সাহিত্যে এ বছর নোবেল পুরস্কার পেলেন হাঙ্গেরির লেখক লাসলো ক্রাসনাহোরকাই। বিশ্বের সবচেয়ে মর্যাদাবান এ পুরস্কারের জন্য তাঁকে মনোনীত করার কারণ হিসেবে নোবেল কমিটি বলেছে, তাঁর সৃষ্টিকর্ম আকর্ষণীয় ও দূরদৃষ্টিসম্পন্ন, যা মহাপ্রলয়ের ভয়ের মধ্যেও শিল্পের শক্তিকে পুনঃপ্রতিষ্ঠিত করে।

গতকাল বৃহস্পতিবার ৭১ বছর বয়সী ক্রাসনাহোরকাইকে ২০২৫ সালের সাহিত্যে নোবেলজয়ী হিসেবে ঘোষণা করা হয়।

নোবেল কমিটি বিবৃতিতে বলেছে, লাসলো ক্রাসনাহোরকাই মধ্য ইউরোপীয় পরম্পরার একজন মহান মহাকাব্যিক লেখক, যাঁর ধারায় বিস্তার রয়েছে কাফকা থেকে থমাস বার্নহার্ড পর্যন্ত এবং যিনি অসংগতি ও অতিমাত্রায় অতিরঞ্জনের জন্য পরিচিত। তবে তাঁর কাজের পরিধি আরও বিস্তৃত। তিনি প্রাচ্যকেও খুঁজে বেড়ান এবং আরও মননশীল, সূক্ষ্মভাবে সামঞ্জস্যপূর্ণ সুর গ্রহণ করেন।

ক্রাসনাহোরকাই হাঙ্গেরির নোবেল পুরস্কারপ্রাপ্ত দ্বিতীয় সাহিত্যিক। এর আগে ২০০২ সালে দেশটির ইমরে কারতেস মর্যাদাপূর্ণ এ পুরস্কার পান।

ক্রাসনাহোরকাই পাঁচটি উপন্যাস লিখেছেন। এ ছাড়া লিখেছেন অনেক ছোটগল্প, প্রবন্ধ। তিনি নানা পুরস্কার ও সম্মাননায় ভূষিত হয়েছেন। এর মধ্যে রয়েছে ২০১৫ সালের ম্যান বুকার আন্তর্জাতিক পুরস্কার এবং ২০১৩ সালের সেরা অনূদিত বই পুরস্কার (ফিকশন) তাঁর প্রথম উপন্যাস স্যাটানট্যাঙ্গোর জন্য। এ ছাড়া ১৯৯৩ সালে দ্য মেলানকলি অব রেজিস্ট্যান্স-এর জন্য ক্রাসনাহোরকাই জার্মান বেস্টেনলিস্টে পুরস্কার পান।

ক্রাসনাহোরকাই হাঙ্গেরির দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের রোমানিয়া সীমান্তবর্তী ছোট শহর গিউলায় ১৯৫৪ সালের ৫ জানুয়ারি জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৮৫ সালে প্রকাশিত তাঁর প্রথম উপন্যাস স্যাটানট্যাঙ্গোর পটভূমি অনুরূপ এক প্রত্যন্ত গ্রামীণ এলাকা। উপন্যাসটি প্রকাশের পর হাঙ্গেরির সাহিত্যজগতে আলোড়ন সৃষ্টি করে। নোবেল কমিটি বলেছে, উপন্যাসটিতে কমিউনিজম পতনের ঠিক আগের হাঙ্গেরির গ্রামীণ অঞ্চলের পরিত্যক্ত সমবায় খামারে নিঃস্ব একদল বাসিন্দার জীবন অত্যন্ত দুর্দান্ত ভাষায় চিত্রিত হয়েছে।

ক্রাসনাহোরকাইয়ের বেশ কয়েকটি উপন্যাস অবলম্বনে চলচ্চিত্র নির্মিত হয়েছে। সেগুলোর মধ্যে অন্যতম স্যাটানট্যাঙ্গো এবং দ্য ভার্কমেইস্টার হারমোনিজ। ক্রাসনাহোরকাইয়ের উপন্যাসগুলো থেকে চলচ্চিত্র নির্মাণ করেছেন হাঙ্গেরির খ্যাতিমান পরিচালক বেলা তার।

ক্রাসনাহোরকাইয়ের উপন্যাস, ছোটগল্প ও প্রবন্ধ প্রধানত জার্মানিতে পরিচিত। দেশটিতে তিনি দীর্ঘ সময় বসবাস করেছেন। হাঙ্গেরিতে তাঁকে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ জীবিত লেখক হিসেবে গণ্য করা হয়।

তিনি একজন মন্ত্রমুগ্ধকর লেখক—বার্তা সংস্থা এফপিএফকে জানিয়েছেন ক্রাসনাহোরকাইয়ের উপন্যাসের ইংরেজি ভাষার অনুবাদক কবি জর্জ সির্তেস। তাঁর কথায়, ‘তিনি আপনাকে এমনভাবে আকৃষ্ট করেন যে তিনি যে জগতের চিত্র আঁকেন, তা বারবার আপনার ভেতরে প্রতিধ্বনিত হয়, যতক্ষণ না তা আপনার নিজের শৃঙ্খলা ও বিশৃঙ্খলার দৃষ্টিভঙ্গি হয়ে ওঠে।’

সমালোচকদের জন্য কঠিন ও চ্যালেঞ্জিং হলেও ক্রাসনাহোরকাই একবার নিজের লেখার শৈলীকে বর্ণনা করেছিলেন ‘পাগলামির সীমা পর্যন্ত বাস্তবতার পরীক্ষা’ হিসেবে। দীর্ঘ বাক্য ও কম অনুচ্ছেদ ব্যবহারের জন্য লেখককে অনেক সময় ‘অতি মনোযোগী’ হিসেবেও অভিহিত করা হয়।

১৯০১ সাল থেকে সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার দেওয়া হচ্ছে। পুরস্কারের অর্থমূল্য ১ কোটি ১০ লাখ সুইডিশ ক্রোনার (প্রায় ১২ লাখ মার্কিন ডলার)।

গত বছর পুরস্কার পেয়েছেন দক্ষিণ কোরিয়ার লেখক হান কাং। তিনি নোবেল পাওয়া ১৮তম নারী সাহিত্যিক। তাঁর আগে দক্ষিণ কোরিয়ার আর কেউ নোবেল পাননি।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: প রস ক র প উপন য স র জন য

এছাড়াও পড়ুন:

চিত্রনায়ক জসিমকে হারানোর ২৭ বছর

১৯৯৮ সালের ৮ অক্টোবর না ফেরার দেশে পাড়ি জমান বাংলা সিনেমার কিংবদন্তি নায়ক ও মুক্তিযোদ্ধা জসিম। আজ তার ২৭তম মৃত্যুবার্ষিকী। তিনিই ছিলেন বাংলাদেশের প্রথম অ্যাকশন হিরো—যিনি সিনেমার পাশাপাশি বাস্তব জীবনেও ছিলেন সত্যিকারের যোদ্ধা।

নায়ক জসিম শুধু একজন অভিনেতা নন, তিনি ছিলেন বাংলা চলচ্চিত্রে অ্যাকশন ধারার এক নতুন যুগের সূচনাকারী। তার নামে এফডিসিতে রয়েছে ‘মুক্তিযোদ্ধা চিত্রনায়ক জসীম ফ্লোর’। কারণ, সিনেমার বাইরেও তার পরিচয় এক গর্বের—১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে তিনি ২ নম্বর সেক্টরে মেজর হায়দারের নেতৃত্বে যুদ্ধে অংশ নিয়েছিলেন। 

আরো পড়ুন:

নিষিদ্ধের গুঞ্জনে মুখ খুললেন রাশমিকা

‘নোংরা কনটেন্ট ছড়িয়ে সমাজকে দূষিত করা আপনার দায়িত্ব নয়’

দেশ স্বাধীন হওয়ার পর ১৯৭২ সালে ‘দেবর’ চলচ্চিত্রের মাধ্যমে রূপালি পর্দায় অভিষেক ঘটে তার। তবে সিনেমায় তার যাত্রা শুরু আরো আগে—একজন ‘এক্সট্রা আর্টিস্ট’ হিসেবে। নিজেই এক সাক্ষাৎকারে জানিয়েছিলেন সেই সংগ্রামের গল্প। সেই সাধারণ শুরু থেকে তিনি হয়ে ওঠেন ঢালিউডের প্রথম ‘অ্যাকশন হিরো’। 

খলনায়ক থেকে নায়ক—দুই ভূমিকাতে জসিম ছিলেন অনন্য। খলচরিত্রে অভিনয় করেছেন ৭০টিরও বেশি চলচ্চিত্রে, আর নায়ক হিসেবে ১২০টিরও বেশি সিনেমায়।  

জসিম অভিনীত উল্লেখযোগ্য সিনেমা হলো—‘দেবর’, ‘রংবাজ’, ‘দোস্ত দুশমন’, ‘কাজের বেটি রহিমা’, ‘মহেশখালির বাঁকে’, ‘বারুদ’, ‘বদলা’, ‘কসাই’, ‘বাহাদুর’, ‘এক মুঠো ভাত’, ‘দি রেইন’, ‘কুয়াশা’, ‘প্রতিজ্ঞা’, ‘ভাই আমার ভাই’, ‘মাস্তান রাজা’, ‘স্বামী কেন আসামি’ প্রভৃতি। 

ব্যক্তিগত জীবনে জসিমের প্রথম স্ত্রী ছিলেন চিত্রনায়িকা সুচরিতা। পরে বিয়ে করেন নাসরিনকে। তিন ছেলে—এ কে সামি, এ কে রাতুল ও এ কে রাহুলকে রেখে তিনি বিদায় নেন দুনিয়া থেকে। তবে ভাগ্যের নির্মম পরিহাস, গত ২৭ জুলাই হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান জসিমের মেজ ছেলে, সংগীতশিল্পী ও সাউন্ড ইঞ্জিনিয়ার এ কে রাতুল।

ঢাকা/রাহাত/শান্ত

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ১৬ মাসে কুরআনের হাফেজ হলো ১১ বছর বয়সি শিহাব
  • ‘মহল্লার’ নায়িকা আইরিন
  • গাজা শান্তি পরিকল্পনায় সম্মত হামাস-ইসরায়েল, আগামী কয়েকদিনে যা ঘটবে
  • এই ১০ লক্ষণেই বুঝবেন, আপনি পেয়েছেন এক অসাধারণ স্বামী
  • হামজাকে আটকাতে কী কৌশল হংকং কোচের
  • চট্টগ্রাম চেম্বার নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ালেন ৫ প্রার্থী
  • বগুড়ায় বিষাক্ত মদ্যপানে অসুস্থ একজনের মৃত্যু, চারজন চিকিৎসাধীন
  • টিভির লাইসেন্স নিয়ে সারজিস ও আজাদ মজুমদারের বক্তব্যে যে বিষয় নেই
  • চিত্রনায়ক জসিমকে হারানোর ২৭ বছর