উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল ও ভারিবৃষ্টির কারণে কয়েকদিন ধরে সিরাজগঞ্জে যমুনা নদীতে অস্বাভাবিক গতিতে পানি বৃদ্ধির পরে এবার পানি কমতে শুরু করেছে। পানি বৃদ্ধির পরে কমতে শুরু করায় নদীপাড়ে ভাঙনের আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। এতে শঙ্কায় পড়েছেন চরাঞ্চলের কৃষকরা। 

বৃহস্পতিবার (৯ অক্টোবর) সকালে সিরাজগঞ্জ হার্ড পয়েন্টে যমুনা নদীর পানির সমতল রেকর্ড করা হয়েছে ১১ দশমিক ৩২ মিটার। গত ২৪ ঘণ্টায় ২০ সেন্টিমিটার পানি কমায় বিপৎসীমার ১ দশমিক ৫৮ সেন্টিমিটার মিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে (বিপৎসীমা ১২.

৯০ মিটার)। 

অপরদিকে জেলার কাজিপুর মেঘাই ঘাট পয়েন্টে পানির সমতল রেকর্ড করা হয়েছে ১২ দশমিক ৭৫ মিটার। ২৪ ঘণ্টায় ৩১ সেন্টিমিটার পানি কমে বিপৎসীমার ২ দশমিক ০৫ মিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে (বিপৎসীমা ১৪.৮০ মিটার)।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গত কয়েকদিনে যমুনার পানি বৃদ্ধি ও কমতে শুরু করায় এক সপ্তাহ ধরে চৌহালী উপজেলার সদিয়া চাঁদপুর এলাকায় তীব্র স্রোত ও ঢেউয়ের আঘাতে ভাঙন দেখা দিয়েছে। ওই এলাকার অন্তত ৩০টি বসতভিটা বিলীন হয়ে গেছে। 

ভাঙন আতঙ্কে শতাধিক পরিবার ভিটেমাটি নিয়ে ঝুঁকিতে রয়েছেন। ভাঙন-আতঙ্কের ছাপ স্থানীয়দের চোখেমুখে। অনেকে ঘর-বাড়ি সরিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। অনেকেই টাকা পয়সা ও জায়গার অভাবে ঘর-বাড়ি অন্যত্র সরিয়ে নিতে পারছে না। আসবাবপত্র গুছিয়ে রেখেছে কয়েকটি পরিবার। ভাঙনের মাত্রা বেড়ে গেলে ঘর-বাড়ি ভেঙে অন্যত্র চলে যাওয়ার জন্য প্রস্তুত তারা। আবার কেউ কেউ তাদের সংসারের জিনিসপত্র নিকট আত্মীয়ের বাড়িতে নিয়ে রাখছেন।

বসতভিটা হারানো কালাম শেখ বলেন, “গত বছরও নদী বাড়ি থেকে প্রায় এক কিলোমিটার দূরে ছিল। ভাঙতে ভাঙতে বাড়ির পাশে এসে আটকে ছিল। কয়েকদিনে আবারও হঠাৎ নদীতে ভাঙনে ভিটেমাটিহারা হয়ে অন্যের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছি।”

স্থানীয়রা জানান, গত শুক্রবার থেকে মঙ্গলবার বিকেল পর্যন্ত যমুনার প্রবল স্রোতে আয়নাল শেখ, জুলমাত আলী, জুড়ান আলী, ইসলাম শেখ ও আলিম সেখের বাড়িসহ প্রায় ৩০টি বসতবাড়ি নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে।

ক্ষতিগ্রস্তদের সরকারি সহায়তার দাবি জানিয়ে স্থানীয় স্কুল শিক্ষক ইকবাল হোসেন বলেন, “চোখের সামনে ৩০টি বসতভিটা নদীতে বিলীন হয়ে গেলো। হঠাৎ এমন ভাঙনে আমরা সবাই আতঙ্কিত।”

যমুনায় বসতভিটা বিলীন হওয়া আতাহার আলী বলেন, “৬৫ বছর বয়সে ১৫ বার ভাঙনের শিকার হয়েছি। কিন্তু এভাবে হঠাৎ করে যমুনার আগ্রাসী থাবায় বাড়ি বিলীন হবে কল্পনাও করিনি। শত শত ঘর-বাড়ি নদীগর্ভে চলে যাচ্ছে। তবুও এই এলাকা রক্ষায় কেউ এগিয়ে আসেনি।”

সদিয়া দেওয়ানতলা সংকরহাটি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আব্দুর রশিদ বলেন, “ভাঙন এলাকার ৫০ মিটার দূরেই আমাদের বিদ্যালয়। পাউবো দ্রুত ব্যবস্থা না নিলে সেটিও যমুনায় বিলীন হয়ে যাবে।”

সদর উপজেলার কাওয়াকোলা ইউনিয়নের পুনর্বাসন এলাকার কুদরত আলী, আনোয়ার হোসেনসহ চরাঞ্চলের বেশ কয়েকজন কৃষক বলেন, “গত মঙ্গলবারে একদিনে যমুনায় আড়াই ফুট পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। এই বছরে এ সময়ে এটা একেবারেই অস্বাভাবিক। তবে আজকে সকালে পানি কমতে শুরু করেছে। পানি আবারও বৃদ্ধি পেলে শীতকালীন সবজিসহ বিভিন্ন আবাদ নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা করছি।”

সিরাজগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মোখলেছুর রহমান বলেন, “কয়েকদিন অস্বাভাবিকভাবে পানি বৃদ্ধি পেয়েছিল। তবে, আজ পানি কমতে শুরু করেছে। এ অবস্থায় বন্যা হওয়ার কোনো আশঙ্কা নেই। পানি বৃদ্ধি ও কমতে থাকায় কিছু স্থানে ভাঙন দেখা দিয়েছে। ভাঙনের খবর পেয়ে আমরা ঘটনাস্থলে পৌঁছে জিও ব্যাগ ফেলে ভাঙন ঠেকানোর চেষ্টা করা হচ্ছে।”

ঢাকা/অদিত্য/এস

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ব ল ন হয় ব পৎস ম বসতভ ট ঘর ব ড় দশম ক আতঙ ক

এছাড়াও পড়ুন:

যুদ্ধবিরতির পর গাজায় ইসরায়েলি হামলায় ৩৪২ ফিলিস্তিনি নিহত

ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার পর থেকে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী ৪৯৭ বার যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন করেছে। এসব হামলায় শনিবার পর্যন্ত ৩৪২ জন ফিলিস্তিনি নিহত ও ৮৭৫ জন আহত হয়েছেন।

গাজার সরকারি মিডিয়া অফিসের বরাত দিয়ে রবিবার (২৩ নভেম্বর) এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে তুরস্কের বার্তা সংস্থা আনাদোলু।

আরো পড়ুন:

যুদ্ধবিরতির মধ্যেই গাজায় ভয়াবহ হামলা ইসরায়েলের, নিহত ২৫

নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা

গাজার মিডিয়া অফিসে যুদ্ধবিরতির মধ্যে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে ধারাবাহিক হামলা ও  বারবার অনুপ্রবেশের মাধ্যমে পরিকল্পিতভাবে চুক্তি লঙ্ঘনের অভিযোগ করেছে।

অফিস জানিয়েছে, শনিবার ২৭টি লঙ্ঘন রেকর্ড করা হয়েছে, যার ফলে ২৪ জন নিহত এবং ৮৭ জন আহত হয়েছেন। তারা এটিকে আন্তর্জাতিক মানবিক আইন ও যুদ্ধবিরতি চুক্তির সঙ্গে সংযুক্ত মানবিক প্রোটোকলের ‘স্পষ্ট লঙ্ঘন’ বলে অভিহিত করেছে।

১০ অক্টোবর থেকে ইসরায়েলি লঙ্ঘনের মধ্যে রয়েছে- বেসামরিক নাগরিক, বাড়িঘর এবং বাস্তুচ্যুত তাঁবু লক্ষ্য করে ১৪২ বার গুলিবর্ষণ; ‘হলুদ রেখা’ অতিক্রম করে ২১টি স্থল অনুপ্রবেশ; ২২৮টি বিমান, কামান ও স্থল হামলা এবং ১০০টি বেসামরিক বাড়িঘর ও কাঠামো ধ্বংস করা।

ইসরায়েলি এসব কর্মকাণ্ড ‘সম্মিলিত শাস্তি’ ও ধ্বংসকে আরো বিস্তৃত করার প্রচেষ্টা বলে জানিয়েছে।

অফিসটি জানিয়েছে, অভিযান ও অনুপ্রবেশ করে ৩৫ জন ফিলিস্তিনিকে আটক করা হয়েছে। কারণ তারা ইসরায়েলের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছে যে, ইসরায়েল ‘গাজা উপত্যকার নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতার জন্য হুমকিস্বরূপ একটি রক্তাক্ত নতুন বাস্তবতা তৈরি করার চেষ্টা করছে।’

গাজা সিভিল ডিফেন্স অফিস জানিয়েছে, যে শনিবার গাজার বেশ কয়েকটি এলাকায় বাড়িঘর ও একটি গাড়িতে ইসরায়েলি বিমান হামলায় কমপক্ষে ২২ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন, যা যুদ্ধবিরতির নতুন লঙ্ঘন।

যুদ্ধবিরতি চুক্তির অধীনে ইসরায়েল গাজার ৫০ শতাংশেরও বেশি এলাকা দখল করে রেখেছে।‘হলুদ রেখা’র মাধ্যমে ফিলিস্তিনিদের বসবাসের জায়গাগুলো থেকে ইসরায়েলি সেনা মোতায়েনের এলাকাগুলোকে আলাদা করা হয়েছে। 

তবে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী সম্প্রতি হলুদ রেখার ভেতরে ঢুকে পড়ে হামলা বাড়িয়েছে, বিশাল এলাকা ধ্বংস করেছে এবং কাছাকাছি এলাকাগুলোকে বেসামরিক নাগরিকদের জন্য বিপজ্জনক করে তুলেছে।

২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে গাজায় ইসরায়েলি হামলায় প্রায় ৭০ হাজার ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। নিহতদের বেশিরভাগই নারী ও শিশু।  হাজারের বেশি মানুষ নিহত

২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে, ইসরায়েলি সেনাবাহিনী গাজায় প্রায় ৭০ হাজার ফিলিস্তিনিকে হত্যা করেছে।দুই বছরের বেশি সময় ধরে চলা যদ্ধে গাজা উপত্যকা কার্যত ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যস্থতায় চলতি বছরের ১০ অক্টোবর থেকে গাজায় যুদ্ধবিরতি কার্যকর করার ঘোষণা দেওয়া হয়। 

ঢাকা/ফিরোজ

সম্পর্কিত নিবন্ধ