সুযোগ পেলেই বাইসাইকেলের পেছনে চারা ও গাছ লাগানোর সরঞ্জাম নিয়ে বেড়িয়ে পড়েন চা শ্রমিক বিষ্ণু হাজরা। রাস্তার পাশ, কবরস্থান, শ্মশানঘাটের পাশাপাশি যেখানেই খালি জায়গা পান, সেখানেই তিনি রোপণ করেন গাছের চারা।

ঔষধি, ফলজ, বনজসহ বিভিন্ন ধরণের গাছ লাগিয়ে আনন্দপান বিষ্ণু। এই কাজে নিজ পকেটের টাকা খরচ করতে দ্বিধাবোধ করেন না এই মানুষটি। পরিবেশের ভারসম্য ও মানুষের জীবন বাঁচাতে গত ২৮ বছর ধরে এই কাজ করে চলেছেন প্রকৃতিপ্রেমী বিষ্ণু।

আরো পড়ুন:

রাজশাহী সার্কিট হাউসের গাছ না কাটার দাবিতে স্মারকলিপি

বৃক্ষরোপণ ও সবুজায়নের উদ্বোধন করলেন ডিএসসিসি প্রশাসক

মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল উপজেলার ভাড়াউড়া চা বাগানের বাসিন্দা বিষ্ণু। তিনি একজন চা শ্রমিক। সংসারের চাহিদা পূরণে ঝালমুড়িও বিক্রি করেন তিনি। একসময় করতেন পত্রিকা বিক্রির কাজ। তার সংসারে মা-বাবা, স্ত্রী ও দুই ছেলে রয়েছে।

চা বাগানের বাসিন্দারা জানান, দারিদ্রতাকে পেছনে ফেলে চারা রোপণের এই কাজ বিষ্ণু করছেন ১৯৯৭ সাল থেকে। এখন পর্যন্ত তার হাতে লাগানো কয়েক হাজার গাছ ভাড়াউড়া চা বাগানে রয়েছে। 

চা বাগানে আলাপকালে বিষ্ণু বলেন, “১৯৯৪ সালে শ্রীমঙ্গল শহরের ভিক্টোরিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ে ভর্তি হই। তখন থেকেই আমাদের চা শ্রমিক পরিবারে অভাবের চিত্র মনে ভেসে উঠত। অভাব দূর করতে প্রাইমারি স্কুলের ছাত্রদের নিয়ে টিউশনি শুরু করি। নবম শ্রেণিতে পড়ার সময় মাথায় চিন্তা আসে গাছ রোপণ করে ভবিষ্যতে অভাব দূর করা যাবে।”

বিষ্ণুকে গাছ লাগাতে সহযোগিতা করছেন স্থানীয়রা

 “এরপর থেকে গাছ লাগানো শুরু করি। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘বৃক্ষ’ কবিতাটি পড়ে গাছ লাগানো আমার নেশায় পরিণত হয়েছে। তখন থেকে টিউশনির টাকার একটি অংশ খরচ করে গাছ লাগাতে শুরু করি”, যোগ করেন তিনি।

বিষ্ণুর মতে, অবাধে গাছ কাটা, বন উজাড়, অপরিকল্পিত নগরায়ণ, প্লাস্টিকের দূষণ, নদী দখল ও দূষণ আমাদের পরিবেশ নষ্ট করছে। এসব রক্ষা এবং প্রাকৃতিক ভারসম্য রক্ষায় গাছ লাগানোর বিকল্প নেই। পাশাপাশি গাছের রক্ষণাবেক্ষণও সমান জরুরি। সামাজিক ও পারিবারিক অনুষ্ঠানে বিষ্ণু গাছ উপহার দেন।

বিষ্ণুর বাবা প্রেমলাল হাজরা বলেন, “আমার ছেলে গাছের চারা রোপণ করার বিষয়টি আমাদের কাছে ভালো লাগে।”

বাগান এলাকার কলেজ শিক্ষার্থী রণজেশ রায় বলেন, “আমরা ছোট বেলা থেকে দেখে আসছি বিষ্ণু দা গাছ রোপণ করেন। নিজ টাকায় তিনি গাছ লাগান, তার এই কাজ পরিবেশের জন্য খুবই ভলো।”

ভাড়াউড়া চা বাগানের গ্রাম পুলিশ সুদর্শন হাজরা বলেন, “আমরা ২০২২ সাল থেকে দেখছি, তিনি গাছ লাগান। আমরা বাগানের লোকজন ও বাসিন্দারা তার গাছ লাগানো দেখে উৎসাহিত হয়ে গাছ লাগাই। গাছ লাগালে পরিবেশ ভালো থাকবে।”

এলাকার অপর শিক্ষার্থী ও বিষ্ণুর স্বজন রিপন হাজরা বলেন, “বিষ্ণু দা হলেন বৃক্ষপ্রেমী মানুষ। তিনি খালি জায়গায় যেমন- মসজিদ ও মন্দিরে প্রাঙ্গণে গাছ লাগান। তিনি শ্রমজীবী মানুষ একা গাছের দেখাশুনা করতে পারবেন না। যারা ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে জড়িত আছেন, তাদের গাছ রক্ষণাবেক্ষণে এগিয়ে আসতে হবে।”

ঢাকা/মাসুদ

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর এই ক জ পর ব শ

এছাড়াও পড়ুন:

সম্পদ ও সন্তান লাভের জন্য প্রার্থনা

জীবনের এমন অনেক মুহূর্ত আসে যখন মনে হয়, সবকিছু যেন থমকে দাঁড়িয়েছে। আয়ের উৎস শুকিয়ে যাওয়া, পরিবারের উদ্বেগ বাড়তে থাকা বা জীবনে বরকতের অভাব—এসব চাপে মানুষের মন ভারী হয়ে ওঠে। ইসলামে এমন সময়ে আল্লাহর কাছে দোয়া করার ওপর বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।

এমন একটি দোয়া মহানবী মুহাম্মদ (সা.) তাঁর সেবক আনাস ইবনে মালিক (রা.)-এর জন্য করেছিলেন। এই দোয়া শুধু ধন-সম্পদ ও সন্তানের বৃদ্ধি চায় না, বরং সবকিছুতে আল্লাহর বরকত কামনা করে।

দোয়ার উৎস ও প্রেক্ষাপট

হাদিসে বর্ণিত, আনাস (রা.)-এর মা উম্মে সুলাইম নবীজিকে বলেন, ‘হে আল্লাহর রাসুল! আপনার এই সেবক আনাসের জন্য আল্লাহর কাছে দোয়া করুন।’ তখন নবীজি (সা.) দোয়া করেন: ‘আল্লাহুম্মা আকসির মালাহু ওয়া ওয়ালাদাহু, ওয়া বারিক লাহু ফীমা আ'তাইতাহু।’

এই দোয়ার ফলাফল অবিশ্বাস্য: আনাস (রা.) ১০৩ বছর বেঁচে ছিলেন এবং পৌত্রাদি মিলিয়ে তিনি ১২০-এরও বেশি সন্তান লাভ করেন। তাঁর জীবন ছিল বরকতের জীবন্ত উদাহরণ।আরও পড়ুনতাকওয়া মুমিনের সবচেয়ে বড় সম্পদ৩০ জুন ২০২৫

অর্থাৎ, হে আল্লাহ! তার ধন-সম্পদ ও সন্তান বাড়িয়ে দাও এবং তুমি যা দান করেছ, তাতে তার জন্য বরকত দান করো। (সহিহ বুখারি, হাদিস: ৬,৩৪৪)

আনাস (রা.) তখন মাত্র দশ বছরের একটি ছেলে, যিনি নবী (সা.)-এর সেবায় নিয়োজিত ছিলেন। এই দোয়ার ফলাফল অবিশ্বাস্য: আনাস (রা.) ১০৩ বছর বেঁচে ছিলেন এবং তাঁর তিনি পৌত্রাদি মিলিয়ে ১২০-এরও বেশি সন্তান লাভ করেন (সহিহ মুসলিম থেকে বর্ণিত)। তাঁর জীবন ছিল বরকতের জীবন্ত উদাহরণ।

দোয়ার উদ্দেশ্য শুধু ধন নয়, বরকত

এই দোয়ার সৌন্দর্য এতে যে এটি ধন-সম্পদের পাশাপাশি বরকতের জন্য প্রার্থনা করে। ইসলামে ধনকে শুধু সঞ্চয় নয়, বরং আল্লাহর নেয়ামত হিসেবে দেখা হয়। নবীজি (সা.) বলেছেন, ‘ধন বেড়ে গেলেও যদি বরকত না থাকে, তাহলে তা ধুলোর মতো উড়ে যায়।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস: ৬,৪৩৯)

আরও পড়ুনসন্তান প্রতিপালনে ধর্মের দাবি১৯ মে ২০২৫ধন বেড়ে গেলেও যদি বরকত না থাকে, তাহলে তা ধুলোর মতো উড়ে যায়।’সহিহ বুখারি, হাদিস: ৬,৪৩৯

আধুনিক জীবনে এর প্রাসঙ্গিকতা আরও বেশি। অর্থনৈতিক সংকট, চাকরির অনিশ্চয়তা বা পরিবারের চাপে অনেকে কষ্ট পান। কিন্তু এই দোয়া স্মরণ করিয়ে দেয় যে, সত্যিকারের সমৃদ্ধি আল্লাহর রহমতে। সন্তানের ক্ষেত্রেও তাই—সন্তান লাভের সঙ্গে তাদের সুস্থতা, শান্তি ও ইমানের বরকত চাওয়া জরুরি।

আজকের দিনে, যখন পরিবারের আকার ছোট হচ্ছে এবং অর্থের চাপ বাড়ছে। গবেষণায় দেখা গেছে, ধর্মীয় অনুশীলন (যেমন দোয়া) মানসিক চাপ কমায় এবং জীবনে ইতিবাচকতা বাড়ায়। ইসলামি ঐতিহ্যে এই দোয়া শুধু ব্যক্তিগত নয়, পরিবারের জন্যও ব্যবহার করা যায়।

দোয়ার সঙ্গে সদকা দেওয়া, কোরআন তিলাওয়াত এবং হালাল উপার্জনের চেষ্টা করুন—এগুলো বরকতের দরজা খোলে।

আরও পড়ুনসন্তান প্রতিপালনে মহানবী (সা.)-এর ১০টি নির্দেশনা২০ আগস্ট ২০২৫

সম্পর্কিত নিবন্ধ