গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের অসাধু কর্মকর্তাদের যোগসাজশে রাজধানীর ঐতিহাসিক রোজ গার্ডেন বাড়ি ক্রয়ে রাষ্ট্রের ৩৩২ কোটি টাকা ক্ষতিসাধনের অভিযোগ অনুসন্ধান শুরু করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।

আজ বুধবার রাজধানীর সেগুনবাগিচায় দুদকের প্রধান কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান সংস্থাটির উপপরিচালক (জনসংযোগ) আকতারুল ইসলাম।

আকতারুল ইসলাম বলেন, রোজ গার্ডেন নামের বাড়িটি কেনার ক্ষেত্রে গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের অসাধু যোগসাজশের কারণে রাষ্ট্রীয় কোষাগার থেকে বিপুল পরিমাণ অর্থের ক্ষতি হয়েছে। অভিযোগের সত্যতা যাচাই ও সম্পূর্ণ অনুসন্ধান কার্যক্রম পরিচালনার জন্য কর্মকর্তাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।

দুদক সূত্র জানায়, এই ভবন আলোচনায় আসে ১৯৪৯ সালে আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাকে কেন্দ্র করে। পরবর্তী সময়ে ২০১৮ আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় থাকার সময় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই বাড়িটি সরকারি ৩৩২ কোটি টাকায় ক্রয় করেন। দুদকের কাছে অভিযোগ আছে, এটি রাষ্ট্রীয় অর্থের অপচয়। এ ঘটনায় অভিযান চালিয়ে প্রাথমিক সত্যতা মেলায় এবার অনুসন্ধানে নেমেছে সংস্থাটি।

এদিকে দুদকের মামলায় আজ সকালে ধানমন্ডির বাসা থেকে গ্রেপ্তার করা হয় ইসলামী ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান ওবায়েদ উল্লাহ আল মাসুদকে। তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ, অগ্রণী ব্যাংকে দায়িত্ব পালনকালে তিনি সংশ্লিষ্টদের যোগশাজসে ১৮৯ কোটি টাকার ঋণ জালিয়াতি করেছেন।

.

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

অক্টোবরে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় ১৩৭ জন নিহত

দেশে চলতি বছরের অক্টোবরে সড়ক দুর্ঘটনা ঘটেছে ৪৮৬টি। নিহত হয়েছেন ৪৪১ জন। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি—১৩৭ জন নিহত হয়েছেন মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায়; যা মোট নিহতের ৩১ দশমিক শূন্য ৬ শতাংশ।

গত সেপ্টেম্বরে সড়ক দুর্ঘটনায় প্রতিদিন গড়ে ১৩ দশমিক ৯ জন নিহত হন। আর অক্টোবর মাসে প্রতিদিন নিহত হয়েছেন গড়ে ১৪ দশমিক ৭ জন। তবে সেপ্টেম্বরের তুলনায় অক্টোবরে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনা বাড়লেও প্রাণহানি কমেছে। সেপ্টেম্বরে ১৫১টি মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় ১৪৩ জন নিহত হন। অক্টোবরে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনা ঘটে ১৯২টি।

আজ বুধবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানিয়েছে যাত্রী নিরাপত্তা নিয়ে কাজ করা প্রতিষ্ঠান রোড সেফটি ফাউন্ডেশন। সংগঠনটি ৯টি জাতীয় দৈনিক, ৭টি অনলাইন নিউজ পোর্টাল, বিভিন্ন ইলেকট্রনিক মিডিয়া এবং নিজস্ব তথ্যের ভিত্তিতে প্রতিবেদনটি তৈরি করেছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, অক্টোবরে সড়ক দুর্ঘটনায় আহত হয়েছেন ১ হাজার ১২৮ জন। সবচেয়ে বেশি দুর্ঘটনা ঘটেছে সকালে। এই মাসে সড়কে ৯৮ জন পথচারী প্রাণ হারিয়েছেন। যানবাহনের চালক ও সহকারী নিহত হয়েছেন ৬২ জন। এ ছাড়া অক্টোবরে ১১টি নৌ দুর্ঘটনায় ১১ জন নিহত ও ৪ জন নিখোঁজ রয়েছেন। ৪৬টি রেল দুর্ঘটনায় ৪৩ জন নিহত এবং ১২ জন আহত হয়েছেন।

প্রতিবেদনে যানবাহনভিত্তিক নিহত মানুষের পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, অক্টোবরে বাস যাত্রী ৩০ জন, ট্রাক-কাভার্ড ভ্যান-পিকআপ-ট্রলির আরোহী ২৪ জন, প্রাইভেটকার ও মাইক্রোবাস আরোহী ৭ জন, থ্রি হুইলারের যাত্রী ১০৩ জন, নছিমন–ভটভটি-আলমসাধু-টমটম-মাহিন্দ্রের যাত্রী ৩৪ জন, রিকশা ও বাইসাইকেল আরোহী ৮ জন নিহত হয়েছেন।

সবচেয়ে বেশি দুর্ঘটনায় ঢাকায়

বিভাগভিত্তিক নিহতের হিসাবে দেখা গেছে, অক্টোবর মাসে ঢাকা বিভাগের সড়কে সবচেয়ে বেশি—১২১টি দুর্ঘটনায় ১১২ জন প্রাণ হারিয়েছেন, যা মোট মৃত্যুর ২৫ দশমিক ৩৯ শতাংশ। সিলেট বিভাগে সবচেয়ে কম—২৬টি দুর্ঘটনায় ২৪ জন নিহত হয়েছেন।

সকালে দুর্ঘটনা বেশি

এ ছাড়া অক্টোবর মাসে সবচেয়ে বেশি ২৬ দশমিক ৩৩ শতাংশ দুর্ঘটনা ঘটেছে সকালে। আর ২৩ দশমিক ৪৫ শতাংশ দুর্ঘটনা ঘটেছে রাতে। এ ছাড়া ভোরে ৬ দশমিক ১৭ শতাংশ, দুপুরে ১৫ দশমিক ৬৩ শতাংশ, বিকেলে ১৭ দশমিক ৬৯ শতাংশ এবং সন্ধ্যায় ১০ দশমিক ৬৯ শতাংশ দুর্ঘটনা ঘটেছে।

সড়ক দুর্ঘটনার কারণ

সড়ক দুর্ঘটনার কারণ হিসেবে রোড সেফটি ফাউন্ডেশন বলছে, ত্রুটিপূর্ণ যানবাহন, ত্রুটিপূর্ণ সড়ক, বেপরোয়া গতি, চালকদের বেপরোয়া মানসিকতা, অদক্ষতা ও শারীরিক-মানসিক অসুস্থতা, বেতন ও কর্মঘণ্টা নির্দিষ্ট না থাকা, মহাসড়কে স্বল্পগতির যানবাহন চলাচল, তরুণ ও যুবকদের বেপরোয়া মোটরসাইকেল চালানো, ট্রাফিক আইন না জানা ও না মানার প্রবণতা, দুর্বল ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা ও গণপরিবহন খাতে চাঁদাবাজির কারণে এসব দুর্ঘটনা ঘটেছে।

প্রতিরোধে সুপারিশ

সড়কে দুর্ঘটনা প্রতিরোধে সুপারিশ হিসেবে বলা হয়েছে, দক্ষ চালক তৈরির উদ্যোগ বাড়াতে হবে; চালকদের বেতন-কর্মঘণ্টা নির্দিষ্ট করতে হবে; বিআরটিএর সক্ষমতা বাড়াতে হবে; পরিবহনমালিক-শ্রমিক, যাত্রী ও পথচারীদের প্রতি ট্রাফিক আইনের বাধাহীন প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে; মহাসড়কে স্বল্পগতির যানবাহন বন্ধ করে এগুলোর জন্য আলাদা পার্শ্বরাস্তা (সার্ভিস রোড) তৈরি করতে হবে; পর্যায়ক্রমে সব মহাসড়কে রোড ডিভাইডার নির্মাণ করতে হবে; গণপরিবহনে চাঁদাবাজি বন্ধ করতে হবে; রেল ও নৌপথ সংস্কার করে সড়কপথের ওপর চাপ কমাতে হবে; টেকসই পরিবহন কৌশল প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করতে হবে এবং সড়ক পরিবহন আইন, ২০১৮ বাস্তবায়ন করতে হবে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ