আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগে তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের কাজ শুরুর দাবিতে রংপুরে পদযাত্রা করেছে তিস্তা নদী রক্ষা আন্দোলন। একই দাবিতে রংপুরের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ রবিউল ফয়সালের মাধ্যমে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা বরাবর একটি স্মারকলিপি দেওয়া হয়েছে।

আজ রোববার বেলা একটার দিকে পূর্বঘোষিত কর্মসূচির অংশ হিসেবে আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী ও বিএনপির রংপুর বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক আসাদুল হাবীবের নেতৃত্বে এ পদযাত্রা করা হয়। নগরের শিক্ষা ভবনের প্রধান ফটকের সামনে থেকে পদযাত্রা শুরু করে জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে গিয়ে শেষ হয়। এরপর আসাদুল হাবীবসহ রংপুর জেলা ও মহানগর বিএনপির নেতারা জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে প্রধান উপদেষ্টা বরাবর স্মারকলিপি দেন।

আসাদুল হাবীব বলেন, অন্তর্বর্তী সরকার মাঝেমধ্যে বলছে তিস্তা মহাপরিকল্পনার কাজ শুরু হবে। কিন্তু কখন শুরু হবে, কীভাবে শুরু হবে, সেটি স্পষ্ট করেনি। সে জন্য তাঁরা বাধ্য হয়ে আন্দোলনে নেমেছেন।

রংপুর ছাড়াও তিস্তা নদীবেষ্টিত অন্য চার জেলার জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে প্রধান উপদেষ্টার কাছে স্মারকলিপি দেওয়া হয়েছে বলে জানান তিস্তা নদী রক্ষা আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী। আসাদুল হাবীব বলেন, একই দাবিতে ৯ অক্টোবর গণমিছিল ও গণসমাবেশ, ১৬ অক্টোবর তিস্তা অববাহিকার ১৩০ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে মশাল প্রজ্বালন কর্মসূচি করা হবে। এসব শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের পরও যদি সরকার দাবি বাস্তবায়নে উদ্যোগী না হয়, তবে লাগাতার কর্মসূচি দেওয়া হবে।

আসাদুল হাবীব উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, সরকার জানুয়ারিতে তিস্তা মহাপরিকল্পনার কাজ শুরু হবে বলে বলছে। কিন্তু নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা হলে সেই কাজ ঝুলে যেতে পারে। সরকার যেহেতু এ প্রকল্প বাস্তবায়নে টাকা দিতে চেয়েছে, তাই অভ্যন্তরীণ অর্থ দিয়ে তিস্তা মহাপরিকল্পনার কাজ শুরু করা হোক।

পদযাত্রা ও স্মারকলিপি প্রদান কর্মসূচিতে রংপুর মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক সামসুজ্জামান, সদস্যসচিব মাহফুজ-উন-নবী, জেলা বিএনপির আহ্বায়ক সাইফুল ইসলাম, সদস্যসচিব আনিছুর রহমান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: আস দ ল হ ব ব স ম রকল প পদয ত র ব এনপ র সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

নীলফামারীতে বিপৎসীমার ওপরে তিস্তার পানি, রেড অ্যালার্ট

ভারী বর্ষণ ও উজানের পাহাড়ি ঢলে নীলফামারী জেলার ওপর দিয়ে প্রবাহিত তিস্তা নদীর পানি আবারও বৃদ্ধি পেয়ে বিপৎসীমার ১৩ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে তিস্তা তীরবর্তী এলাকায় রেড অ্যালার্ট জারি করেছে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)।

রোববার সকাল ছয়টায় লালমনিরহাট জেলার দোয়ানীতে অবস্থিত তিস্তা ব্যারাজ পয়েন্টে তিস্তা নদীর পানি বিপৎসীমার ৭২ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হয়। ১২ ঘণ্টার ব্যবধানের সন্ধ্যা ছয়টায় সেখানে ৮৫ সেন্টিমিটার পানি বৃদ্ধি পেয়ে বিপৎসীমার ১৩ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল।

ওই পয়েন্টে তিস্তা নদীর বিপৎসীমা ৫২ দশমিক ১৫ মিটার। সকাল ৬টায় প্রবাহিত হচ্ছিল ৫১ দশমিক ৪৩ মিটার দিয়ে। সন্ধ্যা ছয়টায় সেখানে প্রবাহিত হচ্ছিল ৫২ দশমিক ২৮ মিটার দিয়ে। তিস্তা নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় তিস্তার ডান তীরের বাঁধে ভাঙন দেখা দিয়েছে। সেখানে বাশের পাইলিং করে বালির বস্তা নিক্ষেপ করছে পাউবো।

তিস্তার তীরবর্তী ডিমলা উপজেলার পূর্ব ছাতনাই, পশ্চিম ছাতনাই, খগাখড়িবাড়ি, টেপাখড়িবাড়ি, গয়াবাড়ি, খালিশাচাপানী ও ঝুনাগাছ চাপানী ইউনিয়নের ১৫টি গ্রাম এবং চরাঞ্চলের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়ে বাড়িঘরে পানি উঠতে শুরু করেছে। পানি বৃদ্ধি অব্যাহত আছে।

ডিমলা উপজেলার পূর্ব ছাতনাই ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবদুল লতিফ খান জানান, রোববার দুপুরের পর থেকে তিস্তা নদীর পানি বৃদ্ধি পেতে থাকে, যা অব্যাহত আছে। তিস্তার পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় ইউনিয়নের ঝাড় সিংহেরস্বর ও পূর্ব ছাতনাই গ্রামের বোল্ডারের চর, খোকার চর, খাড়াপাড়া, ফ্লাটপাড়াসহ তিস্তাপারের বিভিন্ন চরের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়ে বাড়িঘরে পানি উঠতে শুরু করেছে। টেপাখড়িবাড়ি ইউনিয়নের ইউপি চেয়ারম্যান রবিউল ইসলাম বলেন, দুপুরের পর থেকে তিস্তা নদীর পানি দ্রুতগতিতে বৃদ্ধি পাচ্ছে। বিস্তীর্ণ এলাকার রোপা আমন খেত তলিয়ে গেছে। বিভিন্ন বাড়িঘরে পানি উঠতে শুরু করেছে।

পানি উন্নয়ন বোর্ড ডালিয়া ডিভিশনের বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের সূত্রমতে, রোববার সকাল ছয়টায় লালমনিরহাট জেলার দোয়ানীতে অবস্থিত তিস্তা ব্যারাজ পয়েন্টে তিস্তা নদীর পানি ৫১ দশমিক ৪৩ মিটার, সকাল ৯টায় ৫১ দশমিক ৪৮ মিটার, দুপুর ১২টায় ৫২ মিটার, বেলা তিনটায় ৫২ দশমিক ১৪ মিটার এবং সন্ধ্যা ৬টায় ৫২ দশমিক দশমিক ২৮ মিটার দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল তিস্তা নদীর পানি।

পানি উন্নয়ন বোর্ড ডালিয়া ডিভিশনের নির্বাহী প্রকৌশলী অমিতাভ চৌধুরী বলেন, ভারী বর্ষণ ও উজানের পাহাড়ি ঢলে তিস্তা নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। রোববার সকাল ছয়টায় বিপৎসীমার ৪৩ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হলেও সন্ধ্যা ৬টায় ৮৫ সেন্টিমিটার পানি বৃদ্ধি পেয়ে বিপৎসীমার ১৩ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। পানি বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে তিস্তা নদীর জিরো পয়েন্টের কাছাকাছি কালীগঞ্জ নামের স্থানে তিস্তার ডান তীরের প্রধান বাঁধে ভাঙন দেখা দিয়েছে। সেটির মেরামতকাজ চলছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে ব্যারাজের সব কটি (৪৪ টি) জলকপাট খুলে রাখা হয়েছে। তিনি জানান, তিস্তা তীরবর্তী এলাকায় রেড অ্যালার্ট জারি করে সন্ধ্যায় মাইকিং করা হয়েছে। রাত ৮টার দিকে পানি বিপৎসীমার ২৩ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল।

সম্পর্কিত নিবন্ধ