‘আমার ভাইডারে ভালোভাবে ইতালি নিয়ে গেল না, পথেই মাইরা ফালাইল’
Published: 19th, November 2025 GMT
মাদারীপুর সরকারি কলেজ থেকে বিএ পাস করার পরও ভালো চাকরি হচ্ছিল না ইমরান খানের (২৫)। স্বপ্ন দেখেছিলেন, ইতালি গিয়ে প্রত্যাশা অনুযায়ী চাকরি করবেন। তবে অবৈধভাবে সেখানে যাওয়ার পথে প্রাণ হারান তিনি।
পরিবারের সদস্যদের ভাষ্য, গতকাল মঙ্গলবার তাঁরা এক দালালের মাধ্যমে জেনেছেন, ১ নভেম্বর লিবিয়ার উপকূলে অভিবাসনপ্রত্যাশীদের নৌকায় জলদস্যুদের গুলিতে নিহত হন ইমরান। পরে তাঁর লাশ সাগরে ভাসিয়ে দেওয়া হয়।
ইমরান মাদারীপুর সদর উপজেলার কুনিয়া ইউনিয়নের আদিত্যপুর গ্রামের মো.
আজ বুধবার সকালে ইমরানের বাড়ি গিয়ে দেখা যায়, বাড়িতে অনেক লোকজন। প্রতিবেশী, আত্মীয়স্বজন ও বন্ধুবান্ধব—সবাই ইমরানের খোঁজ নিতে বাড়ি এসেছেন। ইমরানের বাবা তৈয়ব আলী (৮০) বয়সের ভারে নুয়ে পড়েছেন। প্রতিবেশীরা তাঁকে ঘর থেকে বের করে আনতেই হাউমাউ করে কান্না করে দিলেন। ছেলের কথা জিজ্ঞাসা করতেই ভাঙা ভাঙা গলায় বললেন, ‘ছেলের মুখটা দালালে আমাগো দেহায় নাই। খালি বলছে, মারা গেছে।’
তৈয়ব আলীর পাশেই ছিলেন তাঁর স্ত্রী রেহেনা বেগম (৬৫)। একমাত্র ছেলেকে হারিয়ে গতকাল রাত থেকে তিনি টানা আহাজারি করছেন। বৃদ্ধ মা–বাবাকে সামলাতে গিয়ে নিজেই বারবার মূর্ছা যাচ্ছেন ইমরানের বোন ফাতেমা বেগম। তিনি বলেন, ‘আমার দুই ভাই ছিল। দুইটা ভাই–ই মইরা গেল। এখন আমার মা–বাবা কীভাবে বাঁচবে? এই শিপন খান দালাল আমাদের চাপ দিয়া, ভয় দেখাইয়া টাকা নিছে। বাবার যত জমিজমা ছিল সব বিক্রি করে শিপনকে প্রথমে ২২ লাখ, পরে আরও ২০ লাখ টাকা দিছে। তবুও ওরা আমার ভাইডারে ভালোভাবে ইতালি নিয়ে গেল না। পথেই মাইরা ফালাইল।’
তৈয়ব আলী ও রেহেনা বেগম দম্পতির দুই ছেলে ও এক মেয়ে। বড় ছেলে রায়হান খান সাত বছর আগে মারা গেছেন।
বৃদ্ধ মা–বাবাকে সামলাতে গিয়ে নিজেই বারবার মূর্ছা যাচ্ছিলেন ইমরানের বোন ফাতেমা বেগমউৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ইমর ন র ব
এছাড়াও পড়ুন:
সামরিক বাহিনী কমান্ড ও স্টাফ কলেজে গ্র্যাজুয়েশন সনদ বিতরণ প্রধান উপদেষ্টার
প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস আজ বুধবার মিরপুর সেনানিবাসে ডিএসসিএসসি কোর্স ২০২৫-এর গ্র্যাজুয়েশন সনদ বিতরণ করেছেন। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে তিনি প্রশিক্ষণ সম্পন্নকারী কর্মকর্তাদের হাতে সনদ তুলে দেন।
সামরিক বাহিনী কমান্ড ও স্টাফ কলেজের ডিএসসিএসসি কোর্স ২০২৫-এর গ্র্যাজুয়েশন সনদ বিতরণ অনুষ্ঠান মিরপুর সেনানিবাসে ডিএসসিএসসি কমপ্লেক্সে অনুষ্ঠিত হয়।
প্রধান উপদেষ্টা তাঁর বক্তব্যে সামরিক শিক্ষায় উৎকর্ষের স্তম্ভ হিসেবে ডিএসসিএসসির ভূমিকার কথা উল্লেখ এবং নেতৃত্ব গঠনে প্রতিষ্ঠানের প্রতি জাতির আস্থা পুনর্ব্যক্ত করেন।
গ্র্যাজুয়েশন সম্পন্নকারী অফিসারদের অভিনন্দন জানিয়ে প্রধান উপদেষ্টা তাঁদের এই কোর্সে অর্জিত জ্ঞান, প্রজ্ঞা ও সংকল্প দেশের অগ্রগতিতে কাজে লাগানোর পরামর্শ দেন। পাশাপাশি তিনি শীর্ষস্থানীয় সামরিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান হিসেবে ডিএসসিএসসির আন্তর্জাতিক সুনামেরও প্রশংসা করেন।
অনুষ্ঠানের শুরুতে কমান্ড্যান্ট মেজর জেনারেল চৌধুরী মোহাম্মদ আজিজুল হক হাজারী প্রধান উপদেষ্টাকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, দীর্ঘ এক বছর কঠোর প্রশিক্ষণে অর্জিত জ্ঞান নিজ নিজ বাহিনীকে আরও শক্তিশালী করবে। তিনি কোর্সের সফলতা নিশ্চিতে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়, বাহিনী সদর দপ্তর, সশস্ত্র বাহিনী বিভাগ এবং সব অংশীজনের সহযোগিতার জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।
ডিএসসিএসসি কোর্স ২০২৫-এ বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ১৭০ জন, নৌবাহিনীর ৪৫ জন এবং বিমানবাহিনীর ৩৬ জন কর্মকর্তা গ্র্যাজুয়েশন সম্পন্ন করেন। এ ছাড়া বাংলাদেশ পুলিশের তিনজন কর্মকর্তা এবং চীন, ভারত, ইন্দোনেশিয়া, ইরান, জর্ডান, কেনিয়া, সৌদি আরব, কুয়েত, কাতার, লাইবেরিয়া, মালয়েশিয়া, মালদ্বীপ, মালি, নেপাল, নাইজেরিয়া, ওমান, পাকিস্তান, ফিলিস্তিন, সিয়েরা লিওন, শ্রীলঙ্কা, তানজানিয়া, তুরস্ক ও উগান্ডা থেকে আগত ৫৮ জন কর্মকর্তা অংশ নেন। সব মিলিয়ে এ বছর মোট ৩১১ জন প্রশিক্ষণার্থী গ্র্যাজুয়েশন সম্পন্ন করেছেন। এতে বাংলাদেশ পুলিশের একজনসহ মোট ১৪ জন নারী কর্মকর্তা গ্র্যাজুয়েশন অর্জন করেন, যা নারীর অন্তর্ভুক্তি ও ক্ষমতায়নে প্রতিষ্ঠানের প্রতিশ্রুতির প্রতিফলন।
সামরিক বাহিনী কমান্ড ও স্টাফ কলেজ বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনীর আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, যা মধ্যম পর্যায়ের কর্মকর্তাদের উচ্চতর দায়িত্ব ও নেতৃত্ব প্রদানের জন্য প্রস্তুত করতে অঙ্গীকারবদ্ধ। প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে এ পর্যন্ত বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনীর ৫ হাজার ৩২৯ জন কর্মকর্তা, ২০ জন পুলিশ কর্মকর্তা এবং বন্ধুপ্রতিম ৪৫টি দেশের ১ হাজার ৪৬৫ জন বিদেশি সামরিক কর্মকর্তাসহ মোট ৬ হাজার ৮১৪ জন অফিসার এখানে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেছেন।
অনুষ্ঠানে উপদেষ্টা পরিষদের সদস্যরা, মন্ত্রিপরিষদ সচিব, তিন বাহিনীর প্রধানেরা, বাংলাদেশে নিযুক্ত বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূত, সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের প্রিন্সিপাল স্টাফ অফিসার, উচ্চপদস্থ সামরিক ও বেসামরিক কর্মকর্তা (চাকরিরত ও অবসরপ্রাপ্ত), বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ও অধ্যাপকেরা এবং বিভিন্ন দেশের মিলিটারি বা ডিফেন্স অ্যাটাশে ও গণ্যমান্য ব্যক্তিরা উপস্থিত ছিলেন।