বিদেশে গমনেচ্ছু কর্মীদের বিনামূল্যে সেবা দেবে ওইপি
Published: 19th, November 2025 GMT
প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে এবং আইএলও ও সুইজারল্যান্ড সরকারের যৌথ সহায়তায় 'ওভারসিজ এমপ্লয়মেন্ট প্ল্যাটফর্ম (ওইপি)’ নামে একটি অনলাইন প্ল্যাটফর্ম চালু হয়েছে। এটি কর্মীদের বিনা খরচে বিদেশে চাকরির আবেদন, বিএমইটি নিবন্ধন ও ছাড়পত্র পেতে সাহায্য করবে। এই প্ল্যাটফর্মে রিক্রুটিং এজেন্সি, বিএমইটি, টিটিসি, বিদেশি নিয়োগকর্তা, ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষ যুক্ত থাকবে।
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
চাকরি নিয়ে বিদেশে যেতে অনলাইন সেবা মিলবে বিনা পয়সায়
কাজ নিয়ে বিদেশে যাওয়ার পুরো প্রক্রিয়াকে একটি ডিজিটাল কাঠামোর মধ্যে নিয়ে এসেছে ওভারসিজ এমপ্লয়মেন্ট প্ল্যাটফর্ম (ওইপি)। বিদেশে যেতে আগ্রহী কর্মীরা বিনা পয়সায় পাবেন এই অনলাইন সেবা। এর মধ্য দিয়ে সরাসরি চাকরির আবেদনের সুযোগ পাবেন কর্মীরা। কম খরচে, সহজে বিদেশে যেতে সহায়তা করবে এ সেবা। কমবে প্রতারিত হওয়ার ঝুঁকি।
প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের নেতৃত্বে আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (আইএলও) বাংলাদেশ ও সুইজারল্যান্ড সরকারের যৌথ উদ্যোগে এ প্ল্যাটফর্ম তৈরি করা হয়েছে। আজ বুধবার রাজধানীর একটি হোটেলে এই অনলাইন প্ল্যাটফর্মের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করা হয়। এ প্ল্যাটফর্মে যুক্ত হয়েছে পুরো অভিবাসনপ্রক্রিয়ার বিভিন্ন পক্ষ।
জাতীয় সমন্বিত এ ডিজিটাল গেটওয়েতে যুক্ত থাকছে বিদেশে যেতে আগ্রহী কর্মী, রিক্রুটিং এজেন্সি, জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরো (বিএমইটি), কারিগরি প্রশিক্ষণকেন্দ্র (টিটিসি), বিদেশি নিয়োগকর্তা, ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষ এবং প্রত্যাবর্তন বা পুনর্বাসন সেবা প্রদানকারী সংস্থা।
বিদেশে যেতে আগ্রহী কর্মীরা এ প্ল্যাটফর্মে গিয়ে শুরুতে নিজের মোবাইল নম্বর দিয়ে নিবন্ধন করতে পারবেন। এতে তাঁর নামে একটি প্রোফাইল চালু হবে, যেখানে ব্যক্তিগত তথ্য যুক্ত করতে হবে। এরপর অনলাইনেই ২০০ টাকা ফি দিয়ে বিএমইটি নিবন্ধন নিতে হবে। এটি ব্যবহার করে বিএমইটি ছাড়পত্রের জন্য আবেদন করা যাবে। এখান থেকেই ছাড়পত্রের স্মার্টকার্ড নামিয়ে নেওয়া যাবে। বিদেশি নিয়োগকর্তারাও এখানে নিবন্ধন করতে পারবে, এরপর দূতাবাস তাদের সত্যায়ন করার পর তারা চাহিদাপত্র দিতে পারবে। তাদের চাহিদাপত্র রিক্রুটিং এজেন্সির কাছে যাবে। কর্মীরা এ প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে সরাসরি রিক্রুটিং এজেন্সির কাছে চাকরির জন্য যোগাযোগ করতে পারবেন। এই প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমেই বিদেশে যেতে আগ্রহী কর্মীরা টিটিসিতে ভর্তি হতে পারবেন।
এর আগে গত সরকারের সময় ‘আমি প্রবাসী’ নামের একটি মোবাইল অ্যাপের মাধ্যমে অনলাইনে বিএমইটির ছাড়পত্র সেবা চালু করা হয়। সেখানে বিএমইটি ফি ছাড়াও অ্যাপ পরিচালনাকারী বেসরকারি কোম্পানিকে ফি দিতে হতো। অন্তর্বর্তী সরকার আসার পর ওই সেবা বাতিল করে দেয়। গত ১৯ এপ্রিল থেকে ওইপি নামের নতুন প্ল্যাটফর্ম চালু হয়। এর সব তথ্য থাকবে বিএমইটির কাছে।
দুর্নীতি, অনিয়ম ও ভোগান্তি কমবেএ নিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান উপদেষ্টা অধ্যাপক আসিফ নজরুল বলেন, ‘“আমি প্রবাসী” অ্যাপ ব্যবহার করলে প্রবাসীদের টাকা দিতে হতো, অনিয়মের অভিযোগ ছিল। এটা সম্পূর্ণ ফ্রি। “আমি প্রবাসী” ছিল অভিবাসনপ্রক্রিয়ার একটি উপাদান, এখন এই প্ল্যাটফর্মে সব বিষয় যুক্ত করা হয়েছে। আরও কম খরচে, সহজে বিদেশে যেতে এ প্ল্যাটফর্ম করা হয়েছে, যাতে কর্মীরা প্রতারিত না হন, যাতে কোনো মধ্যস্বত্বভোগীর দৌরাত্ম্য না থাকে। নিয়োগকর্তা যে ভুয়া নন, এর মাধ্যমে কর্মী জানতে পারবেন। এই প্ল্যাটফর্ম আত্মপ্রকাশের মধ্য দিয়ে অভিবাসন খাতে দুর্নীতি, অনিয়ম ও ভোগান্তি বহুলাংশে কমে যাবে।
মালয়েশিয়ায় কর্মী নিয়োগসংক্রান্ত এক প্রশ্নের জবাবে আসিফ নজরুল বলেন, মালয়েশিয়া যে ১০ শর্ত দিয়েছে, তার কয়েকটি নিয়ে ইতিমধ্যে আপত্তি জানানো হয়েছে। যে সময়সীমা বেঁধে দেওয়া হয়েছে, সেটিও বাড়ানোর কথা বলা হয়েছে। তাদের বলা হয়েছে, এসব শর্ত মানা হলে পুনরায় সিন্ডিকেট হবে। অল্প কিছু এজেন্সি কর্মী পাঠানোর সুযোগ পাবে। যতটা পারা যায়, সুযোগ অবারিত রাখতে হবে। তাই শর্ত শিথিল করতে বলা হয়েছে। মালয়েশিয়া এটা শিথিলের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।
ওইপি প্ল্যাটফর্মে যুক্ত হয়েছে ২,৬৪৭ রিক্রুটিং এজেন্সিওইপি প্ল্যাটফর্মে ইতিমধ্যে ২ হাজার ৬৪৭টি রিক্রুটিং এজেন্সি যুক্ত হয়েছে। ১০ লাখ ৯১ হাজার ১৬১ জন কর্মী বিদেশে যেতে ছাড়পত্রের জন্য বিএমইটিতে আবেদন করেছেন। এর মধ্যে ছাড়পত্র পেয়েছেন ১০ লাখ ২৪ হাজার ৪৬৮ জন। টিটিসিতে প্রশিক্ষণ নিতে নিবন্ধন করেছেন ৮ লাখ ৩৭ হাজার ৪২ জন। অনলাইনে ওইপি সাইটে গেলে এসব তথ্য দেখা যাচ্ছে এবং নতুন নিবন্ধনের মাধ্যমে এটি প্রতিনিয়ত পরিবর্তিন হচ্ছে।
দালাল চক্রের ওপর নির্ভরতা কমাতে সময়োপযোগী উদ্যোগঅনুষ্ঠানে বলা হয়, ওইপি প্ল্যাটফর্ম দালাল চক্রের ভূমিকা কমাতে এবং কর্মীদের জন্য অভিবাসন খরচ কমাতে সহায়তা করবে। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে প্ল্যাটফর্মে নতুন নতুন ফিচার যুক্ত হবে। শ্রমিক, নিয়োগকর্তা ও সরকার—সব পক্ষের জন্যই এটি কাজে আসবে। তথ্য ও সেবা—দুটোই নিশ্চিত হবে। এর মধ্য দিয়ে স্বচ্ছ নিয়োগপ্রক্রিয়া গড়ে উঠবে এবং গন্তব্য দেশের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় শ্রম চুক্তি আরও শক্তিশালী হবে।
এতে আরও বক্তব্য দেন পররাষ্ট্রসচিব আসাদ আলম সিয়াম, আইএলও বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর ম্যাক্স টুনন, বাংলাদেশে সুইজারল্যান্ড দূতাবাসের ডেপুটি হেড অব মিশন ডেইপাক এলমার। সভাপতিত্ব করেন প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সচিব নেয়ামত উল্ল্যা ভূঁইয়া।