নস্টালজিক অতীতের মুহূর্ত শেয়ার করা থেকে নিজের নিরাপত্তাহীনতা নিয়ে খোলামেলা কথা বলা—সব সময়ই সোচ্চার সত্তর দশকের ‘হার্টথ্রব’ জিনাত আমান। একসময়ের সর্বোচ্চ পারিশ্রমিক পাওয়া এই অভিনেত্রীর রয়েছে এক দুঃস্বপ্নের অতীত। তবে এসব পেছনে ফেলে ৭৪ বছর বয়সেও তিনি ইনস্টাগ্রামের জয় করে চলেছেন মিলেনিয়াল আর জেন-জিদের মন। নিজের বুদ্ধিদীপ্ত ও সাবলীল লেখনী দিয়ে তিনি যেভাবে সব বয়সী মানুষের কাছে নিজেকে প্রাসঙ্গিক রাখছেন, আজকের যুগের অনেক নামী তারকাও এখনো তা আয়ত্ত করতে পারেননি। তাঁর স্মৃতিচারণামূলক এ পোস্টগুলো হয়ে উঠেছে কালের সাক্ষী। আজ এই অভিনেত্রীর জন্মদিন। এ উপলক্ষে আলো ফেলা যাক তাঁর জীবন ও ক্যারিয়ারে।

শুরুর গল্প
১৯৫১ সালের ১৯ নভেম্বর মুম্বাইতে জন্ম; তাঁর আগের নাম ছিল জিনাত খান। তাঁর বাবা আমানুল্লাহ খান ছিলেন একজন পাঠান মুসলিম, মা বর্ধিনী সিন্ধিয়া ছিলেন মহারাষ্ট্রের হিন্দু। আমানউল্লাহ খান ‘মুঘল-ই-আজম’ (১৯৬০) ও ‘পাকিজা’ (১৯৭২)-এর চিত্রনাট্যকার ছিলেন। আমানুল্লাহ খান তাঁর নাম সংক্ষিপ্তভাবে ‘আমান’ লিখতেন। তাই পরবর্তীকালে জিনাত তাঁর নামের শেষে আমান যুক্ত করেন মাত্র ১৩ বছর বয়সে জিনাতের মা-বাবার বিবাহবিচ্ছেদ হয়, যা তাঁর জীবনে গভীর প্রভাব ফেলে। স্কুল শেষ করার পর তিনি ইউনিভার্সিটি অব সাউদার্ন ক্যালিফোর্নিয়ায় লস অ্যাঞ্জেলেসে পড়াশোনা চালানোর জন্য যান। তবে তিনি স্নাতক ডিগ্রি সম্পন্ন করতে পারেননি। ভারতে ফিরে আসেন।

পাদপ্রদীপের আলোয় আসা
ভারতে ফিরে এসে জিনাত ‘ফেমিনা মিস ইন্ডিয়া’ প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে দ্বিতীয় স্থান অর্জন করে ‘প্রথম প্রিন্সেস’ নির্বাচিত হন। সেই বছরের শেষ দিকে তিনি ‘মিস এশিয়া প্যাসিফিক ইন্টারন্যাশনাল’ টাইটেলও জিতে নেন। প্রথম ভারতীয় নারী হিসেবে তিনি এই খেতাব অর্জন করেন। টাইমস অব ইন্ডিয়ার সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ‘আমি শুধু মিস ইন্ডিয়া ও মিস এশিয়া প্যাসিফিক ১৯৭০ জিতিনি, আমি মিস ফোটোজেনিকও হয়েছিলাম। আমি নিজেই মেকআপ করতাম, চুল বাঁধতাম এবং পোশাক বাছতাম। সেই সময়ে কেউ সহায়তা করার ব্যবস্থা ছিল না। আমি শুধু নিজের সেরাটা দিয়েছি। এখনকার মেয়েদের বড় টিম থাকে, এটা আমি খুব পছন্দ করি।’ এই জয়ের মাধ্যমে তাঁর স্বীকৃতি মেলে এবং বলিউডে প্রবেশের পথ খুলে যায়।

‘প্রেম শাস্ত্র’ সিনেমার পোস্টার। আইএমডিবি.

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

শেয়ারবাজারে নতুন কোম্পানির তালিকাভুক্তি কঠিন হবে

পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসির প্রস্তাবিত আইপিও বিধিমালা কার্যকর হলে শেয়ারবাজারে নতুন কোম্পানির তালিকাভুক্তি বাধাগ্রস্ত হবে বলে মনে করছেন বাজারসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। তাঁরা বলছেন, এই বিধিমালায় এমন কিছু বিধান যুক্ত করা হয়েছে, যেগুলো কোম্পানিকে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্তিতে নিরুৎসাহিত করবে। পাশাপাশি শেয়ারবাজারে নতুন কোম্পানি আনার কাজটি যারা করে, সেসব ইস্যু ম্যানেজারের ওপর এমন সব দায়ভার চাপানো হয়েছে, যেগুলো মেনে ইস্যু ব্যবস্থাপকেরা কোনো কোম্পানি বাজারে আনতে আগ্রহী হবেন না।

এ জন্য প্রস্তাবিত বিধিমালার কিছু বিধান সংশোধন জরুরি বলে মনে করছেন বাজারসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। আজ বুধবার ‘বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (পাবলিক অফার অব ইক্যুইটি সিকিউরিটিজ) রুলস, ২০২৫’ নিয়ে আয়োজিত এক পরামর্শ সভায় এসব মতামত তুলে ধরা হয়। ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) ও ডিএসই ব্রোকার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ডিবিএ) যৌথভাবে এ সভার আয়োজন করে। ঢাকার নিকুঞ্জে ডিএসই টাওয়ারে এই সভা অনুষ্ঠিত হয়।

প্রস্তাবিত পাবলিক ইস্যু রুলসে বলা হয়েছে, কোনো কোম্পানি শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত হতে চাইলে তালিকাভুক্তির আগের দুই বছর কোম্পানিটিকে অবশ্যই লাভ করতে হবে। অংশীজনেরা বলছেন, এই বিধানের বদলে তালিকাভুক্তির আগের পাঁচ বছরের মধ্যে যেকোনো দুই বছর মুনাফা করলে সেসব কোম্পানিকে বাজারে আসার সুযোগ রাখা উচিত। কারণ, নানা কারণে অনেক সময় ভালো কোম্পানিও পরপর দুই বছর মুনাফা না-ও করতে পারে।

যেসব বিধানে বেশি আপত্তি***আইপিওর অর্থে ঋণ পরিশোধের সুযোগ না রাখা। *** বাজারে আসার দুই বছর আগে থেকে নতুন শেয়ার ইস্যু না করার বিধান। *** ইস্যু ব্যবস্থাপকদের ওপর সব দায় চাপানো। *** বহুজাতিক ও ভালো কোম্পানির জন্য সরাসরি তালিকাভুক্তির বিধান না রাখা।

প্রস্তাবিত বিধিমালায় আরও বলা হয়েছে, শেয়ার ছেড়ে কোম্পানিগুলো বাজার থেকে যে অর্থ বা মূলধন সংগ্রহ করবে, তা ওই কোম্পানি ব্যাংকঋণ পরিশোধে খরচ করতে পারবে না। শুধু ব্যবসা সম্প্রসারণের কাজে ওই অর্থ ব্যবহার করা যাবে। বাজার অংশীজনেরা বলছেন, এই বিধান রাখা হলে বেশির ভাগ কোম্পানি শেয়ারবাজারে আসতে আগ্রহী হবে না। কারণ, শেয়ার ছেড়ে অর্থ সংগ্রহ করে ব্যবসা সম্প্রসারণের প্রয়োজন অনেকের না-ও হতে পারে। দেশের ভালো মানের ও বড় অনেক করপোরেট কোম্পানিই এ বিধানের কারণে বাজারে আসবে না। তাই বিধানটি সংশোধন করে আইপিওর টাকায় ঋণ পরিশোধের সুযোগ রাখার প্রস্তাব করেছেন অংশীজনেরা। প্রয়োজনে সে ক্ষেত্রে একটি সীমা আরোপ করা যেতে পারে।

এ ছাড়া বহুজাতিক কোম্পানিসহ দেশের বড় বড় ভালো কোম্পানির ক্ষেত্রেও সরাসরি তালিকাভুক্তির বিধান নতুন আইনে সংযুক্ত করার প্রস্তাব করা হয়েছে। প্রস্তাবিত আইনে শুধু সরকারি কোম্পানির ক্ষেত্রে সরাসরি তালিকাভুক্তির বিধান রাখা হয়েছে।

ডিএসই ও ডিবিএ আয়োজিত এই সভায় বাংলাদেশ মার্চেন্ট ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিএমবিএ), বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব পাবলিকলি লিস্টেড কোম্পানিজ (বিএপিএলসি), বাংলাদেশ তৈরি পোশাক প্রস্তুত ও রপ্তানিকারক সমিতি (বিজিএমইএ), ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই), বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ফার্মাসিউটিক্যালস ইন্ডাস্ট্রিজের (বিএপিআই) প্রতিনিধিসহ বড় কয়েকটি শিল্পপ্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিও অংশ নেন।

সভায় সভাপতিত্ব করেন ডিএসইর চেয়ারম্যান মমিনুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘দীর্ঘ দুই দশকে শেয়ারবাজারে ভালো কোম্পানি খুব কম এসেছে। ফলে বাজারে ভালো কোম্পানি কীভাবে আনা যায়, সেটি খুঁজে দেখা আমাদের সবার প্রধান উদ্দেশ্য।’

সভায় ডিবিএর সভাপতি সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘ভালো কোম্পানি বাজারে আনার জন্য আইপিও বিধিমালা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আমরা অনেক সময় বিদেশি কোম্পানিগুলোর সঙ্গে শেয়ারবাজারে আসা নিয়ে কথা বলি। তাঁরা আমাদের জানান বাংলাদেশে নিয়মনীতি অনেক বেশি জটিল। এ কারণে আমাদের শেয়ারবাজারে ভালো কোম্পানির সংখ্যা কম। বাজারের গভীরতাও কম। অথচ আমাদের প্রতিবেশী দেশগুলোর শেয়ারবাজার অনেক বেশি শক্তিশালী। সেসব দেশের ভালো উদাহরণ ও আইনকানুনগুলো আমরাও অনুসরণ করতে পারি।’

ডিএসইর পরিচালক রিচার্ড ডি রোজারিও বলেন, নিয়মকানুন যত বেশি সহজ হবে, তত বেশি এসব নিয়মনীতি মেনে চলতে পারবে সবাই। কিন্তু নিয়মনীতি যত বেশি জটিল হবে, তত বেশি ভুল ও মওকুফের দরকার হবে। পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি, ডিএসই ও নিরীক্ষক—এই তিনটি সংস্থা বা প্রতিষ্ঠান ঠিক থাকলে শেয়ারবাজারের অর্ধেক সমস্যা এমনিতেই সমাধান হয়ে যাবে।

ডিএসইর অপর পরিচালক মেজর জেনারেল (অব.) মোহাম্মদ কামরুজ্জামান বলেন, এত বেশি বিধিনিষেধ দিয়ে ব্যবসা হয় না। ব্যবসা হতে হবে বাজারভিত্তিক।

মার্চেন্ট ব্যাংকারদের সংগঠন বিএমবিএর সভাপতি মাজেদা খাতুন বলেন, প্রস্তাবিত বিধিমালায় ইস্যু ব্যবস্থাপকদের ওপর অতিরিক্ত দায় চাপানো হয়েছে। অথচ কোম্পানি তালিকাভুক্তির পর তদারকির দায়িত্ব স্টক এক্সচেঞ্জ ও নিয়ন্ত্রক সংস্থার। সেই জায়গায় তালিকাভুক্তির পরের দায় ইস্যু ব্যবস্থাপকদের ওপর চাপানো হলে কেউ নতুন কোম্পানি বাজারে আনতে আগ্রহী হবে না।

তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর সংগঠন বিএপিএলসির প্রতিনিধি ও বাংলাদেশ ফাইন্যান্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক কায়সার হামিদ বলেন, প্রস্তাবিত বিধিমালাটি অনেক বেশি নিয়ন্ত্রণমূলক। বিভিন্ন ধারায় নানা ধরনের বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে। এ রকম একটি বিধিমালার আওতায় নতুন কোম্পানি বাজারে আনা কষ্টকর হবে।

সভায় প্রস্তাবিত বিধিমালার ওপর প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন প্রাইম ব্যাংক সিকিউরিটিজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মো. মনিরুজ্জামান ও ঢাকা ব্যাংক সিকিউরিটিজের এমডি নাফিজ-আল-তারিক। মনিরুজ্জামান তাঁর প্রবন্ধে বলেন, বিধিমালায় বলা হয়েছে, শেয়ারবাজারে আসার দুই বছর আগে নতুন কোনো শেয়ার ইস্যু করা যাবে না, পরিচালনা পর্ষদেও কোনো পরিবর্তন করা যাবে না। অথচ আইপিওর প্রস্তুতির সময় কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদ পরিবর্তন, মূলধন বাড়ানো কিংবা বোনাস শেয়ার দেওয়া খুবই স্বাভাবিক ঘটনা। এখন এই বিধান কার্যকর হলে আগামী দু-তিন বছর শেয়ারবাজারে কোনো কোম্পানির আইপিও আসবে না।

নাফিজ-আল-তারিক তাঁর উপস্থাপনায় বলেন, বিধিমালায় সরকারি কোম্পানির জন্য সরাসরি তালিকাভুক্তির সুযোগ রাখা হয়েছে। এই সুযোগ বহুজাতিক ও বড় করপোরেটগুলোর জন্যও উন্মুক্ত করা উচিত। অনেক বড় কোম্পানির নতুন মূলধনের প্রয়োজন নেই। তাই তাদের বাজারে আনতে হলে সরাসরি তালিকাভুক্তিই কার্যকর পথ।

সভায় আলোচকদের বক্তব্যের পর বিএসইসির অতিরিক্ত পরিচালক লুৎফুল কবীর বলেন, নতুন এই বিধিমালা প্রণয়নে বাজারকেন্দ্রিক দৃষ্টিভঙ্গিকে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে। আগের বিধিমালা ছিল অনেকটাই নির্দিষ্ট কাঠামোর—কী করা যাবে আর কী করা যাবে না। নতুন বিধিমালা বাজারচাহিদার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে তৈরি হচ্ছে। তাই অংশীজনদের মতামতকে গুরুত্ব দেওয়া হবে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ