অ্যানথ্রাক্স উপসর্গে স্বামীর মৃত্যু, সন্তান নিয়ে দিশাহারা ফেনসী
Published: 4th, October 2025 GMT
সংসারের সম্বল বলতে ছিল একটি ভ্যান ও একটি বিদেশি জাতের গরু। আবদুর রাজ্জাক ভ্যান চালিয়ে সংসার চালাতেন। গরুটির দেখভাল করতেন তাঁর স্ত্রী ফেনসী আক্তার। অভাবের সংসারে এভাবে খেয়ে-পরে চলছিল এই দম্পতি। হঠাৎ নেমে এল বিপদ। অ্যানথ্রাক্সের উপসর্গ নিয়ে মৃত্যু হয় রাজ্জাকের। তার চার দিন পর গরুটিও মারা যায়। স্বামীহারা ফেনসী পড়েন অকূলপাথারে।
ফেনসীদের বাড়ি রংপুরের পীরগাছা সদর ইউনিয়নের তালুক ইসাত গ্রামে। সম্প্রতি গ্রামে গিয়ে কথা হয় ফেনসীর শ্বশুর নূরুল হকের সঙ্গে। তাঁর ভাষ্য, ২০ জুলাই তাঁর চাচাতো ভাই মুকুল মিয়ার একটি গরু অসুস্থ হয়েছিল। ওই দিন সকালে তাঁর ছেলে রাজ্জাককে ডেকে নিয়ে যান মুকুল। রাজ্জাক গিয়ে দেখেন, গরুটি জবাই করা হয়েছে। সেই গরু কাটাকাটির সময় রাজ্জাকের একটি আঙুল সামান্য কেটে যায়। এরপর ওই দিন রাতে অসুস্থ হয়ে পড়েন রাজ্জাক।
চিকিৎসা-সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, গত জুলাইয়ে রাজ্জাকের অ্যানথ্রাক্স উপসর্গের বিষয়টি প্রথম জানাজানি হয়। একই সময়ে উপজেলার কয়েকটি ইউনিয়নে অর্ধশত ব্যক্তির শরীরে ঘা, পেটের পীড়াসহ অ্যানথ্রাক্সের বিভিন্ন উপসর্গ দেখা দেয়। কিন্তু তখন তেমন গুরুত্ব দেয়নি স্বাস্থ্য বিভাগ। ৬ সেপ্টেম্বর পীরগাছার পারুল ইউনিয়নে কমলা বেগম (৬৫) নামের এক নারী অ্যানথ্রাক্স উপসর্গে মারা যান। পরে সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট (আইইডিসিআর) অ্যানথ্রাক্স উপসর্গের রোগীদের নমুনা সংগ্রহ করলে পীরগাছায় আটজনসহ জেলায় মোট ১১ জনের অ্যানথ্রাক্স শনাক্ত হয়।
ঘটনার বর্ণনা দিয়ে ফেনসী আক্তার বলেন, ‘চাচি (মুকুলের স্ত্রী) স্যাভলন দিয়ে দিছে। রক্ত থামে নাই। উনি মাংস কোটাবাছা করে বাড়িতে ফিরে গোসল করে রোদে গিয়ে শুয়ে ছিল। রাতে বলতেছিল, শরীর চামাইতেছে। উনি ডাক্তারের (পল্লিচিকিৎসক) কাছে গিয়ে ওষুধ নিয়ে আসল। কিন্তু ওষুধ খেয়ে কিছু হলো না। পরদিন সকালবেলা আবার ওই চিকিৎসকের কাছে গিয়ে অন্য ওষুধ নিয়ে আসল। কিন্তুক ওই ওষুধ খায়াও কাজ হলো না।’
আরও পড়ুনপীরগাছায় ৮ জনের অ্যানথ্রাক্স শনাক্ত, রংপুরের আরও দুই উপজেলায় উপসর্গের রোগী৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৫ফেনসী আক্তারের ভাষ্য, ঘটনার এক দিন পর রাজ্জাকের বুকের এক পাশে ফুলে যায়। পরদিন স্বামীকে নিয়ে পীরগাছা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে যান। সেখান থেকে রাজ্জাককে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যেতে বলা হয়। কিন্তু হাতে টাকা না থাকায় সেদিন বাড়িতে ফিরিয়ে আনেন। এক দিন পর তাঁকে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে অবস্থার অবনতি হলে তাঁকে রংপুরের একটি বেসরকারি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আইসিইউতে রাখা হয়। ফেনসীর দাবি, তখন চিকিৎসকেরা তাঁকে জিজ্ঞাসা করেছিলেন, তাঁর স্বামী কসাই ছিলেন কি না?
অবশ্য টাকার অভাবে ওই হাসপাতালেও রাজ্জাকের আর চিকিৎসা করাতে পারেননি বলে দাবি করেন ফেনসী আক্তার। তিনি বলেন, ওই হাসপাতালের একজন নার্স তাঁকে বলেন, তাঁর (রাজ্জাক) বাঁচার সম্ভাবনা কম। হাসপাতালে এক দিন রাখলে এক লাখ টাকা দিতে হবে। এ কারণে তাঁকে পাশের ক্লিনিকে নেওয়ার কথা বলেন ওই নার্স। সেখানে নিলে রাতে রাজ্জাকের মৃত্যু হয়।
অ্যানথ্রাক্স একজন ব্যক্তির মৃত্যুর কারণ হতে পারে.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: প রগ ছ
এছাড়াও পড়ুন:
টাঙ্গাইল কারাগারে আ. লীগ নেতার মৃত্যু
টাঙ্গাইল কারাগারে কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের মির্জাপুর উপজেলার গোড়াই ইউনিয়নের এক নেতার মৃত্যু হয়েছে। বুধবার (২৬ নভেম্বর) মধ্যরাতে তিনি মারা যান।
বৃহস্পতিবার (২৭ নভেম্বর) দুপুরে কারাগারের জেলার মুহাম্মদ জাহেদুল আলম এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, তিনি হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে মারা গেছেন।
আরো পড়ুন:
সৌদি আরবে পুলিশের গুলিতে প্রবাসী নিহত, পরিবারে শোক
বিয়ে বাড়ির খাবার খেয়ে একজনের মৃত্যুর অভিযোগ, হাসপাতালে ১৭
মারা যাওয়া সুলতান মিয়া উপজেলার গোড়াই ইউনিয়নের হরিরপাড়া গ্রামের আজমত আলীর ছেলে। তিনি গোড়াই ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক সাধারণ সম্পাদক।
জেল কর্তৃপক্ষ জানায়, বুধবার মধ্যরাতে বুকে ব্যথা অনুভব করলে সুলতানকে টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানেই চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।
গত বছরের ৪ আগস্ট ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়ক-সংলগ্ন গোড়াই হাইওয়ে থানার সামনে ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলন’ চলাকালে পুলিশের ছররা গুলিতে গোড়াই ইউনিয়নের লালবাড়ি গ্রামের হিমেলের দুই চোখ অন্ধ হয়ে যায়। এ ঘটনায় হিমেলের মা নাছিমা বেগম বাদী হয়ে টাঙ্গাইল সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মির্জাপুর আমলি আদালতে মামলা করেন। সেই মামলায় পুলিশ, সাংবাদিক ও আওয়ামী লীগ নেতাসহ মোট ১০০ জনের নাম উল্লেখ এবং ৪০০-৫০০ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়।
মামলার এজাহারভুক্ত আসামি হিসেবে গত ২৮ অক্টোবর সুলতানকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। গ্রেপ্তারের পর প্রায় এক মাস তিনি টাঙ্গাইল জেলা কারাগারে ছিলেন।
জেলার মুহাম্মদ জাহেদুল আলম বলেন, “ময়নাতদন্ত ও আইনী প্রক্রিয়া শেষে মরদেহ পরিবারের কাছে দেওয়া হবে।”
ঢাকা/কাওছার/মাসুদ