নতুন ব্যাংক শুরুতে থাকবে সরকারি, পরে হবে বেসরকারি
Published: 8th, October 2025 GMT
পাঁচ বেসরকারি ব্যাংক একীভূত করে নতুন যে শরিয়াহভিত্তিক ব্যাংক গঠন করা হচ্ছে, সেটি শুরুর দিকে হবে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন। অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগ থাকবে প্রস্তাবিত এ ব্যাংকের মালিকানায়। পরে সময় বুঝে ব্যাংকটিকে বেসরকারি মালিকানায় হস্তান্তর করা হবে। যে পাঁচ ব্যাংককে নিয়ে নতুন ব্যাংক হবে সেগুলো হচ্ছে—ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী, গ্লোবাল ইসলামী, ইউনিয়ন, এক্সিম ও সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক।
প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে আগামীকাল বৃহস্পতিবার অনুষ্ঠেয় উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে এ বিষয়ে নীতিগত সিদ্ধান্ত হওয়ার কথা রয়েছে।
পাঁচ শরিয়াহভিত্তিক ব্যাংকের একীভূত কার্যক্রম বাস্তবায়নে গত ৮ সেপ্টেম্বর আট সদস্যের একটি ওয়ার্কিং কমিটি গঠন করেছে সরকার। বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর মো.
সূত্রগুলো জানায়, পাঁচ ব্যাংকের সব দায় ও সম্পত্তি গ্রহণ করে প্রস্তাবিত ব্যাংকটি কার্যক্রম পরিচালনা করবে। এ ব্যাংকের অনুমোদিত মূলধন হবে ৪০ হাজার কোটি টাকা, আর পরিশোধিত মূলধন থাকবে ৩৫ হাজার কোটি টাকা। পরিশোধিত মূলধনের মধ্যে ২০ হাজার কোটি টাকা সরকার দেবে। এর মধ্যে ১০ হাজার কোটি টাকা দেওয়া হবে নগদে, বাকি ১০ হাজার কোটি টাকা সংগ্রহ করা হবে সুকুক বন্ড ছাড়ার মাধ্যমে।
এ ছাড়া প্রাতিষ্ঠানিক আমানতকারীদের শেয়ার দিয়ে ১৫ হাজার কোটি টাকা মূলধনে রূপান্তর করা হবে বেইল-ইন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে। পরে আবার রেজল্যুশন পরিকল্পনা অনুযায়ী তা পরিশোধ করা হবে তাঁদের। যে প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ব্যাংকের গ্রাহক ও অন্য পাওনাদারদের ঋণের একাংশ বাতিল হয়ে শেয়ারে রূপান্তরিত হয়, সেটাই হচ্ছে বেইল-ইন।
অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘কাল পাঁচ ব্যাংক একীভূত হওয়ার বিষয়টি উপদেষ্টা পরিষদে উঠছে। তাড়াহুড়া করা হচ্ছে বলে যাঁরা সমালোচনা করেন, তাঁদের কেউ বুঝে করেন, কেউ আবার না বুঝে করেন। অথচ অনেক চিন্তাভাবনা করেই করা হচ্ছে কাজটি।’
একটা ভালো কর্মপরিকল্পনা করে নতুন ব্যাংক করার বিষয়ে সরকারের এগোনো উচিত ছিল। যা হতে যাচ্ছে, তা মূলত পাঁচটি দুর্বল ব্যাংকের সমষ্টি। সরকারি ব্যাংকগুলোর যে বোঝা এখন সরকারকে টানতে হচ্ছে, নতুন ব্যাংক হলে তাতে আরও কিছু বোঝা যোগ হবেমুস্তফা কে মুজেরী, সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ, বাংলাদেশ ব্যাংকউপদেষ্টা কমিটিতে উপস্থাপনের জন্য যে সারসংক্ষেপ তৈরি করা হয়েছে, তাতে বলা হয়েছে যে পাঁচ ব্যাংকের সার্বিক অব্যবস্থাপনার জন্য পরিচালনা পর্ষদের সদস্য, সংশ্লিষ্ট ব্যাংকার ও খেলাপি ঋণগ্রহীতাদের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ প্রয়োজনীয় আইনি পদক্ষেপ নেবে।
উপদেষ্টা পরিষদে অনুমোদন পাওয়ার পর বিদ্যমান রাষ্ট্রমালিকানাধীন সোনালী, অগ্রণী, জনতা ইত্যাদি ব্যাংকের মতো নতুন ব্যাংকের সার্বিক ব্যবস্থাপনার দায়িত্বও থাকবে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের হাতে। আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ শুরুতেই এ ব্যাংকের নিবন্ধন নেবে যৌথ মূলধন কোম্পানি ও ফার্মসমূহের পরিদপ্তর (আরজেএসসি) থেকে। এরপর ব্যাংকের নিবন্ধন দেবে বাংলাদেশ ব্যাংক।
বিদ্যমান ব্যাংক কোম্পানি আইন, ১৯৯১ এবং ব্যাংক রেজল্যুশন অধ্যাদেশ, ২০২৫ অনুযায়ী পাঁচ ব্যাংকের মালিক বা শেয়ারহোল্ডারদের পাওনা নিষ্পত্তি হওয়ার কথা। কিন্তু আলোচ্য পাঁচ ব্যাংকের মালিকেরা কিছু ফেরত পাবেন না। সারসংক্ষেপে বলা হয়েছে, একদিকে ব্যাংকগুলো উচ্চ মূলধন ঘাটতিতে রয়েছে, অন্যদিকে এদের প্রকৃত সম্পদমূল্য (এনএভি) ঋণাত্মক। এ ধরনের অবস্থা থাকলে মালিকদের কোনো দাবি পরিশোধের সুযোগ নেই। তবে ব্যক্তি আমানতকারীরা তাঁদের জমা করা অর্থ আগে ফেরত পাবেন। এ জন্য আমানত সুরক্ষা তহবিলের অর্থ ব্যবহার করা যেতে পারে।
আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, কাল উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে আমানত সুরক্ষা অধ্যাদেশের খসড়াও অনুমোদনের জন্য উঠছে। নতুন অধ্যাদেশ হলে আমানতকারীরা আগের এক লাখের বদলে দুই লাখ টাকা পর্যন্ত সুরক্ষা পাবেন। বাংলাদেশ ব্যাংকের এক হিসাব অনুযায়ী, ব্যাংক খাতের মোট আমানতকারীদের মধ্যে ৯৫ শতাংশের আমানতের পরিমাণ দুই লাখ টাকার কম। সূত্রগুলো জানায়, প্রস্তাবিত ব্যাংকটি দুই লাখ টাকার কম আমানতকারীদের অর্থ পরিশোধের জন্য ১২ হাজার কোটি টাকা পেতে পারে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ মুস্তফা কে মুজেরী প্রথম আলোকে বলেন, ‘একটা ভালো কর্মপরিকল্পনা করে নতুন ব্যাংক করার বিষয়ে সরকারের এগোনো উচিত ছিল। যা হতে যাচ্ছে, তা মূলত পাঁচটি দুর্বল ব্যাংকের সমষ্টি। সরকারি ব্যাংকগুলোর যে বোঝা এখন সরকারকে টানতে হচ্ছে, নতুন ব্যাংক হলে তাতে আরও কিছু বোঝা যোগ হবে।’
পাঁচ ব্যাংক একীভূত করার কর্মপরিকল্পনা তৈরির জন্য একটি কমিটি এক মাস ধরে কাজ করছে—এ তথ্য জানালে মুস্তফা কে মুজেরী বলেন, এ তো ঘোড়ার আগে গাড়ি কেনার মতো। আগের কাজটা আগে করার দরকার ছিল।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: নত ন ব য উপদ ষ ট পর শ ধ র জন য এক ভ ত ম লধন সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
সিদ্ধিরগঞ্জে বলাৎকারের অভিযোগ মাদ্রাসা শিক্ষক আটক, গণপিটুনি
সিদ্ধিরগঞ্জে দশ বছরের এক মাদরাসা ছাত্রকে বলাৎকারের অভিযোগে এক শিক্ষককে আটক করেছে পুলিশ। ঘটনাটি প্রকাশ পেলে ক্ষুব্ধ এলাকাবাসী অভিযুক্ত শিক্ষক ও মাদরাসার প্রিন্সিপালকে গণপিটুনি দেয়।
বুধবার (৮ অক্টোবর) রাতে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের ৯নং ওয়ার্ডের জালকুড়ি ইসলামিয়া ইন্টারন্যাশনাল মাদরাসায় এ ঘটনা ঘটে।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, গত শুক্রবার ৩ অক্টোবর রাত সাড়ে ১০টার দিকে ওই মাদরাসার শিক্ষক মো. সাইফুল ইসলাম (২৭) ভয়-ভীতি দেখিয়ে তৃতীয় তলার বাথরুমে নিয়ে দশ বছরের এক ছাত্রকে বলাৎকার করেন।
ঘটনাটি পরদিন ছাত্রটি মাদরাসার প্রিন্সিপাল মিজানুর রহমানকে জানালে তিনি কাউকে কিছু না বলতে ভয় দেখান বলে অভিযোগ রয়েছে।
ঘটনাটি বুধবার রাতে স্থানীয়দের মধ্যে জানাজানি হলে ক্ষিপ্ত এলাকাবাসী রাত পৌনে ৯টার দিকে অভিযুক্ত শিক্ষক ও প্রিন্সিপালকে ধরে গণপিটুনি দেয়।
খবর পেয়ে সিদ্ধিরগঞ্জ থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মিজানুর রহমানের নেতৃত্বে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে এবং অভিযুক্ত শিক্ষককে আটক করে থানায় নিয়ে যায়।
পুলিশ কর্মকর্তা মিজানুর রহমান বলেন, আমরা খবর পেয়ে দ্রুত ঘটনাস্থলে আসি। এলাকাবাসী উত্তেজিত ছিল। অপ্রিতিকর পরিস্থিতি এড়াতে অভিযুক্ত শিক্ষককে হেফাজতে নেওয়া হয়েছে।
তাকে জিজ্ঞাসাবাদ চলছে। আইনগত ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন। এ ঘটনায় এলাকাজুড়ে ক্ষোভ ও নিন্দার ঝড় বইছে। স্থানীয়রা অভিযুক্ত শিক্ষকের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেছেন।