ভূমিকম্পের সময় আমি কী করব, কী করব না, এখন এইটাই সবচেয়ে বড় প্রশ্ন।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাংলাদেশে বড় ভূমিকম্প হতে পারে। দীর্ঘ মেয়াদে কর্তৃপক্ষ কী করবে, বাড়িওয়ালা কী করবেন, তা নিয়ে পরে আলোচনা করা যাবে। প্রথম প্রসঙ্গ হলো, ভূমিকম্প হলে আমি কী করব, আপনি কী করবেন।

ইউএসজিএস বা ইউনাইটেট স্টেটস জিওলজিক্যাল সার্ভে ভূমিকম্পের তথ্যের জন্য একটা নির্ভরযোগ্য উৎস। তারা কী বলছে! ভূমিকম্পের সময় আপনি কী করবেন?

যদি ঘরের ভেতরে থাকেন

১.

যেখানে আছেন, সেখানেই থাকুন। ড্রপ, কভার, হোল্ডঅন। হামাগুড়ি দিয়ে টেবিলের নিচে ঢুকুন। স্থির থাকুন। রান্নাঘরে থাকলে বেরিয়ে যান। আশপাশে বা মাথার ওপর থেকে ভারী কিছু পড়বে কি না, খেয়াল করে নিজের অবস্থান নিন। ঘরের বিমের নিচে বা কোনায় আশ্রয় নিতে পারেন।

২. দৌড়াবেন না। সিঁড়িতে যাবেন না।

৩. চুলা, কাচের জানালা, দরজা, বই বা বাসনকোসন সমেত শেল্ফ থেকে, বা পড়ে যেতে পারে, এমন আলমারি থেকে দূরে থাকুন।

৪. ভূমিকম্প থেমে গেলে সিঁড়ি দিয়ে বাড়ির বাইরে আসুন। আশপাশে ভবন নেই, ইলেকট্রিকের তার নেই, চিমনি নেই, গাছ নেই, মাথার ওপরে পড়তে পারে, এমন কিছু নেই—এমন জায়গায় গিয়ে দাঁড়ান। সেতুর ওপরে উঠবেন না। ফ্লাইওভারের নিচে দাঁড়াবেন না।

কখনোই করবেন না

১. জানালা দিয়ে বা বারান্দা থেকে লাফ দেবেন না।

২. জনবহুল ভবনে সিঁড়ি দিয়ে নামার চেষ্টা করবেন না।

বাংলাদেশে ২১ নভেম্বর ২০২৫-এ ভূমিকম্পে যাঁরা মারা গেছেন, তাঁদের বেশির ভাগই বাড়ির বাইরে ছিলেন। আর যাঁরা আহত হয়েছেন, তাঁদের প্রায় সবাই সিঁড়িতে পায়ের নিচে পড়ে বা লাফিয়ে নামার কারণে আহত হয়েছেন।

যদি গাড়িতে থাকেন

দেখেশুনে আস্তে আস্তে গাড়ি থামান। ফাঁকা জায়গায় গাড়ি পার্ক করে রাখুন। লাইটপোস্ট, ভবন, গাছ, সেতু, ওভারব্রিজ, ফ্লাইওভারের নিচে গাড়ি রাখবেন না।

অন্য গাড়ির চলাচলে বাধা হয়ে গাড়ি রাখবেন না।

যদি পাহাড়ে থাকেন

খেয়াল রাখুন, কোনো পাথর গড়িয়ে এসে পড়তে পারে কি না। ভূমিধস হতে পারে। গাছ উপড়ে যেতে পারে।

যদি সমুদ্রের ধারে থাকেন

সুনামির পূর্বাভাস থাকলে নিরাপদ জায়গায় সরে যান।

ভূমিকম্পের আগের প্রস্তুতি

ভূমিকম্প কখন, কোথায় হবে—কেউই আগে থেকে নিশ্চিতভাবে বলতে পারে না। কিন্তু কিছু সহজ প্রস্তুতি আমাদের জীবন রক্ষা করতে পারে, দুর্ঘটনা কমাতে পারে। নিচে চারটি গুরুত্বপূর্ণ ধাপ সহজ ভাষায় তুলে ধরা হলো। এগুলো তৈরি করেছে আর্থকোয়েক কান্ট্রি অ্যালায়েন্স, যেখানে ইউএসজিএস একটি সহযোগী প্রতিষ্ঠান।

ধাপ ১: নিজের ঘরটাই আগে নিরাপদ করুন

ভূমিকম্পে বেশির ভাগ মানুষ আঘাত পান ঘরের ভেতরের জিনিসপত্র পড়ে গিয়ে। তাই—

ভারী বুকশেলফ, আলমারি, টিভি—দেয়ালের সঙ্গে ভালোভাবে আটকানো আছে কি না দেখে নিন।

কাচের বোতল, ফুলদানি, ভারী জিনিস মাথার ওপর বা উঁচু তাকে রাখবেন না।

বিছানার পাশে বড় বড় জিনিস রাখার অভ্যাস বাদ দিন।

ভবনের নিচতলার খোলা কলাম বিপজ্জনক

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ভ ম কম প র করব ন র ওপর

এছাড়াও পড়ুন:

শক্তিশালী কম্পন অনুভব করেছেন ঢাকার ১ কোটির বেশি মানুষ: ইউএসজিএস

ভূমিকম্পের তীব্র ঝাঁকুনিতে কাঁপল ঢাকা শহর। এই ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থল ছিল ঢাকা থেকে ২৫ কিলোমিটার দূরে নরসিংদীর মাধবদী উপজেলায়। ভূমিকম্পের প্রভাব পড়েছে ঢাকা ও আশপাশের জেলাগুলোতেও।

ভূমিকম্পের প্রভাবে বিভিন্ন স্থানে দেয়াল ধসে পড়েছে। কোনো ভবনের রেলিং ও অংশবিশেষ ভেঙে পড়তে দেখা গেছে। অনেকেই ভয় পেয়ে অসুস্থ হয়ে পড়েন। এতে অন্তত ১০ জন মারা যাওয়ার খবর পাওয়া গেছে। এর মধ্যে নরসিংদীতে ৫ জন, ঢাকায় ৪ জন ও নারায়ণগঞ্জে ১ জন নিহত হয়েছেন। এ ছাড়া আহত হয়েছেন ছয় শতাধিক মানুষ।

আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, গতকাল শুক্রবার সকাল ১০টা ৩৮ মিনিট ২৬ সেকেন্ডে নরসিংদীর মাধবদী উপজেলায় এ ভূমিকম্পের উৎপত্তি হয়। রিখটার স্কেলে এই ভূমিকম্পের মাত্রা ছিল ৫ দশমিক ৭। তবে মার্কিন ভূতাত্ত্বিক জরিপ সংস্থা ইউএসজিএস বলছে, এই ভূমিকম্পের মাত্রা ছিল ৫ দশমিক ৫। ভূপৃষ্ঠের ১০ কিলোমিটার গভীরে এটার উৎপত্তি।

৫ দশমিক ৭ মাত্রার মাঝারি এ ভূমিকম্পকে স্মরণকালের মধ্যে কম্পনের তীব্রতার দিক থেকে নজিরবিহীন বলছেন ভূমিকম্পবিশেষজ্ঞরা।

ইউএসজিএস বলছে, বাংলাদেশের উত্তর ও দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চল ভূমিকম্পপ্রবণ হলেও কেন্দ্রীয় অঞ্চল তুলনামূলকভাবে শান্ত থাকে। ১৯৫০ সাল থেকে এখন পর্যন্ত ঢাকার ২৫০ কিলোমিটারের মধ্যে ৫ দশমিক ৫ বা তার বেশি মাত্রার ১৪টি ভূমিকম্প হয়েছে—এর মধ্যে দুটি ছিল ৬ মাত্রার। আর গতকাল নরসিংদীর মাধবদীর ভূমিকম্পটি ছিল ঢাকা থেকে ২৫ কিলোমিটার দূরে।

এ ভূমিকম্পের কম্পনের তীব্রতা কত মানুষ অনুভব করেছেন, সেটার একটা অনুমিত হিসাব দিয়েছে মার্কিন ভূতাত্ত্বিক জরিপ সংস্থা ইউএসজিএস। ভূমিকম্পের আড়াই ঘণ্টা পর সংস্থাটি বলেছে, এ ভূমিকম্পে ৭ কোটির বেশি মানুষ মৃদু ভূকম্পন অনুভব করেছেন। এ ছাড়া হালকা ঝাঁকুনি পেয়েছেন আরও প্রায় পৌনে ৭ কোটি মানুষ।

ভূমিকম্পটির তীব্রতা এত বেশি কেন জানতে চাইলে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক ও ভূমিকম্পবিশেষজ্ঞ মেহেদি আহমেদ আনসারী প্রথম আলোকে বলেন, এ ভূমিকম্প ঢাকার খুব কাছে হয়েছে। এর আগে এখানে ৪ মাত্রার বেশি ভূমিকম্প হয়নি।

ভূমিকম্পের সময় ভয়ে শয্যা থেকে তুলে অসুস্থ শিশুকে কোলে জড়িয়ে আছেন মা। বাংলাদেশ শিশু হাসপাতাল ও ইনস্টিটিউট, ঢাকা; ২১ নভেম্বর ২০২৫

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ভূমিকম্পে কেঁপে উঠলো মিয়ানমার
  • শক্তিশালী কম্পন অনুভব করেছেন ঢাকার ১ কোটির বেশি মানুষ: ইউএসজিএস