ভারতের পশ্চিমবঙ্গে ভোটার তালিকা যাচাই কার্যক্রম এসআইআর–এর প্রতিবাদ ঘিরে একটি ভিডিও সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে।

ভিডিওটিতে দেখা যায়, শত শত মানুষ হাতে লাঠি, বাঁশ, ঝাড়ু ও জুতা নিয়ে সড়কে বিক্ষোভ করছেন। অনেকে স্লোগান দিচ্ছেন—‘আমাদের সংগ্রাম চলছে, চলবে।’

ভিডিওটি এক্স (আগের টুইটার) প্ল্যাটফর্মে SK Chakraborty নামের একটি অ্যাকাউন্ট থেকে ২ নভেম্বর পোস্ট করা হয়। পোস্ট করা ভিডিওটির ক্যাপশনে ইংরেজিতে লেখা ছিল, ‘দেখো, তারা কীভাবে পশ্চিমবঙ্গে ভোটার তালিকার বিশেষ নিবিড় পুনর্বিবেচনা (SIR)-এর বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে। অবৈধ বাংলাদেশি ও রোহিঙ্গাদের অবশ্যই বহিষ্কার করতে হবে।’

লিংক: এখানে, এখানে, এখানে, এখানে

পোস্টটি ২ লাখ ৬৫ হাজারের বেশি দেখা হয়। একই ভিডিও আরও কয়েকটি অ্যাকাউন্ট থেকেও ছড়িয়ে পড়ে, যেখানে দাবি করা হয়—‘পশ্চিমবঙ্গে বসবাসরত অবৈধ বাংলাদেশি ও রোহিঙ্গারা এখন SIR-এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদে নেমেছে।’
ফেসবুক লিংক: এখানে, এখানে

পোস্টগুলোর বেশির ভাগেই ভারতের রাজনীতি ঘিরে নানা রকম বার্তা দেওয়া হয়। কেউ কেউ বলেন, এই ‘অবৈধ অভিবাসীরাই’ পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভোটব্যাংক।
ইনস্ট্রাগ্রাম লিংক: এখানে

ভারতের নির্বাচন কমিশন নিয়মিতভাবে ভোটার তালিকা হালনাগাদ করে। সাধারণত প্রতিবছর এই প্রক্রিয়া ‘Summary Revision’ নামে পরিচিত। তবে যেখানে ভোটার তালিকা নিয়ে বেশি অভিযোগ বা অসংগতি থাকে, সেখানে বিশেষভাবে বিস্তারিত যাচাই প্রক্রিয়া চালানো হয়, যাকে বলা হয় Special Intensive Revision (SIR)।

এই যাচাইয়ের ঘোষণা ভারতের নির্বাচন কমিশন গত ২৭ অক্টোবর দিয়েছে। অর্থাৎ, প্রতিবাদ হলে তা সেদিনের পরেই হওয়ার কথা।

ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায়, নারী–পুরুষ, তরুণ, শিশুসহ সব বয়সী মানুষ এই আন্দোলনে রয়েছেন। তাঁদের হাতে ঝাড়ু, লাঠি, জুতার মালা, বাঁশসহ নানা কিছু। ভিডিওতে শোনা যাচ্ছে, একজন মাইকিং করে সবাইকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন কোথাও। মাইকে যে স্লোগান দেওয়া হচ্ছে, তার সঙ্গে তাল মেলাচ্ছেন অন্যরা। কিছু স্লোগান ছিল এ রকম—‘আমার মাটি আমার মা, নগরকান্দা হবে না; আলগীবাসীর সংগ্রাম, চলছে চলবে; হামিরদীবাসীর সংগ্রাম, চলছে চলবে।’

স্লোগানের আলগী, হামিরদী ও নগরকান্দা নামগুলো সার্চ করলে দেখা যায়, বাংলাদেশের ফরিদপুরের একটি উপজেলা নগরকান্দা, আর একই জেলার ভাঙ্গা উপজেলায় আলগী ও হামিরদী নামে দুটি ইউনিয়ন রয়েছে।

ভিডিওটি InVID টুলে ফ্রেম বাই ফ্রেম ভাগ করে গুগল লেন্সে সার্চ দিলে একই দৃশ্যের একটি ভিডিও পাওয়া যায়, যা ১৫ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশের ফরিদপুর জেলার ভাঙ্গা উপজেলা থেকে ‘বিপ্লব বিপ্লব’ নামের একটি ফেসবুক অ্যাকাউন্টে পোস্ট করা হয়েছিল।

ভিডিওর পোস্টদাতা তাঁর অবস্থান (location) হিসেবে ফরিদপুর উল্লেখ করেছেন এবং ক্যাপশনে লিখেছেন—‘আজকের আন্দোলনের ভিডিও ক্লিপ।’
লিংক: এখানে

বিষয়টি নিশ্চিত করে প্রথম আলোর ফরিদপুর প্রতিনিধি জানান, ভিডিওটি যে স্থানে ধারণ করা হয়েছে, তা ঢাকা-খুলনা মহাসড়কের হামিরদী ইউনিয়নের মনসুরাবাদ হাইস্কুলের সামনে দিয়ে ভাঙ্গা উপজেলার দিকে যাওয়ার পথে। সংসদীয় আসনের সীমানা পরিবর্তনে আপত্তি জানিয়ে সেই বিক্ষোভ হয়েছিল।

২০২৫ সালের সেপ্টেম্বরে সংসদীয় আসন পুনর্গঠনে ফরিদপুরের ভাঙ্গা উপজেলার দুটি ইউনিয়ন আলগী ও হামিরদীকে ফরিদপুর–৪ আসন (ভাঙ্গা, সদরপুর ও চরভদ্রাসন) থেকে কেটে ফরিদপুর–২ (নগরকান্দা–সালথা) আসনে অন্তর্ভুক্ত করার ঘোষণা দেওয়া হয়।

আগে শুধু ভাঙ্গা উপজেলা নিয়েই একটি সংসদীয় আসন ছিল। তখন ফরিদপুরে মোট আসন ছিল পাঁচটি। কিন্তু ২০০৮ সালে আসনসংখ্যা কমিয়ে চারটি করা হয় এবং ওই সময় ভাঙ্গার সঙ্গে সদরপুর ও চরভদ্রাসন উপজেলা যুক্ত করা হয়। এবার আসনসংখ্যা না বাড়িয়ে বরং ভাঙ্গার দুটি ইউনিয়ন অন্য আসনে যুক্ত করার সিদ্ধান্তে স্থানীয়রা ক্ষোভ প্রকাশ করে ১৪ থেকে ১৬ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সড়ক ও রেলপথ অবরোধ কর্মসূচি পালন করে।

সংসদীয় আসনের সীমানা পরিবর্তন নিয়ে এই বিক্ষোভের খবর জাতীয় গণমাধ্যমেও আসে।
প্রকাশিত সংবাদের লিংক: এখানে, এখানে, এখানে, এখানে

সুতরাং, ভিডিওটি ভারতের নয়, বরং বাংলাদেশের ফরিদপুর জেলার ভাঙ্গা উপজেলার স্থানীয় বাসিন্দাদের নির্বাচনী সীমানা পরিবর্তনের প্রতিবাদে অনুষ্ঠিত বিক্ষোভের দৃশ্য। এটিই ভারতে অবৈধ বাংলাদেশি ও রোহিঙ্গাদের ভিডিও দাবি করে প্রচার করা হচ্ছে।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: নগরক ন দ উপজ ল র একট

এছাড়াও পড়ুন:

ফরিদপুরে বিস্ফোরকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনের মামলায় যুবলীগ নেতা গ্রেপ্তার

ফরিদপুরের নগরকান্দায় যুবলীগ নেতা ও ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সাবেক এক চেয়ারম্যানকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। গতকাল শুক্রবার রাত আটটার দিকে উপজেলার ছাগলদী বাজার এলাকা থেকে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়।

গ্রেপ্তার ব্যক্তির নাম মিজানুর রহমান (৪৫)। তিনি নগরকান্দা উপজেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক ও কোদালিয়া শহিদনগর ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান।

গ্রেপ্তারের বিষয়টি নিশ্চিত করে নগরকান্দা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রেজাউল করিম বলেন, মিজানুর রহমানের বিরুদ্ধে ভাঙ্গা থানায় বিস্ফোরকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে মামলা আছে। নগরকান্দা পুলিশের সহায়তায় ওই মামলায় তাঁকে গ্রেপ্তার করেছে ভাঙ্গা থানার পুলিশ। এ ব্যাপারে পরবর্তী আইনগত ব্যবস্থা ভাঙ্গা থানা নেবে।

২০২৪ সালের ১০ নভেম্বর রাতে বোমা হামলার অভিযোগে পরের দিন মামলা হয়। মামলায় ফরিদপুর-৪ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য মজিবুর রহমান ওরফে নিক্সন চৌধুরীকে প্রধান করে ৫৯ জনের নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাতপরিচয় আরও ৪০ জনকে আসামি করা হয়। এতে বাদী হন ভাঙ্গা পৌরসভা বিএনপির তৎকালীন যুগ্ম সম্পাদক ও বর্তমানে উপজেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক শহীদুল ইসলাম।

এ বিষয়ে ভাঙ্গা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ আশরাফ হোসেন বলেন, আজ শনিবার মিজানুরকে ওই মামলায় আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে পাঠানো হবে। প্রয়োজন মনে হলে তাঁকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ফরিদপুরে বিস্ফোরকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনের মামলায় যুবলীগ নেতা গ্রেপ্তার