জুলাই গণ–অভ্যুত্থানে সংঘটিত গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার যেন প্রতিহিংসার বা প্রতীকী না হয়, তা নিশ্চিত করতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি)। পাশাপাশি এসব ঘটনায় দণ্ডপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের দেশে ফিরিয়ে আনার বিষয়ে কী আইনি ও কূটনৈতিক পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে, তা জনগণকে জানানোরও দাবি জানিয়েছে দলটি।

আজ বুধবার বিকেলে সিপিবির সভাপতি কাজী সাজ্জাদ জহির চন্দন এবং সাধারণ সম্পাদক আবদুল্লাহ ক্বাফী রতন এক বিবৃতিতে এ দাবি জানান।

বিবৃতিতে সিপিবির শীর্ষ নেতৃত্ব বলেন, ‘আমরা শুরু থেকেই বলে আসছি, অপরাধ যে–ই করুক না কেন, তাঁকে বিচারের সম্মুখীন করতে হবে এবং বিচারপ্রক্রিয়া স্বচ্ছ ও প্রশ্নমুক্ত হতে হবে। জুলাই চব্বিশের গণ–অভ্যুত্থানের হত্যাকাণ্ডের বিচারের ক্ষেত্রে সবকিছু সেরূপ আকাঙ্ক্ষা অনুসারে না হলেও, সেই বিচারের সূচনা হয়েছে এবং তার প্রথম রায় ঘোষণা হয়েছে।’

বিবৃতিতে বলা হয়, ‘প্রদত্ত রায় সম্পর্কে সর্বোচ্চ আদালতে আপিল ও তার রায় পাওয়া পর্যন্ত বিচারপ্রক্রিয়া সমাপ্ত হয়েছে বলা যায় না। বিচারপ্রক্রিয়া সম্পর্কে কেউ যেন কোনো প্রশ্ন না তুলতে পারে এবং তা যেন “প্রতিহিংসা” অথবা “ফাইল ঠিক রাখার” উদ্দেশ্যে একটি প্রতীকী পদক্ষেপ না হয়। বিচারপ্রক্রিয়ার অবশিষ্ট পর্বগুলো কোনো অজুহাতেই কোনো মহল দ্বারা যেন কোনোভাবে বাধাগ্রস্ত বা প্রভাবিত না হয়, সে বিষয়ে বিশেষভাবে হুঁশিয়ার থাকতে হবে।’

সিপিবির শীর্ষ নেতৃত্ব বলেন, ‘এই মামলার পরবর্তী ধাপগুলোই শুধু নয়, অন‍্য যারা অপরাধ করেছে, তাদের সবার বিচার সম্পন্ন করতে হবে। যেহেতু ন‍্যয়বিচার পেতে হলে দেশে গণতান্ত্রিক ব‍্যবস্থা বহাল থাকাটা অত‍্যাবশ‍্যক, তাই সব অনিশ্চয়তা দূর করার জন্য প্রতিশ্রুতি অনুসারে আগামী ফেব্রুয়ারি মাসের প্রথমার্ধে নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য অবিলম্বে নির্বাচনের সুনির্দিষ্ট তারিখ ও তফসিল ঘোষণা অপরিহার্য।’

সরকারের সব কাজের ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা না থাকলে ‘ন‍্যায়বিচারের’ বিষয়ে আন্তরিকতা প্রশ্নবিদ্ধ হয় উল্লেখ করে বিবৃতিতে বলা হয়, ‘মানুষের মনে প্রশ্ন উঠেছে যে ট্রাইব্যুনালের বিচার সরাসরি টেলিভিশনে দেখানো হলেও, চট্টগ্রাম বন্দর জাতীয় নিরাপত্তার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হলেও তার নিয়ন্ত্রণ আমেরিকাকে দিয়ে দেওয়ার লক্ষ্যে সরকার লুকোচুরির আশ্রয় নিয়ে, বলতে গেলে প্রায় সঙ্গোপনে চুক্তি স্বাক্ষর করল কেন?’

আরও পড়ুনজাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে সিপিবির মনোনয়ন ফরম বিতরণ শুরু আগামীকাল৪ ঘণ্টা আগে

সিপিবির শীর্ষ নেতৃত্ব বলেন, ‘এ থেকে মানুষের মধ্যে সন্দেহ জেগেছে যে সরকারের আসল এজেন্ডা হয়তোবা অন‍্য কিছু। ন‍্যায়বিচারের বিষয়টি তার কাছে তেমন গুরুত্বপূর্ণ নয়; ট্রাইব্যুনালের বিচার চলছে “প্রতিহিংসার” জন‍্য অথবা লোকদেখানো “প্রতীকী” পদক্ষেপ হিসেবে। এ রকম হলে বিচারপ্রক্রিয়া সম্পর্কে মানুষের আস্থাহীনতা বাড়বে এবং জুলাই গণ–অভ্যুত্থানে হত্যাকাণ্ডের শিকার ও পঙ্গুত্ব বরণকারীদের ন্যায়বিচারপ্রাপ্তি কঠিন হবে।’

আরও পড়ুনশেখ হাসিনার মৃত্যুদণ্ডের রায়ে প্রমাণিত হয়েছে কেউ আইনের ঊর্ধ্বে নয়: বাম জোট২২ ঘণ্টা আগে.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

শেখ হাসিনার ফাঁসি কার্যকরের দাবি শহীদ রাকিবুলের মা-বাবার

শেখ হাসিনার ফাঁসির রায় দ্রুত কার্যকরের দাবি জানিয়েছেন জুলাই গণঅভ্যুত্থানে শহীদ হওয়া ঝিনাইদহের রাকিবুল হোসেনের মা ও বাবা। 

জুলাই গণঅভ্যুত্থানের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধে মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ফাঁসির আদেশ দিয়েছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। এছাড়া, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালকে মৃত্যুদণ্ড এবং পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনকে ৫ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। 

আরো পড়ুন:

ফ্যাসিবাদ ও জুলুমের বিরুদ্ধে ঐতিহাসিক রায়: খেলাফত মজলিস

রায়ে খুশি শহীদ আবু সাঈদের বাবা-মা

সোমবার (১৭ নভেম্বর) দুপুরে বিচারপতি গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এই রায় ঘোষণা করেন। ট্রাইব্যুনালের অপর দুই সদস্য হলেন—বিচারপতি মো. শফিউল আলম মাহমুদ ও বিচারক মো. মোহিতুল হক এনাম চৌধুরী।

রায়ের পর সোমবার বিকেল সাড়ে ৪টায় শহীদ রাকিবুল হোসেনের বাবা আবুবকর সিদ্দিক ও মা হাফিজা খাতুন সাংবাদিকদের মাধ্যমে সংশ্লিষ্টদের কাছে উল্লিখিত দাবি জানান।

হাফিজা খাতুন বলেছেন, শেখ হাসিনা তার ক্ষমতা টিকিয়ে রাখতে নির্বিচারে গুলি চালিয়ে ছাত্র-জনতাকে হত্যার নির্দেশ দিয়েছিল। আদালতে আজ সব অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে। শহীদের মা হিসেবে আমি আজ আংশিক সন্তুষ্ট। আল্লাহর কাছে ফরিয়াদ, আল্লাহ যেন আমাকে হায়াত দেন। আমি যেন শেখ হাসিনার ফাঁসি কার্যকর দেখে যেতে পারি।

আবুবকর সিদ্দিক বলেন, শেখ হাসিনা, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আছাদুজ্জামান খান কামালসহ জুলাই গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের সঙ্গে যুক্ত সকলের ফাঁসি নিশ্চিত করতে হবে। যারা গণহত্যা চালিয়ে বিদেশে পালিয়ে গেছে, তাদের দেশে ফিরিয়ে আনতে হবে। দেশের মাটিতে ফিরিয়ে এনে তাদের ফাঁসির রায় কার্যকর করতে হবে। আজ আমরা খুশি। শেখ হাসিনা বহু মায়ের বুক খালি করেছে। একজন নারী হয়েও সে কীভাবে এত মায়ের সন্তানকে হত্যার আদেশ দিয়েছে, তা আমরা ভেবে পাই না।

ঢাকা/সোহাগ/রফিক

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • এ রায়ে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা হয়েছে
  • শেখ হাসিনার ফাঁসি কার্যকরের দাবি শহীদ রাকিবুলের মা-বাবার
  • ফ্যাসিবাদ ও জুলুমের বিরুদ্ধে ঐতিহাসিক রায়: খেলাফত মজলিস
  • মৃত্যুদণ্ড শেখ হাসিনার উপযুক্ত বিচার: আখতার হোসেন