পটুয়াখালী জেলার সদর থানার ইটবাড়িয়া ইউনিয়নের চান্দখালী গ্রামের মেয়ে মারুফা আমিন। পটুয়াখালী সরকারি কলেজের এই শিক্ষার্থী সম্প্রতি ব্যবস্থাপনা বিভাগ থেকে সম্মান ডিগ্রি অর্জন করেছেন। মেয়েকে নিয়ে বাবা রুহুল আমিন থাকেন পটুয়াখালীর সবুজবাগ এলাকায়।

‘দেশের ৪৮ জেলায় শিক্ষিত কর্মপ্রত্যাশী যুবদের ফ্রিল্যান্সিং প্রশিক্ষণের মাধ্যমে কর্মসংস্থান সৃষ্টি’ প্রকল্পের আওতায় প্রশিক্ষণ নেওয়ার সময় ৩ মাসে তিনি ৯৫০ মার্কিন ডলার বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করেছেন। আজ রোববার সচিবালয়ে প্রকল্পের চতুর্থ ব্যাচের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে মারুফা আমিন এ তথ্য জানান। যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয় এ প্রশিক্ষণের আয়োজন করে।

৯৫০ ডলার আয় করা মারুফা আমিনের সঙ্গে প্রথম আলোর পক্ষ থেকে আজ মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হয়। তিনি জানান, গ্রাফিকস ও ওয়েব ডেভেলপমেন্ট করে চারটা অর্ডার থেকে তিনি এ আয় করেছেন। যুক্তরাষ্ট্র, তানজানিয়া, যুক্তরাজ্য ইত্যাদি দেশ থেকে ছোট ছোট কাজ পেয়েই এ আয় করেন তিনি।

মারুফা আমিনের কাছে প্রশ্ন ছিল, প্রশিক্ষণ নেওয়ার পর সবাই আয় করতে পারছেন না কেন? জবাবে তিনি বলেন, শুধু একটা কম্পিউটারের অভাব। সবার আসলে একটা করে ল্যাপটপ বা ডেস্কটপ নেই। সহজ শর্তে অন্তত একটা ল্যাপটপ কেনার ব্যবস্থা থাকলে স্বাবলম্বী হওয়া সহজ হতো। আর ইংরেজি জ্ঞানটা ভালো জানা থাকলে কাজ পেতে সুবিধা হয়।

কী প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়

যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের উদ্যোগে ৩০০ কোটি টাকা ব্যয়ের এ প্রকল্প শুরু হয় ২০২৫ সালের ১ জানুয়ারি। ২০২৬ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে সমাপ্ত হবে এ প্রকল্প। প্রকল্প মেয়াদে ৪৮ জেলায় ২৮ হাজার ৮০০ জন যুবক ও যুব নারীকে ফ্রিল্যান্সিং প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। জানুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত তিন মাস করে মোট ৯ মাসে ৭ হাজার ২০০ জনকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। প্রতি ব্যাচে ছিলেন ২ হাজার ৪০০ জন করে। চতুর্থ ব্যাচে ভর্তি করা হয়েছে একটু বেশি, অর্থাৎ ৩ হাজার ৬০০ জন। এ ব্যাচেরই উদ্বোধন হয় আজ।

যেসব বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়, সেগুলো হলো কম্পিউটার অফিস অ্যাপ্লিকেশন, ফ্রিল্যান্সিং, বেসিক ইংলিশ, ডিজিটাল মার্কেটিং, সফটস্কিল ট্রেনিং, স্মার্টফোনের মাধ্যমে ফ্রিল্যান্সিং প্রশিক্ষণ, গ্রাফিকস ডিজাইন ও ডিভিও এডিটিং।

প্রতিটি জেলায় তিনটি করে ব্যাচে ৭৫ জন করে প্রশিক্ষণার্থীর প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। চতুর্থ ব্যাচের প্রশিক্ষণ নিতে অনলাইনে আবেদন জমা পড়ে ৯২ হাজার ৭৬৩টি। এর মধ্যে ৪০ হাজার ৭৫৮ জনকে ভর্তি পরীক্ষার জন্য যোগ্য বিবেচনা করা হয়। লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষা শেষে চূড়ান্ত করা হয় ৩ হাজার ৬০০ জনকে। দৈনিক ৮ ঘণ্টা করে ৩ মাস ব্যাপী মোট ৬০০ ঘণ্টার প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে।

জানা গেছে, মারুফা আমিনের মতো প্রশিক্ষণ নেওয়া ৭ হাজার ২০০ জন থেকে ৬৩ শতাংশ, অর্থাৎ ৪ হাজার ৫৬৭ জন প্রশিক্ষণরত অবস্থাতেই আয় করেছেন ১০ কোটি ১৩ লাখ টাকার সমান বৈদেশিক মুদ্রা। প্রশিক্ষণ শেষে অনলাইন ফ্রিল্যান্সিং, ডিজিটাল মার্কেটিং ও সফটওয়্যার–সংশ্লিষ্ট কাজে প্রশিক্ষণার্থীরা দক্ষতা অর্জন করছেন। দেশের ৪৮ জেলার তরুণদের জন্য এটি একটি বড় সুযোগ, যা দীর্ঘ মেয়াদে কর্মসংস্থান ও বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনে ভূমিকা রাখবে।

প্রকল্পের কাজ পাওয়া প্রতিষ্ঠান ই-লার্নিং অ্যান্ড আর্নিংয়ের এমডি মাসুদ আলম প্রথম আলোকে বলেন, ‘প্রশিক্ষণ দেওয়ার জন্য দেশের বিভিন্ন জেলায় প্রশিক্ষণ কেন্দ্র গড়ে তুলেছি। শুধু তা–ই নয়, দিনের ক্লাসের পাশাপাশি নৈশ ক্লাসের ব্যবস্থাও করেছি। প্রশিক্ষণ নিয়েও যাঁরা আয় করতে পারছেন না, তাঁদের বিনা মূল্যে আলাদা করে সময় দেওয়া হচ্ছে।’

আজকের অনুষ্ঠান শেষে যুব ও ক্রীড়াসচিব মাহবুব-উল-আলম প্রথম অলোকে বলেন, ‘এটা আমাদের একটা সিগনেচার প্রকল্প। আমরা চাই প্রশিক্ষণার্থীরা এ প্রকল্পের আওতায় প্রশিক্ষণ নিয়ে স্বাবলম্বী হবেন। যে উদ্দীপনা আমরা দেখেছি, আশা করছি, বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের উল্লেখযোগ্য খাত হতে পারে এই ফ্রিল্যান্সিং।’

অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক গাজী মো.

সাইফুজ্জামান, যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব মো. আবুল হাসান এবং ই-লার্নিং অ্যান্ড আর্নিং লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মাসুদ আলম। প্রকল্প পরিচালক মো. মানিকহার রহমানের সভাপতিত্বে মারুফা আমিনের পাশাপাশি অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন তৃতীয় ব্যাচের আরেক প্রশিক্ষণার্থী নরসিংদীর এমদাদুল হক, চতুর্থ ব্যাচের দুই প্রশিক্ষণার্থী যশোরের স্বর্ণালী আক্তার এবং ফেনীর বিতনু সাহা।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: প রকল প র অন ষ ঠ ন ব যবস থ আম ন র কর ছ ন

এছাড়াও পড়ুন:

চিত্রকর্মটি বিক্রি হলো ২,৮৯১ কোটি টাকায়

পোর্ট্রেট অব এলিজাবেথ লেডেরার এখন সবচেয়ে বেশি দামে বিক্রি হওয়া চিত্রকর্মের তালিকায় দ্বিতীয় অবস্থানে চলে এসেছে। প্রথমে রয়েছে জগদ্বিখ্যাত ইতালিয়ান শিল্পী লেওনার্দো দা ভিঞ্চির আঁকা ‘সালভাতর মুন্দি’। যিশুখ্রিষ্টকে নিয়ে আঁকা চিত্রকর্মটি ২০১৭ সালে ৪৫ কোটি ৩০ লাখ ডলারে বিক্রি হয়েছিল।

পোর্ট্রেট অব এলিজাবেথ লেডেরার আঁকা হয় ১৯১৪ থেকে ১৯১৬ সালের মধ্যে। অস্ট্রিয়ার প্রভাবশালী ইহুদি পরিবারের মেয়ে এলিজাবেথ লেডেরারের বাবা অগাস্ট লেডেরার ছিলেন ক্লিমটের বড় পৃষ্ঠপোষক। ১৯৩৮ সালে অস্ট্রিয়া দখলের সময় চিত্রকর্মটি জব্দ করে নাৎসি বাহিনী। আশির দশকে সেটি আবার চিত্রকর্মের বাজারে আসে। তখন থেকেই এটি ব্যক্তিগত সংগ্রহশালায় ছিল।

গুস্তাফ ক্লিমট

সম্পর্কিত নিবন্ধ