ব্যাংক একীভূতকরণে যা ভাবতেই হবে
Published: 12th, October 2025 GMT
বাংলাদেশের ব্যাংকিং খাত এমন বিপর্যয়ের মধ্যে আগে কখনো পড়েনি। গত দেড় দশকের লুটপাট এ খাতকে চরম ঝুঁকির মধ্যে ফেলে দিয়েছে। বেশির ভাগ ইসলামি ধারার ও রাষ্ট্রমালিকানাধীন ব্যাংক এখন চরম দুর্দশার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে।
এ রকম শোচনীয় অবস্থা থেকে ব্যাংক উদ্ধারের জন্য সরকার ও কেন্দ্রীয় ব্যাংক সাধারণত একীভূতকরণ, অধিগ্রহণ, পুনর্গঠন ও অবসায়নের মধ্য থেকে উত্তম বিকল্পটি গ্রহণ করে।
বাংলাদেশে ব্যাংক উদ্ধারের ইতিহাসে দেখা যায়, ১৯৯১ সালে ব্যাংক অব ক্রেডিট অ্যান্ড কমার্স ইন্টারন্যাশনাল পুনর্গঠন করে ইস্টার্ন ব্যাংক লিমিটেড করা হয়, যা এখন বেসরকারি খাতের ভালো ব্যাংকগুলোর একটি।
২০০০ সালে স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ও এএনজেড গ্রিনলেজ ব্যাংক একীভূত হয়ে প্রথমে স্ট্যানচার্ট গ্রিনলেজ এবং পরবর্তী সময়ে স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংক হিসেবে কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে। ব্যাংক এশিয়া ২০০১ সালে নোভা স্কশিয়া ও মুসলিম কমার্শিয়াল ব্যাংকের বাংলাদেশের ব্যবসায়িক কার্যক্রম অধিগ্রহণ করে বর্তমানে সফলভাবে চলছে।
২০০৭ সালে ওরিয়েন্টাল ব্যাংককে পুনর্গঠন করে আইসিবি ইসলামিক ব্যাংক করা হলেও ব্যাংকটি সফল হয়নি। সর্বশেষ ২০১০ সালে বাংলাদেশ শিল্প ব্যাংক ও বাংলাদেশ শিল্প ঋণ সংস্থা একীভূত করে বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক গঠন করা হলেও এটি সফল হতে পারেনি। এ ব্যাংকের খেলাপি ঋণের হার এখন ৪২.
বাংলাদেশে ব্যাংক খাতের প্রধান সমস্যা হলো খেলাপি ঋণ, যা ২০২৫ সালের মার্চে এসে ৪,২০,৩৩৫ কোটি টাকায় (২৪.১ শতাংশ) দাঁড়িয়েছে। তবে সংকটাপন্ন সম্পদের পরিমাণ ৭,৫৬,৫২৬ কোটি টাকা, যা মোট ঋণের প্রায় ৪৫ শতাংশ। ঋণের মান এভাবে কমে যাওয়ায় ব্যাংকগুলোর মূলধন সংরক্ষণের ওপর একধরনের চাপ তৈরি হয়েছে।
যেখানে ব্যাসেল-৩ অনুযায়ী একটি ব্যাংকের ১২.৫০ শতাংশ মূলধন সংরক্ষণ করা দরকার, বাস্তবে এ হার মাত্র ৩.০৮ শতাংশ, যা পাকিস্তানে ২০.৬ শতাংশ, শ্রীলঙ্কায় ১৮.৪ শতাংশ এবং ভারতে ১৬.৭ শতাংশ। বর্তমানে ব্যাংক খাতের সামগ্রিক মূলধন ঘাটতির পরিমাণ ১৭১,৬৮৭ কোটি টাকা।
খেলাপি ঋণের ভারে জর্জরিত হয়ে ইসলামি ধারার বেশির ভাগ ব্যাংকের স্বাভাবিক কার্যক্রম চরমভাবে ব্যাহত হচ্ছে। ফলে অতি সম্প্রতি সরকার পাঁচটি ইসলামি ব্যাংককে একীভূত করে একটি নতুন ইসলামি ব্যাংক গঠনের উদ্যোগ নিয়েছে। ব্যাংকগুলো হলো এক্সিম, সোশ্যাল ইসলামী, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী, গ্লোবাল ইসলামী ও ইউনিয়ন ব্যাংক, যাদের খেলাপি ঋণের হার যথাক্রমে ৪৮.২০, ৬২.৩০, ৯৬.৩৭, ৯৫ ও ৯৭.৮০ শতাংশ।
এদের মধ্যে এক্সিম ও সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংকের খেলাপি ঋণের গড় হার ৫৫.২৫ শতাংশ। কিন্তু বাকি তিনটি ব্যাংকের খেলাপি ঋণের গড় হার ৯৬ শতাংশের ওপরে।
সরকারের ব্যাংক উদ্ধারের উদ্দেশ্য নিয়ে কোনো সমালোচনা না থাকলেও পদ্ধতি নিয়ে সমালোচনার অভাব নেই। কারণ, এক্সিম ও সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংককে একীভূত করে পরিচালনা করা যতটা সহজ হতো, বাকি তিনটি ব্যাংককেও একীভূত করার ফলে সামগ্রিকভাবে নতুন ব্যাংকটি পরিচালনা কঠিন হয়ে পড়বে।
ব্যাংকের এ দুর্দশার জন্য ব্যাংকাররাও দায় এড়াতে পারেন না। কারণ, তাঁরা জড়িত না থাকলে ব্যাংক থেকে ঋণ অনুমোদনের প্রাথমিক ধাপ পার হতে পারে না। বোর্ডের চাপের কাছে নতি স্বীকার করে মন্দ হবে জেনেও ঋণ অনুমোদন দিয়ে লাখ লাখ আমানতকারীর আমানত ঝুঁকির মধ্যে ফেলে দেওয়া ব্যাংকারদের দায়িত্বে অবহেলা বিবেচনায় নিয়ে শাস্তির ব্যবস্থা করা প্রয়োজন।এক্সিম ও সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক দুটিকে তাদের কর্মক্ষমতা উন্নত করার জন্য কয়েক বছর সময় দিয়ে দেখা যেতে পারত। বাকি তিনটি ব্যাংকেরÿক্ষেত্রে অবসায়নের কথা ভাবা যেত। যেহেতু বাংলাদেশে ব্যাংক অবসায়নের ইতিহাস নেই, তাই সরকার হয়তো এ ব্যাংকগুলোকে অবসায়নের দিকে ঠেলে দিয়ে ঝুঁকি নিতে চায়নি।
অন্য বিকল্প হিসেবে এক্সিম ও সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক দুটোকে একীভূতকরণের আওতায় না এনে তাদের অধিগ্রহণের মাধ্যমে উদ্ধারের চেষ্টাও করা যেত। তবে বেসরকারি ব্যাংকের সে সক্ষমতা এখনো হয়নি যে কোনো একটি ব্যাংক চাইলেই এক্সিম অথবা সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংককে অধিগ্রহণ করতে পারবে।
আবার সক্ষমতা থাকলেও ৪৮ বা ৬২ শতাংশ খেলাপি ঋণের ব্যাংককে অধিগ্রহণ করে কোনো ব্যাংক নিজের কর্মদক্ষতা কমাতে চাইবে না কারণ অধিগ্রহণ ও একীভূতকরণের প্রধান উদ্দেশ্য থাকে বাজার শেয়ার বাড়িয়ে মুনাফা বৃদ্ধি করা, যা এ ক্ষেত্রে প্রায় অসম্ভব।
সরকার যে পদ্ধতিতেই ব্যাংকগুলোকে বাঁচাতে চাইত, সে পদ্ধতিই সমালোচনার মুখোমুখি হতো।
কারণ, এ রকম ব্যাপক মাত্রার ব্যাংক ডাকাতি ইতিপূর্বে এ দেশে ঘটেনি। আবার আমাদের আমানতকারীদেরও ব্যাংক দেউলিয়া হয়ে অবসায়নের অভিজ্ঞতা নেই। বাংলাদেশে ব্যাংকও অতীতে এ রকম সমস্যার সম্মুখীন হয়নি। তাই অবস্থা বেশ জটিল। পৃথিবীর অন্যান্য দেশ থেকে এ খাতের অভিজ্ঞদের নিয়ে এলেও পরিস্থিতির কোনো সহজ ও দ্রুত সমাধান সম্ভব নয়। এ অবস্থা থেকে পরিত্রাণের জন্য সর্বনিম্ন একটা সময় দিতে হবে। গ্রাহকদের ধৈর্য ধরতে হবে। আশার কথা, যেহেতু পাঁচটি ব্যাংক একীভূত হয়ে একটি সরকারি ব্যাংক হবে, তাই এর ওপর জনগণের একধরনের আস্থা তৈরি হবে।
রাজনৈতিক চাপেই মূলত ব্যাংকগুলোর এ রকম পরিস্থিতির সৃষ্টি হলেও এর সঙ্গে আরও অনেকগুলো পক্ষ জড়িত। যেমন ব্যাংকের পরিচালনা বোর্ড ঠিকমতো দায়িত্ব পালন করছে কি না দেখতে হবে। কারণ, এই বোর্ডই অন্যায়ভাবে ঋণ অনুমোদনের জন্য ব্যাংকারদের ওপর চাপ সৃষ্টি করে। তাই বোর্ড সদস্যদের অপরাধ বিবেচনায় আনা প্রয়োজন। পাশাপাশি এই সদস্যদের দিয়ে তৃতীয় কোনো পক্ষ (রাজনীতিবিদ, ব্যবসায়ী, আমলা ও অন্যান্য) ঋণ অনুমোদন করিয়ে নিয়ে খেলাপি হয়েছে কি না, সে অপরাধও বিবেচনায় নিয়ে বিচার করতে হবে।
ব্যাংকগুলোর দুর্গতির জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকও জড়িত। নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থা হিসেবে তাদের দায়িত্ব ছিল আর্থিক অনিয়মের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া এবং বাংলাদেশ ব্যাংক সঠিকভাবে সে দায়িত্ব পালন করেছে কি না, তাও খতিয়ে দেখা জরুরি। কেউ যদি অন্যায় প্রক্রিয়ার সঙ্গে জড়িত থাকে তাকে শাস্তির আওতায় নিয়ে আসতে হবে।
যেহেতু সরকারি ব্যাংকগুলো বাংলাদেশ ব্যাংক ও অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়, সেহেতু বাংলাদেশ ব্যাংকের পাশাপাশি আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের কর্মকর্তাদেরও সরকারি ব্যাংকগুলোর দুরবস্থার জন্য দায়বদ্ধতার আওতায় নিয়ে আসা দরকার। অর্থ মন্ত্রণালয় আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ থাকার পক্ষে সোচ্চার থাকলেও এ বিভাগের কর্মের দায় নিতে চান না এবং জবাবদিহির আওতায় আসেন না বললেই চলে।
ব্যাংকের এ দুর্দশার জন্য ব্যাংকাররাও দায় এড়াতে পারেন না। কারণ, তাঁরা জড়িত না থাকলে ব্যাংক থেকে ঋণ অনুমোদনের প্রাথমিক ধাপ পার হতে পারে না। বোর্ডের চাপের কাছে নতি স্বীকার করে মন্দ হবে জেনেও ঋণ অনুমোদন দিয়ে লাখ লাখ আমানতকারীর আমানত ঝুঁকির মধ্যে ফেলে দেওয়া ব্যাংকারদের দায়িত্বে অবহেলা বিবেচনায় নিয়ে শাস্তির ব্যবস্থা করা প্রয়োজন।
ব্যাংকের ভালো কর্মদক্ষতার সঙ্গে যদি ব্যাংকারদের বোনাসের সংখ্যা বৃদ্ধি পায়, তবে মন্দ কর্মদক্ষতার সঙ্গে বোনাসের সংখ্যা কমানো এমনকি বেতনও আনুপাতিক হারে কমানোর ব্যবস্থা থাকা প্রয়োজন। প্রত্যেক ব্যাংকারকে তাঁর সঞ্চয়ের কমপক্ষে ৫০ শতাংশ তাঁর ব্যাংকে জমা রাখার বিধান করা যেতে পারে, যাতে তাঁরা একই সঙ্গে ব্যাংকার ও আমানতকারী হিসেবে ভূমিকা রাখতে পারে এবং ব্যাংকে খেলাপি ঋণ বৃদ্ধি পেলে তাঁদের আমানতও যেন ঝুঁকির মধ্যে পড়ে।
এমন দুর্দশাগ্রস্ত ব্যাংকগুলোকেও উদ্ধার করার সবচেয়ে খারাপ দিক হলো অংশীজনদের মধ্যে এই ধারণা বদ্ধমূল হওয়া যে বাংলাদেশে একটি ব্যাংক যতই খারাপ করুক না কেন, শেষ বিচারে এটিকে উদ্ধার করা হবে অথবা ব্যর্থ হতে দেওয়া যাবে না। এই নৈতিক ঝুঁকি থেকে ব্যাংকিং ব্যবস্থার বের হওয়া প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়বে। তারপরও এ ধরনের ঝুঁকি এড়ানোর জন্য নিকট অতীতে আর্থিক অনিয়মের সঙ্গে জড়িতদের দ্রুত, দৃশ্যমান ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির আওতায় এনে ভবিষ্যতে কেউ এ রকম অপরাধ করলে তাদেরও একই রকম শাস্তির কঠোর বার্তা দিতে হবে।
ড. মো. মাইন উদ্দিন, অধ্যাপক, ব্যাংকিং অ্যান্ড ইনস্যুরেন্স বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
(মতামত লেখকের নিজস্ব)
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: এক স ম ও স শ য ল ইসল ম গ রহণ কর উদ ধ র র র জন য ব র আওত য় ব যবস থ র ব যবস আর থ ক র কর ম দ র দশ র ওপর এ রকম সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
৯ ব্রোকার হাউজকে ফিক্স সার্টিফিকেশন দিল ডিএসই
নয় ব্রোকারেজ হাউজকে ফিক্স সার্টিফিকেশন ও একটি ব্রোকারেজ হাউজকে রিসার্টিফিকেশন প্রদান করেছে দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই)। এপিআই সংযোগের মাধ্যমে নিজস্ব ওএমএস চালুকরণের লক্ষ্যে ডিএসই প্রতিষ্ঠানুগলোকে ফিক্স সার্টিফিকেশন প্রদান করে।
বৃহস্পতিবার (২৭ নভেম্বর) ডিএসই’র বোর্ডরুমে প্রতিষ্ঠানগুলোকে ফিক্স সার্টিফিকেশন প্রদান করেন প্রতিষ্ঠানটির প্রধান পরিচালনা কর্মকর্তা ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) মোহাম্মদ আসাদুর রহমান৷
আরো পড়ুন:
ডিএসইর চিঠির জবাব দেয়নি খুলনা প্রিন্টিং
ইস্টার্ন কেবলসের প্রথম প্রান্তিকে লোকসান কমেছে ৫৬.২৫ শতাংশ
এ সময় উপস্থিত ছিলেন ডিএসই’র প্রধান প্রযুক্তি কর্মকর্তা ড. মো. আসিফুর রহমান, আইসিটি ডিভিশনের জেনারেল ম্যানেজার মো. তারিকুল ইসলাম, উপ-মহাব্যবস্থাপক হাসানুল করিমসহ ডিএসইর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।
ডিএসইর প্রকাশনা ও জনসংযোগ বিভাগের উপ-মহাব্যবস্থাপক মো. শফিকুর রহমান স্বাক্ষরিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানা গেছে।
ব্রোকারেজ হাউজগুলো পক্ষে সার্টিফিকেশন গ্রহণ করেন বাংলাদেশ ফাইন্যান্স সিকিউরিটিজ লিমিটেডের এমডি এবং সিইও খন্দকার মাহমুদুল হাসান; ফিনট্রা সিকিউরিটিজ লিমিটেডের এমডি অজিত কুমার বণিক; আইডিএলসি সিকিউরিটিজ লিমিটেডের এমডি এ. এইচ. এম. নাজমুল হাসান; আইআইডিএফসি সিকিউরিটিজ লিমিটেডের সিইও মোঃ নাজমুল হাসান চৌধুরী; লংকাবাংলা সিকিউরিটিজ পিএলসির সিইও খন্দকার সাফাত রেজা; এমটিবি সিকিউরিটিজ লিমিটেডের েসিইও মোঃ নজরুল ইসলাম মজুমদার; এসএআর সিকিউরিটিজ লিমিটেডের পরিচালক শরীফ তাশরুবা রহমান; সাউথ এশিয়া সিকিউরিটিজ লিমিটেডের সিইও মোঃ আলা উদ্দিন পাটোয়ারী এবং ওয়াইফাং সিকিউরিটিজ লিমিটেডের সিইও মোঃ মাসুদুজ্জামান। এর মধ্যে লংকাবাংলা সিকিউরিটিজ পিএলসির রিসার্টিফিকেশন দেওয়া হয়েছে।
ফিক্স সার্টিফিকেশন প্রদান অনুষ্ঠানে ডিএসই'র প্রধান পরিচালন কর্মকর্তা ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) মোহাম্মদ আসাদুর রহমান বলেন, ‘‘পুঁজিবাজারের ডিজিটাল রূপান্তরের অংশ হিসেবে ডিএসই কাজ করছে। নিয়ন্ত্রক মান বজায় রেখে ডিএসইকে গ্রাহক–কেন্দ্রিক সেবাধর্মী সংস্থায় রূপ দেওয়াই যার লক্ষ্য। স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে সম্পৃক্ততা বাড়াতে ইতিমধ্যে বিজিএমইএ, সিরামিক ও এগ্রো–কেমিক্যালসহ বিভিন্ন শিল্প খাতের সঙ্গে বৈঠক করেছে। ডিএসই আশা করছে, ডিসেম্বর ২০২৫-এর মধ্যে ওয়েবসাইটের আধুনিক ল্যান্ডিং পেজ, ট্রেকহোল্ডারদের অনলাইন ডকুমেন্ট সাবমিশন ব্যবস্থা এবং স্টেকহোল্ডার–ফিডব্যাক ভিত্তিক কমপ্লায়েন্স ও ডেটা–প্রবাহ উন্নয়নসহ নতুন ডিজিটাল সেবা উদ্যোগ উন্মোচিত হবে।’’
ডিএসইর প্রধান প্রযুক্তি কর্মকর্তা ড. আসিফুর রহমান বলেন, ‘‘স্টক এক্সচেঞ্জের প্রযুক্তি ব্যাংকিং থেকে ভিন্ন—এখানে এক মুহূর্তের সার্ভিসও পুরো বাজারে তাৎক্ষণিক প্রভাব ফেলতে পারে। তাই আমাদের সবসময় সতর্ক, মনোযোগী এবং স্ট্যান্ডার্ড-কমপ্লায়েন্ট থাকতে হয়। সাম্প্রতিক সেন্ট্রালাইজড সিস্টেম ইন্টিগ্রেশনের মাধ্যমে আমাদের প্রযুক্তির অবস্থান এখন গ্লোবাল স্ট্যান্ডার্ডের খুব কাছাকাছি, কিছু ক্ষেত্রে আরও এগিয়েও। ওএমএস এপ্লিকেশনে স্থানীয় টিমকে সুযোগ দেওয়া কেবল প্রযুক্তিগত অগ্রগতি নয়—এটি দেশের জন্য একটি গর্বের অর্জন।’’
২০২০ সাল থেকে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ এপিআই (অ্যাপ্লিকেশন প্রোগ্রাম ইন্টারফেস) ভিত্তিক বিএইচওএমএস চালুর উদ্যোগ গ্রহণ করে। এরই প্রেক্ষিতে ৭২টি ব্রোকারেজ হাউজ নাসডাক ম্যাচিং ইঞ্জিনে এপিআই সংযোগ নিয়ে নিজস্ব অর্ডার ম্যানেজমেন্ট সিস্টেমের মাধ্যমে লেনদেন করার জন্য ডিএসইতে আবেদন করেন। আজকের ৮টিসহ মোট ৪৭টি ব্রোকার হাউজকে ফিক্স সার্টিফিকেশন প্রদান করা হয়েছে৷ এর মধ্যে ৩৫টি ব্রোকার হাউজ ফিক্স সার্টিফিকেশন পাওয়ার পর তারা এপিআই সংযোগের মাধ্যমে নিজস্ব ওএমএস চালু করেছে।
ঢাকা/এনটি/বকুল