এক রাতের বৃষ্টিতে দার্জিলিংয়ে ১৪ জনের মৃত্যু
Published: 5th, October 2025 GMT
এক রাতের বৃষ্টিতে ভারতের দার্জিলিংয়ে ১৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। রবিবার এনডিটিভি ও আনন্দবাজার অনলাইন এ তথ্য জানিয়েছে।
এনডিটিভি জানিয়েছে, মিরিকে লোহার সেতু ভেঙে পড়ে অন্তত ৯ জনের মৃত্যু হয়েছে। সুখিয়ায় মারা গিয়েছেন চার জন। একাধিক রাস্তায় ধস নেমে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়েছে। সিকিম ও কালিম্পঙের সঙ্গে যোগাযোগ সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে।
আনন্দবাজার অনলাইন জানিয়েছে, শনিবার রাত থেকে বৃষ্টি শুরু হয়। সকাল পর্যন্ত টানা বর্ষণে বিপর্যয় ঘটেছে। তিস্তার পানি বেড়ে উঠে এসেছে জাতীয় সড়কে। তিস্তাবাজারের কাছে ২৯ মাইল ভালুখোলায় তিস্তার পানি উঠে বন্ধ হয়ে গেছে ১০ নম্বর জাতীয় সড়ক। রাতে মিরিক এবং দুধিয়ার মাঝের লোহার সেতুর একাংশ বৃষ্টিতে ভেঙে গিয়েছে। তার ফলে শিলিগুড়ি থেকে মিরিকের যোগাযোগ বন্ধ। এমনকি, দার্জিলিং শহরের সঙ্গেও যোগাযোগ বিঘ্নিত হয়েছে, যা বেশ বিরল।
মিরিক থেকে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (কার্শিয়াং) বলেন, “মিরিকে পাঁচটি মৃতদেহ ইতিমধ্যে আমরা উদ্ধার করেছি। দু’টি দেহ আগে উদ্ধার করা হয়েছে। সুখিয়ায় আরও চার জনের মৃত্যুর কথা শুনেছি। উদ্ধারকাজ চলছে। তবে আবহাওয়ার কারণে তাতে খুব সমস্যা হচ্ছে। রোহিণীর রাস্তা পুরো বন্ধ। দিলারামের দিকটাও বন্ধ। মিরিকে যারা আটকে আছেন, তাদের বের করে আনার চেষ্টা করছি আমরা। বাসিন্দাদেরও উদ্ধার করা হচ্ছে।”
স্থানীয় প্রশাসন সূত্র জানিয়েছে, দিলারামের কাছে রাস্তায় ধস নেমেছে। দার্জিলিংয়ে যাতায়াতের প্রধান সড়ক সেই কারণে অবরুদ্ধ। এ ছাড়া, কালিম্পং ও সিকিমের দিকে যাওয়ার রাস্তা সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে গেছে।
শনিবার রাতের বৃষ্টিতে রোহিণী রোডের অবস্থাও করুণ। রাস্তার একাংশ ধসে নদীর দিকে নেমে গেছে। জিটিএ-র তরফে দুর্যোগ নিয়ে একটি নির্দেশিকা জারি করা হয়েছে রবিবার সকালে। সেখানে বলা হয়েছে, পর্যটকদের জন্য আপাতত রক গার্ডেন এবং টাইগার হিল বন্ধ। দুর্যোগে পর্যটকদের সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে।
ঢাকা/শাহেদ
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর জন র ম ত য উদ ধ র
এছাড়াও পড়ুন:
পূজার ছুটিতে বান্দরবানে পর্যটকের ভিড়
চারপাশে সবুজ পাহাড়, আঁকাবাঁকা পথ আর পাহাড়চূড়ায় ভেসে থাকা মেঘ যেন প্রকৃতির অনিন্দ্য সুন্দর এক ক্যানভাস। বর্ষা মৌসুমে এ দৃশ্য আরো মোহনীয় হয়ে ওঠে। আকাশ আর পাহাড়ের মিলনে সৃষ্টি হয় অপরূপ প্রাকৃতিক দৃশ্যপট, যা ভ্রমণপিপাসু ও প্রকৃতিপ্রেমীদের কাছে বিশেষ আকর্ষণ হয়ে ওঠে। এই সৌন্দর্যের টানেই ছুটে আসেন হাজারো মানুষ পাহাড়কন্যা বান্দরবানে।
এবারের শারদীয় দুর্গোৎসবকে কেন্দ্র করে টানা চার দিন সরকারি ছুটির দ্বিতীয় দিনেও বান্দরবানে পর্যটকদের উপচে পড়া ভিড়। হোটেল, রিসোর্ট, কটেজ কোথাও সিট খালি নেই। শহরের প্রতিটি হোটেল, মোটেল, রিসোর্ট ও কটেজে শতভাগ বুকিং হয়ে গেছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় আবাসিক হোটেল ব্যবসায়ীরা।
এদিকে, সম্প্রতি পার্বত্য জেলা খাগড়াছড়িতে সহিংসতার কারণে পর্যটকরা সেদিক থেকে কিছুটা মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন। ফলে, বিকল্প হিসেবে নিরাপদ ও মনোরম পর্যটন স্পট বান্দরবানই হয়ে উঠেছে ভ্রমণপিপাসুদের অন্যতম পছন্দ। প্রাকৃতিক সৌন্দর্য আর উৎসবের উচ্ছ্বাস মিলে যেন নতুন প্রাণ সঞ্চার হয়েছে পর্যটন কেন্দ্রগুলোতে।
বান্দরবান শহরের আশপাশের জনপ্রিয় পর্যটন স্পটগুলোতে দেখা গেছে পর্যটকদের ভিড়। নীলাচল, শৈলপ্রপাত, গোল্ডেন মন্দির এবং মেঘলা পর্যটন কেন্দ্রে ভ্রমণপিপাসুরা দল বেঁধে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। খোলা জিপে (চাদের গাড়ি) বা বন্ধুদের সাথে মোটরসাইকেলে চেপে ছুটে যাচ্ছেন গন্তব্যের পথে। পাহাড়ের চূড়ায় গোল টেবিলে বসে কেউ কেউ আড্ডায় মেতে উঠেছেন। স্মরণীয় মুহূর্তগুলো ধরে রাখতে দর্শনার্থীরা স্মৃতি হিসেবে তা ক্যামেরাবন্দি করে রাখছেন।
বান্দরবানের মেঘলা পর্যটন স্পটে কথা হয় ঢাকা থেকে আসা পর্যটক মোহাম্মদ জামাল উদ্দিনের সঙ্গে। তিনি বলেন, সময় পেলেই আমি বান্দরবানে ছুটে আসি। প্রকৃতির যে অপরূপ সৌন্দর্য এখানে, না এলে কেউ তা উপলব্ধি করতে পারবেন না। সত্যিই বাংলাদেশের প্রকৃতির আসল রূপ লুকিয়ে আছে এই পাহাড়ে। আমার মনে হয়, পাহাড়ে ঘুরতে চাইলে বান্দরবানই সবচেয়ে উপযুক্ত জায়গা।
আরেক পর্যটক রফিকুল আলম বলেন, এখনো বর্ষার রঙে রঙিন পাহাড়। ভরে আছে সবুজে। পাহাড় একেক সময় একেক রূপ ধারণ করে। ঝর্ণাগুলোও দারুণ। রুপালি ঝর্ণা ও শৈলপ্রপাত দেখছি। স্রোতের মতো পানি ওপর থেকে টুপটাপ নেমে আসছে। এমন মনোরম পরিবেশে ঘুরে বেড়ানো সত্যিই অসাধারণ।
খুলনা থেকে ঘুরতে আসা পর্যটক নজরুল ইসলাম বলেন, পূজার ছুটিতে পরিবারকে নিয়ে প্রথমবারের মতো বান্দরবান ভ্রমণে এসেছি। পাহাড়ের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য সত্যিই আমাদের মুগ্ধ করেছে। বিশেষ করে, আমার ছোট ছেলে পাহাড়ঘেরা এই মনোরম পরিবেশে দেখে আনন্দে আত্মহারা হয়ে পড়েছে। তার উচ্ছ্বাস আর হাসিখুশি মুখ দেখে আমারও মন ভরে যাচ্ছে।
বান্দরবান জেলা আবাসিক হোটেল-মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক জসীম উদ্দিন জানিয়েছেন, গত ৬ জুন রুমার বগা লেক এবং থানচির তিন্দু ও তুমাতুঙ্গি এলাকায় ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করা হয়। এর পর থেকে পর্যটকের সংখ্যা বেড়েছে। কেওক্রাডং খোলার পর পর্যটক আরো বেড়েছে।
তিনি আরো জানান, দুর্গাপূজার ছুটিতে প্রচুর পর্যটক বান্দরবানে এসেছেন। হোটেল-মোটেলগুলো ১ অক্টোবর থেকে ৪ অক্টোবর পর্যন্ত শতভাগ বুকিং হয়েছে।
থানচির নাফাখুম পর্যটকদের জন্য দ্রুত উন্মুক্ত করার দাবি জানিয়েছেন বান্দরবান জেলা আবাসিক হোটেল-মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক জসীম উদ্দিন।
পর্যটকদের নিরাপত্তার বিষয়ে বান্দরবান জেলা ট্যুরিস্ট পুলিশ সুপার (ভারপ্রাপ্ত) মোহাম্মদ হাসান ইকবাল চৌধুরী বলেছেন, শারদীয়া দুর্গাপূজার ছুটিতে বান্দরবানে প্রচুর পর্যটকের সমাগম হয়েছে। বান্দরবানের মেঘলা, নীলাচল, প্রান্তিক লেকসহ বিভিন্ন পর্যটন স্পটে পর্যটকদের নিরাপত্তার জন্য টহল অব্যাহত রয়েছে। সাদা পোশাকেও তদারকি চলছে।
তিনি বলেন, বান্দরবানে কিছু দুর্গম অঞ্চল আছে। সেখানে সেনাবাহিনী ও পুলিশের সমন্বয়ে পর্যটকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হচ্ছে। আশা করছি, যারা বান্দরবানে ঘুরতে আসছেন, তারা নিরাপদে ভ্রমণ করতে পারবেন।
ঢাকা/চাইমং/রফিক