কুমারখালী পৌরসভায় কিলঘুষিতে গাড়িচালকের মৃত্যুর অভিযোগ, অভিযুক্ত কর্মচারীর বাড়ি ভাঙচুর
Published: 19th, November 2025 GMT
কুষ্টিয়ার কুমারখালী পৌরসভায় বকেয়া বেতন নিয়ে তর্কাতর্কির একপর্যায়ে কর্মচারীর কিলঘুষিতে এক গাড়িচালকের মৃত্যুর অভিযোগ উঠেছে। আজ বুধবার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে পৌর ভবনের একটি কক্ষে এ ঘটনা ঘটে। পরে অভিযুক্ত ব্যক্তির বাসভবনে হামলা ও ভাঙচুর চালিয়েছে বিক্ষুব্ধ জনতা। একপর্যায়ে পৌর ভবনের প্রধান ফটক আটকে বিক্ষোভ করেন তাঁরা।
মারা যাওয়া ব্যক্তির নাম শহিদুল আলম (৫৭)। তিনি পৌর এলাকার শেরকান্দি এলাকার বাসিন্দা। অন্যদিকে অভিযুক্ত ব্যক্তির নাম ফিরোজুল ইসলাম। তিনিও পৌর এলাকার শেরকান্দির বাসিন্দা এবং পৌরসভার সার্ভেয়ার হিসেবে কর্মরত।
শহিদুলের মেয়ে সুবর্ণা খাতুন অভিযোগ করে বলেন, ‘পৌরসভায় বড় কর্মচারীদের নিয়মিত বেতন হয়। আমার বাবা ছোট কর্মচারী। তাঁর বেতন হচ্ছিল না। আজ সকালে বেতন চাইতে গেলে পৌরসভার সার্ভেয়ার মো.
পুলিশ, পৌরসভা ও স্থানীয় কয়েকজন বাসিন্দার সূত্রে জানা গেছে, প্রথম শ্রেণির কুমারখালী পৌরসভায় প্রায় ৫৭ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী আছেন। তাঁরা ৪২ মাসের বকেয়া বেতন বাবদ ১০ কোটি টাকা বেতন পাবেন। আজ সকালে বেতনের দাবিতে পৌরসভার বিভিন্ন কক্ষের দরজা বন্ধ করে দেন গাড়িচালক শহিদুল ইসলাম। ওই সময় সার্ভেয়ার ফিরোজুলের কক্ষটি (১১৫ নম্বর) বন্ধ করতে যান। তখন ফিরোজুলের সঙ্গে শহিদুলের তর্কাতর্কি হয়। একপর্যায়ে কিলঘুষি ও হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। পরে পৌরসভায় অন্য কর্মকর্তা-কর্মচারীরা মিলে ফিরোজুলকে ১১৫ নম্বর এবং শহিদুলকে ১০১ নম্বর কক্ষে আটকে রাখেন। কিছুক্ষণ পর ১০১ নম্বর কক্ষে গিয়ে তাঁরা শহিদুলকে মেঝেতে পড়ে থাকতে দেখেন। সেখান থেকে তাঁকে উদ্ধার করে সকাল ১০টার দিকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে শহিদুলকে মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসক।
কুষ্টিয়ার কুমারখালী পৌরসভার গাড়িচালক শহিদুলের মৃত্যুর খবরে জনতার বিক্ষোভ। আজ সকালে পৌরসভা চত্বরেউৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: গ ড় চ লক প রসভ র প রসভ য়
এছাড়াও পড়ুন:
ঝিনাইদহে ৩২ বছর পর ছেলে পেলেন পিতৃপরিচয়, মা পেলেন স্ত্রীর স্বীকৃতি
ঝিনাইদহে দীর্ঘ ৩২ বছর পর আদালতের মাধ্যমে নির্মাণশ্রমিক মাইদুল ইসলাম (৩২) তাঁর পিতৃপরিচয় পেয়েছেন। তাঁর মা ফরিদা খাতুনকে (৫০) দেওয়া হয়েছে স্ত্রীর মর্যাদা। এখন তাঁরা খুশি।
মাইদুল ও তাঁর মা ঝিনাইদহের কোটচাঁদপুর উপজেলার মামুনসিয়া গ্রামের বাসিন্দা। মাইদুলের বাবা পাশের বাড়ির মোহাম্মদ আলী (৫৮)। তিনি এই দীর্ঘ সময় তাঁর স্ত্রী ও ছেলের স্বীকৃতি দিতে অস্বীকার করেন। শেষে বিষয়টি আদালতে মীমাংসা হয়।
গ্রামের কয়েকজন বাসিন্দা বলেন, ফরিদার বাবার বাড়ি ঝিনাইদহ সদরে। বাবা সদর আলী মারা যাওয়ার পর তাঁর মা তিন ছেলে ও ফরিদাকে নিয়ে মামুনসিয়া গ্রামে তাঁর বোনের বাড়িতে চলে আসেন। এরপর ফরিদা তাঁর খালু আবুল হোসেনের বাড়িতেই বড় হন। এখানে প্রায় ৩২ বছর আগে পরিচয় হয় প্রতিবেশী মোহাম্মদ আলীর সঙ্গে। দুজনের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠলে একপর্যায়ে তাঁরা গোপনে বিয়ে করেন। তিনি অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়লে মোহাম্মদ আলী বিয়ের কথা অস্বীকার করেন। একসময় এ নিয়ে গ্রামে বিচার–সালিসও হয়। বিচারে মোহাম্মদ আলী তাঁকে অস্বীকার করেন।
ফরিদা খাতুনের ভাষ্য, তাঁর খালু ৩ শতাংশ জমি দিয়েছিলেন তাঁকে। সেখানে সরকারিভাবে নির্মাণ করে দেওয়া একটি ঘরে তিনি এখনো বসবাস করছেন। এই দীর্ঘ সময় তিনি অন্যের বাড়িতে কাজ করে বেঁচে আছেন, ছেলেকে বড় করে তুলেছেন। নিজে আর বিয়ে করেননি। আশা ছিল, তাঁর স্বামী মোহাম্মদ আলী কোনো একদিন তাঁকে মেনে নেবেন।
ছেলে মাইদুল ইসলাম বলেন, তিনি মায়ের কাছে বড় হয়েছেন। বাবার কথা জানতে চাইলে তাঁর মা মোহাম্মদ আলীর কথা বলেছেন। পাশাপাশি এটাও বলেছেন যে তাঁদের মেনে নেননি মোহাম্মদ আলী। এসব শুনে তিনি কষ্ট পেয়েছেন, কিন্তু মায়ের কথা চিন্তা করে কোনো প্রতিবাদ করেননি।
আদালতে যাওয়ার বিষয়ে মাইদুল ইসলাম বলেন, তাঁর বাবার আরেক সংসার আছে। সম্প্রতি তাঁদের বাড়ি যাওয়ার পথ নিয়ে বাবার আরেক পক্ষের ছেলেদের সঙ্গে বিরোধ দেখা দেয়। এ সময় মোহাম্মদ আলী থানায় একটি লিখিত অভিযোগ করেন। যেখানে মাইদুলের নামের শেষে বাবার নাম লেখা হয় ইউনুছ আলী। এটা দেখে তিনি কষ্ট পান। তখন মা ও ছেলে মিলে স্বীকৃতির দাবি নিয়ে আদালতে যান।
মাইদুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, চলতি বছরের ২৬ আগস্ট তিনি লিগ্যাল এইডের সহযোগিতায় ঝিনাইদহের কোটচাঁদপুর সহকারী জজ আদালতে একটি মামলা করেন। পাশাপাশি ওই আদালতে তাঁর মা আরেকটি মামলা করেন। মামলা চলা অবস্থায় আদালতে মোহাম্মদ আলী স্ত্রী-সন্তানের পরিচয় দিতে অস্বীকৃতি জানান। তখন তাঁরা ডিএনএ পরীক্ষার আবেদন করলে আদালত তা মঞ্জুর করেন। আদালতের নির্দেশে মাইদুল ইসলাম টাকা জমা দিতে চাইলেও মোহাম্মদ আলী সময় নেন। শেষে ১২ নভেম্বর তিনি আদালতে উপস্থিত হয়ে ফরিদা খাতুনকে স্ত্রী ও মাইদুল ইসলামকে ছেলে হিসেবে স্বীকৃতি দেন।
গতকাল শনিবার মামুনসিয়া গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, মাইদুল বাড়িতে বসে আছেন। তিনি তালসার গ্রামের ঝিনু বেগমকে বিয়ে করেছেন। ঝিনু বেগম বাক্প্রতিবন্ধী। তাঁদের দুই সন্তান। মাইদুলের মা অন্যের বাড়িতে কাজ শেষে বাড়ি ফিরলেন। তিনি হাত উঁচিয়ে দেখালেন তাঁর স্বামীর বাড়ি। স্বামী তাঁকে ঘরে না নিয়ে অন্যত্র বিয়ে করেছেন। সেই ঘরে তাঁর তিন ছেলে ও দুই মেয়ে আছে। ৩২ বছর তিনি স্ত্রীর মর্যাদা পেতে চেষ্টা করেছেন। ছেলেকে নিয়ে কষ্ট নিয়ে সমাজে চলেছেন। এখন তাঁদের আশা পূর্ণ হয়েছে।
মামুনসিয়া গ্রামের বাসিন্দা কামাল হোসেন বলেন, ঘটনাটির বিচার একসময় তাঁরা করেছিলেন। সে সময় মোহাম্মদ আলী কোনোভাবেই ফরিদা খাতুনকে মেনে নিতে চাননি। যে কারণে তাঁরা ফরিদাকে ঘরে তুলে দিতে পারেননি।
মোহাম্মদ আলীর বাড়িতে গিয়ে তাঁকে পাওয়া যায়নি। তবে মুঠোফোনে তিনি জানান, তিনি আদালতে গিয়েছিলেন। তাঁদের সঙ্গে কথা হয়েছে, তাঁরা মামলা তুলে নেবেন। তিনিও তাঁদের স্বীকৃতি দিয়েছেন।
মামলার বাদীপক্ষের আইনজীবী আশরাফুল আলম জানিয়েছেন, তাঁরা আদালতে ডিএনএ পরীক্ষার আবেদন করলে বিবাদীপক্ষ নানা অজুহাতে টালবাহানা করে। একপর্যায়ে মোহাম্মদ আলী আদালতে স্ত্রী-সন্তানের স্বীকৃতি দেওয়ার কথা জানান।