ফিলিপাইনের দুই মন্ত্রীর পদত্যাগ
Published: 19th, November 2025 GMT
ফিলিপাইন প্রেসিডেন্ট ফের্দিনান্দ মার্কোস জুনিয়রের সরকারের দুই মন্ত্রী অবৈধ অবকাঠামো ও বিলিয়ন ডলারের বাজেট ঘাটতির মামলায় পদত্যাগ করেছেন। বুধবার (১৯ নভেম্বর) এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আলজাজিরা।
প্রতিবেদনে বলা হয়, প্রেসিডেন্ট প্রাসাদের প্রেস অফিসার ক্লেয়ার কাস্ত্রো স্থানীয় সময় মঙ্গলবার এক ব্রিফিংয়ে জানিয়েছেন, নির্বাহী সচিব লুকাস বারসামিন এবং বাজেট ও প্রশাসন সচিব অ্যামেনাহ পাঙ্গানডামান উভয়েই তাদের পদ থেকে পদত্যাগ করেছেন।
কাস্ত্রো বলেন, “বন্যা প্রতিরোধমূলক প্রকল্পে তাদের দপ্তরগুলোর অনিয়মের অভিযোগ পাওয়ার পর, প্রশাসনকে বিষয়টি যথাযথভাবে সমাধান করার সুযোগ দেওয়ার দায়িত্বস্বরূপ তারা পদত্যাগ করেছেন।”
ফিলিপাইনের রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞ ও সিঙ্গাপুরের আইএসইএএস-ইউসুফ ইশাক ইনস্টিটিউটের ভিজিটিং সিনিয়র ফেলো আরিস আরুগে-এর মতে, জুলাই মাসে দুর্নীতির কেলেঙ্কারি প্রকাশ হওয়ার পর থেকে বারসামিন এবং পাঙ্গানডামান হলেন মার্কোস সরকারের সর্বোচ্চ পদস্থ সদস্য যারা সরাসরি দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত।
তার মতে, প্রেসিডেন্ট নিজে আপাতত বিতর্কের বাইরে থাকলেও পরিস্থিতি যে কোনো সময় বদলাতে পারে।
তিনি আল জাজিরাকে বলেন, “এই মুহূর্তে, প্রাসাদ প্রেসিডেন্টকে এই পরিস্থিতি থেকে বের করে আনার চেষ্টা করছে, এবং এই কারণেই নির্বাহী সচিব, বাজেট সচিবের ‘পদত্যাগ’ করা হচ্ছে। তারাই এই বিষয়ে কমান্ডের দায়িত্ব গ্রহণ করছেন।”
আরুগে বলেন, “মার্কোস জুনিয়রের এখনও সংসদে ‘আরামদায়ক’ সংখ্যাগরিষ্ঠতা রয়েছে কারণ অনেক এমপি এখনও তাকে ভাইস প্রেসিডেন্ট সারা দুতার্তের নেতৃত্বের চেয়ে পছন্দ করেন, তবে আরো প্রমাণ সামনে এলে ‘সব বাজি শেষ’।”
চলতি সপ্তাহের শুরুতে প্রেসিডেন্টের বিরুদ্ধে অভিযোগ এনে পলাতক রাজনীতিবিদ জালডি কো বলেন, তিনি একটি বরাদ্দের কমিটির প্রধান থাকাকালে মার্কোস তাকে ‘সন্দেহজনক জনকল্যাণের’ জন্য বাজেটে ১.
এক মাস ধরে তদন্তের পর দুর্নীতি কেলেঙ্কারিতে জড়িত অভিযুক্ত প্রথম কর্মকর্তাদের মধ্যে কো ছিলেন।
মার্কিস জুনিয়র চলতি বছরের শুরুতে কংগ্রেসে এক বক্তব্যে বন্যা-নিয়ন্ত্রণ প্রকল্পে ঠিকাদারদের নিম্নমানের উপাদান ব্যবহারের তথ্য প্রকাশের পর দুনীর্তির বিরুদ্ধে প্রতিবাদে দেশটির জনগণ রাস্তায় নেমে আসে।
ফিলিপাইন প্রতিবছরই টাইফুন ও অন্যান্য গ্রীষ্মমণ্ডলীয় ঝড়ের কবলে পড়ে এবং বন্যা সেখানে নিয়মিতভাবে ভয়াবহ একটি সমস্যা।
এই কেলেঙ্কারিতে অভিযোগ উঠেছে যে সরকারি বাজেট থেকে প্রাপ্ত অর্থে দুর্নীতিপূর্ণ বা নিম্নমানের বন্যা প্রতিরোধমূলক অবকাঠামো নির্মাণ করা হয়েছে। ইতিমধ্যেই দেশজুড়ে বিক্ষোভ চলছে এবং ম্যানিলার বিক্ষোভে সম্প্রতি ৫ লাখ মানুষ অংশ নিয়েছে।
ঢাকা/ফিরোজ
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ফ ল প ইন পদত য গ য গ কর
এছাড়াও পড়ুন:
রঙ চটা ক্যাপে ২০ বছর, একশ টেস্টে অনন্য মুশফিকুরের শ্রেষ্ঠত্ব
গুনে গুনে ২০ বছর আগের দিনটি যেন ফিরে এলো। হাবিবুল বাশার তখন টেস্ট দলের অধিনায়ক। মুশফিকুর রহিম পা রাখলেন ক্রিকেটের অভিজাত সংস্করণে। বাংলাদেশের ৪১তম টেস্ট ক্রিকেটার হিসেবে যাত্রা শুরু হলো ১৬ বছর বয়সী মুশফিকুরের। লর্ডসে সর্বকনিষ্ঠ ক্রিকেটার হিসেবে রেকর্ড।
সেই মুহূর্তটাই যেন ২০ বছর পর ফিরে এলো মিরপুর শের-ই-বাংলায়। মুশফিকুর রহিমের একশতম টেস্টে। হাবিবুল বাশার আবারো ক্যাপ দিলেন মুশফিকুরকে। ওই একই ক্যাপ নয়। মুশফিকুর রহিমের জন্য বিশেষ ১০০তম টেস্ট ক্যাপ।
আরো পড়ুন:
শততম টেস্টের মঞ্চে মুশফিকুরকে সম্মানজনক সংবর্ধনা
শতরানের আগেই ৩ উইকেট হারিয়ে মধ্যাহ্ন বিরতিতে বাংলাদেশ
নতুন ক্যাপ, নতুন স্মৃতি। কিন্তু বাংলাদেশের প্রথম ক্রিকেটার হিসেবে হানড্রেড টেস্ট খেলা মুশফিকুরের পছন্দ সেই অভিষেকের ক্যাপ। ২০০৫ সালে যেটা পেয়েছিলেন।
যেই ক্যাপটির রয়েছে বিশেষত্ব। যে ক্যাপে মিশে আছে ভালোবাসা, গর্ব, সম্মান, ঐশ্বর্যসহ কতো কিছু। ক্যাপটার বর্ণনা দিতে গেলে স্রেফ দুটি শব্দ ব্যবহার করলেই হবে, রঙ চটা! সত্যিই তাই।
ক্যাপটার রঙ একেবারে চটে গেছে। পুরোপুরি পুরোনো দেখায়। অথচ বছরের পর বছর এই ক্যাপটা টেস্ট ম্যাচে পরে যাচ্ছেন মুশফিকুর। ঔজ্জ্বল্য হারিয়েছে কিন্তু গর্ব কমেনি। ক্যাপের গাঢ় সবুজ রঙ এখন ধূসর। কিন্তু মুশফিকুরের কাছে সর্বদা চাকচিক্যময়। বাঘের ছবিসংবলিত বিসিবির লোগো অদৃশ্যই হয়ে গেছে। কিন্তু হৃদয়ে ধারণ করে রেখেছেন সব।
স্রেফ ভালোবাসা, টান, ক্যাপটির প্রতি শ্রদ্ধার কারণেই মুশফিকুরের মাথায় থাকে তার টেস্ট ক্যাপ। ২০ বছর হলো আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে মুশফিকুর রহিমের পথচলা। লম্বা সময় পেরিয়ে তার মাথায় আজও শোভা পায় সেই ক্যাপ। দিন দশেক আগে ক্যাপটির ছবি সামাজিক মাধ্যমে পোস্ট করেছেন মুশফিকুর রহিম। ক্যাপশন দিয়েছিলেন, ‘‘সকল উত্থান-পতনের সঙ্গী…।’’
সত্যিই কি তা-ই নয়। সময় বদলেছে। ভেন্যু থেকে ভেন্যুতে গিয়েছেন তিনি। সব মিলিয়ে ৩৫টি। কতকত বোলারকে খেলেছেন। বল খেলেছেন, ১৩ হাজার ১৩৯। ছয় হাজারের বেশি রান করেছেন। তিনটি ডাবল সেঞ্চুরি নামের পাশে। সব কিছুর সাক্ষী এই রঙচটা ক্যাপ। পরম যত্নে এখনও বহন করেন লর্ডসে পাওয়া গৌরবের টুকরো। যা তাকে বারবার মনে করিয়ে দেয়, এই ক্যাপটার জন্যই তো কতো পরিশ্রম করা। কতো ঘাম ঝরানো। কত ঘুম ত্যাগ, কতো আনন্দ সময় বিসর্জন। সেজন্যই তো মাইলফলক ছোঁয়া দিনটাতে তার এই ক্যাপটাই কেড়ে নেয় সব আলো।
মুশফিকুর তার টেস্ট অভিষেক করেছিলেন মাহেন্দ্র সিং ধোনি, কেভিন পিটারসেন, মাইকেল হাসি এবং অ্যালিস্টার কুকেরও আগে। দুই দশক পরে, তিনিই একমাত্র খেলোয়াড় যিনি ২০০৫ সালে অভিষেকের পর এখনও টেস্ট ক্রিকেটে সক্রিয়। অথচ বাকি যে তিনজনের কথা বলা হলো তাদের দুজন পিটারসেন ১০৫ ও কুক ১৬১ টেস্ট খেলে অবসর নিয়ে নিয়েছেন। ধোনি সমসাময়িক সময়ে।
মুশফিকের পুরো ক্যারিয়ারকে দুটি ভাগে ভাগ করতে হবে। যেখানে একটি ভাগে শুধু নিজের সঙ্গে নিজের লড়াই। আরেকটিতে কেবল অর্জনের স্রোত।
২০০৫ থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত ৩০ ম্যাচে মাত্র ১৫৮৭ রান করেছিলেন। ব্যাটিং গড় ২৮.৮৫। সেঞ্চুরি মাত্র ১টি। প্রথম ১৫টি টেস্ট ইনিংসে, যা প্রায় তিন বছর জুড়ে ছিল, মুশফিকুর মাত্র চারবার দুই অঙ্কের স্কোরে পৌঁছান। তার গড় ৩০ স্পর্শ করেনি ২০১৩ সালের মার্চ পর্যন্ত। ৩১তম টেস্ট ম্যাচ খেলার পর মুশফিকুর খুঁজে পান নিজেকে। পায়ের নিচের মাটি শক্ত হয়। গলে মুশফিকুর করেন তার ক্যারিয়ারের প্রথম ডাবল সেঞ্চুরি।
২০১৩ থেকে ২০২৫ পর্যন্ত ৬৯ ম্যাচে ৪৭৬৪ রান মুশফিকুরের নামের পাশে। ব্যাটিং গড় ৪২.৫৩। সেঞ্চুরি অবিশ্বাস্য। যে তিনটি ডাবল সেঞ্চুরি, প্রতিটি এই সময়টাতেই।
নিশ্চিতভাবেই মুশফিকুর বাংলাদেশের সর্বকালের সেরা টেস্ট ব্যাটসম্যান হিসেবে গণ্য হবেন, যার দেরিতে উত্থান তাকে তার সমসাময়িক সেরা খেলোয়াড়দের মধ্যে স্থান দিয়েছে। তিনি যা যা করেছেন এবং যত দিন টিকে আছেন, তা নিজস্বভাবেই এক শ্রেষ্ঠত্ব।
ঢাকা/আমিনুল