ফ্রিল্যান্সিং প্রশিক্ষণ নেওয়ার সময়েই মারুফা আমিনের আয় ৯৫০ ডলার
Published: 5th, October 2025 GMT
পটুয়াখালী জেলার সদর থানার ইটবাড়িয়া ইউনিয়নের চান্দখালী গ্রামের মেয়ে মারুফা আমিন। পটুয়াখালী সরকারি কলেজের এই শিক্ষার্থী সম্প্রতি ব্যবস্থাপনা বিভাগ থেকে সম্মান ডিগ্রি অর্জন করেছেন। মেয়েকে নিয়ে বাবা রুহুল আমিন থাকেন পটুয়াখালীর সবুজবাগ এলাকায়।
‘দেশের ৪৮ জেলায় শিক্ষিত কর্মপ্রত্যাশী যুবদের ফ্রিল্যান্সিং প্রশিক্ষণের মাধ্যমে কর্মসংস্থান সৃষ্টি’ প্রকল্পের আওতায় প্রশিক্ষণ নেওয়ার সময় ৩ মাসে তিনি ৯৫০ মার্কিন ডলার বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করেছেন। আজ রোববার সচিবালয়ে প্রকল্পের চতুর্থ ব্যাচের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে মারুফা আমিন এ তথ্য জানান। যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয় এ প্রশিক্ষণের আয়োজন করে।
৯৫০ ডলার আয় করা মারুফা আমিনের সঙ্গে প্রথম আলোর পক্ষ থেকে আজ মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হয়। তিনি জানান, গ্রাফিকস ও ওয়েব ডেভেলপমেন্ট করে চারটা অর্ডার থেকে তিনি এ আয় করেছেন। যুক্তরাষ্ট্র, তানজানিয়া, যুক্তরাজ্য ইত্যাদি দেশ থেকে ছোট ছোট কাজ পেয়েই এ আয় করেন তিনি।
মারুফা আমিনের কাছে প্রশ্ন ছিল, প্রশিক্ষণ নেওয়ার পর সবাই আয় করতে পারছেন না কেন? জবাবে তিনি বলেন, শুধু একটা কম্পিউটারের অভাব। সবার আসলে একটা করে ল্যাপটপ বা ডেস্কটপ নেই। সহজ শর্তে অন্তত একটা ল্যাপটপ কেনার ব্যবস্থা থাকলে স্বাবলম্বী হওয়া সহজ হতো। আর ইংরেজি জ্ঞানটা ভালো জানা থাকলে কাজ পেতে সুবিধা হয়।
কী প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়
যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের উদ্যোগে ৩০০ কোটি টাকা ব্যয়ের এ প্রকল্প শুরু হয় ২০২৫ সালের ১ জানুয়ারি। ২০২৬ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে সমাপ্ত হবে এ প্রকল্প। প্রকল্প মেয়াদে ৪৮ জেলায় ২৮ হাজার ৮০০ জন যুবক ও যুব নারীকে ফ্রিল্যান্সিং প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। জানুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত তিন মাস করে মোট ৯ মাসে ৭ হাজার ২০০ জনকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। প্রতি ব্যাচে ছিলেন ২ হাজার ৪০০ জন করে। চতুর্থ ব্যাচে ভর্তি করা হয়েছে একটু বেশি, অর্থাৎ ৩ হাজার ৬০০ জন। এ ব্যাচেরই উদ্বোধন হয় আজ।
যেসব বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়, সেগুলো হলো কম্পিউটার অফিস অ্যাপ্লিকেশন, ফ্রিল্যান্সিং, বেসিক ইংলিশ, ডিজিটাল মার্কেটিং, সফটস্কিল ট্রেনিং, স্মার্টফোনের মাধ্যমে ফ্রিল্যান্সিং প্রশিক্ষণ, গ্রাফিকস ডিজাইন ও ডিভিও এডিটিং।
প্রতিটি জেলায় তিনটি করে ব্যাচে ৭৫ জন করে প্রশিক্ষণার্থীর প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। চতুর্থ ব্যাচের প্রশিক্ষণ নিতে অনলাইনে আবেদন জমা পড়ে ৯২ হাজার ৭৬৩টি। এর মধ্যে ৪০ হাজার ৭৫৮ জনকে ভর্তি পরীক্ষার জন্য যোগ্য বিবেচনা করা হয়। লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষা শেষে চূড়ান্ত করা হয় ৩ হাজার ৬০০ জনকে। দৈনিক ৮ ঘণ্টা করে ৩ মাস ব্যাপী মোট ৬০০ ঘণ্টার প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে।
জানা গেছে, মারুফা আমিনের মতো প্রশিক্ষণ নেওয়া ৭ হাজার ২০০ জন থেকে ৬৩ শতাংশ, অর্থাৎ ৪ হাজার ৫৬৭ জন প্রশিক্ষণরত অবস্থাতেই আয় করেছেন ১০ কোটি ১৩ লাখ টাকার সমান বৈদেশিক মুদ্রা। প্রশিক্ষণ শেষে অনলাইন ফ্রিল্যান্সিং, ডিজিটাল মার্কেটিং ও সফটওয়্যার–সংশ্লিষ্ট কাজে প্রশিক্ষণার্থীরা দক্ষতা অর্জন করছেন। দেশের ৪৮ জেলার তরুণদের জন্য এটি একটি বড় সুযোগ, যা দীর্ঘ মেয়াদে কর্মসংস্থান ও বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনে ভূমিকা রাখবে।
প্রকল্পের কাজ পাওয়া প্রতিষ্ঠান ই-লার্নিং অ্যান্ড আর্নিংয়ের এমডি মাসুদ আলম প্রথম আলোকে বলেন, ‘প্রশিক্ষণ দেওয়ার জন্য দেশের বিভিন্ন জেলায় প্রশিক্ষণ কেন্দ্র গড়ে তুলেছি। শুধু তা–ই নয়, দিনের ক্লাসের পাশাপাশি নৈশ ক্লাসের ব্যবস্থাও করেছি। প্রশিক্ষণ নিয়েও যাঁরা আয় করতে পারছেন না, তাঁদের বিনা মূল্যে আলাদা করে সময় দেওয়া হচ্ছে।’
আজকের অনুষ্ঠান শেষে যুব ও ক্রীড়াসচিব মাহবুব-উল-আলম প্রথম অলোকে বলেন, ‘এটা আমাদের একটা সিগনেচার প্রকল্প। আমরা চাই প্রশিক্ষণার্থীরা এ প্রকল্পের আওতায় প্রশিক্ষণ নিয়ে স্বাবলম্বী হবেন। যে উদ্দীপনা আমরা দেখেছি, আশা করছি, বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের উল্লেখযোগ্য খাত হতে পারে এই ফ্রিল্যান্সিং।’
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক গাজী মো.
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: প রকল প র অন ষ ঠ ন ব যবস থ আম ন র কর ছ ন
এছাড়াও পড়ুন:
অ্যানথ্রাক্স প্রতিরোধে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের জরুরি ও সমন্বিত কার্যক্রম শুরু
অ্যানথ্রাক্স প্রতিরোধে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর জরুরি ও সমন্বিত কার্যক্রম শুরু করেছে। দেশের বিভিন্ন জেলায় গবাদিপশুর মধ্যে অ্যানথ্রাক্স (তড়কা) রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা দেওয়ায় রোগটির বিস্তার রোধ ও নিয়ন্ত্রণে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের অধীন প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর এ জরুরি ও সমন্বিত কার্যক্রম গ্রহণ করে।
অ্যানথ্রাক্স একটি ব্যাকটেরিয়াজনিত জুনোটিক রোগ, যা গবাদিপশু থেকে মানুষের মধ্যে সংক্রমিত হতে পারে। এ পরিপ্রেক্ষিতে স্থানীয় প্রাণিসম্পদ দপ্তর ও স্থানীয় প্রশাসনের সমন্বয়ে গবাদিপশুর টিকাদান, স্বাস্থ্য পরীক্ষা, উঠান বৈঠক, পথসভা, লিফলেট বিতরণ ও মাইকিং কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে।
প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর গবাদিপশুর তড়কা রোগ প্রতিরোধে জাতীয় দৈনিকে বিজ্ঞাপন প্রকাশ এবং স্থানীয় প্রশাসনের সহযোগিতায় সচেতনতা কার্যক্রম জোরদার করেছে।
পাশাপাশি মাঠপর্যায়ে আক্রান্ত এলাকা পর্যবেক্ষণ, অসুস্থ পশু জবাই প্রতিরোধ এবং খামারের প্রতিটি পশুকে টিকার আওতায় আনতে বিশেষ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
‘ওয়ান হেলথ’ কর্মসূচির আওতায় স্থানীয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সঙ্গে সমন্বয় করে জনসচেতনতা বৃদ্ধির কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে। প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা নিয়মিত উঠান বৈঠক ও প্রশিক্ষণ কর্মশালার মাধ্যমে জনগণকে সচেতন করছেন।
অসুস্থ পশু জবাই না করা, মৃত পশুকে খোলা স্থানে বা পানিতে না ফেলে বরং গভীরভাবে মাটিচাপা দেওয়া এবং যেকোনো পশুজনিত অসুস্থতার ক্ষেত্রে দ্রুত নিকটস্থ ভেটেরিনারি হাসপাতাল বা প্রাণিসম্পদ দপ্তরের সঙ্গে যোগাযোগের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।
রংপুর ও গাইবান্ধা জেলাকে অ্যানথ্রাক্স–প্রবণ এলাকা হিসেবে চিহ্নিত করে বিশেষ টিকাদান কর্মসূচি বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। অতিসত্বর প্রাণিসম্পদ গবেষণাপ্রতিষ্ঠান (এলআরআই) রংপুর বিভাগে প্রায় ৩০ লক্ষ অ্যানথ্রাক্স টিকা সরবরাহ করবে, যার মধ্যে রংপুর ও গাইবান্ধা জেলাতেই ২০ লাখ টিকা প্রেরণ করা হবে।
রংপুর জেলার ৯টি উপজেলায় পীরগাছা (৫৩,৪০০), কাউনিয়া (৩৪,০০০), রংপুর সদর (২৬,৫০০), মিঠাপুকুর (৩৪,৫০০), গংগাচড়া (৪,৮০০), তারাগঞ্জ (৪,৩০০), বদরগঞ্জ (৫,০০০) ও পীরগঞ্জ (৫,০০০) এ পর্যন্ত মোট ১ লাখ ৬৭ হাজার গরুর শরীরে টিকা দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া উঠান বৈঠক, পথসভা এবং প্রশিক্ষণ ও মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। জেলার ৩৬টি কসাইখানায় গবাদিপশুর স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য ৩৬টি মেডিকেল টিম গঠন করা হয়েছে। এ ছাড়া গবাদিপশুর শরীরে অ্যানথ্রাক্স টিকা প্রদানের জন্য ৩২টি মেডিকেল টিম গঠন করা হয়েছে।
গাইবান্ধা জেলার সুন্দরগঞ্জ উপজেলায় ২৬ হাজার ৪০০ গরুর শরীরে টিকা দেওয়া হয়েছে। আক্রান্ত এলাকায় দ্রুত প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা হিসেবে মৃত গরু পুঁতে ফেলা, টিকাদান, মাইকিং, উঠান বৈঠক এবং লিফলেট বিতরণ কার্যক্রম সম্পন্ন হয়েছে।
স্থানীয় প্রশাসনের সহায়তায় মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করে ১৫ হাজার টাকা জরিমানা আদায় করা হয়েছে এবং ৫টি ভেটেরিনারি মেডিকেল টিম গঠন করা হয়েছে।