞান বিভাগ, নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়

মতামত লেখকের নিজস্ব

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ড য় স প র র র জন ত ক ব যবহ র কর প রব স দ র দ র র জন ত র ণ র জন ত অন ক সময় র জন ত ত র জন ত র জনগ ষ ঠ সরক র র ব স তবত ব ভ জন র একট ক ষমত ইউর প

এছাড়াও পড়ুন:

জকসু নির্বাচন: কেন্দ্রীয় ও হল সংসদে ২৪৯ মনোনয়ন জমা, চলছে বাছাই

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় শিক্ষার্থী সংসদ (জকসু) ও হল শিক্ষার্থী সংসদ নির্বাচনে মনোনয়নপত্র জমা নেওয়ার সময়সীমা শেষ হয়েছে। কেন্দ্রীয় ও হল সংসদের মোট ২৪৯ জন প্রার্থী মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন বলে জানিয়েছে নির্বাচন কমিশন।

বুধবার (১৯ নভেম্বর) ও বৃহস্পতিবার (২০ নভেম্বর) মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাই শেষে রবিবার (২৩ নভেম্বর) প্রাথমিক প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করবে কমিশন।

আরো পড়ুন:

জকসু: জুলাই আন্দোলনে গুলিবিদ্ধ অনিকের সম্মানে পদ খালি রাখল ছাত্রশক্তি

জকসু: প্যানেল ঘোষণাতেই আচরণবিধি লঙ্ঘন শিবির-ছাত্রশক্তির

বুধবার (১৯ নভেম্বর) প্রধান নির্বাচন কমিশনার অধ্যাপক মোস্তফা হাসান জানান, কেন্দ্রীয় শিক্ষার্থী সংসদের বিভিন্ন পদে ২১১ জন প্রার্থী মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। আর হল শিক্ষার্থী সংসদে জমা পড়েছে ৩৮টি মনোনয়ন।

নওয়াব ফয়জুন্নেসা চৌধুরানী হলের প্রাধ্যক্ষ আঞ্জুমান আরা বলেন, “হল সংসদের মনোনয়ন যাচাই-বাছাই চলছে। জমা দেওয়া ৩৮টি ফরমের মধ্যে একজনের প্রার্থিতা বাতিল হতে পারে, কারণ তার নাম ভোটার তালিকায় নেই। প্রাথমিক তালিকা প্রকাশ করা হবে আগামী রবিবার (২৩ নভেম্বর)।”

জকসুর তফসিল অনুযায়ী, ১২ নভেম্বর চূড়ান্ত ভোটার তালিকা প্রকাশ করা হয়। ১৭ নভেম্বর ছিল মনোনয়নপত্র বিতরণের শেষ দিন, ১৮ নভেম্বর ছিল সংগ্রহ করা ফরম দাখিলের শেষ দিন।

১৯–২০ নভেম্বর বাছাই শেষে ২৩ নভেম্বর প্রাথমিক প্রার্থী তালিকা প্রকাশ, ২৪–২৬ নভেম্বর আপত্তি গ্রহণ ও নিষ্পত্তি, ২৭ ও ৩০ নভেম্বর ডোপ টেস্ট, ৩ ডিসেম্বর চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকা প্রকাশ, ৪, ৭ ও ৮ ডিসেম্বর মনোনয়ন প্রত্যাহার, ৯ ডিসেম্বর প্রত্যাহার তালিকা প্রকাশ, ৯–১৯ ডিসেম্বর প্রচারণা শেষে ২২ ডিসেম্বর ভোটগ্রহণ ও গণনা অনুষ্ঠিত হবে। গণনা শেষে ২২–২৩ ডিসেম্বরের মধ্যে ফলাফল ঘোষণা করা হবে।

ঢাকা/লিমন/মেহেদী

সম্পর্কিত নিবন্ধ