চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (চাকসু) নির্বাচনকে সামনে রেখে বামধারার প্যানেল ‘বৈচিত্র্যের ঐক্য’ আজ বৃহস্পতিবার বেলা আড়াইটায় বিশ্ববিদ্যালয়ের চাকসু ভবনের সামনে তাদের সাত দফা ইশতেহার ঘোষণা করেছে।

ইশতেহার ঘোষণার সময় উপস্থিত ছিলেন প্যানেলের সহসভাপতি (ভিপি) পদপ্রার্থী ও শাখা গণতান্ত্রিক ছাত্র কাউন্সিলের সংগঠক ধ্রুব বড়ুয়া; জিএস পদপ্রার্থী পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের (ইউপিডিএফ–সমর্থিত) সাধারণ সম্পাদক সুদর্শন চাকমা; এজিএস পদপ্রার্থী ও বিপ্লবী ছাত্র মৈত্রীর সভাপতি জাকিরুল ইসলামসহ প্যানেলের প্রার্থীরা। সংবাদ সম্মেলনের সঞ্চালনা ও মূলনীতি পাঠ করেন ধ্রুব বড়ুয়া।

ধ্রুব বড়ুয়া বলেন, ‘বিভিন্ন জাতি, ধর্ম, লিঙ্গ, বর্ণসহ নানা মতের বৈচিত্র্যের শক্তির সম্মিলনে বৃহত্তর ঐক্য গড়ে তোলা আমাদের লক্ষ্য। গণসংগ্রামের চেতনা ধারণ করে অংশীদারত্বমূলক, অধিকারভিত্তিক, গণমুখী, আধিপত্যবিরোধী, নিরাপদ ক্যাম্পাস গড়ে তোলার লক্ষ্যে আমাদের ইশতেহার ঘোষণা করছি।’

প্যানেলের পক্ষ থেকে সাতটি মূলনীতি ঘোষণা করা হয়। এসব হলো গণতন্ত্র ও গণসংগ্রাম, অংশীদারত্ব, অধিকারভিত্তিক ঐক্য, নিরাপদ ক্যাম্পাস, গণমুখী শিক্ষা, আধিপত্যবিরোধী অবস্থান এবং গণসংহতি ও মানবাধিকার রক্ষা।

জিএস পদপ্রার্থী সুদর্শন চাকমা বলেন, ১৯৫২ থেকে ২০২৪ পর্যন্ত সব আন্দোলনের চেতনা ধারণ করে গণতান্ত্রিক পরিবেশ গঠনে ‘বৈচিত্র্যের ঐক্য’ আন্দোলন চালিয়ে যাবে। শিক্ষার্থীদের মতামত ও অংশগ্রহণ নিশ্চিত করে নিয়মিত চাকসু নির্বাচন আয়োজন, একাডেমিক ক্যালেন্ডারে তারিখ নির্ধারণ ও সিনেটে শিক্ষার্থী প্রতিনিধিত্ব বাধ্যতামূলক করার দাবি জানানো হয়।

শিক্ষার বাণিজ্যিকীকরণ ও বৈষম্যের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে জ্ঞাননির্ভর শিক্ষা প্রতিষ্ঠার অঙ্গীকার করা হয় ইশতেহারে। প্রশাসনিক ও রাজনৈতিক আধিপত্য প্রতিরোধ, শোষণ-বৈষম্যের বিরুদ্ধে সংগ্রাম এবং ফিলিস্তিনের স্বাধীনতার পক্ষে অবস্থান নেওয়ার ঘোষণাও দেওয়া হয়।

পরে প্যানেলের জিএস পদপ্রার্থী সুদর্শন চাকমা ও এজিএস পদপ্রার্থী জাকিরুল ইসলাম যৌথভাবে বিস্তারিত সাত দফা ইশতেহার পাঠ করেন। তাঁরা বলেন, সন্ত্রাস ও দখলদারিমুক্ত নিরাপদ একাডেমিক পরিবেশ গড়তে প্রথম মাসেই ‘ক্যাম্পাস চার্টার’ প্রণয়ন করা হবে। প্রশাসনকে বাধ্য করা হবে অতীতের সব হত্যাকাণ্ডের বিচারপ্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে এবং প্রতিটি ঘটনায় তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করতে।

ইশতেহার পাঠ করে সুদর্শন চাকমা ও জাকিরুল ইসলাম আরও বলেন, রাজনৈতিক বিবেচনায় হলের সিট দখল বন্ধ করা, অনাবাসিক শিক্ষার্থীদের জন্য আবাসন ভাতা চালু এবং পূর্ণাঙ্গ আবাসন নিশ্চিতে ১০টি নতুন হল নির্মাণের মাস্টারপ্ল্যান ঘোষণা করতে হবে। শাটল ট্রেন সংস্কার, বগি বৃদ্ধি, ক্যাম্পাসে ই-কার ও চক্রাকার বাস চালু করার পাশাপাশি পার্শ্ববর্তী উপজেলাগুলোর শিক্ষার্থীদের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব বাস সেবা চালু করতে হবে।

ইশতেহারে মেডিকেল সেন্টার সংস্কার, পর্যাপ্ত অ্যাম্বুলেন্স ও চিকিৎসক নিয়োগ, স্বাস্থ্যবিমা চালু, প্রতিটি ফ্যাকাল্টিতে কাউন্সেলিং সেন্টার স্থাপন, মেয়েদের হলে ফার্মেসি স্থাপন এবং স্বাস্থ্যকর খাবার নিশ্চিতে মনিটরিং সেল গঠনের কথা উল্লেখ করা হয়। গবেষণায় গুরুত্ব দিয়ে বলা হয়, বাজেটের ১০ শতাংশ গবেষণায় বরাদ্দের দাবি, রিসার্চ ফেলোশিপ চালু এবং ফিলিস্তিনি শিক্ষার্থীদের জন্য বিশেষ স্কলারশিপের ব্যবস্থার দাবি জানাবেন তাঁরা।

সংস্কৃতি ও ক্রীড়াক্ষেত্রে বহু সংস্কৃতির চর্চা বাড়াতে বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণা ইনস্টিটিউট ও টিএসসি নির্মাণ, সংগঠনগুলোর জন্য কার্যালয় বরাদ্দ এবং খেলোয়াড়দের জন্য ‘ক্রীড়া কল্যাণ তহবিল’ গঠনের প্রস্তাবও তুলে ধরা হয়। পাশাপাশি সব জাতিসত্তার মর্যাদা নিশ্চিত, নারী শিক্ষার্থীদের সাইবার সুরক্ষা ও চলাফেরার স্বাধীনতা রক্ষা, যৌন নিপীড়নবিরোধী সেল কার্যকর এবং সংখ্যালঘু বা নারীবিদ্বেষী কাউকে প্রশাসনিক দায়িত্বে না রাখার দাবি জানায় প্যানেলটি।

গত ১৮ সেপ্টেম্বর চাকসু নির্বাচনে বামধারার ছাত্রসংগঠন গণতান্ত্রিক ছাত্রজোট-সমর্থিত প্যানেল ঘোষণা হয়েছে। এই প্যানেলে থেকে সহখেলাধুলা ও ক্রীড়া সম্পাদক, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিবিষয়ক সম্পাদক, আইন ও মানবাধিকারবিষয়ক সম্পাদকের পদে কোনো প্রার্থী দেওয়া হয়নি। ‘বৈচিত্র্যের ঐক্য’ নামের এ প্যানেল থেকে সহসভাপতি (ভিপি) পদে লড়বেন শাখা গণতান্ত্রিক ছাত্র কাউন্সিলের সংগঠক ধ্রুব বড়ুয়া। সাধারণ সম্পাদক (জিএস) পদে লড়বেন পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের সাধারণ সম্পাদক সুদর্শন চাকমা। এই প্যানেল সহসাধারণ সম্পাদক (এজিএস) পদে লড়বেন শাখা বিপ্লবী ছাত্র মৈত্রীর সভাপতি জাকিরুল ইসলাম। তিনি জশদ জাকির নামে পরিচিত।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: জ ক র ল ইসল ম গণত ন ত র ক ধ র ব বড় য় দ র জন য ইশত হ র

এছাড়াও পড়ুন:

‘বাংলাদেশের ক্রিকেট উন্নয়নের প্রেমে পড়ে গিয়েছি’— সভাপতি হয়ে আমিনুল

ক্যামেরার সারি তাক করা তাঁর দিকে, সামনে অপেক্ষায় মাইক্রোফোন। বিসিবির নতুন সভাপতি হয়ে কী বলবেন আমিনুল ইসলাম, সবার কৌতূহল তা নিয়ে। জাতীয় দলের সাবেক এই অধিনায়ক শুরুই করলেন সৌহার্দ্যের কথা বলে। উদাহরণ দিতে তাঁর পাশে বসা ফারুক আহমেদের দিকে তাকিয়ে বললেন একটু আগেই বোর্ড সভায় হওয়া সভাপতি ও সহসভাপতি নির্বাচনের কথা।

সেখানে সভাপতি হিসেবে আমিনুলের নাম প্রস্তাব করেছেন ফারুক, আবার সহসভাপতি হিসেবে ফারুকের নাম প্রস্তাব করেছেন আমিনুল। দুজনই নির্বাচিত হয়েছেন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায়। গত মে মাসের শেষ সপ্তাহে ফারুককে সরিয়ে দিয়েই আমিনুলকে বসানো হয়েছিল বিসিবি সভাপতির চেয়ারে। উদাহরণটা হয়তো টানা সে কারণেই। বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত অপর সহসভাপতি শাখাওয়াত হোসেন।

আমিনুল যতই সৌহার্দ্যের কথা বলুন, তিনি যে নির্বাচন পার করে গতকাল সভাপতি হিসেবে নতুন করে দায়িত্ব নিয়েছেন, সেটি ছিল বিতর্কিত। মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার, নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘটনা, কাদা–ছোড়াছুড়ি—নির্বাচন আয়োজনের পথে অনেকের সঙ্গেই সৌহার্দ্যের সম্পর্ক নষ্ট হয়েছে অনেকের। মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করা সংগঠকেরা শুধু নির্বাচন বর্জন করেই থামেননি, আমিনুলদের ভবিষ্যৎ পথটাও কঠিন করার আভাস দিয়ে রেখেছেন কেউ কেউ।

সভাপতি হওয়ার পর সংবাদ সম্মেলনে আমিনুল ইসলাম ও অন্যরা

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • সাবেক সংসদ সদস্য ওমর ফারুকসহ ৫ জন ঢাকায় গ্রেপ্তার
  • জুলাই সনদ নিয়ে ১৫ অক্টোবরের মধ্যে সরকারকে চূড়ান্ত সুপারিশ: আলী রীয়াজ
  • শিবিরের ভিপি প্রার্থীর বিরুদ্ধে আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ ছাত্রদলের
  • ছাত্রদলকে সমর্থন জানিয়ে প্রার্থিতা প্রত্যাহার দুই প্রার্থীর
  • ‘বাংলাদেশের ক্রিকেট উন্নয়নের প্রেমে পড়ে গিয়েছি’— সভাপতি হয়ে আমিনুল