সোনারগাঁয়ে রাতের আঁধারে নিয়মবহির্ভূতভাবে একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মালামাল বিক্রির অভিযোগ উঠেছে। শনিবার (৮ নভেম্বর) রাতে উপজেলার সাদিপুর ইউনিয়নের পঞ্চমীঘাট উচ্চ বিদ্যালয় থেকে মালামাল ভর্তি তিনটি পিক-আপ ভ্যান আটক করে স্থানীয় এলাকাবাসী। 

ঘটনাটির ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হলে এলাকায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়। পরে সোনারগাঁ থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে এবং স্থানীয় ইউপি সদস্য হাবিবুর রহমান মাসুদ মোল্লার জিম্মায় জব্দকৃত মালামাল রেখে আসে।

রোববার (৯ নভেম্বর) সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, বিদ্যালয়ের পুরোনো বেঞ্চ, ফ্যান ও অন্যান্য আসবাবপত্র উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসারকে না জানিয়ে বিদ্যালয়ের সভাপতি মনিরুজ্জামান ভূঁইয়ার নির্দেশে প্রধান শিক্ষক মো.

জাহাঙ্গীর আলম দপ্তরি সুমন দাসের মাধ্যমে স্থানীয় ভাঙ্গারি ব্যবসায়ী মহসীনের কাছে বিক্রি করেন।

পরে মহসীন রাতের অন্ধকারে তিনটি পিক-আপ ভ্যানে মালামাল তুলতে গেলে স্থানীয়দের সন্দেহ হয়। তারা গাড়ি থামিয়ে কাগজপত্র দেখতে চাইলে মহসীন পালিয়ে যায়।

এ সময় স্থানীয়রা বিদ্যালয়ে গিয়ে সহকারী শিক্ষক মো. বাতেন মিয়াসহ কয়েকজন শিক্ষককে দেখতে পান। বিদ্যালয় বন্ধ থাকা অবস্থায় রাতে মালামাল বিক্রির কারণ জানতে চাইলে শিক্ষকরা জানান, ম্যানেজিং কমিটির মিটিংয়ের মাধ্যমে বিক্রির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে এবং বাকিতে বিক্রি করায় রশিদ দেওয়া হয়নি।

ঘটনাটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে স্থানীয়দের মধ্যে ক্ষোভ দেখা দেয়। এলাকাবাসীর অভিযোগ, প্রধান শিক্ষক দীর্ঘদিন ধরে নানা অনিয়ম, স্বেচ্ছাচারিতা ও দুর্নীতিতে জড়িত। তাদের বিরুদ্ধে সংবাদ মাধ্যমেও একাধিক প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে, কিন্তু প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।

প্রত্যক্ষদর্শী স্থানীয় বাসিন্দা তৌকির আহমেদ ও সাহেদ হাসান বলেন, “বিদ্যালয়ের সভাপতি ও প্রধান শিক্ষক মিলে বিদ্যালয়কে নিজেদের সম্পত্তি মনে করে যা খুশি তাই করছে। রাতের অন্ধকারে পিক-আপ ভর্তি করে মালামাল নেওয়ার সময় আমরা বাধা দিলে তারা কোনো কাগজপত্র দেখাতে পারেনি। এখন তারা ভুয়া রশিদ তৈরি করে ঘটনাকে অন্য দিকে নেওয়ার চেষ্টা করছে।”

বিদ্যালয় ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি মনিরুজ্জামান ভূঁইয়া জানান, “নতুন ভবন নির্মাণের পর পুরোনো বেঞ্চ ও ফ্যান বিক্রির জন্য পাঁচ সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছিল এবং বিক্রিত মালামালের রশিদ রয়েছে।

এরই সিদ্ধান্ত অনুযায়ী মালামাল বিক্রি করা হয়। স্থানীয় একটি মহল আমাদের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাচ্ছে।” তবে তিনি স্বীকার করেন, বিক্রির আগে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসারকে জানানো হয়নি।

বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, “সভাপতির নির্দেশেই মালামাল বিক্রি করা হয়েছে। বিক্রির রশিদ আমাদের কাছে রয়েছে, আমি কুমিল্লায় থাকায় তখন দিতে পারিনি। তবে দরপত্র ছাড়াই বিক্রি করা সঠিক হয়নি, এটা স্বীকার করছি।”

উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার মো. দেলোয়ার হোসেন জানান, “সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভিডিও ভাইরাল হওয়ার পর আমরা ঘটনাস্থলে গিয়েছি। প্রাথমিকভাবে দেখা গেছে, বিক্রির প্রক্রিয়ায় নিয়মভঙ্গ হয়েছে।

তদন্ত চলছে, প্রয়োজনীয় নথি পর্যালোচনা করে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হবে। বর্তমানে মালামাল স্থানীয় ইউপি সদস্যের তত্ত্বাবধানে রয়েছে।”

স্থানীয়দের দাবি, এই ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত করে দায়ীদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে হবে, যাতে ভবিষ্যতে কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সম্পদ নিয়ে এমন অনিয়ম আর না ঘটে।
 

উৎস: Narayanganj Times

কীওয়ার্ড: স ন রগ ও ন র য়ণগঞ জ প ক আপ ভ উপজ ল

এছাড়াও পড়ুন:

ফিলিপাইনে সুপার টাইফুন আঘাত হানতেই নিহত ২

ফিলিপাইনে সুপার টাইফুন ফুং-ওং আঘাত হানার পরপর দেশটির মধ্য ও পূর্বাঞ্চলে কমপক্ষে দুইজন নিহত হয়েছে। উত্তর লুজনে ভূমিধ্বসের আগে ভারী বৃষ্টিপাত এবং তীব্র বাতাসের কারণে বিস্তীর্ণ এলাকায় বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে।

রবিবার রাতে অরোরা প্রদেশে সুপার টাইফুন ফুং-ওং আঘাত হানার আগে দশ লাখেরও বেশি মানুষ ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা থেকে সরে গেছে। কর্মকর্তারা বাসিন্দাদের সরিয়ে নেওয়ার নির্দেশ মেনে চলার আহ্বান জানিয়েছেন।

কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ১৮৫ কিলোমিটার বেগে বাতাস এবং ২৩০ কিলোমিটার বেগে ঝোড়ো হাওয়া লুজনের অনেক অংশের ওপর দিয়ে বয়ে যাচ্ছে। ফুং-ওংয়ের প্রভাবে ব্যাপক বৃষ্টিপাত হচ্ছে।

ফিলিপাইনের সবচেয়ে জনবহুল দ্বীপ লুজনের আরো কিছু এলাকা সর্বোচ্চ এবং দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ঝড় সতর্কতা স্তরের অধীনে রাখা হয়েছে। মেট্রো ম্যানিলা এবং কাছাকাছি প্রদেশগুলি এখনো। ৩ স্তরে রয়েছে।

নিরাপত্তা সতর্কতা হিসেবে, বেসামরিক বিমান চলাচল নিয়ন্ত্রক মেট্রো ম্যানিলার আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর এবং স্যাংলিসহ বেশ কয়েকটি বিমানবন্দর বন্ধ করে দিয়েছে।

বেসামরিক প্রতিরক্ষা অফিস জানিয়েছে, ক্যাটানডুয়ানেসে একজন ডুবে মারা গেছেন এবং ক্যাটবালোগান সিটিতে ধসে পড়া একটি বাড়ির ধ্বংসস্তূপের নিচে আটকে পড়া এক মহিলার মৃতদেহ উদ্ধার করেছেন দমকলকর্মীরা।

ঢাকা/শাহেদ

সম্পর্কিত নিবন্ধ